মোনাজ হক

১৫ আগস্ট, ২০১৬ ১১:৪৬

আজও বাঙালি পিতার হত্যার রহস্য জানতে পারল না!

বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৪৫ বছর পরে এবং বঙ্গবন্ধুর নির্মম হত্যার ৪১ বছর পরেও বাংলাদেশের স্বাধীনতার স্থপতি ও জাতির পিতার হত্যা রহস্যের এখন পর্যন্ত কোনো বৈজ্ঞানিক রিসার্চ হয়নি।  বাঙালি জাতি ৪১ বছর ধরে যা পেয়েছে তা নিছক কিছু রাজনৈতিক বিতর্কিত বক্তব্য ও আবেগ প্রবণ কিছু প্রবন্ধ ছাড়া বৈজ্ঞানিক তথ্যভিত্তিক কোনো প্রকাশনা আজ অবধি হয়নি বা এবিষয়ে কোনো ডক্টর থিসিস ও নেই। এটি কি আমাদের অবহেলা নাকি সমাজ বিজ্ঞানীদের দূরদর্শিতার অভাব?

মার্কিন প্রেসিডেন্ট কেনেডি হত্যা রহস্য নিয়ে কয়েক ডজন ডক্টর থিসিস  লিখেছেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শিক্ষার্থীরা বিগত ৫০ বছরে। সুইডিশ প্রধানমন্ত্রী ওলফ পালমের হত্যা রহস্য নিয়েও স্ক্যান্ডিনেভিয়ার এই ছোট্ট জাতি গোষ্ঠী তাদের বিজ্ঞান ভিত্তিক রিসার্চ করেছে। মহাত্মা গান্ধীর হত্যা রহস্য নিয়ে  ভারত ছাড়াও পৃথিবীর অসংখ্য বিশ্ববিদ্যালয়ে সামাজিক বিজ্ঞানীরা গবেষণা করেছেন, কারণ তাঁর অসহযোগ আন্দোলন ও সত্যাগ্রহ ছিল ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের ইতিহাসের সাথে এক সূত্রে গাঁথা - কিন্তু বাঙালিরা আজ অবধি পারলোনা জাতির পিতার হত্যা রহস্যের উদঘাটন করতে।  যদিও বঙ্গবন্ধুর খুনিদের বিচার হয়েছে হাইকোর্টে অনেক তথ্য উপাত্তের বদৌলতে, কিন্তু বিজ্ঞান ভিত্তিক কোনো রিসার্চ নেই।  

শেখ হাসিনা প্রথমবার যখন প্রধানমন্ত্রী ছিলেন তখন  ১৯৯৯-২০০০ শিক্ষাবর্ষে  জার্মানির বিখ্যাত হাইডেলবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের দক্ষিণ-এশিয়া-ইন্সটিউটে একটি "বঙ্গবন্ধু অনুষদ" খোলা হয়েছিল দ্বিপাক্ষিক চুক্তি ও স্বাক্ষর হয়েছিল তৎকালীন বাংলাদেশের মান্যবর  রাষ্ট্রদূত কাজী আনোয়ারুল মাসুদ ও দক্ষিণ-এশিয়া-ইন্সটিউটে প্রধান প্রফেসর জুর্গেন শিবকে এর সাথে।  উদ্দেশ্য ছিল বাংলাদেশ সরকারের স্কলারশিপ নিয়ে ছাত্ররা সমাজবিজ্ঞানে বঙ্গবন্ধুর উপর গবেষণা মূলক কাজে মনোনিবেশ করবে। কিন্তু এক বছরের মাথায় হাসিনা সরকারের মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ায় ২০০১ সনে সেই চুক্তি বাতিল করে দেয় বি এন পি সরকার।  

সমাজ বিজ্ঞানে জার্মানির  হাইডেলবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের সুনাম রয়েছে দুনিয়াজোড়া, যেখানে অন্যান্যদের মধ্যে ইডিয়ালিজম এর স্রষ্টা  দার্শনিক হেগেল শিক্ষকতা করেছেন ও আজ অবধি ৫৮ জন নোবেল পুরস্কার পাওয়া মনীষী শিক্ষার্থী ছিলেন সেই বিশ্ববিদ্যালয় ও পারলোনা একটি ছাত্র ও তৈরি করতে যিনি বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে রিসার্চ করছেন। এর প্রধান কারণ হলো বাংলাদেশের প্রতিহিংসার রাজনীতি এমন পর্যায় চলে গেছে যে, দেশের বাইরে ও হাইডেলবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের দক্ষিণ-এশিয়া-ইন্সটিউটে একটি "বঙ্গবন্ধু অনুষদ" পর্যন্ত বন্ধ করে দেওয়া হয়।

এমনকি বঙ্গবন্ধুর উপর রিসার্চ বন্ধ করে দিয়ে ১৫ ই অগাস্টে যেদিন তাঁকে নির্মম ভাবে হত্যা করা হয়েছিল সেই হত্যা দিবসে বি এন পি পার্টি প্রধান তাঁর ভুয়া জন্মদিন ঘোষণা দিয়ে আনন্দোৎসব করে কেক কাটা শুরু করলেন। এই হলো বাঙালি জাতির "জাতিরপিতার" প্রতি সম্মান প্রদর্শন।  

আজ আবার সেই ১৫ অগাস্ট ফিরে এসেছে, হাসিনা সরকারের কাছে বিনীত অনুরোধ, হাইডেলবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে  আবার "বঙ্গবন্ধু অনুষদ" টি চালু করার উদ্যোগ নিন এবং সেই সাথে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ও  "বঙ্গবন্ধু অনুষদ" খুলে সামাজিক বিজ্ঞানের গবেষণা ভিত্তিক কার্যক্রম  চালু রাখুন।

একটি জাতিকে শুধুমাত্র রাজনৈতিক বিতর্কিত বক্তব্য দিয়ে ভুলিয়ে রাখা যাবে না বা ইতিহাসের ধারাবাহিকতা রক্ষা করা যাবে না, যত খুন পর্যন্ত ঐতিহাসিক তথ্য-উপাত্ত গবেষণা ও  বিজ্ঞানভিত্তিক প্রমাণিত না হয়।       

মোনাজ হক : বার্লিন বসবাসরত প্রকৌশলী ও সাংবাদিক,  সম্পাদক এশিয়াটুডে 

আপনার মন্তব্য

আলোচিত