ফারজানা মৃদুলা

১৪ ফেব্রুয়ারি , ২০২০ ০২:২৩

অগ্রযাত্রায় নারী, তবু পিছু ছাড়ছে না সেই কালোছায়া

নরীর অগ্রযাত্রা বর্তমানে লক্ষণীয়, নারী অধিকার বা ক্ষমতায়ন ও এগিয়ে চলার দিক দিয়ে বাংলাদেশ বিশ্বের বুকে এখন রোলমডেল। সরকার নারী ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করতে বহুমুখী পরিকল্পনা করেছে সরকার। এর ধারাবাহিকতায় নারী শিক্ষার হার বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং দুঃস্থ ও পিছিয়ে পড়া নারীদের জন্য ভিজিএফ, ভিজিডি, দুস্থ ভাতা, মাতৃত্বকালীন ভাতা, অক্ষম মা ও তালাকপ্রাপ্তদের জন্য ও রয়েছে ভাতার সুবিধা। কাজের বিনিময়ে খাদ্য কর্মসূচি, আমার বাড়ি আমার খামার। নারী স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতকরণের জন্য কমিউনিটি ক্লিনিক চালু হয়েছে।

এবার আসা যাক, রাজনীতিতে নারীর অংশগ্রহণ। এদিক দিয়ে ও বাংলাদেশ শীর্ষ দেশগুলোর একটি। ১৯৬৭ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মহিলা লীগ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে রাজনীতির মূলধারায় প্রবেশ করিয়ে নারী ক্ষমতায়নকে জোরালো করার যে প্রচেষ্টা শুরু করেছিলেন আজ তা উদীয়মান। যার উদাহরণ আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখহাসিনা। যার নিরলস চেষ্টায় আজ নারীরা স্বনির্ভর হচ্ছে, সংসদের স্পিকার নারী থেকে শুরু করে, বিমান, নৌ, সেনাবাহিনী, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, প্রশাসন, বিজিএমই এর সভাপতি, নারী উদ্যোক্তা, সাহিত্য চর্চা সর্বক্ষেত্রে নারীর জয়গান। পরিবর্তনের হাওয়া লেগেছে তাই নারীদের অবস্থান এর উন্নতি হতে যাচ্ছে।

ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়ে নারীরা তাদের সাহসিকতার পরিচয় দিয়ে গেছে। একদা ঘরের কোনে বন্দি নারীরা আজ আলোর দিশারী হয়ে আলোকিত করছে সমাজ তথা রাষ্ট্র। কিন্তু এতকিছুর পর ও আমরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগি, ধর্ষণ নামক অভিশাপ থেকে রক্ষা পাচ্ছি না। শিশু, কিশোরী, তরুণী, বধূ, বৃদ্ধা কেউ না।

মানবাধিকার সংস্থা আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক) এর হিসাব অনুযায়ী, ২০১৯ সালে ১৪১৩ জন নারী ধর্ষণের শিকার হয়। ২০১৮ সালে এর সংখ্যা ছিল ৭০২। ২০১৯ সালে যৌতুকের কারণে নির্যাতনের শিকার হয় ১৬৭ জন নিহতের সংখ্যা ৯৬ জন প্রায়। গেলো বছরের দৃশ্যপটে একটু ঘুরে আসলে গা শিউরে ওঠার ঘটনা বেশকিছু, যার কাছে প্রতিনিয়ত ডুকরে কেঁদে মরে আমাদের মানবতা।

রাজধানীর ওয়ারীতে সেই ছোট্ট ৭ বছরের শিশু ধর্ষণের পর নির্মমভাবে হত্যা আমাদের বিবেকের কাছে লজ্জিত করে ধিক্কার দেয় এ সমাজকে। নুসরাতের মত প্রতিবাদী কণ্ঠকে আগুনের দগ্ধ হয়ে নিঃশেষ হতে হয়। গণপরিবহনে নিরাপত্তা নেই তাই রুপার মত ঘটনা আমাদের চোখের সামনে আঙুল দিয়ে বলে যায়- এই কি সভ্য সমাজের নমুনা?

কে নেবে এ দায়ভার? আপনি, আমি, না সমাজ না রাষ্ট্র? মানুষ গড়ার কারিগর যে শিক্ষক তার কাছে ও ছাত্রীরা নিরাপদ থাকতে পারছে না। দুঃখজনক হলেও সত্য আমরা এখনো স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা, বিশ্ববিদ্যালয় নির্যাতনমুক্ত করতে পারিনি; দিতে পারছিনা নিশ্চয়তা।

একবিংশ শতাব্দীতে আমরা পদার্পণ করে পরিবর্তন এসেছে নারীর অবস্থা ও অবস্থানের যা কিনা দৃশ্যমান বটে, তবে আজ ও কেন আমরা নরপশুদের দমন করতে পারছিনা? কেনই বা নারীদের এতটা এগিয়ে চলা থমকে যায় এমন কিছু অনাকাঙ্ক্ষিত দৃশ্যপটের মুখোমুখি হয়ে। কবে শেষ হবে এ ধর্ষণ নামক হোলিখেলা?

আসুন না ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে এক হয়ে দমন করি এ নরপশুদের। প্রাণের প্রিয় এত ত্যাগের বিনিময়ে পাওয়া এ বাংলাদেশটাকে আবার নতুন করে জয় করি ধর্ষণ নামক অভিশপ্ত ঘটনা থেকে।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত