
০৬ অক্টোবর, ২০২৫ ১১:১৭
বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের দ্বিতীয় বৃহত্তম ধর্মীয় উৎসব শুভ প্রবারণা পূর্ণিমা আজ।
পবিত্র এই দিনে ভগবান বুদ্ধ ভিক্ষু সংঘকে বহুজনের হিতের জন্য, বহুজনের সুখের জন্য দিকে দিকে সদ্ধর্মকে প্রচারের নির্দেশ দেন।
আড়াই হাজার বছর আগে গৌতম বুদ্ধ ‘বুদ্ধত্ব’ লাভের পর আষাঢ়ী পূর্ণিমা থেকে আশ্বিনী পূর্ণিমা তিথি পর্যন্ত তিন মাস বর্ষাবাস সমাপনীতে প্রবারণা পূর্ণিমা উদযাপন করেন বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীরা। বৌদ্ধধর্মীয় গুরুরা সেই থেকে বর্ষাবাস শেষে দিবসটি পালন করে আসছেন। ভিক্ষুসংঘের ত্রৈমাসিক বর্ষাব্রত শেষে আসে এ প্রবারণা তিথি।
বৌদ্ধা বিশ্বাসে, প্রবারণা হলো আত্মশুদ্ধি ও অশুভকে বর্জন করে সত্য ও সুন্দরকে বরণের অনুষ্ঠান।
প্রবারণা পূর্ণিমার পরদিন থেকে এক মাস দেশের প্রতিটি বৌদ্ধবিহারে শুরু হবে দানশ্রেষ্ঠ শুভ কঠিন চীবর দান উৎসব।
‘প্রবারণা পূর্ণিমা ও কঠিন চীবর দান’ উপলক্ষে উৎসবের ছোঁয়া লেগেছে বৌদ্ধবিহারগুলোতে। দিবসটি আড়ম্বরপূর্ণ ও যথাযথ ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যে উৎসবমুখর পরিবেশে উদযাপনের লক্ষ্যে ইতোমধ্যে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে বাংলাদেশ বুড্ডিস্ট ফেডারেশন।
সোমবার রাজধানীর মেরুল বাড্ডাস্থ আন্তর্জাতিক বৌদ্ধবিহারে দিনব্যাপী নানান অনুষ্ঠান হবে। সকাল সাড়ে ৬টায় জাতীয় ও ধর্মীয় পতাকা উত্তোলন, সকাল ৭টা ১০ মিনিটে ভিক্ষু সংঘের প্রাতঃরাশ, সকাল সাড়ে ৯টায় শীল গ্রহণ ও বুদ্ধ পূজা, সকাল ১১টায় ভিক্ষু সংঘের পিণ্ডদান, বিকেলে সাড়ে ৪টায় ‘প্রবারণার তাৎপর্য ও বিশ্ব মানবতাবাদ’ শীর্ষক আলোচনা সভা এবং সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় আলোকসজ্জা ও বর্ণাঢ্য ফানুস উৎসব অনুষ্ঠিত হবে। অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি অন্তর্বর্তী সরকারের ধর্ম উপদেষ্টা ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন।
রাজধানীর বাসাবোতে ধর্মরাজিক বৌদ্ধ মহাবিহারে দিবসটি উপলক্ষে মূল তোরণ ও ভেতরে সাজানো হয়েছে মরিচবাতি দিয়ে। বিহারের ভেতরে রঙিন কাগজের ঝালর দেওয়া হয়েছে। ভক্ত-দর্শনার্থীরা অনেকেই দেখতে আসছেন। কেউ আবার সেরে নিচ্ছেন প্রার্থনা।
অনুষ্ঠান উদযাপন কমিটির সভাপতি ধর্মানন্দ থের বলেন, আমাদের সিদ্ধার্থ গৌতম যখন বুদ্ধত্ব জ্ঞান লাভ করেছিলেন, তখন উনি আসলেই জ্ঞান লাভ করেছেন কি না সেটা পরীক্ষা করা হয়েছিল। সেই পরীক্ষাটা হয়েছিল কীভাবে? উনার চুলটা কেটে ভাসিয়ে দিয়েছিল। ভাসিয়ে দেওয়ার পর উনি বলেছিলেন—যদি আমি সত্যি জ্ঞান লাভ করি, তাহলে আমার চুল নিচে যাবে না, সেটা উপরে চলে যাবে। পরে সেগুলো স্বর্গে চলে যায়।
তিনি আরও বলেন, সেই চুলগুলোকে আমরা ধাতু বলি। আর গৌতমের সেই স্মৃতি স্মরণ করেই আমরা এই রীতি পালন করি। যেহেতু তার চুল স্বর্গে গিয়েছে, তাই আমরা ফানুস উড়িয়ে উদযাপন করি। সমগ্র বৌদ্ধপ্রধান দেশেই এই রীতি পালিত হয়।
ধর্মানন্দ থের বলেন, বৌদ্ধদের মধ্যে যারা ভিক্ষু আছেন, তারা যে গেরুয়া বসন পরে থাকেন, ভক্তরা বছরের মধ্যে একবার তাদের সে গেরুয়া বসন বা চীবর দেওয়ার সুযোগ পান। প্রত্যেক বিহারের মধ্যে যখন ভিক্ষু বা সন্ন্যাসীরা অধিষ্ঠিত হবেন, সে বিহারের মধ্যে যারা তাদের ভক্ত আছেন, তারা ওইদিন ভিক্ষুদের আনুষ্ঠানিকভাবে কাপড় বা চীবর দেন। সবসময়ই এটা দেওয়া যায়। কিন্তু, ওইদিন আনুষ্ঠানিকভাবে একটা নিয়মের মধ্যে দেওয়া হয়।
আপনার মন্তব্য