সিলেটটুডে ডেস্ক

১৬ মে, ২০২০ ১৮:৫৪

সাম্প্রদায়িক বক্তব্য: চ্যানেল এস থেকে মাহি জলিলকে বহিস্কারের দাবি

টেলিভিশনের সরাসরি সম্প্রচারিত অনুষ্ঠানে সাম্প্রদায়িক বক্তব্য প্রদানের দায়ে ‌চ্যানেল এস থেকে মাহি ফেরদৌস জলিলকে বহিস্কারের দাবি ওঠেছে।

যুক্তরাজ্যভিক্তিক এই বাংলা চ্যানেলে গত ৩মে সরাসরি সম্প্রচারিত একটি অনুষ্ঠানে উপস্থাপক মাহি ফেরদৌস জলিলের একটি মন্তব্য নিয়ে তুমুল সমালোচনা চলছে। এই বক্তব্যকে সাম্প্রদায়িক ও কটুক্তিমূলক আখ্যা্ দিয়ে তার নিন্দা জানিয়েছে বিভিন্ন মহল। এ অবস্থায় মাহি ফেরদৌস জলিলকে চ্যানেল এস থেকে বহিস্কারের দাবি জানিয়েছে ‘আ্যলায়েন্স আ্যগেইনস্ট রেইসিজম আ্যন্ড রেলিজিয়াস হেইট্রেড’ নামের একটি সংগঠন।

সংগঠনের আহ্বায়ক পুস্পিতা গুপ্ত সাক্ষরিত এক বিবৃতিতে এ আহ্বান জানানো হয়।

বিজ্ঞাপন



গত ৩ মে'র লাইভ অনুষ্ঠানে চ্যানেল এস'র প্রতিষ্ঠাতা ও উপস্থাপক মাহি জলিল অসাধু বাংলাদেশী ব্যবসায়ীদের শরীরে হিন্দুত্ববাদের রক্ত বহমান উল্লেখ করে বলেন, 'এমন কমজাত রক্তের ধারাই বিলেতে কতিপয় বাঙালি ব্যবসায়ীদের অনৈতিক অসাধু কর্মকান্ডে উদ্বুদ্ধ করেছে।' সরাসরি সম্প্রচারিত এমন সাম্প্রদায়িক বক্তব্যের ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হলে সমালোচনা শুরু হয়। এমন বক্তব্যের প্রতিবাদ জানান লন্ডন বারা অফ টাওয়ার হ্যামলেটের নির্বাহী মেয়র জন বিগস, বেথনাল গ্রিন বো আসনের এমপি রোশনারা আলী এবং পপলার লাইম হাউজের এমপি আপসানা বেগম। তারা নিজেদের ভ্যারিফাইড ফেসবুক পেজ থেকে সাম্প্রদায়িক ও বর্ণবাদী বক্তব্যের নিন্দা জানান। এঅবস্থায় ওই রাতে এক ভিডিও বার্তায় মাহি জলিল ক্ষমা প্রার্থনা করেন। ক্ষমা প্রার্থনায় তিনি বলেন, আসলে আমি যা বলতে চেয়েছি তার অপব্যাখা হয়েছে। তবুও যদি আপনারা মনে কষ্ট পেয়ে থাকেন তবে নিজেদের সন্তান হিসাবে ক্ষমা করে দিয়েন।

তবে তার এই ক্ষমা প্রার্থনাকে অগ্রহণযোগ্য আখ্যায়িত করে ‘আ্যলায়েন্স আ্যগেইনস্ট রেইসিজম আ্যন্ড রেলিজিয়াস হেইট্রেড’ মাহি জলিলকে চ্যানেল এস'র সবধরণের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি  প্রদানের দাবি জানিয়েছে। গত ১২ মে মাহি ফেরদৌসের অপসারণ দাবি সম্বলিত একটি অভিযোগ পত্র চ্যানেল এস কর্তৃপক্ষকেও প্রদান করে সংগঠনটি। এতে ২০ মে বিকেল ৪ টার মধ্যে চ্যানেল এস থেকে মাহি ফেরদৌস জলিলকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা না হলে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণের কথা জানানো হয়।  
 

বিবৃতিতে আ্যলায়েন্স আ্যেগেইন্সট রেসিজিম আ্যন্ড রেলিজিয়াস হেইট্রেড'র আহ্বায়ক উল্লেখ করেন, আমরা বিশ্বাস করি যে, বিলেতে বাংলাদেশি সম্প্রদায়ের মুখপত্র হিসেবে চ্যানেল এস এর প্রতি সবার আস্থা পুনঃস্থাপন করতে কর্তৃপক্ষকে আরো কাজ করে যেতে হবে হবে। যা ঘটেছে তার দায়িত্ব নিয়ে সমাজে যাতে ধর্মীয় ঘৃনা ছড়ানো এবং সাম্প্রদায়িক সৌহার্দ্য নষ্ট না হয় সেই লক্ষ্যে চ্যানেল এসকে আরো সক্রিয় পদক্ষেপ নিতে হবে।

বিজ্ঞাপন


 
চ্যানেল এস এর প্রতি আমাদের দাবিসমূহ-
 
১) অবিলম্বে  মাহি ফেরদৌস জলিলকে চ্যানেল এস'র সবরকম টেলিভিশন সম্প্রচার থেকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধ করতে হবে। তাকে কোন প্রকারেই চ্যানেল এস এর অনুষ্ঠানে সঞ্চালক, অতিথি কিংবা অন্য কোন ভাবে উপস্থিতির অনুমোদন দেয়া যাবে না।
 
২) জলিল যদি চ্যানেল এস এর কোন দায়িত্বশীল পদে নিয়োজিত থাকেন, অনতিবিলম্বে তাকে সকল প্রকার দায়িত্ব থেকে পদত্যাগ করতে হবে।
 
৩) আনুষ্ঠানিক ক্ষমা প্রার্থনা থেকে আমরা জানতে পারি চ্যানেল এস নিশ্চিত করছে এবং নিশ্চয়তা দিচ্ছে যে চ্যানেল এস প্রতিষ্ঠান হিসেবে কোন ঘৃণা কিংবা নেতিবাচক পূর্ব ধারণাকে প্রশ্রয় দেয় না। কিন্তু প্রকাশিত বিবৃতিতে আমরা লক্ষ্য করি ভবিষ্যতে একই ধরনের ঘটনার পুণরাবৃত্তি রোধে প্রতিষ্ঠানটি কী ব্যবস্থা গ্রহণ করবে, এ ব্যাপারে চ্যানেল এস নিশ্চুপ। বিশেষত: এই ঘটনার বিশালতার কারণেই এটি গুরুত্বপূর্ণ। এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে আমরা চ্যানেল এস এর কাছে বিভিন্ন ধাপ সম্বলিত একটি সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনার দাবি জানাই যাতে চ্যানেল এস তার বহু জাতি, বহু ধর্ম ও বহু সংস্কৃতি বিষয়ক অঙ্গীকার বাস্তবায়ন করতে পারে।
 
বিগত ১৬ বছর ধরে বিলেতে বসবাসরত বাংলাদেশী সমাজের সেবা প্রদানে চ্যানেল এস'র অবদানকে আমরা শ্রদ্ধা করি এবং আমরা এও আশা করি আগামীতেও চ্যানেল এস'র এই ধারা অব্যাহত থাকবে।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত