০৯ নভেম্বর, ২০২৫ ২৩:০৪
গোলাপগঞ্জ ও বিয়ানীবাজার উপজেলা নিয়ে গঠিত সিলেট-৬ আসনে এবার বিএনপির মনোনয়ন পেয়েছেন জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এমরান আহমদ চৌধুরী। রোববার হযরত শাহজালাল (র.) এর মাজার জিয়ারত করে আনুষ্টানিকভাবে প্রচারণাও শুরু করেছেন তিনি।
তবে বিয়ানীবাজার উপজেলা বিয়ানীবাজার পক্ষ থেকে এমরানের বদলে এই আসনে ফয়সল আহমদ চৌধুরীকে প্রার্থী করার দাবি জানানো হয়েছে। কেন্দ্রের সিদ্ধান্ত পুণর্বিবেচনা করার দাবি জানিয়েছেন বিয়ানীবাজার উপজেলা বিএনপির নেতারা।
ফয়সল আহমদ সিলেট-৬ আসনে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন। ২০১৮ সালের নির্বাচনে ধানের শীষের প্রতীকে অংশ নিয়ে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ও সবেক শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদের সাথে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতা গড়ে তুলেন। তাকেই আবার প্রার্থী হিসেবে চাচ্ছেন বিয়ানীবাজার উপজেলা বিএনপির নেতারা।
গত শনিবার বিয়ানীবাজারে ঐতিহাসিক জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবসের অনুষ্ঠানে বিএনপির নেতারা এ দাবি জানান।
বিয়ানীবাজার পৌর বিএনপির সভাপতি মিজানুর রহমান রুমেলের সভাপতিত্বে উপজেলা বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক মিছবাহ উদ্দিনের পরিচালনায় আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন বিয়ানীবাজার উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ছরওয়ার হোসেন।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে ছরওয়ার হোসেন বলেন, ‘অত্যন্ত প্রতিকূল পরিস্থিতি ও চরম খারাপ অবস্থা ছিল ২০১৮ সালে। দলীয় নেতৃবৃন্দের উপর মামলা, হামলার পরও একটি মিনিটের জন্য এই আসন থেকে ফয়সল আহমদ চৌধুরী সরে যাননি। বীরদর্পে এলাকার নির্বাচনী প্রচারণা করে ১ লাখ ৮ হাজার ভোট পেয়েছেন। বিয়ানীবাজার-গোলাপগঞ্জকে আসনের দল এবং দলের বাইরে ভোটারের মনের মনিকোঠায় তিনি স্থান করে নিয়েছেন।’
তিনি বলেন, ‘এই আসনে মনোনয়ন ঘোষণার পর আমাদের প্রত্যেকের এই অবস্থা হয়েছে-বাড়ি থেকে বের হলে সবাই বলে-আমরা আশা করলাম কি? আর পেলাম কি?’ যেহেতু আমাদের মহাসচিব মনোনয়ন ঘোষণার সময় বলেছেন এটি সম্ভাব্য তালিকা। চূড়ান্ত তালিকা এখনো হয়নি। আমাদের দাবি, যদি চূড়ান্ত তালিকায় যেন ফয়সল আহমদ চৌধুরীর নাম অন্তর্ভূক্ত করা হয়।’
ফয়সল চৌধুরী আসলে সহজে বিজয় সম্ভব জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমাদের দৃঢ় বিশ্বাস এই আসন আমাদের নেতাকর্মীদের কষ্ট করা লাগবে না। বিপুল ভোটের মাধ্যমে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের প্রতীক ধানের শীষ বিজয়ী হয়ে আসবে।’
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বিয়ানীবাজার পৌর বিএনপির সহসভাপতি নজরুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা দলের পক্ষে কাজ করব, নেতৃবৃন্দের বিপক্ষে কিছু বলতে পারব না। কিন্তু আজকের এই উপস্থিতিতে নেতাকর্মীরা যে বক্তব্য রেখেছেন-আশা করি কেন্দ্র সেটি বিবেচনা করবেন।’
তিনি বলেন, ‘দল সমস্ত বাংলাদেশের জন্য মাঠের চিন্তা করে নেতাকর্মীদের মূল্যায়ন করা উচিত। কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ সেটা করেননি বলে আমি মনে করি না। কিছু কিছু জায়গায় ব্যতিক্রম ঘটেছে। আশা করি কেন্দ্র আমাদের যে বক্তব্যগুলো এসেছে, মানুষের চাহিদা, মাঠে অবস্থান কি, মাঠের অবস্থা কি তা মূল্যায়ন করবে।’
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বিয়ানীবাজার উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ও তিলপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘আমরা মনে করেছিলাম যদি ফয়সল আহমদ চৌধুরী নমিনেশন পান তাহলে অত্যন্ত সহজে আমরা এ আসনটি পার করে ফেলব। আমি আজকের এই বৈঠক থেকে একটা কথা বলতে চাই, ফয়সল আহমদ চৌধুরী আপনাকে মানুষ অনেক পছন্দ করে। আমরা এখানে যারা আছি আমরা আপনার পাশে ছিলাম, পাশে আছি, ভবিষ্যতেও আপনার পাশে পাবেন। আমি এই কথাটুকু দিয়ে যাচ্ছি।’
এতে বিয়ানীবাজার উপজেলা বিএনপির প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ফয়েজ আহমদ বলেন, ‘গোলাপগঞ্জ ও বিয়ানীবাজারের মা ও মাটির নেতা ফয়সল আহমদ চৌধুরী, দীর্ঘ আওয়ামী দুঃশাসনের সময় যিনি আমাদের বুকে আঁকড়ে রেখেছিলেন। বিগত দুঃসময়ে মাঠের রাজনীতি যে কত কঠিন ছিল আমরা জানি। আমাদের দেখা শোনার জন্য হাতেগুণা যে কয়েকজন নেতাকর্মী ছিলেন তাদের মধ্যে সিনিয়র নেতৃবৃন্দের মধ্যে ফয়সল আহমদ চৌধুরী ছিলেন অন্যতম। জেলখানা থেকে শুরু করে রাজপথ সবকিছুর দেখাশোনা তিনি করেছিলেন। আন্দোলন সংগ্রমে আমাদের বিভিন্ন দিক নির্দেশনা দিয়েছেন।’
এই আসনে কঠিন চ্যালেঞ্জ রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এই আসনকে উদ্ধার করতে হলে, জামায়াতে ইসলামের কেন্দ্রীয় লেভেলের একজন নেতা এখানে নির্বাচন করছেন। উনার সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে হলে, মাঠের ফলাফল ঘরে তুলতে হলে, ধানের শীষকে বিজয়ী করতে হলে ফয়সল আহমদ চৌধুরীর বিকল্প এই মুহূর্তে বিয়ানীবাজার-গোলাপগঞ্জে নেই। আমরা কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের কাছে আহ্বান জানাবো আপনারা পুনর্বিবেচনা করেন। এখনো সুযোগ আছে- তৃণমূলের নেতাকর্মীদের মনের ভাষা শুনেন।’
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে তিলপারা ইউনিয়ন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম সম্পাদক এবাদুল হক বলেন, ‘২০১৮ সালের নির্বাচনে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, সিলেটের খন্দকার আব্দুল মুক্তাদিরের পরে সারা দেশের মধ্যে তৃতীয় সর্বোচ্চ ভোট পেয়েছিলেন ফয়সল আহমদ চৌধুরী। যে ভোট জাতীয় রাজনীতিতে প্রভাব ফেলেছিল। ফয়ছল আহমদকে দিয়ে সিলেটে পরীক্ষা নেবেন না। উনার ভোট, উনার জনগণের ভালোবাসা জাতীয় রাজনীতিতে প্রভাব ফেলেছিল।’
তিনি দলের নেতৃবৃন্দের প্রতি অনুরোধ জানিয়ে বলেন, ফয়সল আহমদ চৌধুরীকে টিকেট দিতে হবে না, আপনারা একটি নিরপেক্ষ রিভিউ করেন, জনগণের মতামত কার পক্ষে যায়? যার পক্ষে যাবে আমরা উনাকেই মেনে নেবো।’
মনোনয়ন নয় রিভিউ চান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা অনুরোধ করব, আমরা একটি রিভিউ চাই- আমরা ফয়সল চৌধুরীর নমিনেশন চাই না। আমরা সঠিক রিভিউ চাই। আপনারা রিভিউ করেন। যদি রিভিউতে জননেতা ফয়সল আহমদ চৌধুরীর পক্ষে রায় আসে তাহলে তাকে আমরা চাই।’
অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে বিয়ানীবাজার পৌর বিএনপির সভাপতি মিজানুর রহমান রুমেল বলেন, ‘আমরা বিয়ানীবাজার পৌর বিএনপি গতকাল (শুক্রবার) এরকম একটি সভায় মিলিত হয়েছিলাম। সেই সভায়ও আমি দেখেছি, বিয়ানীবাজার পৌর বিএনপির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃবৃন্দের আবেগ, ভালোবাসা ফয়সল আহমদ চৌধুরীর প্রতি। তারা আবেগঘন কথা বলেছেন। আজকে এই সভায় বিয়ানীবাজার উপজেলা বিএনপির বিভিন্ন স্থরের নেতৃবৃন্দ, যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দলসহ সব নেতৃবৃন্দের বক্তব্য আবেগের। সেই আবেগের প্রমাণও হয়েছিল ২০১৮ সালের নির্বাচনে। আপনাদের এই ভালোবাসা দেখিয়েছিলেন।’
সিলেট জেলা তাতী দলের সদস্য আব্দুল খালিক বলেন, ‘নির্বাচনকে সামনে রেখে বিয়ানীবাজার-গোলাপগঞ্জে ধানের শীষের যে কাণ্ডারি এসেছেন তা আমাদের মনপুত হয়নি। আমরা ফয়সল আহমদ চৌধুরীর সঙ্গে দীর্ঘদিন কাজ করেছি। তিনি বিয়ানীবাজার-গোলাপগঞ্জের ঘরে ঘরে পৌঁছে গিয়েছেন।
তিনি বলেন, ‘৩ নভেম্বরের আগে আমাদের বিয়ানীবাজার-গোলাপগঞ্জে নির্বাচনের আমেজ ছিল। ৩ তারিখ প্রার্থী ঘোষণার পর সুনশান নীরবতা নেমে এসেছে। জানি না কেন মনে হয় আমাদের নির্বাচন শেষ হয়ে গেছে, এরকম এক পরিবেশ বিরাজ করছে। এরকম এক পরিস্থিতিতে বিএনপির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরামের কাছে আমার আবেদন থাকবে- এই মনোনয়ন যেন পুর্নমূল্যায়ন করা হয়।’
এ আসনটি উদ্ধার করতে হলে ফয়সল আহমদ চৌধুরীর বিকল্প নেই দাবি করে তিনি বলেন, ‘এই আসনটি আমাদের জাতীয়তাবাদীর খাতায় বা লিস্টে ছিল না মরহুম লুৎফুর রহমান এমপি সাহেবের পরে। কিন্তু ২০১৮ সালে ফয়সল আহমদ চৌধুরী এটিকে আবার জাতীয়তাবাদীর লিস্টে নাম তুলিয়েছিলেন। আমি তাই অনুরোধ জানাবো- চূড়ান্ত মনোনয়নে যেন ফয়সল আহমদ চৌধুরীকে ধানের শীষের প্রার্থী করা হয়।’
আপনার মন্তব্য