নিজস্ব প্রতিবেদক

২১ ডিসেম্বর, ২০২০ ০১:৩০

বারবার বিতর্কে কাউন্সিলর তাজ

সিলেট সিটি করপোরেশনের ১০ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর তারেক উদ্দিন তাজ। গত নির্বাচনেই প্রথমবারের মতো কাউন্সিলর নির্বাচিত হন তিনি। তবে কাউন্সিলর হওয়ার আগে ও পরে বারবার বিতর্কে জড়িয়ে পড়ছেন তরুণ এই জনপ্রতিনিধি।

আওয়ামী লীগ দলীয় এই কাউন্সিলর সর্বশেষ বিতর্কের জন্ম দিয়েছেন আইনজীবী তালিকাভুক্তির জন্য বার কাউন্সিলের লিখিত পরীক্ষা চলাকালে রাজধানী ঢাকায় তাণ্ডব চালিয়ে।

শনিবার অনুষ্ঠিত এই পরীক্ষায় ঢাকার একটি পরীক্ষা হলে অরাজকতার অভিযোগে দায়েরকৃত মামলায় প্রধান আসামি করা হয়েছে সিলেট সিটি করপোরেশনের (সিসিক) কাউন্সিলর তারেক উদ্দিন তাজকে। শনিবার হাঙ্গামার পরই ঘটনাস্থল থেকে তাজকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

এরআগেও একাধিকবার বিতর্কে জড়ান তাজ। ২০১৩ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর সিলেটে দলীয় সমাবেশে এসে হামলার শিকার হন বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি)-এর সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম। ছাত্রলীগের একটি অংশ তার ওপর হামলা চালায়। এ ঘটনায় দায়েরকৃত মামলার আসামি ছিলেন সিলেট জেলা ছাত্রলীগের তৎকালীন সহ-সভাপতি তারেক উদ্দিন তাজ।

গত ১১ মার্চ তারেক উদ্দিন তাজের বিরুদ্ধে সংবাদ সম্মেলন করেন তার নির্বাচনী এলাকার কয়েকজন বাসিন্দা। সংবাদ সম্মেলনে এলাকাবাসীর পক্ষে ব্যবসায়ী মঈন উদ্দিন অভিযোগ করেন কাউন্সিলর তারেক উদ্দিন তাজ ও তার ভাই ইফতে কামরুল হাসান তায়েফ সরকারি ভূমি থেকে অবৈধভাবে মাটি বিক্রি করছেন এবং এলাকায় ও মদ-জুয়া ব্যবসায় আশ্রয় দিচ্ছেন। ১০ নং ওয়ার্ডের ঘাসিটুলা, মোল্লাপাড়া, বেতবাজার, চররঘাট ও কলাপাড়া এলাকার বাসিন্দারা তাদের কারণে অতিষ্ঠ বলেও সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করা হয়।

যদিও এমন অভিযোগ প্রসঙ্গে তখন তারেক উদ্দিন তাজ বলেছিলেন, আমার উন্নয়ন কাজ দেখে পরাজিত শক্তিরা অপপ্রচার করছে। আমার সময়ে যে উন্নয়ন হচ্ছে তা দশ বছরেও হয়নি।

বিজ্ঞাপন



এদিকে, গত ১১ ডিসেম্বর সিলেটের জৈন্তাপুরের একটি রেস্টুরেন্টে পাখির মাংস দিয়ে ভূরিভোজ করে সর্বশেষ বিতর্কে জড়ান তিনিসহ সিসিকের আরও ৪ কাউন্সিলর। ভূরিভোজের সেই ভিডিও ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়লে ব্যাপক সমালোচনার সৃষ্টি হয়।

শনিবার বার কাউন্সিলের পরীক্ষায় বিসিএস আই আর উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দে হাঙ্গামার পর তারেক উদ্দিন তাজকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এ তথ্য নিশ্চিত করে ঢাকা মহানগর পুলিশের নিউ মার্কেট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এসএম কাইয়ুম সিলেটটুডে টোয়েন্টিফোরকে বলেন, পরীক্ষা চলাকালে অরাজকতার দায়ে ঘটনাস্থল থেকেই তাজকে আটক করা হয়। পরে রোববার মামলা দায়েরের পর তাকে জেলহাজতে প্রেরণ করা হয়েছে। এই ঘটনায় দায়েরকৃত মামলায় আসামিদের মধ্যে প্রথমেই রয়েছে তাজের নাম।

এই মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পূর্ব ধানমন্ডির পুলিশ ফাঁড়ির এসআই সাহেব আলী জানান, তারেক উদ্দিন তাজকে আদালতের মাধ্যমে কেরানীগঞ্জ কারাগারে পাঠানো হয়েছে। তার বিরুদ্ধে পরীক্ষা কেন্দ্রে বিশৃঙ্খলা ও পুলিশের কাজে বাঁধা দেয়ায় তাদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে।

তিনি আরও জানান, বিসিএস আই আর উচ্চ বিদ্যালয়ের পরীক্ষা কেন্দ্রে পরীক্ষা চলাকালে সকাল ১১টার দিকে হৈচৈ শুরু হয়। এ সময় একদল উচ্ছৃঙ্খল পরীক্ষার্থী গেটের বাইরে থেকে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করেন এবং গেট ভেঙে ফেলার চেষ্টা করেন। এসময় হামলাকারীরা পরীক্ষার খাতা কেড়ে নিয়ে ছিঁড়ে ফেলেন। পরীক্ষা কেন্দ্রের কয়েকটি কক্ষে হামলা চালিয়ে জানালা ও দরজা ভাঙচুর করেন।

তারেক উদ্দিন তাজের গ্রেপ্তার ও বিভিন্ন অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে রোববার রাতে সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীর সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি।

সিটি কাউন্সিলর তারেক উদ্দিন তাজ সিলেট ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির পরিচালক (মিডিয়া, প্রশাসন ও জনসংযোগ) হিসেবে কর্মরত আছেন। তিনি এই বিশ্ববিদ্যালয় থেকেই আইন বিষয়ে ডিগ্রি লাভ করেন।

এ বিষয়ে সিলেট ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির উপাচার্য অধ্যাপক ড. শহীদ উল্লাহ তালুকদারের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি সিলেটটুডে টোয়েন্টিফোরকে বলেন, তারেক উদ্দিন তাজ আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলেন। এখন এই বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত আছেন। তবে উনি (তাজ) গ্রেপ্তার হওয়ার বিষয়ে আমার কিছু জানা নেই। এখনই প্রথম এটি শুনলাম। আমি বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখবো। তার আগে এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে চাই না।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত