স্পোর্টস ডেস্ক

১৯ এপ্রিল, ২০১৭ ১০:৫৫

রোনালদোর হ্যাটট্রিক, শততম গোল: সেমিতে রিয়াল মাদ্রিদ

ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো নৈপুণ্যে বায়ার্ন মিউনিখকে ৪-২ গোলে হারিয়েছে রিয়াল মাদ্রিদ। পর্তুগিজ এ ফরোয়ার্ডের হ্যাটট্রিকের সুবাদে চ্যাম্পিয়নস লিগের সেমিফাইনালে পৌঁছে গেছে রোনালদোর দল। দুল লেগ মিলিয়ে তাদের গোলের ব্যবধান ৬-৩।

দলীয় অর্জনের বাইরে রোনালদোর একটা ব্যক্তিগত অর্জনও হয়ে গেল এতে। বায়ার্নের মাঠে জোড়া গোল করে গড়েছিলেন ইউরোপিয়ান সব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে শততম গোল করা প্রথম ফুটবলার। এ ম্যাচের আগে শুধু চ্যাম্পিয়নস লিগে শততম গোলের রেকর্ড গড়তে রোনালদোর দরকার ছিল তিনটি গোল। তা আর বাদ থাকে কেন! সেটিও পূরণ করে ফেললেন পর্তুগিজ যুবরাজ!

বায়ার্নের মাঠে ২-১ গোলে জেতায় এমনিতেই সেমিতে ওঠার সমীকরনে অনেকটা এগিয়ে ছিল রিয়াল। কিন্তু দলটা বায়ার্ন বলেই হয়তো মোটেও এই কয় দিন শান্তিতে ঘুমাতে পারেননি রিয়াল কোচ জিনেদিন জিদান। কেন, সেটি আজ ম্যাচের শুরু থেকেই বুঝিয়ে দিচ্ছিল বাভারিয়ানরা। রেফারির বাঁশির পর থেকেই রিয়ালের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়েছে কার্লো আনচেলত্তির দল! রিয়ালও ছেড়ে কথা কয়নি। তাতেই প্রথমার্ধটা হলো জমজমাট। আক্রমণ, পালটা আক্রমণ, রক্ষণের কিছু ভুল, স্ট্রাইকারদের মিস...ছিল সবই। শুধু গোলটাই ছিল না।

গোল এল তবে ৫১ মিনিটে। রিয়াল নয়, গোল করল বায়ার্ন। বক্সে আরিয়েন রোবেনকে ফেলে দেন রিয়াল মিডফিল্ডার কাসেমিরো। পেনাল্টি থেকে গোল করেন রবার্ট লেভানডফস্কি। দুই লেগ মিলিয়ে তখন ২-২ সমতা, রিয়াল তখন এগিয়ে শুধু বায়ার্নের মাঠে পাওয়া দুটি ‘অ্যাওয়ে’ গোলের সুবাদে।

এরপরের গল্পটা বিশ্বসেরা ফুটবলার রোনালদোর। ৭৬ মিনিটে কাসেমিরোর ক্রস থেকে দুর্দান্ত হেডে করলেন নিজের ও দলের গোল। কিন্তু রিয়াল একটু স্বস্তির নিশ্বাস ফেলেছে কি ফেলেনি, এর মধ্যেই আবার গোল! এবার বায়ার্নের। সেটি এলও কীভাবে। রীতিমতো রিয়ালের হৃদয় এফোঁড়-ওফোঁড় করে দেওয়ার মতো। সার্জিও রামোসের হাস্যকর দর্শন এক আত্মঘাতী গোলে!

বক্সে বল এসেছিল বায়ার্ন স্ট্রাইকার লেভানডফস্কির পায়ে, তবে ঠিক নিয়ন্ত্রণে ছিল না তাঁর। দলকে বিপদমুক্ত করতে রিয়াল অধিনায়ক রামোস বলটা আলতো ঠেলে দিয়েছিলেন গোলকিপার কেইলর নাভাসের দিকে। কিন্তু বোঝাপড়ায় ভুল হলো। নাভাস নিজেই ততক্ষণে পোস্ট ছেড়ে বেরিয়ে এসেছিলেন বল ধরতে। দুজনের বোঝাপড়ার ভুলে বলটা চলে গেল রিয়ালেরই ফাঁকা পড়ে থাকা পোস্টে। ম্যাচের স্কোরলাইন ২-১, দুই লেগ মিলিয়ে ৩-৩, রিয়ালের ‘অ্যাওয়ে’ গোলের সুবিধাও শেষ।

তখন আবারও শঙ্কা, এবারও কি চ্যাম্পিয়নস লিগটা তার ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়নদের জন্য একটা ধাধা হয়ে থাকবে? চ্যাম্পিয়নস লিগ নাম হওয়ার পর যে কখনোই ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়নরা পরেরবার আর জেতেনি শিরোপাটা। রিয়াল যেভাবে গোল খেল, মনে হচ্ছিল, প্রকৃতি এবারও যেন একই ভাগ্য লিখে রেখেছে ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়নদের জন্য।

কিন্তু এবার আর হলো না। হতে দিলেন না রোনালদো। আর আরতুরো ভিদাল!

১০৫ মিনিটে রামোসের ক্রসে পা ছুঁইয়ে করলেন নিজের দ্বিতীয় গোল। যদিও এখানেও রেফারির ভুল, রামোসের ক্রসের সময় রোনালদো ছিলেন অফসাইড। কিন্তু রোনালদোর ওসব নিয়ে ভাবতে বয়েই গেছে। ওই গোলে রিয়াল যেমন স্বস্তি পেয়েছে, তেমনি বায়ার্নও কিছুটা মুষড়ে পড়েছে।

দুটির যোগফল? তিন মিনিট পরও আবারও রোনালদোর গোল। মাঝমাঠের একটু ওপর থেকে বল নিয়ে মার্সেলো দুর্দান্ত দৌড়ের পর বল দিলেন ফাঁকায় দাঁড়িয়ে থাকা রোনালদোকে। সেখান থেকে গোল করা তো রোনালদোর জন্য হাতের মোয়া। হয়ে গেল গোল! চ্যাম্পিয়নস লিগের অন্যতম স্মরণীয় গোলই। এই গোলেই যে চ্যাম্পিয়নস লিগ পেল তার ইতিহাসের প্রথম সেঞ্চুরি করা গোলস্কোরারকে—ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো!

রিয়াল তখন উচ্ছ্বাসে ভাসছে, বায়ার্নেরও যেন লড়াইয়ের আর প্রাণশক্তি বাকি নেই। সেটির সুবিধা তুলে নিলেন রিয়ালের আগামী দিনের সম্ভাব্য মহাতারকা মার্কো অ্যাসেনসিও! ১১২ মিনিটে করলেন নিজের প্রথম ও দলের চতুর্থ গোল!

সেমিতে উঠল রিয়াল, চলে গেল স্বপ্নপূরণের আরও দুই ধাপ কাছে। প্রথম দল হিসেবে চ্যাম্পিয়নস লিগ শিরোপা ধরে রাখার স্বপ্ন।

অন্য ম্যাচে লেস্টার সিটির মাঠে ১-১ গোলে ড্র করে সেমিতে উঠেছে অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদও। দুই লেগ মিলিয়ে অ্যাটলেটিকোর জয় ২-১ গোলে। আজ ম্যাচের ২৬ মিনিটে সাউলের গোলে এগিয়ে যায় অ্যাটলেটিকো, ৬১ মিনিটে সমতা ফেরান লেস্টারের জেমি ভার্ডি। লেস্টারের স্বপ্নযাত্রা এখানেই শেষ হলো, আর গত চার মৌসুমে তৃতীয়বারের মতো চ্যাম্পিয়নস লিগের সেমিতে উঠল ডিয়েগো সিমিওনের অ্যাটলেটিকো।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত