সিলেটটুডে ডেস্ক

১২ এপ্রিল, ২০২০ ১২:৫৬

নিউ ইয়র্কে গিয়াস উদ্দিনের দাফন সম্পন্ন

নিউ ইয়র্কে ব্রঙ্কসের বাংলাবাজার জামে মসজিদ ও স্টারলিং-বাংলাবাজার বিজনেস এসোসিয়েশনের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি, নিউ ইয়র্ক সিটি পুলিশ ডিপার্টমেন্টের ৪৩ পুলিশ প্রিসেনক্টের কমিউনিটি পার্টনার, কমিউনিটির প্রিয়মুখ, সমাজসেবী আলহাজ্ব গিয়াস উদ্দিনের দাফন সস্পন্ন হয়েছে।

১১ এপ্রিল শনিবার বিকেল ৪টা ৪৫ মিনিটে নিউ ইয়র্ক জানাজা শেষে নিউ জার্সির টেটোয়ায় বাংলাবাজার মসজিদের নিজস্ব কবরস্থানে তার মরদেহ দাফন করা হয়। জানাজায় ইমামতি করেন নর্থ ব্রঙ্কস জামে মসজিদ অ্যান্ড ইসলামিক সেন্টারের খতীব মাওলানা মো. মাসহুদ ইকবাল।

বাংলাবাজার জামে মসজিদের সাধারণ সম্পাদক লালন আহমেদ এবং মাওলানা মো. মাসহুদ ইকবাল এ তথ্য জানান। কর্তৃপক্ষের অনুমতিক্রমে জানাজায় তার পরিবারের সদস্যসহ ১৫ জন লোক উপস্থিত ছিলেন।

উল্লেখ্য, আলহাজ্ব গিয়াস উদ্দিন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে গত ১০ এপ্রিল শুক্রবার ভোর সোয়া ২টায় নিউ ইয়র্কের মান্টিফিউর (আইনস্টাইন) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। মৃত্যুকালে গিয়াস উদ্দিনের বয়স হয়েছিল ৬২ বছর। তিনি স্ত্রী, দুই ছেলে, এক মেয়ে, ৪ ভাই ২ বোন সহ বহু আত্মীয়-স্বজন ও গুণগ্রাহী রেখে গেছেন। তার পুরো পরিবারই যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী। ব্রঙ্কসের এ অ্যান্ড এ ভেরাইটি ডাবল ডিসকাউন্ট এবং জি অ্যান্ড আর ভেরাইটি ডিসকাউন্ট ইনকের কর্ণধার গিয়াস উদ্দিন নিউ ইয়র্কের ব্রঙ্কসে বসবাস করতেন। তার দেশের বাড়ি সুনামগঞ্জের ছাতক উপজেলার জাউয়া বাজার গ্রামে।

আলহাজ্ব গিয়াস উদ্দিনের পারিবারিক সূত্র জানায়, আলহাজ্ব গিয়াস উদ্দিন গত ৩১ মার্চ মঙ্গলবার রাত প্রায় পৌনে ১২টায় কাশিসহ ঠাণ্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে ব্রঙ্কসের মান্টিফিউর হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। ওই হাসপাতালে পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে তার শরীরে করোনাভাইরাস পজেটিভ পাওয়া যায় বলে চিকিৎসকরা জানান। তিনি ডাক্তারদের নিবিড় পর্যবেক্ষণে ছিলেন। দ্রুত তার অবস্থার অবনতি ঘটলে গত ১০ এপ্রিল শুক্রবার ভোর সোয়া ২টায় লাইফ সাপোর্টে থাকা অবস্থায় তিনি মারা যান।

আলহাজ্ব গিয়াস উদ্দিনের আত্মার মাগফেরাত কামনায় তার পরিবারের পক্ষ থেকে সকলের কাছে দোয়া চাওয়া হয়েছে।

এদিকে বাংলাবাজার জামে মসজিদ ও স্টারলিং-বাংলাবাজার বিজনেস এসোসিয়েশনের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি বিশিষ্ট ব্যবসায়ী, কমিউনিটির প্রিয়মুখ আলহাজ্ব গিয়াস উদ্দিনের মৃত্যুতে নিউ ইয়র্কসহ যুক্তরাষ্ট্রের বাঙালী কমিউনিটিতে গভীর শোকের ছায়া নেমে আসে।

আলহাজ্ব গিয়াস উদ্দিনের মৃত্যুতে বিভিন্ন রাজনীতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, পেশাজীবী সংগঠনসহ বাংলাদেশি কমিটির নেতৃবৃন্দ গভীর শোক প্রকাশ ও শোক সন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা প্রকাশ করেছেন।

নেতৃবৃন্দ বলেন, প্রবাসী বাংলাদেশীদের সুখ-দুঃখে এগিয়ে আসা বাংলাদেশি কমিউনিটির অকৃত্রিম বন্ধু ছিলেন আলহাজ্ব গিয়াস উদ্দিন। তার মৃত্যুতে ব্রঙ্কস বাংলাদেশি কমিউনিটি একজন অভিভাবকে হারালো। তার অভাব কোনদিনই পূরণ হবার নয়।

জানা যায়, বৃহত্তর সিলেটের সুনামগঞ্জ জেলার ছাতকের কৃতি সন্তান আলহাজ্ব গিয়াস উদ্দিন দীর্ঘ ৩৮ বছর ধরে বিভিন্ন ধর্মীয় ও সামাজিক সংগঠনের সাথে সম্পৃক্ত থেকে নানাভাবে কাজ করে গেছেন। তিনি মৃত্যুর আগ পর্যন্ত বাংলাবাজার জামে মসজিদ ও স্টারলিং-বাংলাবাজার বিজনেস এসোসিয়েশনের সভাপতির দায়িত্ব এবং নিউ ইয়র্ক সিটি পুলিশ ডিপার্টমেন্টের ৪৩ পুলিশ প্রিসেনক্টের কমিউনিটি পার্টনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন। এছাড়াও তিনি যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী ছাতক সমিতি ইউএসএ এবং সুনামগঞ্জ জেলা সমিতি ইউএসএ’র উপদেষ্টাসহ বহু সামাজিক সংগঠনের সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন।

আলহাজ্ব গিয়াস উদ্দীন দীর্ঘ ৩৮ বছর যাবত প্রবাস জীবন যাপন করছিলেন। তিনি ১৯৭৮ সালে বাংলাদেশ থেকে পাড়ি জমান ইরানে। সেখান থেকে জার্মানি হয়ে ১৯৮২ সালে তিনি যুক্তরাষ্ট্র অভিবাসী হন। নিউ ইয়র্কে ব্রঙ্কসের এ অ্যান্ড এ ভেরাইটি ডাবল ডিসকাউন্ট এবং জি অ্যান্ড আর ভেরাইটি ডিসকাউন্ট স্টোরসহ অন্যান্য ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন। ব্রঙ্কসের প্রাণকেন্দ্রে স্টারলিং-বাংলাবাজার এলাকায় প্রতিষ্ঠা করেন বাংলাবাজার জামে মসজিদ। স্টারলিং-বাংলাবাজার এলাকার ব্যবসায়ীদের নিয়ে গড়ে তোলেন স্টারলিং-বাংলাবাজার বিজনেস এসোসিয়েশন। স্টারলিং-বাংলাবাজার এলাকায় তার কয়েকটি নিজস্ব ভবন রয়েছে।

ছাতকের কৃতি সন্তান আলহাজ্ব গিয়াস উদ্দিন নিজ গ্রাম জাউয়া বাজারসহ নিজ এলাকায় মসজিদ-মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা, হতদরিদ্রদের সাহায্য সহযোগিতায় ছিলেন সিদ্ধহস্ত। এর মধ্যে ছাতকের দৌলতপুর লতিফিয়া দাখিল মাদ্রাসার জন্যও প্রায় সাড়ে ৮ লাখ টাকা মূল্যের আধা একর ভূমি দান করেন তিনি।

আলহাজ্ব গিয়াস উদ্দীন গত ফেব্রুয়ারি মাসে পবিত্র মক্কায় উমরাহ পালন ও মদীনায় নবী মোহাম্মদ (সা.) এর রওজা মোবারক জিয়ারত করেন।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত