আরিফ জেবতিক

০৫ মে, ২০২০ ১৯:৩৩

কিশোর কুমার তাঁর শক্তির কথা ভুলে গেছেন

কয়েক বছর আগে যখন বিদ্যানন্দের কথা প্রথম শুনি কিশোর কুমার এবং আমার কমন বন্ধু ঋতু আরিফের কাছে, তখন লোকটার জন্য মায়া লেগেছিল। 'এক টাকার আহার' এবং এরকম আরও কিছু স্বেচ্ছাসেবী প্রজেক্ট, যেগুলো আর্থিক ভাবে টেনে নিয়ে যাওয়া খুবই কঠিন, এরকম কিছু প্রকল্প করছিল বিদ্যানন্দ। মানুষের সাহায্য সহযোগিতায় তাঁরা টেনেটুনে এই কাজগুলো করতে হিমশিম খাচ্ছিলেন।

সেই বিদ্যানন্দের গোল্ডেন টাইম শুরু হয়েছে করোনার কালে। বিদ্যানন্দের ভাঁড়ার ঘর উপচে উঠছে। তাঁরা বড় বড় গুদামের সামনে লাইন ধরে সারি সারি দাঁড়িয়ে থাকে বড় বড় ট্রাক ভর্তি সব ত্রাণ সামগ্রী। বিভিন্ন কর্পোরেট প্রতিষ্ঠান থেকে একেবারে সাধারণ মানুষ পর্যন্ত বিদ্যানন্দের এই ত্রাণ কার্যক্রমে সহায়তা করছে। (আমার পরিচিত একজন খুব সাদামাটা চাকুরে আছেন, তিনি তাঁর সঞ্চয় থেকে ১১শ টাকা বিদ্যানন্দকে বিকাশ করেছেন। কারণ তিনি কিছু করতে চান এবং বিদ্যানন্দকে এই কাজে সবচাইতে বিশ্বস্ত মনে করেছেন।)

বিজ্ঞাপন

এই যে হাজার হাজার মানুষ তাঁদের ছোটবড় দানে বিদ্যানন্দকে ভাসিয়ে দিয়েছে তাঁরা কেউ কিন্তু বিদ্যানন্দের প্রতিষ্ঠাতা হিন্দু না মুসলিম এসব জিজ্ঞেস করে নি। তাঁরা জানে যে একদল স্বেচ্ছাসেবক জানপ্রাণ দিয়ে খাটছে, তাঁদেরকে সহায়তা করতে হবে।

বিদ্যানন্দের কাজে আর্মিসহ বিভিন্ন সরকারি এবং বেসরকারি চ্যানেল ব্যবহার হয়। আর্মি কিন্তু জিজ্ঞেস করে নি, যে বিদ্যানন্দের প্রতিষ্ঠাতা নামাজ পড়ে নাকি গির্জায় যায়।

বিদ্যানন্দের আজকের এই সোনালী অবস্থানের পেছনে যে হাজার হাজার মানুষের শক্তি, এই মানুষগুলো অসাম্প্রদায়িক। তাঁরা অন্য মানুষের জন্য কাজ করাকেই গুরুত্ব দেয়, কার ধর্ম পরিচয় কী সেটা খুঁজতে যায় না।

কিশোর কুমার তাঁর এই শক্তির কথা ভুলে গেছেন। তিনি ফেসবুকের লাইক আর কমেন্টকে গুরুত্ব দেয়া শুরু করেছেন।

ইতিহাস সাক্ষী, যারা ফেসবুকের লাইক আর কমেন্টের উপর নির্ভর করে নিজেদের সিদ্ধান্ত নেয়া শুরু করে, তাঁরা 'ফা_ড আপ'। আপনার এই আদেলখেলাপনা আগামী তিন জেনারেশনের অমুসলিম তরুণদের মনোবল ধ্বংস করার জন্য উদাহরণ হিসেবে থাকবে, সেটার ক্ষতির পরিমাণ আপনার ট্রাক ভর্তি ত্রাণের চাইতে অনেক বেশি ছাড়া কম নয়।

আপনে এই লাইনে হাঁটলে খালি বিদ্যানন্দের এক পদ ছাড়লে হবে না, একদিন বিদ্যানন্দ ছাড়তে হবে।

আপনারে টেনে টেনে এমন জায়গায় নেয়া হবে যে বছর ঘুরতে না ঘুরতেই আপনারে মুসলমান হয়ে 'নও মুসলিমের' সংগঠন বিদ্যানন্দ-এই লাইনে মার্কেট করে বাঁশের কেল্লায় পোস্ট দিয়ে লাইক কামাতে হবে। কিন্তু সেই লাইক আপনার জন্য ডোনেশন আনবে না।

যারা বিদ্যানন্দে জাকাত দেয়, তাঁরা আপনাকে হিন্দু জেনেই এতদিন দিয়েছে, ভবিষ্যতেও দিবে। আর যারা আপনারে এতদিন হিন্দু জেনে দিত না, তাঁরা আগামীতেও দিবে না। সেই জাকাতের আশা আপনি কইরেন না। বড়জোর দুইটা লাইক পাইতে পারেন, কিন্তু লাইক দিয়া নিশ্চয়ই সংগঠন চলে না।

আপনার কাছে অনুরোধ, আপনি খাড়া থাকেন। ডুবলে খাড়া ডুবে যান।মেরুদণ্ড বাঁকা করে নিজেকে অপমানিত কইরেন না, আপনাকে বিভিন্ন ভাবে সহায়তা করা লোকগুলোকেও অপমান কইরেন না।

আরিফ জেবতিক: লেখক, সাংবাদিক।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত