রাজু আহমেদ

১৭ মার্চ, ২০১৬ ০১:১০

মুক্তির তালাশে...

চারদিকে নৈরাজ্য দেখে প্রতিবাদী সত্ত্বার জাগ্রত হতে ইচ্ছা করে। প্রতিবাদ করতে গেলেই নির্যাতিত-নিপীড়িত হই। কেননা নৈরাজ্যের জনকেরা সমাজের পরিচালক। স্বয়ং রাষ্ট্র তাদের পৃষ্ঠপোষকতা করে। সকল অনাচারের জন্য দায়ী দুর্নীতি।

যে রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পদ থেকে দুর্নীতির ধারা বইতে শুরু করে এবং সে স্রোতে ভেসে যায় সমাজ সংস্কারকদের বিবেক, সে সাম্রাজ্যে নৈতিকতার আশ্রয় খড়কুটোর মত ভেসে যায় ভাটির টানে। যে দেশের হত্যাকারী, ধর্ষক, গুণ্ডা, ডাকাত, চাঁদাবাজ, লুণ্ঠনকারী, ছিনতাইকারীরা রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় শুধু আশ্রয়ই পায়না বরং বুক ফুলিয়ে ছুটে চলার, নেতা হবার সুযোগ পায় সে দেশের সাধারণ মানুষ তার অধিকার বুঝে পাবে এমনটা ভাবাও অন্যায় হয়ে দাঁড়ায়। যে দেশের মানুষ মসজিদে ঠুকঠাক দু’টো সেজদা দিয়ে বের হয়েই, ঠাকুরের নাম জপেই দুর্নীতিতে নিজেকে ডুবিয়ে দেয়, সে দেশের উন্নতির স্বপ্ন অলীক ফ্রেমে বাঁধা পড়েছে সেই সুদূঢ় অতীতকালে।

দেশের কল্যাণের জন্য দেশপ্রেমিকের সাথে দেশদ্রোহের আনুপাতিক হারের যে তারতম্য থাকা উচিত ছিল আমাদের দেশে ঠিক তার উল্টো। এখানে দেশপ্রেমিকে সার্চ লাইট দিয়ে খুঁজে বের করতে হয়। কাউকে নেতা বানিয়ে দিলেই পাঁচ বছরের ব্যবধানে তার সম্পদ হাজারগুন বেড়ে যায়। ক্ষমতার অপব্যবহারে তারা টয়লেটের ওপরেও যতটুকু ক্ষমতা প্রয়োগ করা যায় তা প্রয়োগ করতে একটুকুও সংকোচ করে না।

স্বাধীনতার পর প্রায় চার যুগ পার হলেও দেশের অবস্থার কাগজে কলমে ছাড়া খুব বেশি উন্নতি হয়নি। আজ শুধু বলতে পারছি, আমরা স্বাধীনতা কিন্তু এ স্বাধীনতা কোন ঠাকুরের পূজায় লাগবে যে স্বাধীনতা সাধারণ মানুষকে স্বাধীনভাবে কথা বলতে, স্বাধীনভাবে বাঁচার স্বাধীনতা দেয়না।

মুক্তির স্বাদ পেতে, প্রথম আন্দোলন করলাম ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে কেননা ব্রিটিশরা আমাদেরকে শোষণ করেছিল। মুক্তিও পেলাম। সে মুক্তির ৬৮ বছর পরে আমরা ইংল্যান্ডে একটু আশ্রয় পাওয়ার জন্য যে কোন ত্যাগ করতে রাজি। যদি প্রয়োজন হয় তবে নিজ দেশের কপালে লাথি মারতেও!

দেশে থেকে সম্মানিত জীবিকা অর্জনের বিপরীতে কেউ যদি কাউকে বলে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যে তাকে ঝাড়ুদারের কাজ দেয়া হবে তবে সে খুশিতে আটখানা হয়ে যাবে। কি ফল দিল তবে সে স্বাধীনতা? পাকিস্তানের সাথে যতদিন ছিলাম তারা আমাদের সাথে ভ্রাতৃসূলভ আচরণ করেনি বটে তবে তাতে কষ্ট পাইনি কেননা ওদের আর আমাদের মধ্যে জাতিগত পার্থক্য ছিল। হিন্দুসমাজের ব্রাক্ষ্মন আর শূদ্রের মধ্যে যেমন পার্থক্য ঠিক ওরাও আমাদেরকে শূদ্রের কাতারের মনে করত। কিন্তু নিজ ভূখণ্ডের আপন সম্পর্কের ভ্রাতৃগণ যখন ভ্রাতৃত্বের আচরণ করেনা তখন কষ্টে অন্তরাত্মা কুঁকড়ে ওঠে। হতাশ হই, লজ্জায় ডুবে যাই।

চারদিকে যে দুরবস্থা চলছে তা দেখে পরিবর্তিত হতে খুব ইচ্ছা করে। সহ্য করার শক্তি হারিয়েছি বহু আগে। এখন চিৎকার করে বলতে ইচ্ছা করে, বিবেক তুমি ভোঁতা হও, চোখ অন্ধ হও, মুখ মুকের অভিনয় করো, কান তুমি বধির হও আর সব মিলিয়ে চিন্তাহীন জড়দ্রব্যে পরিণত করে রাখো।

কোন অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে গেলেই চিরতরে নিস্তব্ধ হতে হবে; তাতে স্রষ্টার ইচ্ছা থাকা বা না থাক! মুক্তি চাই, চিরমুক্তি। হোক সেটা বীরের মত কিংবা কাপুরুষের মত। তবুও মুক্তির আজ খুবই প্রয়োজন। অনাচার, অত্যাচার থেকে যোজন যোজন দূরে সরে যেতে চাই। হোক সেটা স্রষ্টার ইচ্ছায় কিংবা স্বেচ্ছায়।

লেখাটি রাজু আহমেদ-এর ফেসবুক টাইমলাইনেও প্রকাশিত।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত