নিজস্ব প্রতিবেদক

০৩ মার্চ, ২০১৭ ০১:৩৫

হৈমন্তী শুক্লা ও পার্বতী বাউলের গানে মনোমুগ্ধকর রাত

তাঁর জটা লাগানো চুল পায়ের গোড়ালি ছুঁয়েছে। তিনি একাই গান করেন, একসাথে একাধিক যন্ত্র বাজান আবার নাচও করেন। তিনি পার্বতী বাউল। এতোদিন ইউটিউব আর টেলিভিশনে দেখা এই শিল্পীর গান বৃহস্পতিবার রাতে প্রথমবারের মতো সরাসরি শোনা ও দেখার সুযোগ হয় সিলেটের শ্রোতাদের।

হাসন রাধারমন আর আব্দুল করিমের শহরের শ্রোতাদের  বৃহস্পতিবার গান গেয়ে মুগ্ধ করলেন পশ্চিম বাংলার এই বাউল শিল্পী।

নগরীর মাছিমপুরের আবুল মাল আবদুল মহিত ক্রীড়া কমপ্লেক্সে চলমান বেঙ্গল সাংস্কৃতিক উৎসবের নবম দিনের গান পরিবেশন করেন পার্বতী বাউল। মধ্যরাত পর্যন্ত কয়েক হাজার দর্শক তন্ময় হয়ে শোনেন নতুন ধারার এই বাউলের গান।

পাবর্তী বাউলের আগেই হাসন রাজা মঞ্চে গান পরিবেশন করেন ওপার বাংলার কিংবদন্তি শিল্পী হৈমন্তি শুক্লা। বয়সের হিসেবে পৌঢ়েত্বে পৌঁচেছেন, কিন্তু হাসি দেখলে মনে হবে যেনো ষোড়শী কিশোরী। এমন ভুবন ভুলানো হাসি, বিনয়ী কথা আর চিরদিনের ভালোলাগার গানে হৈমন্তী শুল্কা জয় করে নেন সিলেটের দর্শক-শ্রোতাদের হৃদয়।

সুরের ইন্দ্রজাল ছড়িয়ে শিল্পীরা দর্শকদের এক উপভোগ্য রাত উপহার দিলেন। আর তাই ঘড়ির কাটা মধ্যরাতের দিকে এগুলেও সেদিকে ভ্রুক্ষেপ ছিল না কারোই। পরিবার-পরিজন আর বন্ধু-বান্ধবদের নিয়ে তাই নিজেদের মতো করে উৎসবস্থলে মজে থাকলেন মাঠভর্তি মানুষ।

বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার পর থেকে হাজার হাজার মানুষ সারি বেঁধে উৎসবস্থলে ঢুকতে থাকেন। প্রায় মধ্যরাত পর্যন্ত বিনোদনপ্রিয় এসব মানুষ মনের আনন্দে উপভোগ করেন শিল্পীদের নান্দনিক সব পরিবেশনা। আজ শুক্রবার ১০ দিনব্যাপী এ উৎসবের শেষ হবে।

এরআগে হাসন রাজা মঞ্চে আসেন বাংলাদেশের নজরুলসংগীতের প্রখ্যাত শিল্পী ফেরদৌস আরা। নজরুল আর আধুনিক গান গাওয়ার কথা থাকলেও এসবের পাশাপাশি তিনি গেয়ে শোনার শাহ আব্দুল করিমেরও গান।

বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে আয়োজিত এ উৎসবটি উৎসর্গ করা হয়েছে জ্ঞানতাপস আব্দুর রাজ্জাককে। ইনডেক্স গ্রুপ নিবেদিত এ উৎসবের সহযোগিতায় রয়েছে ঢাকা ব্যাংক। সম্প্রচার সহযোগী চ্যানেল আই।

বৃহস্পতিবার বেলা চারটায় সৈয়দ মুজতবা আলী মঞ্চে ‘রীনা ব্রাউন’ চলচ্চিত্রের প্রদর্শনী হয়। একই মঞ্চে সন্ধ্যা সোয়া সাতটায় লোকনাট্যদল পরিবেশন করে ‘কঞ্জুস’ মঞ্চনাটক। এদিকে সময় কিছুটা এগিয়ে বেলা চারটা থেকে হাসন রাজা মঞ্চে সাংস্কৃতিক পর্বের অনুষ্ঠান শুরু হয়। শুরুতেই ছিল জাতীয় রবীন্দ্রসংগীত সম্মিলন পরিষদ সিলেটের শিশু শিল্পীদের পরিবেশনায় ‘চতুরঙ্গ’ পরিবেশনা। এরপর শিশুতীর্থের উদ্যোগে খুদে শিল্পীদের অংশগ্রহণে একটি গীতিনৃত্যনাট্য পরিবেশিত হয়। এ গীতিনৃত্যনাট্যে সিলেটের ঐতিহ্যবাহী বিয়ে উৎসব উপস্থাপিত হয়েছে।

খুদে শিল্পীদের পরিবেশনার পরপরই মঞ্চে ওঠেন শিল্পী রাকিবা ইসলাম ঐশী। তিনি বেশ কয়েকটি নজরুলসংগীত পরিবেশন করেন। তাঁর পরিবেশনার পর ভাওয়াইয়া গানের শিল্পী শফিউল আলম রাজা মঞ্চে ওঠে জনপ্রিয় ও প্রচলিত কিছু ভাওয়াইয়া গান পরিবেশন করে দর্শকদের আনন্দ দেন।

এরপর তিন বিখ্যাত শিল্পী ফেরদৌস আরা, হৈমন্তী শুক্লা আর পাবর্তী বাউলের গানে বুঁদ হওয়ার পালা শ্রোতাদের। গানে গানে একাকার হয়ে যায় দুই বাংলা। গানের ফাঁকে ফাঁকে তাদের কথাও আকৃষ্ট করে দর্শকদের। আর সকল শিল্পীদের কণ্ঠেই ছিলো সিলেটের দর্শকদের প্রশংসা।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত