মো. মনিরুজ্জামান

১৩ এপ্রিল, ২০২০ ২৩:২৪

দেশের এই ক্রান্তিলগ্নে অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ান

সকাল সকাল কেন যেন ঘুমটা ভেঙে গেল। বাসায় কেউ উঠেনি এখনো, কী আর করা। কিছুক্ষণ পেপার পড়লাম, কিছুক্ষণ মোবাইল দেখলাম। প্রায় এক ঘণ্টা দেড় ঘণ্টা যাওয়ার পর বেশ ক্ষুধা অনুভব করলাম। ছোটবেলা থেকে আমি ক্ষুধা সহ্য করতে পারি না। ক্ষুধা লাগলে কিছু না কিছু খেতেই হবে। যা হোক নাস্তা সেরে চা খাচ্ছি, হঠাৎ করে একটি অপরিচিত নম্বর থেকে আমার সরকারি নম্বরে কল আসে। ফোন ধরতেই ওপাশ থেকে একজন বৃদ্ধ মানুষই বলে মনে হলো বললেন, "স্যার কেমন আছেন? আমি খুব অসুবিধার মধ্যে আছি। আমাকে কি আপনি একটু সাহায্য করতে পারবেন।" কোত্থেকে বলছেন জিজ্ঞেস করায় উনি একটা জায়গার নাম বললেন।

আরও জানালেন যে, ওনার কিডনিজনিত সমস্যার কারণে পা দুটো ফুলে গিয়েছে। ওনারা তিনজন বয়স্ক মানুষ একটি রুমে থাকেন। লকডাউনের কারণে কেউ বের হতে পারছেন না ফলে খাবারের ব্যবস্থাও হচ্ছেনা। আর তাছাড়া মধ্যবিত্ত হওয়ার জন্যে কাউকে কিছু বলতেও পারছেন না। তাদের কাছে যে খাদ্য-রসদ ছিল ফুরিয়ে গেছে। আজ তাদের ঘরে কোনো খাবার নেই।

আমার কেমন যেন লাগলো। ঝিম মেরে কিছুক্ষণ বসে থাকলাম। কিছুক্ষণ আগে ক্ষুধার জ্বালায় নাস্তা করলাম আমিই। এই নাস্তা খাওয়ার পরপরই এই ফোনটা আসার কারণ কী। আমার কেন যেন মনে হল যে মহান আল্লাহর কুদরতি নির্দেশে হয়তো এই ব্যক্তিটি আমাকে ফোন দিয়েছেন। আল্লাহতায়ালার নাকি বিভিন্নভাবে মানুষকে পরীক্ষা করেন শুনেছি। আল্লাহ হয়তো ভেবেছেন, দেখি তো কিছুক্ষণ আগে তো ক্ষুধার জ্বালায় নিজেই খাবার খাইছিস আর এখন আমার আরেক বান্দার ক্ষুধা উপলব্ধি করতে পারিস কিনা। চিন্তা করলাম, নাহ্, পরীক্ষায় পাস করতেই হবে।

ওনাকে বললাম আপনাকে আমি কিছুক্ষণ পর কল দিচ্ছি। ঘণ্টা দুয়েক পরে বাসা থেকে বের হয়ে তিনজনের জন্য ত্রাণ সামগ্রী কিনলাম, না না আমার মতে এটাকে আসলে ত্রাণসামগ্রী বলাই ঠিক না বরং 'উপহার সামগ্রী' বলা যেতে পারে। ত্রাণ শব্দটাই কেমন যেন। যা হোক সামান্য কিছু উপহার সামগ্রী তিনটি ব্যাগে ভরে ঐ ভদ্রলোককে কল করে তার বাসায় পৌঁছলাম। তার বসবাসের জায়গাটাও একেবারে খুব যে কাছে তা না। মোহাম্মদপুর থেকে একেবারে পশ্চিম পাশে যে এলাকাটা আছে ওখানে উনি থাকেন।

ওখানে পৌঁছাটাও খানিকটা কষ্টসাধ্য ছিল। ক্ষুদ্র উপহারটুকু পেয়ে উনি আসলে বিশ্বাস করতে পারছিলেন না যে উনার একটি ফোনেই কেউ এগুলো ওনার বাসায় পৌঁছে দেবে। ওনার চোখে যে আনন্দের অশ্রুটুকু দেখেছি ওইটুকুই আমার প্রাপ্তি। এই তৃপ্তির সাথে অন্য কিছুর তুলনা হয়না। ওনাকে বললাম যে আমি একজন সামান্য সরকারি কর্মচারী। আমার বেতনের টাকা দিয়ে আমি আপনাদের জন্য এই সামান্য উপহারটুকুই আনতে পেরেছি। এটি দিয়ে হয়তোবা আপনাদের এক মাস দু'মাস যাবে না তবে কিছুদিন হয়তো চলবে। তাদের অশ্রুর বন্যা দেখতে দেখতে বের হয়ে আসলাম।

আমার কাছে সরকারি নম্বরটা থাকার কারণে হয়তো উনি আমার নম্বরে কল করতে পেরেছেন; না হলে তো পারতেন না। মহান আল্লাহতায়ালার কাছে কৃতজ্ঞতা জানাই যে অসহায় মানুষজন তাদের অসহায়ত্বের কথা বলার জন্য আমার পর্যন্ত কমপক্ষে পৌঁছাতে তো পারেন।

আপনাদের কাছে বিনীত অনুরোধ আপনাদের যাদের সামর্থ্য আছে তারা দেশের এই ক্রান্তিলগ্নে আমাদের এই অসহায় মানুষগুলোর পাশে দয়া করে দাঁড়ান।

মো. মনিরুজ্জামান: অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (মিডিয়া) র‍্যাব-৯

আপনার মন্তব্য

আলোচিত