স্পোর্টস ডেস্ক

১০ জুলাই, ২০১৫ ২৩:৪২

উড়ন্ত বাংলাদেশকে মাটিতে নামিয়ে আনল দ. আফ্রিকা

নাসিরের উইকেট উড়ে যাওয়ার এই ছবিটিই ম্যাচের প্রতিকী চিত্র হতে পারে। আদতে দক্ষিণ আফ্রিকার বোলিংয়ে এভাবেই ছিন্নভিন্ন হয়ে গেছে বাংলাদেশ

গত বছরের শেষের দিকে নিজেদের মাটিতে জিম্বাবুয়েকে হোয়াইট ওয়াশ করার মাধ্যমে শুরু হয়েছিলো ওয়ানডে ক্রিকেটে বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা। বিশ্বকাপে দারুণ পারফরমেন্সের পর পাকিস্তানকে হোয়াইটওয়াশ, সর্বোপরি ভারতের বিরুদ্ধে সিরিজ জয়- সব মিলিয়ে ওয়ানডেতে যেনো অদম্য হয়ে উঠেছিলো বাংলাদেশ। সেই উড়ন্ত টাইগারদের শুক্রবার মাটিতে নামিয়ে আনলো দক্ষিণ আফ্রিকা।

ব্যাটসম্যানদের ব্যর্থতায় ৮ উইকেটের বিশাল ব্যবধানে প্রথম ওয়ানডেতে পরাজয় স্বীকার করেছে মাশরাফিবাহিনী। এরআগে দুটি টি-টুয়েন্টিতেও হারতে হয়েছে তাদের।

মূলত অভিষেকে সেরা বোলিংয়ের রেকর্ড গড়া কাগিসো রাবাদার তোপেই গুঁড়িয়ে যায় বাংলাদেশ।

বৃষ্টির কারণে ৪০ ওভারে নেমে আসা ম্যাচটি জিতে সিরিজে ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে গেল দক্ষিণ আফ্রিকা। এ নিয়ে টানা চারটি আন্তর্জাতিক ম্যাচে হারল বাংলাদেশ।

শুক্রবার মিরপুর শের-ই-বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে পৌনে তিন ঘণ্টা পরে শুরু হওয়া ম্যাচে টস জিতে ব্যাট করতে নেমে ৩৫ ওভার ৩ বলে ১৬০ রানে অলআউট হয়ে যায় বাংলাদেশ। জবাবে ৩১ ওভার ১ বলে ২ উইকেট হারিয়ে লক্ষ্যে পৌঁছে যায় দক্ষিণ আফ্রিকা।

স্বাগতিকদের ব্যাটিং ব্যর্থতায় বাংলাদেশের ইনিংসের পরই মোটামুটি ফল নিয়ে অনিশ্চয়তা শেষ হয়ে যায়।

ষষ্ঠ ওভারে অধিনায়ক মাশরাফি অতিথিদের অধিনায়ক হাশিম আমলাকে আর নাসির হোসেন চতুর্দশ ওভারে অন্য উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান কুইন্টন ডি কককে ফিরিয়ে দিলেও খেলার তার কোনো প্রভাব পড়েনি।

স্বাগতিকদের হতাশ করে দেখে শুনে খেলে দক্ষিণ আফ্রিকাকে বড় জয় এনে দেন ফাফ দু প্লেসি ও রাইলি রুশো (৫৩ বলে অপরাজিত ৪৫)। অবিচ্ছিন্ন তৃতীয় উইকেটে ৯৯ রানের জুটি গড়েন এই দুই জনে। ৬৩ রানে অপরাজিত থাকা দু প্লেসির ৭৫ বলের ইনিংসটি গড়া ৫টি চার ও একটি ছক্কায়।

কোনো উইকেট না পেলেও অতিথিদের ভুগিয়েছেন কেবল তরুণ মুস্তাফিজুর রহমান।

এর আগে রাবাদার দুর্দান্ত বোলিংয়ে শুরুতেই দিক হারায় স্বাগতিকরা। চতুর্থ ওভারের শেষ তিন বলে তামিম ইকবাল, লিটন দাস ও মাহমুদউল্লাহকে ফিরিয়ে দেন দক্ষিণ আফ্রিকার এই তরুণ।

দারুণ এক বলে তামিমকে বোল্ড করার পর লিটনকে ফেরান রাবাদা। শেষ বলে মাহমুদউল্লাহকে এলবিডব্লিউর ফাঁদে ফেলে তাইজুল ইসলামের পাশে দাঁড়ান এই তরুণ। ওয়ানডেতে কেবল এই দুই জনেরই অভিষেকে হ্যাটট্রিক করার কৃতিত্ব আছে।

প্রথম চার ব্যাটসম্যানের তিন জন শূন্য রানে আউট হলেও আক্রমণাত্মক ব্যাটিং করে দ্রুত রান তুলতে থাকেন সৌম্য সরকার (২৭ বলে ২৭)। বাঁহাতি এই ব্যাটসম্যানকে আউট করে নিজের চতুর্থ উইকেট নেন রাবাদা।

৪০ রানে প্রথম চার ব্যাটসম্যানকে হারানো বাংলাদেশ প্রতিরোধ গড়ে সাকিব আল হাসান ও মুশফিকুর রহিমের ব্যাটে। ৫৩ রানের জুটি গড়ে দলকে ভালো অবস্থানের দিকেই নিয়ে যাচ্ছিলেন এই দুই জন। জেপি দুমিনির বলে তুলে মারতে গিয়ে মুশফিকের বিদায়ে ভাঙে আশা জাগানো জুটি।

টি-টোয়েন্টি সিরিজে দুই অঙ্কেই পৌঁছাতে না পারা সাব্বির রহমান ব্যর্থ হয়েছেন প্রথম ওয়ানডেতে। ৫ রান করে ক্রিস মরিসের বলে বোল্ড হয়ে যান এই মিডলঅর্ডার ব্যাটসম্যান।

এরপর বেশিক্ষণ টিকেননি ওয়ানডে অলরাউন্ডারদের র‍্যাংঙ্কিংয়ের সেরা অলরাউন্ডার সাকিব (৫১ বলে ৪৮)। ইমরান তাহিরের বলে তিনি এলবিডব্লিউ হয়ে গেলে বড় সংগ্রহের আশা শেষ হয়ে যায় স্বাগতিকদের।

দ্বিতীয় স্পেলে ফিরে মাশরাফি ও জুবায়ের হোসেনকে ফিরিয়ে অভিষেকে সেরা বোলিংয়ের রেকর্ড গড়েন রাবাদা। অ্যালান ডোনাল্ডের পর দক্ষিণ আফ্রিকার দ্বিতীয় পেসার হিসেবে অভিষেকে পাঁচ উইকেট নেনে তিনি।

মাশরাফিকে কুইন্টন ডি ককের গ্লাভসবন্দি করার পর জুবায়েরকে বোল্ড করে ওয়েস্ট ইন্ডিজের ফিদেল এডওয়ার্ডসের পর দ্বিতীয় বোলার হিসেবে অভিষেক ছয় উইকেট নেওয়ার রেকর্ড গড়েন ২০ বছর বয়সী রাবাদা। ১৬ রানে তার ৬ উইকেট ওয়ানডেতে দক্ষিণ আফ্রিকার সেরা বোলিং।

শেষ বিশেষজ্ঞ ব্যাটসম্যান নাসিরের দৃঢ়তায় দেড়শ’ পার হয় বাংলাদেশের সংগ্রহ। দশম ব্যাটসম্যান হিসেবে আউট হওয়ার আগে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৩১ রান করেন তিনি।

 

আপনার মন্তব্য

আলোচিত