সাব্বির খান

২৩ অক্টোবর, ২০১৬ ০৩:১৩

আওয়ামী লীগের কাউন্সিল ও একান্ত ভাবনা

সোভিয়েত ইউনিয়ন একদিনে ভাঙেনি। একজন গর্বাচভ বা বরিস ইয়েলৎসিন বানাতে প্রতিপক্ষ পশ্চিমাদের অনেক বছর সময় লেগেছিল। সোভিয়েত রাশিয়া কয়েক ঘণ্টার মধ্যে যেভাবে তাসের ঘরের মত ভেঙে পড়েছিল, তার মূল কারণগুলো ছিল “আগাম প্রস্তুতি ও সূক্ষ্ম নির্ভুল পরিকল্পনা”।

প্রসঙ্গক্রমে কথাগুলো বলছি এজন্য যে, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের যে ২০তম জাতীয় কাউন্সিল ঢাকায় হচ্ছে, তার সাথে সোভিয়েত ইউনিয়নের শেষের বছরগুলোর যথেষ্ট মিল পাওয়া যায়। ভুলে গেলে চলবে না যে, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের বন্ধু যতগুলো, শত্রু তার দ্বিগুণের চেয়ে কম নয়।

একজন ওবায়দুল কাদের আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পদে হুট করেই প্রার্থী হওয়ার কথা ভাবতে পারেন বলে আমি মনে করিনা। তিনি দীর্ঘদিন ধরে তৈরি হয়েছেন বা তাঁকে তৈরি করা হয়েছে। এই তৈরির ক্ষেত্রেও প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে তৃতীয় 'ইচ্ছা' কাজ করেছে বলে আমার ধারনা। কাউন্সিলের ঠিক দুই দিন আগে থেকে সম্মিলিতভাবে কিছু মিডিয়া যেভাবে কাদের সাহেবকে জিএস পদের প্রার্থী হিসেবে “নো হয়ার” থেকে একেবারে সামনে নিয়ে এলো, তা কিছুটা হলেও আমার ধারনার পক্ষে সাক্ষ্য দেয়।

এ প্রসঙ্গে আরো কিছু যৌক্তিক পয়েন্টের কথা তুলে ধরা যাক। একজন সৎ, আদর্শবান এবং আওয়ামী ঘরানার একচ্ছত্র নেতা হয়েও সাধারণ সম্পাদক পদে বর্তমানে যিনি আছেন, তিনি বিভিন্ন অপপ্রচারের শিকার হয়েছেন বছরের পর বছর ধরে। ফলশ্রুতিতে তাঁর কাজের পরিধি ক্ষুণ্ণ ও সীমিতই শুধু হয়নি, তিনি মন্ত্রিত্বও হারিয়েছেন, যা অনেকেই হয়ত চেয়েছেন। সব অপপ্রচারের কথা এখানে তুলে না ধরেও এভাবে বলা যায় যে, কাদের সাহেবের প্রস্তুতিমূলক কাজকর্মগুলোর দিকে তাকালে দেখা যায় যে, লীগের কথিত বর্তমান 'অযোগ্য' সাধারণ সম্পাদক হিসেবে সৈয়দ আশরাফ সাহেবের বিরুদ্ধে যে সব অপপ্রচারগুলো সূক্ষ্মভাবে পাবলিকের ও নেতাকর্মীদের মুখে মুখে ছড়িয়েছে বা ছড়িয়ে দেয়া হয়েছে, ঠিক তার বিপরীতমুখী কাজগুলো ওবায়দুল কাদের সাহেব সবার অগোচরে ইন্টেনশনালী পাবলিককে করে দেখিয়েছেন বা দেখাতে সক্ষম হয়েছেন গত কয়েক বছর ধরে। মিডিয়াতেও তাঁর ভাবমূর্তি ঈর্ষাজনকভাবে অন্যান্যদের চেয়ে অনেক ভাল, যা বোধগম্য নয়।

স্বভাবত কারণেই তিনি এই মুহূর্তে সাধারণ সম্পাদক পদে তাঁর প্রধান প্রতিপক্ষ আশরাফ সাহেবকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিতে সাহস পেয়েছেন বা সক্ষম হয়েছেন। সোভিয়েত ইউনিয়ন ভাঙার পেছনেও এই যৌক্তিকতাই একধরনের পন্থা হিসেবে অনুসরণ করেছিল পশ্চিমারা।

পদপ্রার্থিতাকে জনসমর্থিত করার জন্য কিছু জনগণের সমর্থনও দরকার হয়। সেক্ষেত্রেও দেখা যাচ্ছে যে, ওবায়দুল কাদের সাহেবের বলয় যারা ঘিরে রেখেছেন, তাঁরাও 'অদক্ষ-অপরিপক্ব' একটা হাইব্রিড গ্রুপের বলয়, যা তিনি বিগত বছরগুলোতে গড়ে তুলতে সক্ষম হয়েছেন। এই গ্রুপের প্রায় প্রতিটি মুখই তিনি বাছাই করেছেন ইয়াং জেনারেশন ও ছাত্রলীগ থেকে, যাদের ভিড়ের ধাক্কাধাক্কিতে মুল স্রোতের ত্যাগী নেতারা ছিটকে পড়েছেন।

একটা সংসারের ভাঙনটা শুরু হয় প্রথমত "মন" থেকে। তারপর আস্তে আস্তে তা গড়ায় আইনের সাতপাঁচে। শেষমেশ বিচ্ছেদ হয় অবধারিত একটা ফ্যাক্টর। আমি মনেপ্রাণে চাই ও প্রার্থনা করি, আমার ধারনাগুলো ভুল হোক। তবে সার্বিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে শুধু এতটুকুই বোঝা যায় যে, সাধারণ সম্পাদক পদে ভুল নির্বাচনের কারণে অতি প্রাচীন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ভিতরেও ফাটল ধরাটা হয়ত অবধারিত বিষয় হয়ে দাড়াতে পারে, যা সহসাই কারো চোখে পড়বে না।

তবে, ভাঙন যখন অবধারিত হবে, তখন হয়ত অনেক দেরি হয়ে যাবে। তৃতীয় নয়ন ২০১৮ সালের পরবর্তী নির্বাচনের দিকে।

যেকোনো পরিস্থিতিতে প্রাণপ্রিয় নেত্রী শেখ হাসিনার পাশে দাঁড়ানো আমাদের সবার শুধু কর্তব্যই নয়, পবিত্র দায়িত্বও।

  • সাব্বির খান : রাজনৈতিক বিশ্লেষক।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত