স্পোর্টস ডেস্ক

১৯ ডিসেম্বর, ২০১৯ ০৩:০৮

সোয়া চারশ’ রানে ম্যাচে ম্যাচসেরা বোলারই

চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স আর ঢাকা প্লাটুনের ম্যাচে দুই দলের বিশ ওভার করে চল্লিশ ওভারে রান হয়েছে রেকর্ড ৪২৬ রান। তবে ওই ম্যাচের ম্যাচসেরা কোনো ব্যাটসম্যান নন, ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরস্কার গেছে এক বোলারের হাতে। চট্টগ্রামের পেস বোলার মেহেদি হাসান রানা। চার ওভারে ২৩ রান খরচায় ৩ উইকেট নিয়ে রানবন্যার ম্যাচে তিনিই জিতেছেন ম্যাচ সেরা পুরস্কার।

চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে বুধবারের দ্বিতীয় ম্যাচে ১৬ রানে জিতেছে মাহমুদউল্লাহর দল। ২২১ রান তাড়ায় ২০৫ রানে থেমেছে মাশরাফী বিন মোর্ত্তজার ঢাকা।

অসুস্থ তামিম ইকবালের জায়গায় এই ম্যাচে প্রথমবারের মত খেললেন মমিনুল হক। বঙ্গবন্ধু বিপিএলে প্রথম নেমেই পেলেন ফিফটি। এ বাঁহাতির ৩৫ বলে ৫২ রানের ইনিংস অবশ্য ২২২ রানের লক্ষ্যের কাছে নিয়ে যেতে তেমন ভূমিকা রাখতে পারল না। শেষদিকে মাশরাফী ও থিসারা পেরেরা ঝড় তুলে জমিয়ে দিলেন ম্যাচ।

জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে এই জয়ে পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষেই থাকল মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স। ইনিংসের শেষ বলে শেষ উইকেট হারানোর আগে ঢাকা তোলে ২০৫। পেরেরা ২৭ বলে ৪ ছক্কা ও ৩ চারে করেন ৪৭ রান। শেষ ওভারে তাদের দরকার ছিল ২১ রান। মেহেদী হাসান রানার পুরো ওভারটিতে স্ট্রাইক ধরে রাখা পেরেরা নিতে পারেন মাত্র ৪ রান।

বিপিএলের ইতিহাসে এই নিয়ে চারবার কোনো ম্যাচে দুই ইনিংস মিলে রান চারশ ছুঁয়েছে। হয়েছে সর্বোচ্চের রেকর্ড। এই ম্যাচ পেছনে ফেলেছে প্রায় ৭ বছর পুরানো এক ম্যাচকে। ২০১৩ সালের জানুয়ারিতে সেই ম্যাচ হয়েছিল চট্টগ্রামের আরেক মাঠ, এমএ আজিজ স্টেডিয়ামে। দুরন্ত রাজশাহীর ২১৩ রানের জবাবে বরিশাল বার্নার্স করেছিল ২০৯। ম্যাচে রান হয়েছিল মোট ৪২২।

তালিকায় তিনেও আছে চট্টগ্রামের মাঠ। গত বিপিএলে জহুর আহমেদ চৌধুরি স্টেডিয়ামে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স ও খুলনা টাইটানসের ম্যাচে হয়েছিল মোট ৪০৬ রান। কুমিল্লা উঠেছিল ২৩৭ রানের পাহাড়ে, খুলনা করতে পেরেছিল ১৫৭। তালিকায় ঠাঁই পাওয়া পরের ম্যাচটির ভেন্যু ছিল সিলেট। গত বিপিএলে চিটাগং ভাইকিংসের ২১৪ রানের জবাবে খুলনা টাইটানস তুলেছিল ১৮৮। ম্যাচের মোট রান ৪০২।

হাই-স্কোরিং ম্যাচে ব্যাট হাতে দারুণ লড়াই করেছেন মাশরাফী। ইনিংসের ১৬তম ওভারে বোলিংয়ে আসা অফস্পিনার নাসির হোসেনকে মারেন টানা তিন ছয়। চতুর্থ বলে মারেন চার। টানা চার বাউন্ডারিতে হুহু করে বাড়ে রানের চাকা। দুর্ভাগ্য মাশরাফীর, আউট হয়ে যান ওই ওভারের পঞ্চম বলে। লংঅনে সীমানা দড়ি ঘেষে দাঁড়ানো ইমরুল কায়েস দারুণভাবে ক্যাচটি তালুবন্দী করেন। ৬ বলে ২৩ রান করে ফিরে যান মাশরাফী। ১৭২ রানের মাথায় ঢাকা হারায় সপ্তম উইকেট।

পেরেরা তখনও ক্রিজে থাকায় আশা টিকে ছিল ঢাকার। শেষ ৩ ওভারে দরকার পড়ে ৪২ রান। শেষ ২ ওভারে ৩৪, হাতে এক উইকেট। ১৯তম ওভারের প্রথম দুই বলে কেসরিক উইলিয়ামসকে ছক্কা মেরে পেরেরা জাগান জয়ের আশা। কিন্তু চট্টগ্রামের বোলারদের চাতুরতায় সেটি সম্ভব হয়নি। স্লোয়ার মেরে পেরেরার টাইমিং গড়বড় করে দেন কেসরিক ও রানা।

হোম ভেন্যুতে এসে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের দল পেল টানা দুই জয়। মঙ্গলবার রাতে লো-স্কোরিং ম্যাচে তারা ৪ উইকেটে হারায় সিলেট থান্ডারকে। ৫ ম্যাচে ৮ পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষস্থান ধরে রাখল চট্টগ্রাম।

মাশরাফী-আফ্রিদি-পেরেরাদের বোলিং আক্রমণের সামনে চট্টগ্রাম আগে ৪ উইকেট হারিয়ে তোলে ২২১ রান। বিপিএলের ইতিহাসে যা তৃতীয় সর্বোচ্চ সংগ্রহ।

ওপেনার লেন্ডল সিমন্স ৩৬ বলে ৫৭ রানের ইনিংস খেলে দলকে দেন বড় সংগ্রহের ভিত। পরে রান তোলার গতি শুধুই বাড়িয়েছেন মাহমুদউল্লাহ। ১৮তম ওভারের শেষ বলে আউট হওয়ার আগে মারেন ৪টি ছক্কা ও ৫টি চার। খেলেছেন চোট নিয়ে। করেছেন ২৮ বলে ৫৯ রান।

মাহমুদউল্লাহ চোট পান ইনিংসের ১২তম ওভারের শেষ বলে। সিমন্সের শটে ননস্ট্রাইক প্রান্ত থেকে দ্বিতীয় রান কাভার করতে গিয়ে টান লাগে ঊরুতে। পরে গ্যাপে ঠেলেও দৌড়ে দ্বিতীয় রান আর নিতে পারেননি। দূরে বল পাঠিয়েও খুঁড়িয়ে নিয়েছেন এক রান। সেই ইনিংসটাই শেষ করেছেন ঝড় তুলে।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:
চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স: ২০ ওভারে ২২১/৪ (সিমন্স ৫৭, ফার্নান্দো ২৬, ইমরুল ৪০, মাহমুদুল্লাহ ৫৯, ওয়ালটন ২৭*, সোহান ৭; মাশরাফি ৩-০-৪২-০, শাকিল ৩-০-২৭-১, মাহমুদ ৪-৫৫-২, মেহেদি ২-০-৩৩-০, থিসারা ৪-০-৩৩-০, আফ্রিদি ৪-০-৩০-০)

ঢাকা প্লাটুন: ২০ ওভারে ২০৫ (মুমিনুল ৫২, এনামুল ১, জাকের ২৭, ইভান্স ১৭, আসিফ ১৫, থিসারা ৪৭, আফ্রিদি ৯, মাশরাফি ২৩, মেহেদি ২, মাহমুদ ০, শাকিল ০*; নাসুম ৪-০-২৮-০, মেহেদি রানা ৪-০-২৩-৩, নাসির ৪-০-৬০-২, মুক্তার ৪-০-৪২-৩, উইলিয়ামস ৪-০-৪৮-২)

ফল: চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স ১৬ রানে জয়ী
ম্যান অব দা ম্যাচ: মেহেদি হাসান রানা

আপনার মন্তব্য

আলোচিত