গোঁসাই পাহ্‌লভী

২২ এপ্রিল, ২০১৬ ১০:০২

ঐক্যের ধর্ম

অখণ্ড ভারতকে খণ্ড করার জন্যে যারা হাত দিয়েছে, খেয়াল করে দেখেন, ভাগের পক্ষ্যে বা বিপক্ষে যারাই ছিলো, কেহই নিস্তার পান নাই। এর কারণ কি? ভারতের একটা শক্তি আছে, সেই শক্তির বিভিন্ন পীঠ আছে, সেই পীঠগুলো ভারতের বিভিন্ন জায়গায় স্থাপিত, ফলে আপনি কোনও একটা জায়গায় টোকা দিলে, নাড়া দিলে, ভাগ করতে চাইলে সম্পূর্ণটায় টোকা লাগে, ভারতবর্ষকে ভাগ করতে গিয়ে যারা যতটুকু টোকা দিয়েছেন (পক্ষে বিপক্ষে কতল কিংবা বলি হতে হয়েছে) ততটুকু পাটকেল ফেরত পেয়েছেন। ব্রাকেটে পাটকেলের জায়গায় কতল বা বলি বলেছি, এ বিষয়ে স্কুল অব গ্রেট নো মনে করে, অধিকাংশ মানুষদের সাথে অর্থাৎ শহুরে মধ্যবিত্ত রাজনীতি সচেতন মানুষটি বলবেন যে, বাঙালী জাতীয়তাবাদ অনেকটা সহনশীল। বিষয়টা অত্যাচারের ক্ষেত্রে, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদীরা অসহনশীল, অসহ্য, অর্থাৎ তাদের অত্যাচারটা মারাত্মক। এই যে ধীরে ধীরে কাটা পড়া এবং একবারে কাটা পড়ার যে পার্থক্য এই পার্থক্যটুকুই আজ বাংলাদেশের মানুষের জীবন, পাকিস্তানের মানুষের জীবন, ইন্ডিয়ার মানুষদের জীবন।

খেয়াল করুন, অখন্ড ভারতকে খণ্ড করার পরিণতি, এই পরিনতি থেকে শিক্ষা না নেওয়ার ইতিহাস হচ্ছে ইন্ডিয়া পাকিস্তান বাংলাদেশের ইতিহাস। কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধ থেকে শুরু করে, কিংবা কুরুক্ষেত্র যুদ্ধ পাশাপাশি একাত্তরের যুদ্ধ এভাবে যদি পাঠ করার চেষ্টা করি, ভাগকারীদের পরিনতি একই রকমের।

এই পরিনতি ঠিক করে কে?

এই পরিনতি ঠিক করে হচ্ছে ইউনিটি। এক্সট্রিম পোলার অপজিটও হচ্ছে একটা ইউনিটি। ভারতবর্ষে,-বাংলাদেশ পাকিস্তান ইন্ডিয়ায় ৫১টি শাক্ত পীঠ রয়েছে, শাক্ত মানে হচ্ছে শক্তি, তাহলে এই শক্তি ভারতবর্ষে একান্ন ভাবে প্রকাশিত একটা ইউনিটি। আপনি যখন এই ইউনিটে আঘাত হানবেন, ইউনিটির কোনও একটা অংশকে আত্মিকরণ করতে চাইবেন, অথবা প্রেমের স্পর্শ হোক, ইউনিটিতে সে সংবাদ পৌঁছে যাবে। যার অর্থ দাঁড়ালো, ইউনিটির ধর্মটা বুঝতে পারা। আমাদের জন্যে সব থেকে দু:খের বিষয় যে, বিভিন্ন স্কলাররা , ভারততত্ত্ববিদেরা ভারতের ধর্ম বলতে হিন্দু বৌদ্ধ মুসলমান শিখ এইসব ধর্ম বুঝলো, কিন্তু ভারতের যেটা মূলধর্ম, ইউনিটি ধর্ম এটা কিন্তু তেমন কোনও বুদ্ধিজীবী চিহ্নিত করছেন না। এ বিষয়ে রবীন্দ্রনাথের একটি কবিতা অনেকেই দেখাতে পারবেন যেখানে তিনি যা বলেছেন সেটা ইউনিটি হিসাবে, কিন্তু রবীন্দ্রনাথের চিন্তা ততটা পৌঁছাতে পারে নাই। যেমন,‘হেথায় আর্য, হেথা অনার্য, হেথায় দ্রাবিড় চীন—শক-হুন-দল পাঠান-মোগল এক দেহে হল লীন [গীতবিতান/হে মোর চিত্ত]'

রবীন্দ্রনাথের এই কবিতায় লীন শব্দটি দিয়ে খুন বুঝবো আমরা। এক দেহে লীন হওয়া মানে একদেহে খুন হওয়া। পশ্চিমে যখন খুন হয় কেহ ভাবেন পশ্চিমে খুন হলো, আবার পুবে খুন হলে পুবে হয়েছে, আপনি যখন পুবে পশ্চিমে ভাবছেন তখন এমন একজন ভাবতে পারেন যে আপনি, পুব-পশ্চিম , সকল বস্তু, ভাব, কিংবা এই প্লানেট, অথবা ব্রহ্মাণ্ড তত্ত্ব, আপনি যখন দুই ভাবছেন, অন্য কেহ নিরানব্বইয়ের ভেতরে আপনাকেও রেখেছেন। তাহলে বোঝা যাচ্ছে যে, শকহুনদলপাঠানমোগল এরা এক দেহে লীন মানে একদেহ হতে পেরেছিলো কেবল মৃত্যুর মধ্যে দিয়ে। আরো প্রশ্ন আছে, যেমন ধরেন পরের বাক্যগুলো,‘পশ্চিমে আজি খুলিয়াছে দ্বার, সেথা হতে সবে আনে উপহার, দিবে আর নিবে, মিলাবে মিলিবে, যাবে না ফিরে—[গীতবিতান/হে মোর চিত্ত]'

এই যে দেওয়া নেওয়া, এবং পশ্চিমের দ্বার খুলে দেওয়া, এই খুলে দেওয়া এবং দেওয়া নেওয়া কিন্তু পার্থিব, ইহজাগতিক, খুনখারাবিও একটা পার্থিব বিষয়, এখানে একটু থেমে, ছোট একটা নোট রেখে যাই, আপনি যদি একটা দেহ মনে করেন, সেই দেহের এমনকি ঘাটতি আছে, যা আপনাকে অন্যের থেকে গ্রহন করতে হবে? মধুসুদন কিছুটা বোধ হয় ঠাঁহর করতে পেরেছিলেন,‘হে বঙ্গ, ভাণ্ডারে তব বিবিধ রতন’, এই বাক্যটুকুই এখানে যথেষ্ট।

এর পরে দেখুন রবীন্দ্রনাথ কি বলেছেন,‘এই ভারতের মহামানবের সাগরতীরে॥’

আমাদের প্রশ্ন হচ্ছে ,শকহুনদলপাঠানমোগল দেহ গঠন করে, এই দেহ কী কোনও মহামানবের জন্ম দিয়েছিলো যিনি মান্যবর? ফলে রবীন্দ্রনাথ কাব্যের বা জাত্যাভিমানের যেমন, আরেকটু খেয়াল করলে, বিভাজন, আরো একটু কাছে যেমন এই শব্দগুলি: শুচি, পতিত, পরশে, পবিত্র করা এগুলো ঠিক দর্শনের এলাকায় ঢোকে নাই, এই নাইতে রবীন্দ্রনাথ খাঁটো হননা, পাঠক নিশ্চই সেটা বুঝবেন। ফলে, ভারতের ধর্ম, এবং জাত্যাভিমানের নামে যা চলছে, এমনকি এ কথাও বলা যায়, বাংলাদেশে ধর্মের নামে রাষ্ট্রের নামে যা চলছে, বুঝতে পারছেন না যে, বঙ্গের ধর্মটা ঠিক আজকে যা সব এক্সপ্লয়েট করে দেখানো হচ্ছে এইসব কিছু।

ভারতের এই ইউনিটির ধর্ম না বোঝার দরুন, ভাগের ইতিহাস, ভাগ্যের ইতিহাস, কাটাকাটির ইতিহাস এখনও চলমান। ফলে, কলম আপনার হাতে, কালি কলমের ভেতরে, লেখার আগে সামান্য ভাবনার অবকাশ থাকুক।

 গোঁসাই পাহ্‌লভী,ভাস্কর

এ বিভাগে প্রকাশিত লেখার বিষয়, মতামত, মন্তব্য লেখকের একান্ত নিজস্ব। sylhettoday24.com-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে যার মিল আছে এমন সিদ্ধান্তে আসার কোন যৌক্তিকতা সর্বক্ষেত্রে নেই। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে sylhettoday24.com আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো দায় গ্রহণ করে না।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত