নিজস্ব প্রতিবেদক

১৮ জুন, ২০২৩ ১৪:২৩

ঢাকা-১৭ উপনির্বাচন: যে কারণে হিরো আলমের মনোনয়নপত্র বাতিল

ছবি: সংগৃহীত

ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী আশরাফুল হোসেন আলম ওরফে হিরো আলমের মনোনয়নপত্র বাতিল করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।

রোববার (১৮ জুন) রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটে ঢাকা-১৭ আসনের উপ-নির্বাচনে মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই শেষে হিরো আলমসহ ৮ জনের মনোনয়নপত্র বাতিল করেন এই আসনের উপনির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. মুনীর হোসাইন খান।

নির্বাচনী ওই কর্মকর্তা জানান, ১৫ জন মনোনয়ন জমা দিয়েছিলেন। এরমধ্যে বাছাইয়ে ৭ জনের মনোনয়নপত্র বৈধ হয়েছে। বাকি ৮ জনের মনোনয়নপত্র বাতিল হয়েছে।

যাদের মনোনয়নপত্র বাতিল হয়েছে তরা হলেন, জাকের পার্টির কাজী মো. রাশিদুল হাসান, জাতীয় পার্টির রওশন এরশাদপন্থী কাজী মো. মামুনুর রশিদ, মো. তারিকুল ইসলাম ভূঞাঁ (স্বতন্ত্র), আবু আজম খান (স্বতন্ত্র), আশরাফুল হোসেন আলম (হিরো আলম), মুসাউর রহমান খান (স্বতন্ত্র), বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্ট (বিএনএফ)-এর মো. মজিবুর রহমান ও শেখ আসাদুজ্জামান জালাল।

মনোনয়নপত্র বাতিলের পর নির্বাচন কমিশন থেকে বেরিয়ে সাংবাদিকদের কাছে নিজের প্রতিক্রিয়া জানান হিরো আলম। তার দাবি, জনপ্রিয়তায় ভয় পেয়ে বারবার প্রার্থিতা বাতিল করা হচ্ছে।

তিনি বলেন, ‘নির্বাচন কমিশনার বলেন আর প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী যারা আছেন, তারা আমাকে দেখে ভয় পাচ্ছে কি-না, তা জানি না। পরে তো আবার প্রার্থিতা ফিরে পাই। ফিরে পেলেও কী করবো, জয়ী হলেও তো ছিনিয়ে নেওয়া হয়। আসলে আমার জনপ্রিয়তায় ভয় পেয়ে বার বার প্রার্থিতা বাতিল করা হচ্ছে।’

আশরাফুল হোসেন আলম ওরফে হিরো আলম স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দেন। নিয়ম অনুযায়ী- স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে কোনো আসনে মোট ভোটারের ১ শতাংশ ভোটারের সমর্থন প্রয়োজন হয়। ভোটারদের নাম, পরিচয় ও স্বাক্ষর মনোনয়নপত্রের সঙ্গে জমা দিতে হয়। হিরো আলম যেসব ভোটারের সই জমা দিয়েছেন, তা যাচাই করতে গিয়ে অমিল পেয়েছে নির্বাচন কমিশন। এ কারণে তার মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন নির্বাচন কর্মকর্তা।

প্রার্থিতা ফিরে পেতে নির্বাচন কমিশনে আপিল বা হাইকোর্টে যাবেন কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে হিরো আলম বলেন, ‘তারা (নির্বাচন কর্মকর্তা) যে ভোটারের সংখ্যার কথা বলেছেন, তা আমি দিয়েছি। বিদ্যুৎ বিল, গ্যাস বিল, ঋণখেলাপি, মামলাসহ কোনো কিছুতেই দোষ খুঁজে পাননি তারা। খুঁজে বের করেছে যে, ১০ জন ভোটারকে নাকি তারা পাননি। কিন্তু আমার ভোটাররা তো এখানে উপস্থিত আছেন, তারা সইও করেছেন। আপনারা চাইলে ভোটারের সঙ্গে কথা বলিয়েও দিতে পারি।’

‘নির্বাচন কমিশন থেকে আমাকে ফোন করা হয়েছিল, তারা নাকি আমার ১০ জন ভোটার খুঁজে পান না। তখন আমি তাদের নিজেই সহযোগিতা করেছি। একমাস ধরে তিন হাজার ৩০০ ভোটারের নাম সংগ্রহ করেছি। তাদের সই নিয়েছি। অথচ তারা পেলেন না। আমার ভোটারদের তারা ভালো করে খোঁজেননি’ যোগ করেন হিরো আলম।

ভোটারদের ভয়ভীতি দেখানো হয়েছে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘গুলশান, নিকেতন, বনানী এলাকার ভোটারের কাছে তারা যাননি। কমিশন বস্তি এলাকায় গেছে। বস্তির মানুষ পুলিশ দেখলে এমনিতেই ভয় পান। কমিশনের লোকজন কড়াই বস্তি এলাকায় গেছেন। তারা সিভিল ড্রেসে যেতে পারতো। তা না করে পুলিশ নিয়ে গেছেন তারা।’

প্রার্থিতা ফিরে পেতে আদালতে যাবেন কি না, জানতে চাইলে হিরো আলম বলেন, ‘ভোটের লড়াইয়ে এসব থাকে। এর আগেও আমি হাইকোর্টে গিয়ে প্রার্থিতা নিয়ে এসেছি। এরপর ভোটও করেছি। ফলাফল ছিনিয়ে নেওয়া হয়েছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘বারবার কেন আমাকে হ্যারাসমেন্ট করা হচ্ছে? ভোটে জিতলেও আমাকে চেয়ারে বসতে দেওয়া হয় না। আমি চ্যালেঞ্জ করে বলতে পারি, হাইকোর্টে গেলে আমার প্রার্থিতা ফিরে পাবো। কারণ সব প্রমাণ আমার কাছে আছে। প্রার্থিতা ফিরে পাওয়ার জন্য আমি অবশ্যই আদালতে যাবো।’

গত ১৫ মে চিত্রনায়ক আকবর হোসেন পাঠানের (ফারুক) মৃত্যু হলে আসনটি শূন্য হয়। সংসদের কোনো আসন শূন্য হলে ৯০ দিনের মধ্যে উপনির্বাচন করতে হয়। এই হিসেবে আসনটিতে ১২ আগস্টের মধ্যে উপনির্বাচন করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে।

একাদশ জাতীয় সংসদের প্রথম অধিবেশন বসে ২০১৯ সালের ৩০ জানুয়ারি। সংবিধান অনুযায়ী, সেই সময় ধরে পরবর্তী ৫ বছর মেয়াদ ধরলে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ২০২৪ সালের ২৯ জানুয়ারির মধ্যে অনুষ্ঠানের সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা রয়েছে। অর্থাৎ আসনটিতে যিনি নির্বাচিত হবেন তিনি ৫ মাসের মতো সময়ের জন্য সংসদ সদস্য হবেন।

যাচাই-বাছাইকালে সাতজন প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বৈধ ঘোষণা করা হয়েছে। যাদের মনোনয়নপত্র বৈধ হয়েছে তারা হলেন, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী মোহাম্মদ আলী আরাফাত, জাতীয় পার্টির জি এম কাদেরপন্থী সিকদার আনিসুর রহমান, বাংলাদেশ কংগ্রেসের মো. রেজাউল ইসলাম স্বপন, গণতন্ত্রী পার্টি মো. কামরুল ইসলাম (চেয়ারম্যান মনোনয়ন দিয়েছে), গণতান্ত্রী পার্টির অশোক কুমার ধর (মহাসচিব মনোনয়ন দিয়েছে), বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক মুক্তিজোটের মো. আকতার হোসেন ও তৃণমূল বিএনপির শেখ হাবিবুর রহমান।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত