সদেরা সুজন, সিবিএনএ কানাডা থেকে

২৮ ফেব্রুয়ারি , ২০১৬ ১১:২৭

মন্ট্রিয়লে একু্শের বইমেলায় প্রবাসীদের মিলনমেলা

ঢাকার মতো বিশাল পরিসরে না হলে বইমেলা বলে কথা। বই মেলাতো মানেই প্রাণের মেলা। আর তা যেখানেই হোক, ঢাকা কিংবা মন্ট্রিয়ল! হোক না প্রচণ্ড শৈত্য প্রবাহের তাণ্ডব। বই প্রেমিক, লেখক-কবি-সাহিত্যিক-সাংবাদিক কিংবা সংস্কৃতিমনা মানুষের সমাগম হবেই।

মহান একুশে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে কানাডার মন্ট্রিয়লে কানাডা বাংলাদেশ সলিডারিটি আয়োজিত দিনব্যাপী চতুর্থবারের মতো বইমেলা ২০১৬ ছিলো মন্ট্রিয়ল প্রবাসীদের জন্য একটি অসাধারণ চমৎকার আয়োজন। প্রবাসে কষ্টকঠিন জীবনের মাঝে বইমেলা মানেই প্রবাসীদের মিলন মেলা। নতুন বই আর পরিচিত মানুষের সান্নিধ্যে যাওয়া আর প্রিয় কবি লেখক শিল্পী আবৃত্তিকারদের সঙ্গে আড্ডা কিংবা যুগল ছবির সমাহার।

মন্ট্রিয়লের সেন্টরক ভবনের বিশাল এলাকাজুড়ে সুসজ্জিত ১৮টি স্টল অংশগ্রহণ করেছিলো এবারের বইমেলাতে। বাইরে স্টলে বই প্রেমিকদের পাশাপাশি বিশাল হলে চলছিলো একুশের সেমিনার, আবৃত্তি এবং সঙ্গীতানুষ্ঠান।

অনুষ্ঠানের শুরুতে একুশের শহীদের প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা জানিয়ে  শোকের প্রতীক কালো ব্যাজ হৃদয়ে ধারণ করে ফুলের তোড়া নিয়ে অমর একুশের কালজয়ী গান ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি’ সবার কণ্ঠে কণ্ঠে মুখরিত হয়ে অস্থায়ী শহীদ মিনারে বিভিন্ন সংগঠন পুষ্পস্তবক অর্পণ করে। সারি সারি শিশুদের চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা এবং শিশুদের উপস্থিতি ছিলো দেখার মতো।

অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় পর্বে ছিলো বইমেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠান। এবছরের বই মেলাটি উদ্বোধন করেন মহান একুশের ভাষা সৈনিক জীবন্ত কিংবদন্তি লায়ন শামসুল হুদা। সঙ্গে ছিলেন বাংলা একাডেমির সৈয়দ ওয়ালিউল্লাহ সাহিত্য পদকপ্রাপ্ত কবি ইকবাল হাসান এবং সমসাময়িক কালের অন্যতম শ্রেষ্ঠ আবৃত্তিকার আহকাম উল্লাহ, সাপ্তাহিক বাংলা মেইলের সম্পাদক শহিদুল ইসলাম মিন্টু, প্রকাশক রেজাউল কবীর, এবং কনকোর্ডিয়া বিশ্ববিদ্যালয়েরে যন্ত্রকৌশল বিভাগের অধ্যাপক এবং গবেষক ড. ওয়াইজউদ্দিন আহমদ।
শামসাদ রানার পরিচালনায় উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সংক্ষিপ্ত বক্তব্য রাখেন কানাডা বাংলাদেশ সলিডারিটির সভাপতি জিয়াউল হক জিয়া, কবি অপরাহ্ণ সুসমিতো, কবি আব্দুল হাসিব, কবি হামোম প্রমোদ, কবি সুলতানা সাজি এবং কানাডা বাংলাদেশ নিউজ এজেন্সি সিবিএনএ-এর প্রধান নির্বাহী সদেরা সুজন।

অনুষ্ঠানের তৃতীয় পর্বে ছিলো মোড়ক উন্মোচন। এবারের বইমেলাতে দু’জন প্রবাসী লেখকের গ্রন্থ এবং বইমেলার স্মারক সংকলনের মোড়ক উন্মোচন করা হয়। বাংলাদেশের খ্যাতিমান ক্রীড়া সাংবাদিক মন্ট্রিয়ল প্রবাসী সাপ্তাহিক বাংলা মেইলের নির্বাহী সম্পাদক কাজী আলম বাবু’র বিভিন্ন দেশে ১৯৮৭ থেকে ১৯৯৬ আন্তর্জাতিক গেমস, টুর্নামেন্ট ও কংগ্রেস কভার করার স্মৃতিচারণমূলক গ্রন্থ ‘রোড টু মন্ট্রিয়ল’, মন্ট্রিয়ল প্রবাসী এবং সুপরিচিত লেখক গল্পকার সুচিত্রা ধরের দ্বিতীয়  উপন্যাস ‘হৃদয়ের গহিনে মেঘ’ এবং বইমেলা উপলক্ষে কানাডা-বাংলাদেশ সলিডারিটির স্মারক সংকলন ২০১৬ এর ‘দূরের একুশ’। মুহুর্মুহু করতালি আর বিপুল সংখ্যক প্রবাসীর উপস্থিতিতে মোড়ক উন্মোচন ছিলো সত্যিই কিছুটা ব্যতিক্রমধর্মী।

অনুষ্ঠানে সেরা স্টলের পুরস্কার পেয়েছে অটোয়া থেকে অংশগ্রহণ করা পলাশ বই বিতান।

অনুষ্ঠানের চতুর্থ পর্বে ছিলো মূল মঞ্চে একুশ বিষয়ক সেমিনার। বাইরে একুশের বিশাল বই মেলা আর হলের ভিতরে একুশের সেমিনার যা ছিলো প্রবাসে অবিশ্বাস্য আয়োজন।

এবারের মূল মঞ্চটি উৎসর্গ করা হয় মন্ট্রিয়লের বাংলাদেশী কমিউনিটির প্রিয় প্রাণ পুরুষ, কমিউনিটির  সুপরিচিত বিশিষ্ট উজ্জ্বল ব্যক্তিত্ব, বিশ্বখ্যাত গণিতজ্ঞ, শিক্ষাবিদ সদ্য প্রয়াত ড. তারেক আলীর নামে।

ড. তারেক আলী মঞ্চে ছিলো আলোচনা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। ‘বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন এবং আজকের মাতৃভাষা দিবস’ শীর্ষক আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন কানা-বাংলাদেশ সলিডারিটির সভাপতি  জিয়াউল হক জিয়া।

প্রকৌশলী, লেখক, সাংবাদিক হাসান জামানের নান্দনিক সঞ্চালনায় প্রধান অতিথি ছিলেন একুশে পদকপ্রাপ্ত শামসুল  হুদা, বিশেষ আলোচক ছিলেন কবি ইকবাল হাসান, সাংবাদিক শহিদুল ইসলাম মিন্টু, শিক্ষাবিদ ড. ওয়াইজউদ্দিন  আহমেদ, তথ্য প্রযুক্তিবিদ রেজাউল কবির, মৌলভীবাজার মহিলা কলেজের সাবেক  উপাধ্যক্ষ ফনীন্দ্র কুমার ভট্টাচার্য, ভিএজিবি’র সভাপতি শাহ মোস্তাইন বিল্লা সলিডারিটির উপদেষ্টা খান সাইফুদ্দিন, এবং কানাডা আওয়ামী লীগের অন্যতম নেতা সেলিম জুবেরী। সভায় অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন মন্ট্রিয়ল মেগা সিটির ডেপুটি মেয়র মেরী ডোরেস এবং বাঙালি প্রবাসী অধ্যুষিত পার্ক এক্সটেনশন এলাকার সাংসদ জেরী স্কালাভুনোস।

অনুষ্ঠানের শেষ পর্বে ছিলো সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। শামসাদ রানা ও আরিয়ান হকের উপস্থাপনায় টরেন্টো অটোয়া এবং মন্ট্রিয়লের শিল্পীরা অংশ গ্রহণ করেন। বাংলাদেশের খ্যাতিমান আবৃত্তিশিল্পী আহকাম উল্লাহ’র আবৃত্তির পাশাপাশি টরেন্টো থেকে আগত জনপ্রিয় কণ্ঠ শিল্পী ফারহানা শান্তা, মন্ট্রিয়ল এবং অটোয়ার শিল্পীরা গান এবং আবৃত্তি পরিবেশন করেন। অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন শফিউল ইসলাম, নিরোজ বড়ুয়া, আশিক বিশ্বাস, দেবপ্রিয়া কর রুমা, মনিকা মুনা, সোমা চৌধুরী, অনুজা দত্ত, তোতন আফাজ উদ্দীন, মুফতি ফারুক, শামসাদ রানা,সঞ্জীব দাস উত্তম, আরিয়ান হক, অপরাহ্ণ সুসমিতো, প্রমোদ হামোম, কবি শিরিন সুলতানা সাজি, সৌরভ বড়ুয়া,  ও মাসুদুর রহমান।

অনুষ্ঠানগুলোর মিডিয়া পার্টনার ছিলো সিবিএন, মাইটিভি, বিটিভি, একুশে টিভি, যমুনা টিভি বাংলামেইল, দেশ বার্তা, আজকাল, বাংলার কণ্ঠ, আরটিভি, বেঙ্গলিটাইমসডটকম, এনআরবিটিভি।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত