তুষার গায়েন

২৭ এপ্রিল, ২০২০ ২১:০০

মানুষ বাঁচানো হোক সবার অঙ্গীকার

আজ এই মহামারীর দিনে আমরা পৃথিবীর যে প্রান্তেই থাকি না কেন, এক চোখ দিয়ে নিজের নিরাপত্তার দিকটা দেখি, অন্য চোখ তাকিয়ে থাকে বাংলাদেশের দিকে, কেমন আছে সেখানে সবাই! বড় এবং সমৃদ্ধ দেশগুলো যেখানে সম্ভাব্য সব ব্যবস্থা নিয়েও হিমশিম খাচ্ছে এই গুপ্তঘাতক করোনার মোকাবিলায়, সেখানে বিভিন্নভাবে পশ্চাৎপদ বাংলাদেশের অবস্থা সহজেই অনুমেয়। কিন্তু যে ব্যাপারটা বেশি হতাশ করে, তাহলো এই মহামারীর সাথে যুদ্ধ জিততে হলে মানব প্রজাতি হিসেবে এই মুহূর্তে আমাদের করণীয় কী, আমাদের নিরাপত্তা ব্যবস্থা কেমন হওয়া উচিত তা অবগত হয়েও দেশের মানুষ এবং বাংলাদেশ সরকার যেন ঠিকভাবে পথ চলতে চাচ্ছে না।

বিজ্ঞাপন

দেশে করোনা চিকিৎসার সুব্যবস্থা এখনও তৈরি হয়নি, মানসম্পন্ন পিপিই-র অভাবে ডাক্তার এবং নার্সরা ক্রমাগত আক্রান্ত হচ্ছেন, লোকজন ঘরে থাকার নির্দেশ ঠিকভাবে পালন করছে না, ধর্মব্যবসায়ীরা ঘরে বসে ধর্ম-কর্ম করার নির্দেশকে ধর্ম বিরোধিতা বলে মানুষকে উস্কানি দিচ্ছে এবং বড় জমায়েত করে শক্তি প্রদর্শন করছে। এমন একটি অবস্থায় কীভাবে গার্মেন্টস খুলে দেয়া যায়? পোশাক শ্রমিকদের নামমাত্র মজুরি দিয়ে দেশের গার্মেন্টস মালিকরা সম্পদের পাহাড় গড়ছেন অথচ আজ এই বিপদের দিনে তাদের কোনো দায়িত্ব নিচ্ছে না, বেতন দিচ্ছে না, একবার পায়ে হাঁটিয়ে ঢাকায় আনছে আবার ফেরত পাঠাচ্ছে তাদের।

এর মধ্যে কী ঘটল যে গার্মেন্টস খুলে দিলেন মালিকরা? মরলে তো এই গরিবরা মরবে গাদাগাদি করে বসে এর গায়ে ও রোগ ছড়িয়ে! কিন্তু আপনারাও কি বাঁচবেন যদি মহামারী ছড়িয়ে পড়ে, ঘরে অবরুদ্ধ থেকেও কি সম্ভব হবে বাঁচা? আরও কিছু দিন তো দেখা যেতো অপেক্ষা করে, শ্রমিকদের কিছু অর্থ সহযোগিতা দিয়ে।

এর মধ্যে দেশের বিজ্ঞানী ড. বিজন কুমার শীল এবং গণস্বাস্থ্যের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ তাঁদের সমন্বিত উদ্যোগে রোগ নির্ণয়ের জন্য কিট প্রস্তুত করেছেন। সেটা নিয়েও চলছে নানা নাটক। রোগ নির্ণয়/ নিরাময়ের জন্য যে-কোনো নতুন আবিষ্কার রোগীর দেহে প্রয়োগ করার আগে ছাড়পত্র পেতে তাকে যেসব পরীক্ষা-নিরীক্ষার মধ্যে দিয়ে যেতে হয়, সেটা তো করতে হবে; কিন্তু সরকারের পক্ষ থেকে অসহযোগিতার যে অভিযোগ উঠছে তা কি সবই অমূলক?

অতীতে বিভিন্ন রাজনৈতিক ভূমিকার কারণে সরকারের সাথে ডা. জাফরুল্লাহর যদি বৈরীভাব সৃষ্টি হয়েও থাকে, সেটা কোনোভাবেই বর্তমান জরুরি অবস্থাকে প্রভাবিত করা উচিত নয়। সব সময় রাজনীতি করা কোনো পক্ষ থেকে কাম্য হতে পারে না।

ড. বিজন কুমার শীলকে নিয়ে যেহেতু কোনো বিতর্ক নেই, তাহলে তাঁর উপস্থিতিকে মান্য করে উদ্ভাবিত কিটের মান নির্ণয়ের কাজে সরকারের উচিত দ্রুত পদক্ষেপ নেয়া যাতে এর নিরাপদ ব্যবহার দেশের মানুষের জন্য নিশ্চিত করা যায়। এখন কোনো ব্যক্তি অথবা দলীয় অহমিকার সময় নয়, মানুষ বাঁচানোই হোক আমাদের সবার অঙ্গীকার!
টরন্টো, এপ্রিল ২৭, ২০২০

তুষার গায়েন: কবি।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত