শাহাব উদ্দিন চঞ্চল

০৩ মে, ২০২০ ২৩:৪১

নিশ্চয়ই পৃথিবী আবার শান্ত হবে তবে এরা বদলাবে না

করোনার এই বিপদ কাটিয়ে কবে বিশ্ববাসীর মুক্তি হবে পৃথিবীটা আবার কবে স্বাভাবিক হবে একমাত্র সৃষ্টিকর্তাই জানেন। আমরা একটা কথা বিশ্বাস করি সৃষ্টিকর্তার হুকুম ছাড়া একটা পাতাও নড়েনা। এই মহাদুর্যোগ করোনা সৃষ্টিকর্তার গজব এটা বলার অপেক্ষা রাখেনা। জাপানের নভেল বিজয়ী চিকিৎসা বিজ্ঞানী তাসুকু হোনজোর বলেছেন, করোনা মানুষের তৈরি, তিনি যুক্তিও তুলে ধরেছেন এবং চ্যালেঞ্জও করেছেন সংবাদ মাধ্যমে দেখেছি সত্য মিথ্যা বিচার করার ক্ষমতা আমার নেই তবে তিনি চিকিৎসা বিজ্ঞানী তিনি ভালই জানেন, মিথ্যা হলে তার নোবেল পুরস্কার ফেরত দিয়ে দেবেন এমন কথাও নাকি তিনি বলেছেন।

বিজ্ঞাপন

যাই হোক চিকিৎসা বিজ্ঞানী তাসুকু হোনজোর নিউজ যখন সংবাদ মাধ্যমে দেখেছি তার পর সেই সংবাদ পরে খুঁজে পাইনা এর কারণও জানিনা। করোনা মানুষের তৈরি হোক বা প্রকৃতি থেকে হোক এতদূর যেতে চাইনা, তবে যেখান থেকে যে ভাবেই হোক এটা এখন মহামারি আকারে বিশ্বে ছড়িয়েছে এটাও সৃষ্টিকর্তার হুকুম ছাড়া হয়নি, কারণ তিনি মহান তিনি সব জানেন। যদি এটা মানুষের তৈরি হয় এবং চীনের উহান শহরের ল্যাবরেটরি থেকে হোক বা অন্য কোন ল্যাবরেটরি থেকে ইচ্ছাকৃত বা অনিচ্ছাকৃত কারণে ছড়িয়ে পড়ুক না কেন নিশ্চয়ই মহান সৃষ্টিকর্তা জানেন, কারণ আমরা যদি বিশ্বাস করি মহান সৃষ্টিকর্তার ইশারা ছাড়া একটি পাতাও নড়েনা সুতরাং একবাক্যে এটাই বলা যায় করোনা মহামারি মহান সৃষ্টিকর্তার গজব। চীনের উহান শহরের ল্যাবরেটরি থেকেই করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার প্রমাণ পেয়েছেন বলে দাবি করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।

শুক্রবার হোয়াইট হাউসের সংবাদ সম্মেলনে একজন সাংবাদিক তাকে জিজ্ঞাসা করেন, 'আপনার কাছে এমন কোনো প্রমাণ আছে যে, উহান ইন্সটিটিউট অব ভাইরোলজি থেকেই এই ভাইরাস ছড়িয়েছে? প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সঠিক উত্তর দেননি? মানুষের তৈরি হলে আসল সত্যটা তারাই জানেন যারা ছড়িয়েছেন আর বিশ্বের ধ্বংসাত্মক রাজনীতিবিদরা জানেন তারা হয়তো নির্দেশ দিয়েছেন তাদের কোন না কোন স্বার্থ জড়িয়ে আছে আর দুর-আকাশ থেকে সৃষ্টিকর্তাও এই ধ্বংসাত্মক রাজনীতিবিদের পক্ষে আপাতত আছেন, কারণ তারই সৃষ্টি করা এই সুন্দর পৃথিবীতে শ্রেষ্ঠ জীব হিসাবে দাবিদার মানুষ নামের জীব বিশ্বের ধ্বংসাত্মক রাজনীতিবিদ মোড়লরা পাপের সব সীমা অতিক্রম করে ফেলেছে তাই করোনা নামক এই মহামারি। যে ভাবে হোক যে কারণেই হোক, অন্যায় অবিচার এবং মহাপাপের কারণে-"করোনা" সৃষ্টিকর্তার গজব। আজ সারা পৃথিবী থেকে ন্যায় নীতি উধাও হয়ে গেছে যার কারণে খোদ সৃষ্টিকর্তা নারাজ। অন্যায় করা আর অন্যায় সহ্য করে নীরবে বসে থাকা একই অপরাধ। অন্যায়ের প্রতিবাদ করেন না বলেই আজ মহান সৃষ্টিকর্তা আমাদের সকলকে শাস্তি দিচ্ছেন। অন্যায়ের কারণে মনে হয় বিশ্ব আজ ঠেকে গেছে দেয়ালে! তাই করোনা-তারপরও আগামী পৃথিবীর কেমন হবে এজন্য উন্নত বিশ্বের রাজনীতিবিদরা এই মৃত্যুর মিছিলের সারিতে থেকেও প্রস্তুতি নিচ্ছে আগামী প্রজন্মের জন্য কেমন করে নতুন দেশ নতুন পৃথিবী গড়তে পারে। করোনার ইতিহাস পড়বে আগামী প্রজন্ম যদি তারা ইতিহাস থেকে শিক্ষা নেয় "করোনার"। আমাদের দেশের নেতা পণ্ডিতরা কী ভাবছেন নতুন দেশ নতুন পৃথিবী নিয়ে?

বিজ্ঞাপন

করোনা মহামারিতে আমার জন্মভূমি বাংলাদেশের সিংহভাগ রাজনৈতিক নেতা এবং এ যুগের রাজনীতিবিদ জ্ঞানী পণ্ডিতদের করোনা পরবর্তী ভাবনা নিয়ে এ লেখা। বাংলাদেশ যে নতুন পৃথিবীর সাথে নতুন করে বদলে যাবে এটা মনে প্রাণে বিশ্বাস করতে পারিনা। এই মহামারির কবল থেকে যদি বেঁচে থাকি আর সৌভাগ্যবান হই শান্ত নতুন পৃথিবীটা আবার দেখার সুযোগ যদি পাই সেই পৃথিবীটা কেমন হবে। নিশ্চয়ই পৃথিবীটা আবার শান্ত হবে তবে বদলে যাবে, কিন্তু এরা বদলাবে না... আফসোস! মৃত্যুর মুখোমুখি দাঁড়িয়ে এই কঠিন বিপদের সময়ও আমরা প্রবাসীরা নিজের সবকিছু বিসর্জন দিয়েও সাধ্যমত দেশের স্বজনদের সাহায্য করছি অথচ দেশের সচ্ছল লোকজন সরকারের দেয়া গরীবের চাল চুরি করছে। অকৃতজ্ঞ আমাদের দেশের এই মানুষগুলো। দেশের বেশিরভাগ বলতে গেলে ৯০% নেতা যে অন্তঃসারশূন্য তা- পণ্ডিত রাজনীতিবিদরা জানেন অথচ কথা বলেন না। রাজনৈতিক ভাবে অশিক্ষিত সাধারণ লোক মনে করেন এই সব নেতারাই যোগ্য কারণ তারা রাজনীতি করেন না, রাজনীতি বুঝেন না; রাজনীতি তাদের বিষয় নয় এবং রাজনীতি নিয়ে চিন্তাও করেনা। অপরদিকে পণ্ডিত রাজনীতিবিদরা নীরব থাকার কারণে এই সব রূপবান, নির্বোধ আদর্শহীন নেতারা যে ভাব দেখায় মনে মনে বঙ্গবন্ধুর চেয়ে বড় অথচ ভিতরে কিছুই নেই তাদের।

বর্তমানের মন্ত্রীগণ এবং তৃণমূল নেতাদের মধ্যে ১০ ভাগ আছেন যারা প্রধানমন্ত্রীর জননেত্রী শেখ হাসিনার মত দেশের উন্নয়নের জন্য চিন্তা করেন, আর ৯০ ভাগ শুধু নিজের উন্নয়নে ব্যস্ত এইটাই হচ্ছে রাজনীতি। আমি নিজেকে রাজনৈতিক বিদ্যালয়ের ছাত্র হিসাবে এতই ভাগ্যবান মনে করি, আমাদের রাজনৈতিক বিদ্যালয়ের তৃণমূলের যে সকল মহান নেতাগণ আমাদের রাজনৈতিক শিক্ষক ছিলেন তাদের (Reflection, sacrificing & compromising attitude, dressing sense & speaking style) প্রতিচ্ছবি ত্যাগ ও আপোষমূলক মনোভাব কাপড় পরার এবং কথা বলার ধরন যখন মনে হয় আর বর্তমানের কেন্দ্রীয় যে সকল ডক্টরেট ডিগ্রিধারী নেতা মন্ত্রীদের ভাবভঙ্গি,কথা বলার ধরন বা ময়দানে দেখি, তখন মনে হয়,মাত্র এই ক'বছরে আমরা কি অন্য কোন গ্রহে চলে এলাম? ১৯৭১-এর ১৬ ডিসেম্বরের পর ৭২ আসতেই ষষ্ঠ শ্রেণি থেকে অটো প্রমোশন পেয়ে সপ্তম শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হয়েছিলাম। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে দেশের জন্ম দেখেছি। সে বয়সটা ছিল একেবারে নিখুঁত মনে থাকার বয়স। একটি সন্তান তার মার গর্ভে ৯ মাস থাকার পর পৃথিবীতে জন্ম নেয় তেমনি বাংলাদেশ নামক সন্তান তার মায়ের গর্ভে যাওয়া থেকে যে দিন জন্ম নিয়েছিল প্রসব বেদনা থেকে শুরু করে পৃথিবীর মানচিত্রে ভূমিষ্ঠ হয়ে আজ তার ৫০ বছর হতে চলেছে। সবই আমাদের চোখের সামনে, সেই সন্তানের সকল উত্থান পতনের রাজসাক্ষী আমরা। এদেশের জন্ম এবং ক্রান্তিকালে যে সকল অভিজ্ঞ রাজনীতিবিদ দেখেছি আজ তাদের বড় মিস করছি এই সব দেশপ্রেমিক রাজনীতিবিদ এখন নাই।

বাংলাদেশের রাজনীতিবিদ এবং রাজনীতি যদি পরিবর্তন করা না হয় করোনা পরবর্তী বাংলাদেশের অবস্থা কল্পনা করতে পারবেন না। আমরা বঙ্গবন্ধুর কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর উপর একমাত্র ভরসা করে বসে আছি, যে কোন সিদ্ধান্ত তার কাছ থেকেই আসতেই হয় অন্য কোন নেতার কথা কেউ মানেনা তাদের কথা কেউ শুনতে চায়না। তাদের কথাবার্তা, বডি ল্যাংগুইজ দেখলে টিভি বন্ধ করে দেয় কারণ এখন কোন দলে আর আদর্শিক রাজনীতিবিদরা রাজনীতি করেনা। রাজনীতি শূন্য দল এবং দেশ যার পরিণতি ভয়াবহ। আগেই বলেছি প্রধানমন্ত্রী এখন আর রাজনৈতিক নেতার দ্বারা যতটুকু পরিচালিত হওয়ার কথা ছিল বাস্তবে তা নয়। এভাবে কতদিন ৭৩ বছর বয়সের একজন নারী প্রকৃতির নিয়মে যখন ক্লান্ত হয়ে যাবেন তখন কি হবে বিষয়টি ভাবতে ভয় লাগে। দল এবং দেশে যে ধরনের নেতার সৃষ্টি হয়েছে জনগণ এখন রাজনীতিকে ঘৃণা করে অথচ এই দেশের জনগণের শিক্ষার হার কম থাকার পরও অধিকার আদায়ের জন্য রাজনৈতিক ভাবে শিক্ষিত এবং সচেতন ছিল তা-না হলে এই দেশের জন্ম হতোনা। তখনকার নেতার প্রতি জনগণের যে ধরনের আস্থা শ্রদ্ধা ভালবাসা বিশ্বাস ছিল এখন সেটা অনুপস্থিত। কারণ নেতারা রাজনীতি করেন না। রাজনীতির নামে ব্যবসা করেন। জনগণ সব সময়ই সঠিক রায় দিয়েছিল বলেই বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে একটি স্বাধীন দেশ জন্ম নিয়েছিল। আজ সেই জনগণই আছে তার কন্যার প্রতি আস্থা, শ্রদ্ধা, ভালবাসা, বিশ্বাস সব আছে কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর চারপাশে আদর্শবাদী রাজনীতিবিদরা নেই।

বিজ্ঞাপন

২০ শতকের জার্মানের প্রভাবশালী মার্কসবাদী, নাট্যকার, মঞ্চ নির্দেশক এবং একজন কবি Bertolt Brecht ছবিসহ আমার প্রিয় সুশান্ত দাস গুপ্তের কভার পেইজে অনেক আগে দেখছিলাম ইংরেজিতে লেখা quotes,কথাগুলো নিয়ে অনেক বার আমার ফেসবুকের টাইমলাইনে লিখেছি তবে এত ডিপে যাইনি। করোনা এই মহামারিতে বাংলাদেশের রাজনৈতিক নেতাদের কর্মকাণ্ড এবং সাধারণ জনগণের চিন্তা চেতনা দেখে কথাগুলো আমাকে আসলেই খুব নাড়া দিলো। বাংলা অনুবাদ হচ্ছে- "নিকৃষ্টতম অশিক্ষিত হচ্ছে সে, যে রাজনৈতিকভাবে অশিক্ষিত। সে শুনতে চায় না, বলতে চায় না, রাজনৈতিক বিষয়ে অংশগ্রহণ করে না। সে জানে না জীবনের মূল্য, ধান-মাছ-আটা-বাসা ভাড়া-জুতা বা ঔষধের দাম- সবকিছু নির্ভর করে রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের ওপর।

এই রাজনৈতিক অশিক্ষিতযে বুক ফুলিয়ে গর্ব করে বলে- রাজনীতিকে ঘৃণা করি! এই নির্বোধ জানে না, তার রাজনৈতিক অজ্ঞতা থেকে জন্ম নেয় পতিতা, পরিত্যক্ত সন্তান এবং সবচেয়ে নিকৃষ্টতম ভণ্ড রাজনীতিবিদ, দুর্নীতিবাজ এবং দেশি-বিদেশি কর্পোরেট কোম্পানির ভৃত্য দালাল।" আগামী দিনের বাংলাদেশে যদি আইন প্রণেতা যদি এই সকল রাজনীতিবিদদের হাতে চলে যায় তাহলে জার্মানের প্রভাবশালী মার্কসবাদী এই নাট্যকার, কবি Bertolt Brecht এর কথা শতভাগ প্রতিফলিত হবে বাংলাদেশের রাজনীতিতে। এর পূর্বাভাসেই করোনা মহামারির সময় মেম্বার চেয়ারম্যান এমপি মন্ত্রী আমলা নেতা এবং তাদের বাহিনী-বরাদ্দকৃত গরীবের খাদ্য লুটে নিয়েছে। বাংলাদেশের জনগণ হয়তো কিছু দিন পর বড় করে মূর্খের মত বুক ফুলিয়ে গর্ব করে বলবে, রাজনীতিকে ঘৃণা করি!

আফসোস পৃথিবী বদলে যাবে কিন্তু বাংলাদেশের রাজনীতিবিদ এরা বদলাবে না।

শাহাব উদ্দিন চঞ্চল : লন্ডন প্রবাসী রাজনীতিক।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত