সিলেটটুডে ডেস্ক

১৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৮ ২০:০৫

পুলিশ বলছে হত্যা নয়, তাসফিয়া ‘আত্মহত্যা’ করেছেন

চট্টগ্রামের স্কুলছাত্রী তাসফিয়া আমিন পানিতে নেমে ‘আত্মহত্যা’ করেছে উল্লেখ করে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দিয়েছে চট্টগ্রাম মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ। যদিও লাশ তাফফিয়ার লাশ উদ্ধারের পর তার স্বজনদের সন্দেহ ছিল তাকে হত্যা করা হয়েছে।

রোববার (১৬ সেপ্টেম্বর) তাসফিয়া আমিন হত্যা মামলার প্রতিবেদন চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. ওসমান গণির আদালতে উপস্থাপনের জন্য প্রসিকিউশন শাখায় জমা দিয়েছেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা স্বপন কুমার সরকার।

চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার নির্মলেন্দু বিকাশ চক্রবর্তী বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, ‘তাসফিয়া আমিন হত্যা মামলার ফাইনাল রিপোর্ট জমা দিয়েছে নগর গোয়েন্দা পুলিশ। নগর গোয়েন্দা পুলিশের রিপোর্টে তাসফিয়ার মৃত্যু পানিতে ডুবে হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে।’

এ বিষয়ে গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (বন্দর) আবু বকর সিদ্দিক বলেছেন, “ঘটনার পারিপার্শ্বিকতা, ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন, ভিসেরা প্রতিবেদন ও প্রত্যক্ষদর্শী ১৬ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করে আমরা নিশ্চিত হয়েছি, তাসফিয়া আত্মহত্যা করেছে।”

তাসফিয়াকে হত্যা করা হয়নি উল্লেখ করে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা স্বপন সরকার বলেন, ‘ময়নাতদন্ত রিপোর্ট, ভিসেরা রিপোর্টে হত্যার কোনও আলামত পাওয়া যায়নি। তার শরীরে বিষক্রিয়ারও কোনও অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি। ধর্ষণের কোনও প্রমাণ মেলেনি। এসব বিষয়ে নিশ্চিত হওয়ার পর মামলায় গ্রেপ্তার হওয়া আসামি ও সাক্ষীদের সঙ্গে কথা বলে আমরা বুঝতে পারি তাসফিয়াকে হত্যা করা হয়নি।’

তিনি আরও বলেন, ‘অধিকতর তদন্ত শেষে আমরা নিশ্চিত হয়েছি তাসফিয়া পানিতে লাফ দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন।’

সেই সাথে আদালতে দাখিল করা চূড়ান্ত প্রতিবেদনে তাসফিয়া হত্যা মামলার সন্দেহভাজন ছয় আসামিকেও অব্যাহতি দেওয়ার আবেদন জানানো হয়। তবে কী কারণে তাসফিয়া আত্মহত্যা করেন, সে বিষয়ে স্পষ্ট কোনো ভাষ্য পাওয়া যায়নি চূড়ান্ত প্রতিবেদনে।

চূড়ান্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, গত ১ মে তাসফিয়া তার বন্ধু প্রেমের এক মাস পূর্তি পালন করতে সন্ধ্যা ৬টায় চায়না গ্রিল রেস্তোরাঁয় গিয়েছিলেন। তখন তাসফিয়ার মা তাকে খুঁজে না পেয়ে ওই তরুণের বন্ধুকে ফোন করেন।

আদনানের সাথে সম্পর্কটি তাসফিয়ার পরিবার জানতে পেরে তার কাছ থেকে মোবাইল ও সিম নিয়ে ফেলেন। তারপরও তারা গোপনে যোগাযোগ রাখছিলেন বলেও প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।

তদন্ত প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, “ঘটনার দিন তাসফিয়ার ধারণা হয়েছিল, তার মা সব জেনে গেছেন। সেই ভেবে তাসফিয়া পতেঙ্গা নেভাল বিচে চলে যায়। কিছুক্ষণ আইল্যান্ডে বসে থেকে সে নদীর পাড়ে পাথরের উপর গিয়ে বসে। রাত সাড়ে ৮টার দিকে কর্ণফুলী নদীর দিকে তাসফিয়া হেঁটে যায় এবং তারপরই একটি চিৎকারের শব্দ আসে।”

এ বিষয়ে গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (বন্দর) আবু বকর সিদ্দিক বলেন, “মামলার দায়িত্ব নেওয়ার পর আমরা ঘটনাস্থলের আশে পাশে থাকা লোকজন ও দোকানিদের সাথে কথা বলি। তারা জানিয়েছে, তাসফিয়া বেশ কিছুক্ষণ একা বসে থাকার পর পাথরের ওপর দিয়ে হেঁটে নদীর দিকে গিয়েছিল। পরে নদীর দিক থেকে একটি আওয়াজ শুনতে পেয়ে তারা টর্চ নিয়ে খুঁজেছিলেন।”

তবে চায়না গ্রিল রেস্তোরাঁয় সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে পুলিশ যে অটো রিকশায় ছবি পেয়েছিল সেই অটো রিকশায় নম্বর শনাক্ত করতে পারেনি পুলিশ। সেই সাথে চালককেও পাওয়া যায়নি বলে জানিয়েছে পুলিশ।

উল্লেখ্য, গত ২ মে সকালে চট্টগ্রাম নগরের পতেঙ্গার ১৮ নম্বর ব্রিজঘাট পাথরের ওপর থেকে সানসাইন স্কুল অ্যান্ড কলেজের নবম শ্রেণির ছাত্রী তাসফিয়া আমিনের (১৬) মরদেহ উদ্ধার করে পতেঙ্গা থানা পুলিশ।

লাশ উদ্ধারের পর পুলিশ জানতে পারে, ঘটনার আগের দিন মঙ্গলবার (১ মে) সন্ধ্যায় তাসফিয়া তার ছেলেবন্ধু আদনান মির্জার সঙ্গে রেস্টুরেন্টে খেতে যায়। এরপর থেকে সে নিখোঁজ ছিল।

তাসফিয়ার লাশ উদ্ধারের পর রাতেই পুলিশ অভিযুক্ত আদনানকে নগরীর খুলশী এলাকা থেকে আটক করে। পরবর্তীতে বৃহস্পতিবার (৩ মে) তাসফিয়ার বাবা বাদী হয়ে আটক আদনান মির্জাকে প্রধান আসামি করে পতেঙ্গা থানায় ৬ জনের বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলার অন্যসব আসামীরা হলেন- সৈকত মিরাজ, আশিক মিজান, ইমতিয়াজ সুলতান ইকরাম, মো. মোহাইন ও মো. ফিরোজ।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত