সাব্বির খান

২৮ অক্টোবর, ২০১৬ ০০:৫১

প্রধানমন্ত্রী বরাবর খোলাচিঠি: প্রসঙ্গ ধর্মনিরপেক্ষতা

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী,
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার।

ধর্মীয় সন্ত্রাস ও মৌলবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে আপনার অবস্থান বিশ্বের অন্যতম প্রথম সাড়িতে, আদায় করেছেন বিশ্বের সমীহ ও সম্মান। সোনার বাংলা বিনির্মাণে আপনার ইতিবাচক পদক্ষেপে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। ধর্ম মন্ত্রণালয়ে স্বাধীনতা-উত্তর শুধু বিশেষ একটা ধর্ম থেকেই মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী বা উপমন্ত্রীদের নিয়োগ দেয়া হয়েছে। একটা সময় ছিল, যখন পশ্চাৎপদ রাজনীতির কারণেই এটা সম্ভব হয়েছে। কিন্তু সময় বদলেছে; পরিবর্তন হয়েছে বিশ্ব-রাজনৈতিক মানচিত্রের। সময় হয়েছে নতুন করে ভাবনার।

আমার ধারনা, এই সংস্কৃতির পরিবর্তন ঘটানো সম্ভব। দরকার শুধু গভীর চিন্তা ও সদিচ্ছা। বর্তমান সরকার যেভাবে বাংলাদেশে সকল ধর্মের সহাবস্থান নিশ্চিতকরণের দায়ভার মাথায় তুলে নিয়েছেন, তা নিঃসন্দেহে প্রশংসাযোগ্য এবং বিশ্বে তা নজিরবিহীন।

এই প্রক্রিয়াকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেয়ার জন্য কিছু প্রস্তাব দিচ্ছি:
প্রধানমন্ত্রী যেহেতু একাধিক মন্ত্রণালয়ে পূর্ণমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করতে পারেন, তাই ধর্ম মন্ত্রণালয়ে পূর্ণমন্ত্রী হবেন স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী।

প্রধানমন্ত্রীর অধীনে বাংলাদেশের অন্যান্য ধর্মীয়-গোষ্ঠী থেকে একজন করে প্রতিমন্ত্রী থাকবেন। অর্থাৎ বাংলাদেশে মুসলমান, হিন্দু, খ্রিষ্টান, বৌদ্ধ সহ আরো যেসব ধর্মের মানুষ বাংলাদেশে ভোটার, প্রত্যেকটি ধর্মীয়-গোষ্ঠী থেকে একজন করে ধর্মপ্রতিমন্ত্রী থাকবেন। যেমন: প্রতিমন্ত্রী-ইসলাম, প্রতিমন্ত্রী-হিন্দু, প্রতিমন্ত্রী-বৌদ্ধ, প্রতিমন্ত্রী খ্রিষ্টান... ইত্যাদি।

ধর্ম মন্ত্রণালয় থেকে ধর্ম এবং ধর্মীয় সম্প্রদায় সংক্রান্ত যত সিদ্ধান্তই নেয়া হবে, তাতে সংশ্লিষ্টতা থাকবে বাংলাদেশের সব ধর্মীয়গোষ্ঠীরই। যেমন ধরা যাক, ধর্ম মন্ত্রণালয়ের সভায় পূর্ণমন্ত্রীর (প্রধানমন্ত্রী) সভাপতিত্বে ঈদ, পূজা, বিহার বা বড়দিনের ব্যাপারে যখন কোন সিদ্ধান্ত হবে, সেখানে মতামত এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণে সহায়তা করবে সব ধর্মেরই প্রতিনিধিরা। সবার সহযোগিতায় এবং অংশগ্রহণে উৎসবে মেতে উঠবে বাংলাদেশ।

যেকোনো বিপর্যয়কালেও বাংলাদেশের সব ধর্ম-বর্ণের সম্মিলিত অংশগ্রহণেই গড়ে উঠবে প্রতিরোধ।

ধরা যাক, কোথাও একটা মসজিদ, মন্দির, প্যাগোডা বা গির্জা মেরামতের জন্য সরকারী তহবিল থেকে বরাদ্দ দেয়া হবে, সেখানে সিদ্ধান্ত দেবে সব ধর্মের প্রতিনিধিত্বকারী মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রীরা। ধর্ম মন্ত্রণালয় থেকে মসজিদ নির্মাণ বা মেরামতের জন্য একই সাথে পরামর্শ ও সিদ্ধান্ত দেবে মুসলমান, হিন্দু, বৌদ্ধ এবং খ্রিষ্টান প্রতিনিধিগণ। মন্দির-গির্জা-প্যাগোডার জন্যও ঠিক একই প্রক্রিয়ায় হবে সিদ্ধান্ত এবং বরাদ্দ দেয়া।

ধর্ম মন্ত্রণালয়ের বিশেষ কোন সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত থাকবেন সব ধর্মের মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রীগণ, যারা একই সাথে সরকার ও বিভিন্ন ধর্মের প্রতিনিধিত্বকারী। ধর্ম মন্ত্রণালয়ের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে থাকবে সব ধর্মের প্রতিনিধিত্বকারীর স্বাক্ষর।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, দয়া করে ভেবে দেখবেন কি প্রস্তাবটা? একাধিক প্রতিমন্ত্রী নিয়োগের ক্ষেত্রে যদি সাংবিধানিক বাধা থাকে, তাহলে এই সরকারের আমলেই তা দূর করা সম্ভব। আমি মনে করি, এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে যেমন সম্ভব বাংলাদেশের সব ধর্মের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করা, তেমনি সংবিধানের ধর্মনিরপেক্ষতাবাদকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেয়া।

বাংলাদেশের বিভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের মাঝে সৃষ্টি করা অসহিষ্ণুতা ও প্রকাশ্য ভেদাভেদের সুযোগ নিচ্ছে একাত্তরের পরাজিত শক্তি। শুধু একারণেই জঙ্গি ও মৌলবাদকে প্রতিহত ও নির্মূল করতে সকল ধর্মের সহাবস্থানের কোন বিকল্প নেই।

জয় বাংলা। জয় বঙ্গবন্ধু।

  • সাব্বির খান : রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও কলাম লেখক।
  • ছবি : ইয়াসিন কবির জয়

আপনার মন্তব্য

আলোচিত