আফসারা মীম

০৪ আগস্ট, ২০১৬ ২১:৪২

নারীর মানবাধিকার পূর্ণ প্রতিষ্ঠার ভাষ্য

নারী পুরুষ সমান, সমাজে তাদের অধিকার অভিন্ন, এই হচ্ছে সহজ ভাষায় নারীবাদ। একে মনে হয় সরল, দিবালোকের মতো স্বচ্ছ, সত্য বলে; কিন্তু পিতৃতন্ত্রের দীর্ঘ ইতিহাসে মানা হয়নি এ-সরল সত্যটুকু।নারীবাদীরা মনে করেন মৌল যোগ্যতায় কোনো পার্থক্য নেই নরনারীতে; নারী ও পুরুষের মূল পরিচয় তাদের স্ত্রী বা পুংলিঙ্গ নয়, তাদের মূল পরিচয় হচ্ছে তারা মানুষ। মানুষের প্রকৃতি ও যোগ্যতা লিঙ্গ নিরপেক্ষ। কিন্তু, পিতৃতন্ত্র এটা মানে নি কখনোই। নারীমুক্তি, সে তো বহু দূরের পথ।

আমাদের নারীসমাজের অনেকেই সোচ্চার হয়েই নারী ও পুরুষের সমাধিকার ও সমসুযোগ প্রাপ্তির জন্য দাবী তুলেছেন। যাঁরা এই চরম পুরুষতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থায় সোচ্চার হবার মতো সাহস বা দ্রোহের প্রকাশ করতে অক্ষম, তাঁরা সুনিশ্চিতভাবেই অন্তরের অন্তঃস্থলেও তেমন আকাঙ্ক্ষাই লালন করেন। সামাজিক ও ধর্মীয় অনুশাসন তাঁদের কণ্ঠ এমনভাবে চেপে ধরে আছে যে তাঁরা তাঁদের মনের এই অদম্য আকাঙ্ক্ষাকে প্রকাশ করতে সক্ষম হন না। বরং, এখনো আমাদের সমাজে যেসব জিনিস চোখে খুব বেশি পড়ছে সেগুলো হলো-

•    পুরুষের সমাজে‘নারী’সিদ্ধান্তের গুরুত্ব না থাকা
•    নারী হয়ে জন্মানোকে অভিশাপ হিসেবে দেখা
•    নারীর নিরাপত্তাহীনতা জনিত উদ্বেগ ক্রমাগত বৃদ্ধি পাওয়া
•    সামাজিক, পারিবারিক, বৈষয়িক ও মানসিকভাবে নারীকে অবরুদ্ধ করে রাখা
•    নারীর বিরুদ্ধে কুৎসা রটিয়ে পুরুষের স্বার্থোদ্ধার করা

পরিবার নামের যে প্রতিষ্ঠানটি ব্যক্তির বিকাশ ও জীবনযাপনের ক্ষুদ্র এলাকা, সেটিতেও নারীর প্রতি পুরুষশাসিত সমাজের মনোভাব ও আচরণ উলঙ্গভাবে আছড়ে পড়েছে। শৈশব থেকেই পরিবার একটা মেয়েকে উপেক্ষা ও অসম্মানের কাজটি শুরু করে দেয় এবং প্রাপ্তবয়স্ক অবস্থাতেও তা অব্যাহত থাকে। ঘরের বাইরে তো তার জন্য এমনিতেই বৈরী পরিবেশ। সামান্য নিরাপত্তাটুকুও তার নেই সেখানে কারণে। আবার মজা হচ্ছে, সেই নিরাপত্তার জন্য নারীকে পুরুষেরই দ্বারস্থ হতে হয়।

আমাদের সমাজের নারী অগ্রদূত বলতে বেগম রোকেয়ার কথাই উঠে আসে ও পর্যায়ক্রমে সুফিয়া কামাল বা অন্যান্যরা। তবুও প্রশ্ন হলো রোকেয়ার জন্মের শতবর্ষ পরও আমাদের নারীসমাজে এই আদর্শ প্রতিফলন ঘটেছে কিনা যা আমরা আশা করি বা করছি? উত্তরে বলা যায়, আমাদের দেশে নারীশিক্ষার হার বহুগুণে বৃদ্ধি পেয়েছে, অবরোধ প্রথা হ্রাস পেয়েছে, যদিও ইদানিং আবার হিজাব-নিকাবের পরিমাণ বৃদ্ধির দিকে যাচ্ছে। ১৯৯০ থেকে দুজন নারী নেতা প্রায় পালাক্রমে সরকার প্রধান ও বিরোধী দলের নেতা হয়ে আসছেন।

বর্তমান সরকারের মন্ত্রীত্বের অনেক গুরুত্বপূর্ণ পদ এবং কর্মভার কয়েকজন মহিলা নেতার উপর ন্যস্ত করা হয়েছে। যদিও প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা পদে কোন নারীকে আজ অবধি আমরা পাই নি। এইসব তথ্যকে অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই।  তবুও প্রশ্ন থেকেই যায়, নারীসমাজের উন্নতি সাধনের পথ এরপরও কি মসৃণ হয়েছে?

পারিবারিক আইন বা Family Code প্রতিষ্ঠার কথায়- যে আইন দ্বারা সকল ধর্মের নাগরিকের জন্যই বিবাহ, বিবাহ-বিচ্ছেদ, সন্তানের অভিভাবকত্ব এবং উত্তরাধীকারীত্বের বিষয়ে সুনির্দিষ্ট একটি ব্যবস্থাই থাকবে। বাংলাদেশের নারীসমাজ ও নারী সংগঠনগুলোর বহুকালের এই দাবীটি এই উভয় নারী নেতা  ক্রমান্বয়ে উপেক্ষা করে চলছেন। এই ব্যাপারে প্রতিক্রিয়াশীল নাগরিকদের ভোটের সংখ্যার হিসেব যে তাদের নিকট অধিকতর গুরুত্ব পাচ্ছে এমন ধারণা করা অযৌক্তিক নয়।

এখানে আরো উল্লেখ্য, দুই দশকেরও অধিক কালের নারী নেতৃত্বের পরও আমাদের দেশে আজও গ্রামীণ সালিশে ধর্মীয় "ফতোয়া" দিয়ে এই একবিংশ শতাব্দিতেও নারীদের অত্যাচারিত ও উৎপীড়িত করা হচ্ছে। সমাজের নানা অবস্থানে নারী ও বালিকারাও নানা ধরণের যৌন নির্যাতনের শিকার হয়ে অপমানের জ্বালায় আত্মঘাতী হচ্ছে। নারীমুক্তি সাধনের লক্ষ্যে যোগ্য নারী নেতৃত্ব যে আমাদের দেশে গড়ে ওঠেনি সেকথা অস্বীকার করার উপায় নেই। এই নারী নেতৃত্বকে নারীমুক্তির নেতৃত্ব না বলে পুরুষতন্ত্রের প্রতিভূ হিসাবেই বিবেচনা করা শ্রেয়। কারণ তাঁরা নারীর নয়, স্বার্থ টিকিয়ে রাখছেন পুরুষেরই।

সপ্তম শতকে টমাস হবস, আরো পরে জন লক, রুশো ও ইমান্যুয়েল কান্ট প্রমুখ একটি আদর্শ সমাজব্যবস্থা গড়ার স্বপ্নকে অবলম্বন করে মানবমুক্তির স্বপক্ষে যুক্তি দেখালেও তাদের পূর্ণ মতামত ব্যক্ত করতে অক্ষম ছিলেন। A Vindication of the Rights of Woman- এ সর্বপ্রথম নারীবাদীদের মতই সামগ্রিক অর্থে নারীর মানবাধিকারের স্বপক্ষে যুক্তি তুলে ধরেন মেরি ওলস্টোনক্রাফট।

তিনি নারী পুরুষ নির্বিশেষে সকল মানুষের জন্য একটি ও একই মানদণ্ড দাবী করেন, এবং 'নারীও যে মানুষ' এবং পুরুষের সমমানেরই মানুষ সেই সত্যিটা যৌক্তিকতার সাথেই বিবৃত করেন। তিনি বলেন, 'Truth can but have only one standard'.

অষ্টাদশ শতাব্দিতে প্রচলিত ও প্রায় সর্বজনগৃহীত নারীসমাজের অধীনের মতাদর্শ ও ব্যবস্থার বিরুদ্ধে এই Vindication টি একটি শক্তিশালী বিস্ফোরণ ছিল। নারীরা ঈশ্বর দ্বারা শারীরিক ও মানসিক দিক দিয়ে নিম্নমানের হয়ে সৃষ্টি হয়েছে, এই ধর্মীয় ভাষ্যের মূল সূত্রটি তাদের মন ও মানসিকতাকে আচ্ছন্ন করে রাখায়, নারীশিক্ষাকে ঐ সীমার মধ্যে আবদ্ধ রেখে, নারীকে পুরুষ আওতাধীন গণ্ডির মধ্যেই যতটুকু অগ্রগতি সাধন সম্ভব সেই সম্বন্ধেই মতামত ছিল সমাজে প্রতিষ্ঠিত। ওলস্টোনক্রাফট এই মূল সূত্রটিকেই তীব্র আক্রমণ করেন, এবং যে-সকল মনোভাব বা প্রবণতা এবং রীতি-নীতি নারীকে অধস্তন করে রাখার উদ্দেশ্যে গৃহীত হয়েছে, সেগুলোকে পরিত্যাগ করে নারীবান্ধব এক নতুন সমাজব্যবস্থা সৃষ্টি করে নারীমুক্তির সপক্ষে একটি স্থায়ী অবস্থান নেয়া সম্ভব বলেও তিনি মনে করেন।

পুরুষের মনোরঞ্জন বা সেবা করে, তার উপর একান্তভাবে নির্ভরশীলতাই নারীর একমাত্র কাম্য না হয়ে, মানুষ হিসেবে নিজস্ব মেধা ও কার্যক্ষমতার উন্নতিসাধন করার প্রতি যত্নশীল হওয়াই নারীর কর্তব্য, এমন প্রথাবিরোধী শক্তিশালী মতটি ব্যক্ত করতেও তিনি দ্বিধান্বিত হন নি। প্রতিটি নারীকে নিজেকে একজন মানুষ হিসেবে ভাবতে সক্ষম করাই যথার্থ নারীশিক্ষার লক্ষ্য, এবং এই লক্ষ্য সাধনই নারীসমাজের সার্বিক অগ্রগতির পথে সহায়ক হতে পারে, এমনটিই তাঁর ভাবনা ছিল।

তাঁর মতে নারীকে অধস্তন অবস্থান থেকে মুক্ত করার জন্য প্রয়োজন এমনই একটি শিক্ষাব্যবস্থা প্রচলন করা এবং সমতাভিত্তিক সামাজিক ও অর্থনৈতিক সমাজ কাঠামো সৃষ্টি করা। এই নতুন সমাজকাঠামোর ভিত্তি হতে হবে বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চা, যে চর্চার মাধ্যমে সকল সংস্কার ও অন্ধবিশ্বাসকে পরিত্যাগ করে পথচলা সম্ভব হবে। নারীর মানবাধিকার পূর্ণ প্রতিষ্ঠার পদ্ধতি এটিই।

প্রতিটি নারীকে ধরিয়ে দিতে হবে পুরুষতান্ত্রিক সমাজ এবং পিতৃতান্ত্রিক প্রথা ও প্রতিষ্ঠানের অমানুষিক গলদ। আর, অর্থহীনতা যে নারী ভাবমূর্তি তৈরি করতে চায় পুরুষেরা সমাজে, তার বিপ্রতীপে অবস্থান নিতে হবে। নিজের কণ্ঠ, ভাষা ও আচরণ নিয়ে ঢুকে পড়তে হবে পুরুষ কবলিত (যেখানে পুরুষ নিজের শাসন জোরদার করায় ব্যস্ত) পৃথিবীতে।

২.
নারীর জন্য মানুষ ও ব্যক্তি হিসেবে জীবনযাপন ও জীবনধারণ করার জন্য আবশ্যক অধিকারগুলো হলো:

•    খাদ্য ও বাসস্থানের অধিকার
•    শিক্ষা ও স্বাস্থ্যের অধিকার
•    মতপ্রকাশের অধিকার
•    মাতৃত্বের অধিকার
•    দৈহিক ও মানসিক চাহিদা পূরণের অধিকার
•    রাষ্ট্রীয় সকল কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণের অধিকার
•    পারিবারিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের অধিকার
•    পারিবারিক সমস্ত দায়িত্বপালনের অধিকার
•    মানুষ হিসেবে সম্মান পাবার অধিকার
•    নিজস্ব জীবনপথ নির্ধারণের অধিকার
•    সম্পত্তি ও উত্তরাধিকারে সমান অধিকার
•    নিজস্ব জন্মপ্রদত্ত নাম সংরক্ষণের অধিকার, প্রভৃতি।

এখানে লক্ষণীয় যে পুরুষের অধিকারের তালিকাটির চেয়ে নারীর অধিকারের তালিকাটি দীর্ঘ। এর কারণ হলো প্রকৃতিগত এবং ধর্ম ও সমাজ আরোপিত নারী জীবনের কিছু নেতিবাচক ও বৈরী বৈশিষ্ট্যের কারণে নারীর জন্য কিছু অতিরিক্ত অধিকার প্রয়োজন পড়ে। আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় উল্লেখ্য যে, পুরুষ কেবলমাত্র 'পুরুষ' হয়ে জন্মাবার কারণেই বর্তমান গণতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থায় ও আমাদের পিতৃতান্ত্রিক সমাজে সামাজিকভাবেই জন্মগত কয়েকটি অধিকার পেয়েই থাকে। যেমন:

•    পারিবারিক সিদ্ধান্তগ্রহণ ও দায়িত্বপালনের অধিকার
•    সম্পত্তি ও উত্তরাধিকারিত্বের অধিকার
•    বিবাহ বিচ্ছেদের একক এবং রৈখিক পুরুষতান্ত্রিক অধিকার।
•    রাষ্ট্রীয় সকল কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণের অধিকার
•    নিজস্ব জন্মপ্রদত্ত নাম সংরক্ষণের অধিকার
•    সর্ব অঙ্গণে চলাচলের অধিকার

আমাদের দেশের নারীর অবস্থানে অধস্তনতার বিষয়টি আলোচনা করতে গিয়ে বৈশ্বিক নারীর অধস্তনতা নিয়ে কিছু বলে নিতে হয়। বর্তমান পাশ্চাত্য বিশ্বে নারীর অধিকার বহুমাত্রিকভাবে প্রসারিত হয়েছে। কেবলমাত্র আইনিভাবেই (de jour) নয়, বাস্তবেও (de facto) একথা সত্যি। তবে অষ্টাদশ শতাব্দি পর্যন্ত পাশ্চাত্য বিশ্বে নারীর অবস্থান আমাদের তুলনায় খুব একটা উন্নত ছিলো না। সেসব দেশে আমাদের দেশের মতো অবরোধ প্রথা এবং ধর্মীয় বিধি-নিষেধের কারণে পুরুষের জন্য বহুবিবাহের প্রথা অবশ্য ছিলো না, তবে সম্পত্তির উত্তরাধীকারিত্বে অধিকার নারীর ছিলো না।

কোনো নারী সম্পদের মালিক হলেও বিয়ের পর সেই সম্পদের মালিকানা স্বামীর হয়ে যেতো। নারী সমাজের এমন অবস্থানের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে স্বাধীনচেতা ও প্রতিভাময়ী নারী মেরী ওলস্টোনক্রাফট (১৭৫১-১৭৯৭)। নানা বাঁধা বিপত্তিকে অবজ্ঞা করে স্বাধীনভাবে নিজের জীবনকে চালিত করেন। নারী অধিকার স্বপক্ষে যুক্তি প্রদর্শন করে সর্বপ্রথম রচনা তাঁর দ্বারাই প্রণীত হয়, এবং ১৭৯২ খ্রিষ্টাব্দে A Vindication of the Rights of Woman এই শিরোনামে গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হয়। এই গ্রন্থে নারীর সমাধিকারের স্বপক্ষে যুক্তিগুলো এতটাই জোরালো ছিলো যে শুধুমাত্র ইংরেজ সংগ্রামী নারীদের ও নারী-সংগঠনগুলোকে নারীর সমাধিকার প্রাপ্তির লক্ষ্যে তাদের আন্দোলনকে যৌক্তিকতা দিয়ে উজ্জীবিত করেছিলো তা-ই নয়, সুদূর যুক্তরাষ্ট্রের নারী-সংগঠন ও নারী সমাজও এ গ্রন্থের উপজীব্য পাঠে অপরিসীম প্রভাবিত হয়েছিলো।

এবার আমাদের দেশের নারীসমাজের অবস্থান, নারীর অধিকার, অধিকার সংরক্ষণ ও দায়িত্বপালনের সুযোগ প্রভৃতি বিষয়ে কিছু আলোকপাত করা যাক।

মৌলিক অধিকার সম্বন্ধে বলতে হয় যে, সাধারণভাবে নারী পুরুষ নির্বিশেষে সকলের জন্যই আমাদের দেশে প্রধানত দারিদ্র ও শিক্ষাহীনতার কারণে আইনি অধিকার পর্যন্ত বাস্তবায়ন করা সম্ভব হচ্ছে না। এখানে মনে রাখা দরকার যে দরিদ্র পুরুষের তুলনায় দরিদ্র নারীর অবস্থা অধিকতর করুণ। তারা শুধুমাত্র দারিদ্র্যের চাপেই পিষ্ট নয়, একই সাথে পুরুষের উপর নির্ভরশীল হওয়ায় আরো অসহায় অবস্থায় পড়ে।এমন অবস্থায় তাদের আইনি অধিকার রক্ষা করার জন্য দরিদ্র পরিবারের পক্ষে যে ধরনের আইনি সহায়তার প্রয়োজন বা খুব আবশ্যক, এবং যে সহযোগিতা ও সহায়তা রাষ্ট্র পক্ষ থেকে পাওয়ার কথা তা কি দরিদ্র জনগণ পায়? সন্দেহাতীতভাবেই এই প্রশ্নের উত্তর না বাচক হবে। এখানে উল্লেখ্য যে, সম্প্রতি অসচ্ছল পরিবারকে আইনি সহায়তা দেবার বিষয়টি বর্তমান সরকারের মন্ত্রীসভায় অনুমোদন পেয়েছে।

একথা সহজবোধ্য যে, নারীর সম-অধিকার সমাজে সাধারণভাবে স্বীকৃতি পায় না বলেই কিন্তু নারীর পক্ষে অধিকার না পাওয়ার বিষয়টি জনসম্মুখে তেমনিভাবে উঠে আসে না বা প্রায়ই অজ্ঞাতই থেকে যায়। (আইন যেহেতু বাস্তবে প্রায় সর্বক্ষেত্রেই বিত্তশালী বা শক্তিধরদের পক্ষেই যায়, তাই দারিদ্র ও পুরুষ নির্ভরশীল অসহায় নারীর পক্ষে ন্যায়বিচার পাওয়া প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ে। এটাই সামাজিক বাস্তবতা এবং আমাদের সমাজের জন্য কঠিন একটি চিত্র।)

নারীর অধিকার প্রাপ্তির বিষয়টি নিয়ে আলোচনায় আসলে হতাশ হতে হবে বরাবরের মতো। খাদ্য ও বাসস্থানের অধিকারের প্রশ্নে এমনটা বলা যায়, সুষম খাদ্য নিম্ন মধ্যবিত্ত ও দরিদ্র পরিবারে তুলনামূলকভাবে পুরুষরাই বেশি পায়। এমনকি পরিবারের গৃহিণীরাই খাদ্যের পরিমাপ ও গুণ এই উভয় বিবেচনায়ই স্বামী ও পুত্রসন্তানদের অধিক পরিবেশন করেন। একইভাবে নারীরা বঞ্চিত হয় খাদ্য-সমাধিকার থেকে। আর বাংলাদেশের মেয়েরা হয় পিতার গৃহে নয় স্বামীর গৃহে বাস করে। আর পিতা বা স্বামীর অবর্তমানে পুত্র বা পুরুষ আত্মীয়-স্বজনের আশ্রিতা হয়ে জীবন কাটায়। আমাদের দেশে নিজস্ব বাসস্থান শতকরা ক’জন নারীর আছে?

শিক্ষা ও স্বাস্থ্যরক্ষার অধিকারই বা নারীদের জন্য কতটা সুপ্রাপ্য? পুত্রসন্তানেরা দরিদ্র ও নিন্মমধ্যবিত্ত পরিবারে প্রাধান্য পায়। কন্যাসন্তানের মেধা তুলনামূলকভাবে বেশী হলেও সাধারণত তারা শিক্ষাপ্রাপ্তির বিষয়ে অবহেলিত থেকে যায়। প্রাপ্তবয়স্ক হবার আগেই কন্যাসন্তানকে বিয়ে দিয়ে তাকে নিরাপত্তা দেওয়ার এবং ভরণপোষণের দায় থেকে মুক্তি পাওয়ার প্রবণতাও বেশ প্রবল বাবা-মায়ের মধ্যে। শহরাঞ্চলে বিগত দশক থেকে পোশাকশিল্পে কাজ করে মেয়েদের উপার্জন করার সুযোগ হওয়ায় বাল্যবিবাহের হার কিছুটা হ্রাস পেয়েছে। তবে গ্রামাঞ্চলে এখনো বাল্যবিবাহের বেআইনি প্রথা চালু রয়েছে। স্বাস্থ্যের বিষয়টিতেও পরিবারের কর্তা ও পুত্রসন্তানের অগ্রাধিকার সর্বত্রই লক্ষণীয়। অর্থ উপার্জনের ক্ষমতার জন্য পুরুষতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থায় পুরুষের প্রাধান্য ও গুরুত্ব বেশি হবে সেটাই স্বাভাবিকত্ব।

যেসব নারী বহু প্রতিবন্ধকতার গণ্ডি পার হয়েও নিজেরা অর্থ উপার্জনের ক্ষমতা অর্জন করতে সক্ষম হয়, তাদের অবস্থানের বাস্তবতাও বহুক্ষেত্রেই অধস্তনতা থেকে মুক্ত নয়। আমাদের দেশে প্রচলিত বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার একটি জরিপে দেখা যায়, এদেশের ৪০ শতাংশ শিক্ষিত নারী স্বামীর হাতে নির্যাতিত হয়। নির্যাতিত এই শিক্ষিত ও উপার্জনক্ষম নারীরা অর্থনৈতিক স্বাধীনতা (?) থাকা সত্ত্বেও সমাজের দৃষ্টিভঙ্গির কারণে এই অত্যাচারের কথা প্রকাশ করেন না। জাতীয় জনসংখ্যা গবেষণা ও প্রশিক্ষণ ইন্সটিটিউট (নিপোর্ট) 'বাংলাদেশ ডেমোগ্রাফিক অ্যান্ড হেলথ সার্ভে ২০০৭'- এ ছয়টি অঞ্চল জরিপ করে জানায় যে ৪৯ শতাংশ শিক্ষিত শহুরে নারী স্বামীর হাতে নির্যাতিত হয়, এবং ৫৪ শতাংশ পুরুষেরা বিশ্বাস করে স্ত্রীকে মারধর করাটা তাদের ব্যক্তিগত বিষয়।

আবার বাংলাদেশ জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতির পর্যবেক্ষণে এমন তথ্য পাওয়া যায় যে, এই নির্যাতিত শিক্ষিত মহিলাদের মধ্যে অনেকেই চিকিৎসক, স্থপতি, আইনজীবী, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক এবং কর্মজীবী। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রোমানা মোর্শেদ এর একটি ভয়ঙ্কর দৃষ্টান্ত। আইন ও সালিশ কেন্দ্রের তথ্য সংগ্রহ ইউনিটের পারিবারিক নির্যাতন ২০১০ এর প্রতিবেদন থেকে জানা যায় যে, ৪২ জন নির্যাতিত নারীর মধ্যে মাত্র ৪ জন মামলা করে। এই সকল রিপোর্ট থেকে আরো জানা যায়, এ দেশের নারীরা তাদের পক্ষের আইনগুলো সম্বন্ধে মোটেও জ্ঞাত নয়; শিক্ষিত নারীর তুলনায় অশিক্ষিত নারীরাই বরং বেশি সাহসী। নারীরা সাধারণভাবে আমাদের সমাজব্যবস্থার কারণে কোনো সাহসী সিদ্ধান্ত নিতে অপারগ।

এইসব প্রাপ্ত তথ্য থেকে একথা সুস্পষ্ট যে, কেবলমাত্র নারীর শিক্ষাপ্রাপ্তি ও উপার্জনক্ষম হওয়াটাই যথার্থ অর্থে নারীকে ক্ষমতায়িত করতে পারে না। নারীর ক্ষমতায়নের জন্য প্রয়োজন মানবিক সমাজ প্রতিষ্ঠা করা, যে-সমাজ থেকে পুরুষতান্ত্রিক দৃষ্টিভঙ্গি দূরীভূত হবে।

৩.
এইবার অন্যান্য অধিকার নিয়ে আলোচনায় আসা যাক। মত প্রকাশের অধিকার, নিরাপদে চলাফেরার অধিকার ও আত্মরক্ষার অধিকার এবং পারিবারিক গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণের বেলায় ও অন্যান্য বিষয়ে মত প্রকাশের অধিকার থেকেও নারীকে সাধারণভাবে বঞ্চিত থাকতে হয়। কিছু কিছু ক্ষেত্রে যদিও বুদ্ধিমান নারীরা ব্যক্তিগত প্রভাব খাটিয়ে পারিবারিক সিদ্ধান্ত গ্রহণে পরোক্ষ প্রভাব রাখেন, তবে সেরকমটা ব্যতিক্রমী দৃষ্টান্ত। নিরাপদে চলাচলের অধিকার ও আত্মরক্ষার অধিকার নারীর যে ন্যুনতম সেটা রাস্তাঘাটে যেভাবে তাদের উত্যক্ত হতে হয় আর ঘরে বাইরে ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যেভাবে তাদের যৌন হয়রানির শিকার হতে হয়, সেইসব তথ্য থেকেই প্রমাণিত।

বিবাহ-বিচ্ছেদে সম-অধিকার নারীসমাজের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিয়ের পাত্র পছন্দের ব্যাপারে নারীর স্বাধীন মত প্রকাশের অধিকার প্রায়ই স্বীকৃতি পায় না। ইসলাম ধর্মে নারীকে বিবাহ-বিচ্ছেদ সংক্রান্ত বিষয়ে কিছু অধিকার দেয়া হয়েছে বটে, তবুও সেটুকু অধিকার সংরক্ষণ করতেও তারা সামাজিক ও অর্থনৈতিক কারণে অপারগ হয়।

এবার মাতৃত্বের অধিকার প্রসঙ্গে আসা যাক। আইনগতভাবে মাতৃত্বের অধিকার আমাদের দেশে কতটুকু স্বীকৃতি পায়? আদর্শিকভাবে অবশ্য মাতৃত্বের অধিকার ইসলাম ধর্মে ও সমাজে স্বীকৃতি পেয়েছে। কিন্তু বাস্তবে এই আদর্শের প্রতিফলন কতটুকু দেখা যায়? আইনিভাবে যেটুকু স্বীকৃতি আছে তা আদায় করাই বা কতটুকু সম্ভব?  নারীর অধনস্ততার পরিপ্রেক্ষিতে এই সকল প্রশ্নের উত্তর সাধারণভাবে নেতিবাচকই হবে। তবে, অতি সম্প্রতি জাতীয় পরিচয়পত্রে এই প্রথমবারের মতো মা-এর নাম নথিকরণের নিয়ম প্রবর্তিত হয়েছে, এবং এইভাবে সন্তান যে কেবল পিতার নয়, মায়েরও, এই শর্তটি এই নীতিগ্রহণের মাধ্যমে স্বীকৃতি পেয়েছে। তবে অবশ্য বিবাহিত নারীর ক্ষেত্রে পিতার নামের স্থানে স্বামীর নাম নথিকরণের নিয়ম করা হয়েছে।

পুরুষের ক্ষেত্রে অবশ্য কেবলমাত্র মাতা ও পিতার নাম নথিকরণের নিয়ম করা হয়, এক্ষেত্রে স্ত্রীর নাম অন্তর্ভুক্তিকরণের কোন নিয়ম বা সুযোগ নেই। উল্লেখ্য যে, অধুনা প্রবর্তিত‘মেশিন রিডেবল’পাসপোর্টে কেবলমাত্র নারী বা পুরুষের নিজস্ব নামটিই থাকে, যদিও আবেদনপত্রে স্বামী/স্ত্রী (spouse)- এর নাম অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ তথ্যের সাথে লিপিবদ্ধ করতে হয়। এইভাবে নারী-পুরুষের ক্ষেত্রে বৈষম্যটি থেকেই যাচ্ছে। তবুও বলতে হয়, মায়ের নাম জাতীয় পরিচয়পত্রে নথিকরণের মাধ্যমে পরিবারে অবশ্যই কিছুটা হলেও মায়ের গুরুত্বের ধারণার প্রতিফলন ঘটেছে। তবে এমনটা ধারণা করা অবাস্তব বা অযৌক্তিক হবে না যে, পরিবারে মায়ের সন্তানের উপর অধিকারের ন্যায্যতার বিষয়টি যথাযথভাবে বাস্তব প্রতিফলন ঘটানোর জন্য আবশ্যক রাষ্ট্রীয় সহায়তায় নারীকে অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী ও স্বাধীন করা, সম্পত্তির উত্তরাধিকারিত্বে নারীর সম-অধিকার প্রতিষ্ঠা করা, ও নারীকে নারী হিসেবে নয় মানুষ ও ব্যক্তি হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া।

নারীর মাতৃত্বের অধিকারটিকে যথার্থভাবে বাস্তবায়িত করতে হলে এই সত্যটিকে অনুধাবন করতে হবে যে, সন্তান নারীর দেহের মধ্যে নারীরই রক্তে বর্ধিত হয়ে জন্মগ্রহণ করে। অন্যান্য বিষয়কে বিবেচনা না করেও এমনটা বলা যায়, একমাত্র এই ন্যায্য কারণেই নারীর অধিকারকে সমুন্নত করা উচিত। নারীর নিজের দেহের উপর সার্বভৌম অধিকার আইনগতভাবে প্রতিষ্ঠিত করা নারীর পক্ষে অন্য সকল সম-অধিকার প্রাপ্তি এবং সেই অধিকার সংরক্ষণের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ শর্ত। এই শর্তটি পূরণ করা অত্যন্ত জরুরি।

আরো একটি বিষয়ও এখানে উল্লেখ করা প্রাসঙ্গিক। এখানে নারীর পুরুষের মতো জন্মপ্রদত্ত নাম সংরক্ষণ করার অধিকারকেও গুরুত্ব সহকারে অধিকারের তালিকায় অন্তর্ভুক্তিকরণও আবশ্যক। বিয়ের পর নিজস্ব নামের অংশ বাদ দিয়ে বা কোনো কোনো ক্ষেত্রে বাদ না দিয়েও স্বামীর নামের অংশবিশেষ যুক্ত করার যে রীতি বা প্রথা পাশ্চাত্যের অনুকরণে বিংশ শতাব্দীর মধ্যভাগ থেকে প্রচলিত হয়েছে, সেটা নারীর আত্মপরিচয়ের ক্ষেত্রে একটি মারাত্মক প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করে। এই সত্যটি অনুধাবন করেই যুক্তরাষ্ট্রে ১৮৫০ খ্রিস্টাব্দেই নারীবাদী বিপ্লবী লুসি স্টোন স্বামীর পরিচয়ে পরিচিত হওয়ার বাধ্যবাধকতাকে প্রত্যাখ্যান করে বিয়ের পর তাঁর নিজস্ব জন্মপ্রদত্ত নামটি বহাল রেখে একটি বিরল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছিলেন।

নারীর মানুষ ও ব্যক্তি হিসেবে সম্মান পাবার বিষয়টি নিয়ে সংক্ষেপে এমন বলা যায় যে, আমাদের দেশে যদিও মা হিসেবে নারীকে সম্মান দেয়া হয়, মানুষ ও ব্যক্তি হিসেবে তার প্রাপ্য সম্মান তাকে দেয়া হয় না। স্ত্রী হিসেবেও তার প্রাপ্য সম্মানটুকু সে পায় না। নারীর সম্মান পাবার বিষয়টি আবার নারীর ক্ষমতায়নকে বাস্তবায়িত করার সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। তবে 'ক্ষমতায়ন' যথার্থ অর্থে যে শুধুমাত্র অর্থনৈতিক ক্ষমতায়ন নয়, সেকথাটি আমাদের বিশেষভাবে বুঝতে হবে। বাস্তবে দেখা যায় নারীরা প্রায়শই নিজের অর্জিত অর্থ ব্যয় করার স্বাধীনতা থেকে বঞ্চিত হয়। স্বোপার্জিত অর্থ ব্যয় করতে স্বামী বা গৃহকর্তার প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ অনুমোদনের প্রয়োজন হয়, কখনো বা সে অর্থ তাদের হাতে তুলে দিতেও বাধ্য হয়।

তাই বলা যায় নারীর যথার্থ ক্ষমতায়ন তখনই বাস্তবায়িত হবে যখন সমাজে নারী পুরুষের সম-মর্যাদা অধিষ্ঠিত হবে। এই মানুষ ও ব্যক্তি হিসেবে মর্যাদাপ্রাপ্তি সমাজে পুরুষতান্ত্রিক মনোভাবের অবসান না ঘটলে সম্পূর্ণ বাস্তবায়ন সম্ভব হবে না। তাই বলা যায়, নারীর ক্ষমতায়নের প্রসার কেবল অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে ঘটালেই হবে না, সামাজিক, রাজনৈতিক, রাষ্ট্রিক প্রভৃতি সকল ক্ষেত্রেই নারীকে ক্ষমতাসীন করে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করার অধিকার ও সুযোগ করে দেয়াটাই নারীসমাজের ক্ষমতায়নের প্রথম পদক্ষেপ হতে হবে।

এইভাবে পরিবারের ক্ষুদ্র গণ্ডীর বাইরে বৃহত্তর পরিসরে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নানা ভূমিকায় পারদর্শী এক দায়িত্বশীল নারীসমাজ সৃষ্টি দ্বারাই সমাজের পুরুষতান্ত্রিকতাকে দূরীভূত করা সম্ভব।যতদিন পর্যন্ত আমাদের দেশে পুরুষতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থা ও ধর্মীয় অনুশাসনের প্রাধান্য থাকবে, ততদিন পর্যন্ত নারীসমাজ অধস্তনতার শিকার হওয়া থেকে রক্ষা পাবে না, এবং নারীর নাগরিক হিসেবে সম-মর্যাদা ও সম-অধিকারের সাংবিধানিক স্বীকৃতি থাকা সত্ত্বেও বাস্তবে তার প্রতিফলন সমাজে দৃশ্যমান হবে না।

তবে রাষ্ট্রের নারীবান্ধব অবস্থান গ্রহণ ও রাষ্ট্রীয় সক্রিয় সহায়তা নারীসমাজের এই অধঃস্তনতা নিশ্চিহ্ন করার কালকে সংক্ষিপ্ত করতে পারে। এই পুরুষতান্ত্রিকতাকে দুর্বল করার অন্যতম হাতিয়ার হলো একালের বৈশ্বিক প্রেক্ষিতের আলোকে ধর্মীয় বিধিবিধানের ভাষ্য নিরূপণ করা এবং মানবিক বিবেচনায় নারীর সার্বিক অর্থাৎ আত্মিক ও দৈহিক, উন্নয়নের লক্ষ্যে ইতিমধ্যে নিরূপিত নারী-উন্নয়ন-প্রতিবন্ধক ধর্মীয় বিধিবিধান পরিবর্তন সাধন করা।

পুরুষতান্ত্রিকতার নাগপাশ থেকে মুক্ত হতে হলে আমাদের দেশের সকল স্তরের নারী-পুরুষের সম্মিলিত প্রয়াস একান্ত প্রয়োজন। আর এজন্য আবশ্যক সামাজিকভাবে পুরুষতন্ত্রের বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান গ্রহণ। এই অবস্থান গ্রহণে সম্পূর্ণভাবে সাধিত হতে পারে আলোকিত এক নতুন প্রজন্মের সৃষ্টি দ্বারাই; যে-আলোর দিশা দেখাতে সক্ষম সার্বজনীন শিক্ষার প্রসার ঘটিয়ে নানা উন্নত দেশের নারীসমাজের সম-সুযোগের বাস্তব দৃষ্টান্ত সম্বন্ধে সকল নাগরিকের সচেতনতা বৃষ্টি এবং সেই সকল তথ্যের গুরুত্ব অনুধাবন করার ক্ষমতা অর্জনের মাধ্যমে।

সমগ্র সমাজকে আলোকিত করার জন্য গুরুত্বপূর্ণ হলো প্রগতিশীল একটি রাষ্ট্রব্যবস্থা; যে ব্যবস্থা হবে যথার্থ অর্থে ধর্মনিরপেক্ষতা ও মানবিক বোধকে সমুন্নত রাখার প্রতি ঐকান্তিকভাবে অঙ্গীকারবদ্ধ। সেই অঙ্গীকারকে শক্তিশালী ও সক্রিয় রাখার জন্য আবশ্যক আলোকিত ও সচেতন নাগরিকদের সহায়তা।

তথ্য ঋণ:-
১. নারী - হুমায়ূন আজাদ
২. নারীমুক্তি বেগম রোকেয়া এবং অন্যান্য - হাসনা বেগম

আপনার মন্তব্য

আলোচিত