আরিফ আহমদ

২৯ ফেব্রুয়ারি , ২০১৬ ০২:০৯

কাজই যেন হয় ভোটের মাপকাঠি

নির্বাচন কমিশন ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেছে। যে কোন নির্বাচন, সে জাতীয় পর্যায়ের হোক কিংবা স্থানীয় পর্যায়ে হোক; আমাদের গণতান্ত্রিক মন-মানসিকতা এবং জনগণের ইচ্ছায় জনপ্রতিনিধিদের দ্বারা শাসনকার্য পরিচালনাকে ত্বরান্বিত করে। নির্বাচনের আয়োজন করার জন্য নির্বাচন কমিশন ও সরকারকে অবশ্যই ধন্যবাদ দেয়া যায়।

এবারের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন দলীয় প্রতীক বরাদ্দের মাধ্যমে সরাসরি রাজনৈতিক দলসমূহের অংশগ্রহণের মাধ্যমে অনুষ্ঠিত হচ্ছে। দলীয়ভাবে নির্বাচনের অনেক ভালো দিক যেমন আছে তেমনি অনেক খারাপ দিকও আছে। জাতীয় দৈনিকগুলোর সম্পাদকীয় পাতায় দেশের বিজ্ঞজনেরা দলীয়ভাবে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের পক্ষে বিপক্ষে অনেক যুক্তি তুলে ধরেছেন। এ বিষয় নিয়ে অনেক বাক-বিতণ্ডা হচ্ছে। তবে নির্বাচনের পদ্ধতি নিয়ে বাক-বিতণ্ডা চালিয়ে যাওয়ার চাইতেও গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় আমরা আমাদের আলোচনা-সমালোচনা হতে বাদ দিয়ে দিয়েছি।

সেই বৃটিশ আমল থেকে ইউনিয়ন পরিষদ বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন নাম নিয়ে তার কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে। সেই দৃষ্টিকোণ হতে বলা চলে, ইউনিয়ন পরিষদ দেশের অন্য যে কোন স্থানীয় শাসন প্রতিষ্ঠান হতে প্রাচীন এবং ইউনিয়ন পরিষদ যেহেতু তৃণমূল পর্যায়ের প্রতিষ্ঠান সেহেতু জনগণের কাছে সেবা পৌঁছে দেয়ার ক্ষেত্রে এই প্রতিষ্ঠান অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।

বর্তমান বাংলাদেশের পরিপ্রেক্ষিতে আমরা ইউনিয়ন পরিষদ এবং তার কার্যাবলী নিয়ে একটু বিশ্লেষণ করলে দেখতে পাই, ‘স্থানীয় সরকার (ইউনিয়ন পরিষদ) আইন-২০০৯’ অনুযায়ী ইউনিয়ন পরিষদের যে কাজগুলো সম্পাদন করার কথা তার অধিকাংশ কাজই হচ্ছে না। ২০০৯ সালের আইনের ৫৩ নং ধারার ১ ও ২ নং উপধারায় পরিষদের তহবিলের উৎস সম্পর্কে বলা হয়েছে। ওই ধারায় ইউনিয়ন পরিষদের তহবিলের অনেক উৎস যেমন: আদায়কৃত কর, রেট, টোল, ফিস ও অন্যান্য দাবী বাবদ প্রাপ্ত অর্থ,অর্থদণ্ড ইত্যাদি সম্পর্কে বলা হলেও এই উৎসসমূহ হতে অর্থ সংগ্রহের কোন কার্যকর ব্যবস্থা নেই। তাই ইউনিয়নকে সর্বদা সরকারের অনুদানের উপর নির্ভর করতে হয়।

আইনের ৬৭ ও ৬৮ নং ধারায় অর্থ আদায়ের পদ্ধতি সম্পর্কেও বলে দেয়া আছে কিন্তু এর কার্যকর ব্যবহার নেই। গ্রামীণ অর্থনীতি এবং জীবনযাত্রার মান উন্নয়নের লক্ষ্যে ইউনিয়ন পরিষদ আইনে বিভিন্ন কমিটি গঠনের ব্যাপারে বলা থাকলেও আমাদের ইউনিয়নগুলিতে আদৌ এই ধরনের কোন কমিটি আছে কিনা কিংবা থাকলেও তাদের কার্যক্রম আমাদের চোখে পড়ে না।

বর্তমান সরকার প্রায় প্রতিটি ইউনিয়নে একটি তথ্য এ সেবা কেন্দ্র চালু করেছে। কিন্তু সেই সেবা কেন্দ্রগুলিকে কি যথাযথভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে? অনলাইনে একটি ফরম ফিলাপের জন্য গ্রামের মানুষজনকে উপজেলা সদরে কিংবা প্রাইভেটভাবে গড়ে উঠা কম্পিউটারের দোকানগুলিতে দৌড়াদৌড়ি করতে হয়। অথচ গ্রামের মানুষের এই সেবাসমূহ ইউনিয়ন তথ্য ও সেবা কেন্দ্র হতে পাবার কথা।

জাতীয় ই-তথ্য কোষের বর্ণনা অনুযায়ী আইন শৃঙ্খলা রক্ষা, অপরাধ-শৃঙ্খলা ও চোরাচালান দমনের জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ, কৃষির উন্নয়ন, বৃক্ষরোপণ, মৎস্য ও পশুপালনে সহায়তা, স্বাস্থ্য-কুটিরশিল্প-সেচ-যোগাযোগ ইত্যাদি কার্যক্রম সম্পাদন, জন্ম-মৃত্যু-অন্ধ-ভিক্ষুক-দুঃস্থদের নিবন্ধন ইত্যাদি হচ্ছে ইউনিয়ন পরিষদের বাধ্যতামূলক কাজ। অথচ এই কাজগুলির একটি বৃহৎ অংশ অবাস্তবায়িত থেকে যায়।

ইউনিয়ন পরিষদের কাজগুলো ভালোভাবে করতে হলে অন্তত ইউনিয়ন পরিষদ সংক্রান্ত আইনটি একবার হলেও পড়ে দেখা দরকার। কিন্তু আমাদের ইউ পি সদস্য কিংবা ইউ পি চেয়ারম্যানের মধ্যে এমন কতজন আছেন যারা এই আইনটি পড়ে দেখেছেন কিংবা পড়তে পারেন? নির্বাচনের পূর্বে অনেক নেতাই অনেক বক্তব্য দেন, অনেক প্রতিশ্রুতি দেন, অনেক কিছু করে ফেলার স্বপ্ন দেখান। আর এই প্রতিশ্রুতি কিংবা স্বপ্ন দেখানোর ব্যাপারটা আমাদের দেশের রাজনীতিতে একটি সংস্কৃতিতে পরিণত হয়েছে।

তাই আমাদের সকলের উচিত নির্বাচনে কে কত বড় প্রতিশ্রুতি দিল সেই বিষয়টিকে বিবেচনায় না এনে বরং কে আইনে উল্লেখিত কার্যাবলী সম্পাদনে যোগ্য ও যত্নবান সেই বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে আমাদের মূল্যবান ভোট প্রদান করা।

আরিফ আহমদ : শিক্ষার্থী, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়।

এ বিভাগে প্রকাশিত লেখার বিষয়, মতামত, মন্তব্য লেখকের একান্ত নিজস্ব। sylhettoday24.com-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে যার মিল আছে এমন সিদ্ধান্তে আসার কোন যৌক্তিকতা সর্বক্ষেত্রে নেই। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে sylhettoday24.com আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো দায় গ্রহণ করে না।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত