জহিরুল হক বাপি

২০ জুলাই, ২০১৬ ২০:৪৯

হুমায়ূন, কিছু সৃষ্টিশীল এবং ‘লোভী ভেড়ার পাল’

হুমায়ূন আহমেদের চতুর্থ মৃত্যুবার্ষিকী গেল দুবলা জোছনার দিন। বাংলাদেশ, ভারত, শ্রীলংকা, চীন, জাপান এশিয়ার নগর,গ্রাম, মফস্বল, পোড়া মাটির পথ, ধুলো বিছানো পথ, সমুদ্র, জঙ্গল স্নান করেছে দুবলা জোছনা।

ও কারিগর দয়ার সাগর, ওগো দয়াময়
চান্নিপসর রাইতে যেন আমার মরণ হয়

হুমায়ূনের মৃত্যুর দিন চান্নিপসর ছিল কিনা জানি না। থাকলেও তার কিছু আসতে যেত না সেই দিন। তিনি ছিলেন ভিন দেশী হাসপাতালের আই.সি.ইউতে। সেখানে বিশেষ কিছু সিগন্যাল বাতি ছাড়া আর অপার্থিব কোন আলো পসরা বসাতে পারে না। হুমায়ুনের এই পূর্ণিমায় কিছু এসে-গিয়েছিল কিনা আমার জানা নাই। তবে আমার এসে গিয়েছিল। শ্রাবণের পূর্ণিমা। দুবলা জোছনায় আমি হারিয়ে গেছি। শৈশবেই আমার হুমায়ুনের সাথে পরিচয়। হুমায়ূন চলে গেছেন। যদি তিনি স্বর্গের নি:শব্দের দূর নগরীতে বসবাস করেন তবে নিশ্চিন্তে বলা যায় সেখানে সব সময় জোছনার ঘরবাড়ী।

শঙ্খনীল কারাগার, নন্দিত নরকে দিয়ে হুমায়ূনের শুরু। পৃথিবীর এই কারাগারে হুমায়ুন আহমেদ যেমন ছিলেন নন্দিত, তেমন স্বজাতির কাছে তিনি হয়েছেন নিন্দিত। শূন্য থেকে হিমালয়ে পৌঁছেছিলেন হুমায়ূন আহমেদ। হিমালয়ের চূড়ায় জমে থাকা বরফে জোছনায় নিশ্চয় দিন নামে চন্দ্রে। আমার শৈশবেই হুমায়ুন আমার মাথায় ঢুকিয়ে দিয়েছিলেন জোছনা।  তাই কি প্রতি পূর্ণিমায় আমার ঘর ছেড়ে চলে যেতে ইচ্ছে করে? চিৎকার করে বলতে ইচ্ছে করে কেউ আমার না, আমি কারো না, কিছুই সত্য না শুধু সত্য এ অপার্থিব জোছনা। আমার খুব ইচ্ছা ছিল কৃতজ্ঞতা স্বরূপ হুমায়ুন আহমেদের মাথায় বরষা ঢুকিয়ে দেব। সেই সুযোগ আমি পাই নি। প্রকৃতি আমাকে দেয়নি। আমিও আর অপেক্ষা করিনি, অপেক্ষা করে লাভ নেই তাই। আহ! এমন যদি হতো উজ্জল চাঁদের তলেই ভরা ঝমঝমাঝম বরষা। উল্টা পাল্টা অবৈজ্ঞানিক চিন্তা।

তাঁর বই, জ্ঞানী লোকের ভাষায় গ্রন্থের সংখ্যা কত আমার জানা নেই । অনেকে আবার তাঁর বইগুলোকে আবর্জনার সাথে তুলনা করে। তবে আমি কৃতজ্ঞ হুমায়ূন আহমেদের কাছে। তিনি বাংলাদেশে বিশাল একটা পাঠক শ্রেণী তৈরি করেছেন। আমিও সম্ভবত সেই পাঠকদের একজন। আহ! পূর্ণিমায় আমার মন এমন করে কেন? আমিতো সিদ্ধার্থ নই , আমি হুমায়ুনও নই। পূর্ণিমায় আমার কাছে সব মিথ্যা মনে হয় কেন, এ সংসার, এ পৃথিবী, সব সব।

এই পৃথিবী যেমন আছে তেমনই ঠিক রবে
সুন্দর এই পৃথিবী ছেড়ে একদিন চলে যেতে হবে

তিনি চলে গেছেন, কিন্তু আমার মতো আরও অনেক বাঙালির মগজে রেখে গেছেন জোছনার বিভ্রম। তার মৃত্যু দিবসের দিন নিশ্চয় চুইয়ে চুইয়ে পড়েছিল ধবল জোছনা তার কবরে।

“চাঁদনী পসরে কে, আমারে স্মরণ করে
কে আইসা দাড়াইছেগো, আমার দুয়ারে
তাহারে চিনি না আমি সে আমারে চিনে
সে আমারে ঠারে ঠারে ইশারায় কয়
এই চান্দের রাইতে তোমার হইছেগো সময়”

আমিও সে ইশারার জন্য বসে আছি, বসে থাকি অহর্নিশ। কিন্তু সে আমারে ডাকেনা। কে জানে কবে ডাকবে।

বাংলাদেশ জুড়ে অস্থির একটা অবস্থা চলছে। পৃথিবী জুড়েও চলছে অস্থির, পৈশাচিক এক অবস্থা। দেশের কথাই বলি।

“জাতির পতাকা আজ খামচে ধরেছে পুরানো সেই শকুনেরা”

রুদ্র মোহাম্মাদ শহীদ্দুল্লাহর পুরানো শকুনেরা আজ আবার প্রাণবন্ত।

হুমায়ুন আহমেদ নিন্দিত হয়েছেন বারবার এ দেশের বোদ্ধা সমাজের কাছে, নিন্দিত হয়েছেন এ দেশের সৃষ্টিশীল মানুষদের কাছে। তার বই সংখ্যা অনেক। সবগুলো অসাধারণ সাহিত্য নয়। বাণিজ্যিক। সাধারণ মানুষও কিনেছে লাইন ধরে। আজ আমার মনে হয় হুমায়ুন আহমেদের জন্য “কাল” হয়েছে এই লাইন ধরাটা। তাকে নিয়ে আমাদের দেশের কবি, সাহিত্যিকরা তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করে গেছে আমৃত্যু। আমাদের দেশের কবি-সাহিত্যিকদের কথা শুনলে মনে হয় সাহিত্য বা সৃষ্টি শুধু বোদ্ধাদের জন্য। অথবা সবাইকে বোদ্ধা হতে হবে। কিন্তু সৃষ্টিশীলরা নিজেদের গুণগানে এত ব্যস্ত এবং অদক্ষ যে তারা নতুন কোন পাঠক তৈরি করতে পারেন নি , নিজেদের গ্রুপ ছাড়া। কয়েকজন মিলে একটি ইজম দাঁড়া করায়, একটি অনিয়মিত সাহিত্য পত্রিকা বের করে নিজেদের শ্রেষ্ঠ এবং নির্ভুল হিসাবে দাবী করে অন্যদের তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করে। এক সময় জীবনের ব্যস্ততায়, বাস্তবতায় তাদের ইজম ক্লান্ত হয়, সাহিত্য পত্রিকাও বন্ধ হয়। অত:পর তারা বাঙালি সাহিত্য বুঝে না, মূর্খ, অশিক্ষিত বলে হুতাশ করতে থাকে। তারা ভুলে যায় - তারাই নিজেদের বাঙালির শিল্প-সাহিত্যের পথ প্রদর্শক হিসাবে ঘোষণা করেছিল একদা। তাদের একটা আন্তরিক চেষ্টা অবশ্যই থাকে বাঙালিকে পথ দেখানোর জন্য,  তাদের আত্মিক ঘোষণা থাকে বাংলা সাহিত্যকে বিশ্বের দরবারে পৌঁছে দেওয়ার জন্য কিন্তু তারা স্বজাতির কাছেই পৌছাতে ব্যর্থ হয়। কি করে তারা সীমানা পার হবে?

হুমায়ূন আহমেদের বই পড়ে কেউ কি বিপথগামী হয়েছে? কেউ কি ধর্ষণে উৎসাহিত হয়েছে? কেউ কি অসততার দিকে প্ররোচিত হয়েছে?হয় নি। তাহলে সমস্যা কোন জায়গায়?সবাই নিশ্চয় আখতারুজ্জামান ইলিয়াস, শওকত আলীর পাঠক নয়। সবাই নিশ্চয় গোলাম আলীর সংগীত বা চৌরাশিয়ার বাঁশি শুনবে না বা শোনার মত জ্ঞান থাকবে না। কেউ কেউ আসিফ, জেমস শুনবে। সমস্যা কোথায়? একজন রিকশাচালক আসিফের গান শুনে যদি আনন্দিত হয় তবে সামাজিক ভাবেই লাভ।

আমাদের বর্তমানের মহান সাহিত্যিকরা জাতি থেকে কেবল নিয়েছে, নিচ্ছে। বিনিময়ে তারা না জাতিকে কিছু দিতে পেরেছে না নিজেকে কিছু। কেবল মৌখিক উন্নাসিকতা। তারা সহজেই খারিজ করে দিচ্ছে অন্যকে। একজন সৃষ্টিশীল মানুষ মেঘের ছায়ার মতন। কঠিন রোদ, যেখানে ছায়াবীথি নেই, কোন ছাউনি নেই , ধু ধু প্রান্তর সেখানে মেঘ এসে সূর্যের সামনে দাঁড়ায় । ক্লান্ত পথিক কিছুটা হলেও শান্তি পায়। কিন্তু বর্তমানের কবি, সাহিত্যিকরা তো কোন মেঘ তৈরি করতে পারেন না, নিজেরাও হতে পারেন না উপরন্তুÍ কোন মেঘ যদি এসে দাঁড়ায় তাকে খুঁচিয়ে, আঁচড়ে দূর করে দেওয়াটা তাদের কঠিন চেষ্টা হয়ে দাঁড়ায়।

বাংলাদেশের এখন কঠিন অসুখ। এ অসুখের শুরু হয়েছে ২০১৩ এ শাহবাগের গণ-জমায়েতের সময় থেকে। বিচার চাই, ন্যায্য পাওনা চাই। এ সময় থেকে এখন পর্যন্ত তেমন কোন কবি সাহিত্যিককে দেখিনি শাহবাগে, মিছিলে, শ্লোগানে, রণ তুর্যে। তেমন কোন সাহিত্য, কবিতাও দেখিনি কাউকে রচনা করতে। কবি, সাহিত্যিকদের সময় আছে কিন্তু কিছু করার উপায় নাই। পাছে সরকার পরিবর্তন হলে পুরষ্কার ছুটে যায়। তারা সর্বদা ব্যস্ত পুরষ্কারের লোভে অথবা অন্যেও পশ্চাদপদেশে আঙ্গুল দেওয়াতে এবং অন্যের সৃষ্টিকে খারিজ করে দেওয়াতে। দেশ যখন দাউ দাউ করে পুড়ছে পেট্রোল বোমায় তারা তখন ব্যস্ত কবিতা উৎসবে, কবিতা পড়ায়। ওহ তারাতো পড়েন না, পাঠ করেন। সাজিয়া গুজিয়া ফুলবাবু আর কমলা সুন্দরীদের আসর। হুমায়ুন তার সস্তা হাত দিয়ে অনেক ভারী কিছু করে গেছেন স্বাধীনতা নিয়ে, মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে। তার মুক্তিযুদ্ধের সস্তা উপন্যাসগুলোর কথা বাদ দিলাম। “তুই রাজাকার” শব্দটা তিনি বহু আগেই গেঁথে দিয়েছিলেন অনেকের মগজে, মজ্জায়, চোখে, কানে।

ক-তে কাদের মোল্লা- তুই রাজাকার, তুই রাজাকার
গ-তে গোলাম আযম- তুই রাজাকার, তুই রাজাকার

আর আজকের মহানেরা এসবে নাই। তাদের ভাষায় এসব সাহিত্যিকদের কাজ না। সাহিত্যিকদের কাজ কি তাও তারা করে দেখাতে পারছেন না। ব্যক্তিগতভাবে আলাপে কেউ কেউ আমাকে বলেছেন “সাহিত্যের সহিত রাজনীতি মিশাবেন না” । তাদের যুক্তি মেনে নিলে কিছুর সাথে কিছুই আর মেশানো যাবে না। সব সমান্তরাল। খেলার সাথে রাজনীতি মিশানোও তো তাহলে ভুল। উত্তরে খেলা আর সাহিত্য এক হলো?!! পারলে আমারে থাপ্পড় দিয়ে দাঁত না শুধু মাড়িও খুলে ফেলতেন। সুবিধাবাদী চরিত্র এবং ব্যক্তিত্বে ভেড়ার পাল হওয়ার জন্য সাহস করতে পারেন নাই। নরম সরম কেউ হলে অবশ্যই তারা তা করতেন। আহা! ভেড়ার পাল। আহা! ভেড়া হুমায়ুন আহমেদকে গুঁতায়।

ফ্রান্সের সাহিত্যিক, রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব, দার্শনিক আঁদ্রে মারলো ৭১ সালে ট্যাংক বহর নিয়ে বাংলাদেশে যুদ্ধ করতে আসতে চেয়ে ছিলেন। নজরুলের কথাতো নতুন করে বলার কিছুই নাই- এক হাতে মম বাঁশের বাঁশরী, আর হাতে রণতুর্য। রবি ঠাকুর অসাম্প্রদায়িকতার পক্ষে, ধর্মীয় দাঙ্গা ঠেকাতে রাস্তায় নেমেছিলেন। এর বিপরীতে এরা কারা? কারা এরা?

সাহিত্য, শিল্প তখনই পূর্ণতা পায় যখন তা মানুষকে স্পর্শ করে। আমাদের বর্তমান মহানদের সাহিত্য শুধু মাত্র তাদের ছাড়া আর কাউকেই তেমন স্পর্শ করতে পারে না। গ্লাভস দিয়ে ধরা জীবনে স্পর্শ থাকে না। আমি পাঠক, যা পাই তাই পড়ি টাইপ পাঠক। বাংলাদেশের বেশির ভাগ পাঠকই এমন। কিন্তু এ মহানদের সাহিত্য, কাব্যে ভাষার চাতুরী থাকলে রসে সিক্ত হয়না ভূমি। পত্রিকার পাতা জুড়ে যখন শিশু মনিরের লাশের ছবি, কামরুলের লাশের ছবি তখন শার্ট-প্যান্ট ইং করা বা কপালে টিপ পড়ে দুর্গা সাজা কবি-সাহিত্যিকদের কবিতা পাঠের ছবি ফেবুতে দেখে আমার বারবারই মত হতো কিছু বিলাস বেশ্যা প্রাণান্ত চেষ্টা করে যাচ্ছে খদ্দের ধরার। বিনিময় পুরস্কার।

শিবিরের তাত্ত্বিক নেতা “না মানুষ আল-মাহমুদ”। আল-মাহমুদকে নিয়ে ব্লগে, ফেসবুকে (ফেবুতে) সমালোচনা করার কারণে অনেক কবি-সাহিত্যিক আমাকে আনফ্রেন্ড করেছিলেন। মহান একজন সাহিত্যিক নিয়ে কটু কথা!!! আরে ভেড়ার পাল- খাবার-দাবার-হাগা-মুতা-ঘুম-সঙ্গম সব প্রাণীর ভিতরই আছে। কিন্তু সাহিত্য রচনা করতে পারে একমাত্র মানুষই। যে মানুষই না তার সাহিত্য কিভাবে সাহিত্য হয়। রগকাটা বাহিনীর, বিশ্বের তৃতীয় সন্ত্রাসী সংগঠন শিবিরের তাত্ত্বিক নেতা যদি মানুষ হয় তবেতো মানুষের সংজ্ঞাই পরিবর্তন হয়ে যাবে। এ বছরের আগের বছরের জন্ম দিনে মাহমুদের জন্ম দিনের দিন দেখলাম পুং কপিবরেরা কনুই দিয়া একজন আরেক জনকে গুঁতা দিয়ে আহত করে ফেলছে সামনের সারিতে দাঁড়িয়ে ফটোসেশনের জন্য, আর মহিলা কপিবরেরা এমন সিনা টানটান করে ছিল দেখ মনে হলো তারা সিনা দিয়া ধাক্কা মেরে হিমালয়কে টলিয়ে দিবে। সবচেয়ে কষ্ট লাগলো আওয়ামী লীগের একজন এম.পি কবিকে যখন দেখলাম মামদোভুতের জন্ম দিনে। কাদের মোল্লার হাতে জবাই হওয়া কবি মেহেরুনেছার ঝুলন্ত মাথার কথা কি একবারও সেই এম.পি কবির মনে পড়েনি? তারচেয়ে আরও অবাক ব্যাপার হলো সেই কবি গ্রুপকে আবার দেখেছি ১৫ ই আগস্টে বিটিভিতে কাঁদতে কাঁদতে কবিতা পড়তে। আমি শত ভাগ নিশ্চিত বিএনপি ক্ষমতায় এলে এরা আবেগাপ্লুত হয়ে ১৫ আগস্টের দিন খালেদা জিয়ার জন্ম দিনে তাদের মহান সাহিত্য নিয়ে হাজির হবে।

অভিজিৎ, দীপনদা যখন খুন হলো এসব সাহিত্যিক একটা শব্দও উচ্চারণ করলো না। অথচ সৃষ্টিশীল মানুষ যুগে যুগে কালে কালে অন্যের অধিকারের জন্য মৃত্যুকে বরণ করে নিয়েছে। আর নিজেকে শ্রেষ্ঠ জ্ঞান করা এসব মহানেরা অন্যের মৃত্যুর দার্শনিক।

প্রকাশক, লেখক হত্যার পর বাংলা একাডেমীর ক্রিয়াকলাপ, মূক বধিরতা নিয়ে আমি ফেবু ব্লগে কটাক্ষ করে লেখা লেখি শুরু করলে এই মহানেরা আমার সবচেয়ে আপনজন হয়ে উঠেছিলেনে। ইনিয়ে বিনিয়ে তারা বোঝাতে চাইতেন আমি বাংলা একাডেমীর সম্মানিত DG-এর সম্মানহানি করছি। আমি বাংলা একাডেমীতে ব্ল্যাক লিস্টেড হয়ে যেতে পারি। তাহলে জীবনে কখনও বাংলা একাডেমীর পুরষ্কার পাবো না ।  আমার কেবল হাসি পেত। পুরস্কার আসলে পাঠকের মনে, সময়ে। পুরস্কার, খ্যাতির লোভে নামতে নামতে এরা নিজের ছায়ারও নিচে নেমে গেছে। বর্তমানে এসব সাহিত্যিক কবির নিজের লিটল ম্যাগ এর সাথে আরেকটি কাজ করে সাহিত্যকে মহান জায়গায় পৌঁছে দিচ্ছেন তাহলো  কেউ যদি একটু পাঠকপ্রিয়তা পায় তবে তার পশ্চাদপদেশে মরিচ ডলা দেওয়া । বিপরীতে না এরা পেরেছেন পাঠক প্রিয় কিছু রচনা করতে না পেরেছেন ভারী কিছু রচনা করতে।

একজন শিল্পী, একজন কবি, একজন সাহিত্যিক আসলে এক একটি ডাস্টবিন। এরা জগতের সকল ময়লা আবর্জনা ধারণ করেন। তাই সামাজিক, ব্যক্তি জীবনে এরা অনেক কিছুতেই অপাংক্তেয়, অপমানিত, নি:সঙ্গ। নিজেকে খেয়ে খেয়েই এ ডাস্টবিনেরা পৃথিবীর জন্য ফুলের সৌন্দর্য রেখে যান, সৌরভ রেখে যান । কিন্তু আমাদের আজকের সাহিত্যিকরা নিজেরাই আবর্জনা। শরীর থেকে দ্রোহের,, সরলতা, উদারতার, সাহসের, বিপ্লবের, ভালবাসার গন্ধের বদলে ভুর ভুর করে ভেড়ার গন্ধ বের হয়।

আজকে হুমায়ূন আহমেদের মত একজনও যদি বাজারি (?!) সাহিত্যিক থাকতেন তবে জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে আমরা কিছু না কিছু পেতামই। হুমায়ুন আহমেদ নেই কিন্তু তার ছোট ভাই জাফর ইকবাল মাঠে ময়দানে চেষ্টা করে যাচ্ছেন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে জীবনের জন্য, সমাজের জন্য কিছু করার। সৃষ্টিশীল মানুষ জাতির মগজ। কেউ মানুক বা না মানুক এটা সত্য। জঙ্গিবাদ দূর হয়ে যাবে, দূর হবে সাম্প্রদায়িকতাও কিন্তু ভীতু, কাপুরুষ, সুবিধাবাদী এসব ভেড়ার পাল থেকে যাবে মগজ হিসাবে। আমাদের করণীয় কিছু নেই এদেরও ব্যাপারে। বাঙালি জাতিকে হয়তো আর কয়েক যুগ অপেক্ষা করতে হবে একজন সাহিত্যিক, কবি তথা সৃষ্টিশীল কারো জন্য।

ভেড়ারা হুমায়ুনে সমালোচনা গালাগাল করে যাবে, তাতে অবাক জোছনার কিছুই আসবে যাবে না। জোছনা অনন্তকাল চুইয়ে চুইয়ে ভিজিয়ে যাবে বাংলার মাঠ-ঘাট-পথ-প্রান্তর, হুমায়ুনের কবর।

সবাই যোদ্ধা হয় না। কবি শামসুর রাহমান বিনম্র চিত্তে বলে ছিলেন “আমি মুক্তিযুদ্ধে যাওয়ার মতো সাহসী ছিলাম না কিন্তু আমি লিখে গেছি মুক্তির পক্ষে, স্বাধীনতার পক্ষে” । তার কবিতা থেকে আমরা এক ধরনের স্বাধীনতার সংজ্ঞা পেয়েছিলাম। কিন্তু আজকের ভেড়া সম্প্রদায়ের কাছ থেকে কেবল ভেড়ার গন্ধই পাই ।  

জহিরুল হক বাপি : ব্লগার ও অনলাইন এক্টিভিস্ট।
এ বিভাগে প্রকাশিত লেখার বিষয়, মতামত, মন্তব্য লেখকের একান্ত নিজস্ব। sylhettoday24.com-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে যার মিল আছে এমন সিদ্ধান্তে আসার কোন যৌক্তিকতা সর্বক্ষেত্রে নেই। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে sylhettoday24.com আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো দায় গ্রহণ করে না।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত