তুষার গায়েন

১৩ মার্চ, ২০১৬ ১০:৩৭

কাব্যসৃষ্টির নিঃসঙ্গ ভাষাযুদ্ধে আজীবন যোদ্ধা রফিক আজাদ

কবি রফিক আজাদের মৃত্যুতে শোকাহত বাংলাদেশের সাহিত্যপাড়া। দেশ ও দেশের বাইরে যেখানে কবিতা পৌঁছেছে সেখানেই কবি পৌঁছেছেন; আগে যা ছিল কাব্যিক দ্যোতনা, মৃত্যুসংবাদে তা একান্তই কাব্যিক হাহাকার।

কবির মৃত্যুতে প্রবাসে থাকা কবি তুষার গায়েন ফেসবুকে কবির স্মৃতিরোমন্থনে লিখেছেন, "একজন কবি যিনি কাব্যসৃষ্টির নিঃসঙ্গ ভাষাযুদ্ধে আজীবন সামিল, শত্রুর বিরুদ্ধে দেশমাতৃকার লড়াইয়ে সশস্ত্র যোদ্ধা; ব্যক্তি জীবনে উদার অমায়িক, হৃদয়াবেগ ও শিশু সারল্যে পরিপূর্ণ --তাঁর অন্তিম প্রস্থান আমাদের জন্য দূর্বহ হবে, এটাই স্বাভাবিক!"

কবি রফিক আজাদকে উদ্দেশ করে লেখা কবি তুষার গায়েনের ফেসবুক স্ট্যাটাসের বিস্তারিত-

কবি রফিক আজাদের প্রয়াণের সংবাদ শুনে প্রথমেই মনে হ'ল, কৈশোর-তারুণ্যের ঘোরলাগা সেই প্রথম কবিতাযাপনের কালে যেসব কবিদের দিকে বিস্ময়ের সাথে তাকিয়ে থাকতাম এবং যাদের কবিতা পড়ে নিজের কাব্য সৃষ্টির পথকে প্রস্তুত করে নেয়ার কথা ভাবতাম, কবি রফিক আজাদ তাঁদের একজন ছিলেন।

বয়স বাড়ার সাথে সাথে নিজের পথ, প্রকরণ ও ভাবনাজগত পাল্টেছে সত্যি; কিন্তু আদি প্রেরণার স্থানে যারা ছিলেন, তাঁদের অবদান চির স্মর্তব্য।

বাংলাদেশের আধুনিক কবিতা যে মনস্তত্ব, যুগ-যন্ত্রণা ও বিশ্ববীক্ষণকে আত্মস্থ করার পাশাপাশি অসাম্প্রদায়িক বাঙালি জাতিসত্তার ঐতিহাসিক ও রাজনৈতিক সংগ্রাম এবং পাশাপাশি এর অর্জন ও বিপর্যয়কে ধারণ করে, কবি রফিক আজাদ তার অন্যতম রূপকার ছিলেন।

একজন কবি যিনি কাব্যসৃষ্টির নিঃসঙ্গ ভাষাযুদ্ধে আজীবন সামিল, শত্রুর বিরুদ্ধে দেশমাতৃকার লড়াইয়ে সশস্ত্র যোদ্ধা; ব্যক্তি জীবনে উদার অমায়িক, হৃদয়াবেগ ও শিশু সারল্যে পরিপূর্ণ --তাঁর অন্তিম প্রস্থান আমাদের জন্য দূর্বহ হবে, এটাই স্বাভাবিক!

দেশে যখন ছিলাম, দু'একটি কবিতা অনুষ্ঠানে তাঁকে দেখার এবং কথা শোনার সুযোগ হয়েছে এবং নিউইয়র্কে এক কবিবন্ধুর বাসায় একান্ত আলাপে তাঁর কাছ থেকে বাংলাদেশের রাজনৈতিক বহু সন্ধিক্ষণের ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা শোনার সুযোগ পরিস্থিতি ও সময়াভাবে হাতে পেয়েও হারিয়েছি। সেদিন তিনি উজাড় করে কথা বলার মত মানসিক অবস্থায় ছিলেন। মৃদু আক্ষেপ করে বলেছিলেন, "তুষার, আজকে যে আলাপটা হতে গিয়েও হ'ল না, সেটা হয়ত আর কোনোদিন হবে না।"

সেই আলাপ অসম্পূর্ণ রেখে আমার ভিতরে এক অস্থির আগ্রহের জন্ম দিয়ে রফিকভাই চিরতরে নাগালের বাইরে চলে গেলেন। শোকস্তব্ধ হৃদয়ে আপনার সেদিনের আলোছায়া মাখা চৈতন্যের বাকস্ফূর্তি এখন স্মরণ করছি। যেখানেই থাকুন, যে লোকেই বিচরণ করুন, ভালো থাকুন, এই প্রার্থনা!

উল্লেখ্য, বাংলা সাহিত্যের অন্যতম জনপ্রিয় এবং একুশে পদক ও বাংলা একাডেমি পুরস্কারপ্রাপ্ত কবি রফিক আজাদ শনিবার (১২ মার্চ) বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।

মৃত্যুকালে  কবির বয়স হয়েছিল ৭৪ বছর। মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণের পর রফিক আজাদ প্রায় দুই মাস ধরে বঙ্গবন্ধু মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) ছিলেন।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত