শাহাব উদ্দিন চঞ্চল

২৩ মে, ২০১৬ ১১:১৯

সেলিম ওসমান ও হেফাজত বাহিনী কার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করছেন?

নমরুদ ঈশ্বরের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করেছিলেন। আর আমরা তার সম্পর্কে ইতিহাস ও অন্যান্য ধর্মপুস্তক গুলিতে যা পাই তা এটা প্রমাণ করার জন্যে যথেষ্ট যে তার শক্তি, ক্ষমতা ও দম্ভের প্রকাশ আকাশ ছুঁয়েছিল- তিনি ঐশ্বরিক শক্তির সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নেমেছিলেন। হিব্রোণে বাস করার এক পর্যায়ে আল্লাহ ইব্রাহিমকে বললেন, "হে ইব্রাহিম! তুমি নমরুদকে সতর্ক কর তার উপর শাস্তি আসার আগেই।" ইব্রাহিম বললেন- "হে ফেরাউন! (নমরুদকে অনেকসময় “ফেরাউন” সম্বোধন করা হত রাজ্যাধিপতি হিসেবে) আমি  ঈশ্বরের প্রেরিত রসূল, যিনি এক-যার কোন শরীক নেই, যিনি আরশের অধিপতি।"নমরুদ কখনও আল্লাহর কর্তৃত্ব স্বীকারের পক্ষপাতি ছিলেন না।

শেষ পর্যন্ত ঠিক হলো ঐশ্বরিক শক্তির সঙ্গে যুদ্ধ করবে নমরুদ। নির্দিষ্ট দিনে নমরুদ তার সেনাবাহিনী ময়দানে সমবেত করলেন। বেঁধে দেয়া তিন দিনের ঐ স্বল্প সময়ে তিনি যথেষ্ট সংখ্যক সৈন্যের সমাবেশ ঘটিয়েছিলেন।ময়দানে নমরুদ তার সেনাবাহিনী নিয়ে অপেক্ষা করছেন কিন্তু প্রতিপক্ষের কোন দেখা নেই। ইব্রাহিমকে একাকী দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে তিনি অবাক হয়ে তাকে ডেকে বললেন, "ওহে ইব্রাহিম! তোমার প্রতিপালকের সেনাদল কোথায়? তিনি নিশ্চয় আমার শক্তিবল দেখে ভীত হয়ে পশ্চাৎপসারণ করেছেন।

ইব্রাহিম দূরে আকাশের দিকে অঙুলি নির্দেশ করলেন। দূরে কাল রঙের একটা মেঘ দেখা যাচ্ছে। যখন সেটা কাছে, মাথার উপর চলে এল, লক্ষ লক্ষ মশার গুণ গুণ কলতানে চারিদিক মুখরিত হল। মশা! ক্ষুদ্র এ প্রাণীটি সন্ত্রাসী, বেপরোয়া। রক্তের নেশায় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে তারা আক্রমণ করে মানুষ, পশুকে। আর এ মশা তো ঈশ্বর্যের প্রেরিত, যুদ্ধের নিমিত্তে। কিন্তু ফেরাউন এদের ব্যক্তিত্বকে খাটো করে দেখলেন। অবজ্ঞার সূরে বললেন, "এ তো মশা! তুচ্ছ এক প্রাণী, তার উপর নিরস্ত্র। তোমার ঈশ্বর্যের কি অস্ত্র-ভাণ্ডার বা মালখানা নেই?"নমরুদ সেনাপতিদের বললেন, "যুদ্ধ পতাকা উড়িয়ে দাও, সতর্ক হও, নাকাড়া বাজাও।" সাথে সাথে প্রতিটি সৈন্যের মাথার উপর একটি করে মশা অবস্থান নিলো। অতঃপর কেউ কিছু বুঝে উঠার পূর্বেই তারা তাদের নাসিকা পথে মস্তিষ্কে প্রবেশ করল। তারপর দংশন। সেনাবাহিনীর মধ্যে বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হল। হিতাহিত জ্ঞান শূন্য হয়ে তীরন্দাজগণ ঊর্ধ্বে তীর নিক্ষেপ করতে লাগল। আর পদাতিক সেনারা নিজেদের চতুষ্পার্শ্বে অন্ধের মত তরবারি চালনা শুরু করল। এভাবে একে অপরকে নিজেদের অজান্তেই তারা আহত বা নিহত করে ফেলল।

নমরুদ পালিয়ে প্রাসাদে ফিরে আসছিলেন। এসময় একটি দুর্বল মশা তাকে তাড়া করল। সে কিছুক্ষণ তার শিরস্ত্রাণের চতুষ্পার্শ্বে কয়েকবার প্রদক্ষিণ শেষে সুড়ুৎ করে তার নাসিকাপথে মস্তিষ্কে ঢুকে পড়ল তারপর ধীরে সুস্থে মগজে দংশন শুরু করল। যন্ত্রণায় অস্থির হয়ে পড়লেন নমরুদ। উন্মাদের ন্যায় প্রাসাদে প্রবেশ করলেন। এক সময় দিশেহারা হয়ে পাদুকা খুলে নিজের মাথায় আঘাত করতে শুরু করলেন তিনি। এতে মশা দংশনে বিরত রইল। তিনি একটু আরাম বোধ করলেন। কিন্তু আঘাত বন্ধ করতেই মশা পুন:রায় দংশন শুরু করল। অবশেষে নমরুদ তার মাথায় মৃদু আঘাত করার জন্যে একজন সার্বক্ষণিক কর্মচারী নিযুক্ত করলেন।এটা অদ্ভুত ছিল যে, পাদুকা ব্যতীত অন্যকিছুর আঘাতে মশা দংশনে বিরত থাকত না। এদিকে নমরুদের সার্বক্ষণিক দায়িত্বে নিয়োজিত কর্মচারী অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছিল। এক মুহূর্ত অবসর নেই। সামান্য বিরতিতেই তিরস্কার। একসময় তার মনে এমন বিরক্তি ও ক্রোধের সৃষ্টি হল যে, সে তার হস্তস্থিত পাদুকা দ্বারা সজোরে এক আঘাত হানে। ঐ আঘাতেই নমরুদের মৃত্যু হয়।

নারায়ণগঞ্জের শিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্তকে কান ধরে উঠ-বস করিয়ে দেশজুড়ে তীব্র নিন্দিত সাংসদ সেলিম ওসমানের কারণে আজ সারা জাতি লজ্জিত। এ লজ্জা রাখি কোথায়? প্রকাশ্যে অপ্রকাশ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুক, নিউজ পেপার, ইলেকট্রনিক মিডিয়া সবখানেই প্রতিবাদের ঝড় বইছে। প্রতিবাদের ফলাফল কি হবে বা আদৌ হবে কি-না এমন একটা ভাব দেখা যাচ্ছে সবাই চেয়ে আছেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দিকে।

বিভিন্ন ধরনের লেখা আলোচনা-সমালোচনা দেখে আমার একটি কথা মনে হল। কথাটি প্রায়ই আমি আমার বিভিন্ন লেখায় উল্লেখ করি এবং কোন কোন সময় টেবিলটকে বা সভা সমিতিতে বলি-"ন্যায় অন্যায় কবে শুরু হয়েছিল আর কবে শেষ হবে তা জানিনা তবে এটা জানি অন্যায় আর অসত্যের জয় কখনও হয়নি আর হবেও না।" আর আমি আজ শক্ত ভাবে আরও একটি কথা বলতে পারি বলতে পারি-মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধুর কন্যা আমি তাকে খুব কাছের থেকে জানি এবং দেখেছি একটু অপেক্ষা করেন দেখেন না কি হয়।

"নারায়ণগঞ্জের সেলিম ওসমানও তার পরিবার কারো কর্তৃত্ব স্বীকারের পক্ষপাতি না, তারা নারায়ণগঞ্জের অধিপতি। শীঘ্রই সারা দেশ এবং আকাশ পাতালের রাজত্বও তার হেফাজত বাহিনী দিয়ে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা সৃষ্টি করে এদেশ এই সরকারের কাছ থেকে ক্ষমতা ছিনিয়ে নেবে। সারাদেশের শিক্ষক সমাজ এবং সচেতন মানুষকে কান ধরে উঠ বস করাচ্ছে এত ক্ষমতা তাদের। অপরদিকে সেলিম ওসমান তার হেফাজতি সেনাপতিদের যুদ্ধের জন্য তৈরি করে রেখেছে,"যুদ্ধ পতাকা উড়িয়ে হেফাজত বাহিনী  সেনাপ্রধান সেলিম ওসমানের নির্দেশের অপেক্ষায় সেলিম ওসমানের গ্রিন সিগন্যাল কখন আসছে "তবে যুদ্ধ পতাকা উড়িয়ে রেখেছেন, হেফাজত বাহিনীকে সতর্ক অবস্থায় রেখেছেন, যখন নাকাড়া বাজাও অর্ডার আসবে সাথে সাথে কারবালা হয়ে যাবে এমন ধারনা নিয়ে সেদিন হেফাজতের মিছিল দেখলাম। ফেইসবুক গরম তার কথা বার্তা শুনে,অনেকেই বলেছেন একজন এমপি জাতির পাছায় বাঁশ ডুকানো শিখাচ্ছেন অথচ এখনও বড় ধরনের প্রতিবাদ করছেন না এমপি মন্ত্রী বা সরকারের ঊর্ধ্বতন মহল। একটু অপেক্ষা করেন দেখন না কি হয় আপনারাও কি ভুলে গেলেন শাপলা চত্বরের আস্ফালন।

আসলেই সেলিম ওসমান ভুলে গেছেন ২০১৩ সালের ৫ই মে মতিঝিলের শাপলা চত্বরের হেফাজতিদের আস্ফালন আর তার পরিণতি কথা। সেলিম ওসমানের হেফাজত বাহিনী এত তাড়াতাড়ি ভুলে গেলে তোমরা সেদিনের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাহসী আর বিচক্ষণ সিদ্ধান্ত, সৈয়দ আশরাফের সামান্য শীতল ধমক। তোমাদের মনে নেই তৎকালীন আইজি- প্রধানমন্ত্রী নির্দেশে "তিনদিক বন্ধ করে চট্টগ্রামের দিকে যাবার রাস্তা খোলা রেখে ছিলেন আর মাদ্রাসার ছোট বাচ্চাদের খাবার ও পানি দিয়ে বাড়ীতে যাবার টাকা-পয়সা দিয়ে পৌঁছিয়ে দিয়েছিলেন" তারপরও কি তোমাদের হুশ ঠিক হলো না। তাইলে মনে রেখ হে হেফাজত বাহিনী তোদের অবস্থা হবে নমরুদ বাহিনীর মত আর তোদের নাসিম ওসমান নিজের পাছায় নিজেই বাঁশ ডুকাবে যেভাবে নমরুদ নিজের জুতার আঘাতে মৃত্যু বরন করেছিল।এটা ইতিহাস বলে আমি বলি না।
লন্ডন ২২শে মে ২০১৬

শাহাব উদ্দিন চঞ্চল : যুক্তরাজ্য প্রবাসী লেখক।
এ বিভাগে প্রকাশিত লেখার বিষয়, মতামত, মন্তব্য লেখকের একান্ত নিজস্ব। sylhettoday24.com-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে যার মিল আছে এমন সিদ্ধান্তে আসার কোন যৌক্তিকতা সর্বক্ষেত্রে নেই। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে sylhettoday24.com আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো দায় গ্রহণ করে না।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত