
০৬ অক্টোবর, ২০২৫ ১৫:৫৪
যুগ্ম আহ্বায়ক অনিক রায়, উত্তরাঞ্চলের যুগ্ম মুখ্য সংগঠক অলিক মৃ, যুগ্ম সদস্য সচিব তুহিন খানসহ বেশ কয়েকজন নেতা এনসিপি ছেড়েছেন।
জুলাই গণঅভ্যুত্থানের নেতাদের দল জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) ভেতরে মতপার্থক্য ও দ্বন্দ্ব ক্রমশ স্পষ্ট হয়ে উঠছে। নীতি ও আদর্শকে পছন্দ না করে দল ছেড়ে যাচ্ছেন কেউ কেউ। তারা নতুন রাজনৈতিক দল গঠনের চিন্তাও করছেন।
যুগ্ম আহ্বায়ক অনিক রায়, উত্তরাঞ্চলের যুগ্ম মুখ্য সংগঠক অলিক মৃ, যুগ্ম সদস্য সচিব তুহিন খানসহ বেশ কয়েকজন নেতা এনসিপি ছেড়েছেন। আরও বেশ কয়েকজন নেতাও দল ছাড়ার অপেক্ষায় আছেন।
এনসিপির একজন যুগ্ম সদস্য সচিবও দলের ভেতর মতবিরোধের বিষয়টি স্বীকার করেছেন। নাম প্রকাশ না করার অনুরোধ করে তিনি বলেন, “দলের মধ্যে ব্যক্তি স্বার্থ দলের স্বার্থের চেয়ে বড় হয়ে দাঁড়িয়েছে। ব্যক্তিগত অর্জনের জায়গাটা অনেকেই বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে, দলের লক্ষ্যকে অগ্রাধিকার দিচ্ছে না। এ কারণেই অনেকে বিরক্ত হয়ে যাচ্ছে।”
“যেভাবে আমাদের বলা হয়েছিল, সেই প্রতিফলন পাওয়া যাচ্ছে না। এজন্যই গ্রুপভিত্তিক অসন্তুষ্টি তৈরি হচ্ছে,” বলেন তিনি।
২০২৪ সালের জুলাই গণঅভ্যুত্থানের নেতৃত্বে থাকা কয়েকজন তরুণের নেতৃত্বে ২০২৫ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি আত্মপ্রকাশ করে এনসিপি। দেশে নতুন ধারা রাজনীতি চালুর অঙ্গীকার করেছিলেন নেতারা। তবে আট মাস পরে দলটি কোথায় দাঁড়িয়ে—এ নিয়ে নানামুখী আলোচনা চলছে। তবে এখনও সারাদেশে কমিটি দিতে পারেনি এনসিপি।
দলীয় নিবন্ধনকে কেন্দ্র করে ১ জুন ঢাকা মহানগর উত্তরে সমন্বয় কমিটি গঠনের মধ্যদিয়ে জেলা-উপজেলা পর্যায়ে কমিটি গঠন শুরু হয়। এখন পর্যন্ত দেশের ৩৩টি জেলা ও প্রায় ২০০টি উপজেলায় সমন্বয় কমিটি করা হয়েছে।
জুলাই গণঅভ্যুত্থানের নেতৃত্বে থাকা কয়েকজন তরুণের নেতৃত্বে ২৮ ফেব্রুয়ারি ঢাকার মানিকমিয়া অ্যাভিনিউয়ে এক জমায়েতে এনসিপি আত্মপ্রকাশ করে।
পদত্যাগের প্রশ্নে অলিক মৃ বলেন, “এনসিপি আসলে মধ্যপন্থি দল না হয়ে বরং ধীরে ধীরে ডানপন্থি রাজনৈতিক অবস্থানের দিকে ঝুঁকছে।”
অন্য নেতারাও কি এই উপলব্ধি থেকেই দল ছেড়েছেন?—এই প্রশ্নে তিনি বলেন, “কে কোন কারণে পদত্যাগ করেছেন তা তারাই ভালো জানেন, এ বিষয়ে আমি কিছু বলতে পারব না।”
প্রগতিশীল সংগঠন থেকে আসা এনসিপির বর্তমান ও সাবেক কয়েকজন নেতা নতুন দল গঠনের আলোচনা করছেন বলে যে কথা শোনা যাচ্ছে, সে বিষয়ে জানতে চাইলে অলিক মৃ বলেন, “আমি শুনেছি যে নতুন দল তৈরির আলোচনা চলছে। তবে এ নিয়ে আমি এখনও কোনো প্রস্তাব পাইনি। যাব কি যাব না, সেটা ভবিষ্যতের বিষয়।”
তুহিন খান তার পদত্যাগের সিদ্ধান্তকে ‘কিছুটা ব্যক্তিগত’ উল্লেখ করে বলেন, “এই মুহূর্তে রাজনীতি করা আমার জন্য খুব একটা উপযুক্ত নয়। তাই একটি বিরতি নিচ্ছি।”
এনসিপির রাজনৈতিক অবস্থানের বিষয়ে তিনি বলেন, “এনসিপি ক্রমশ ডানপন্থি দলে পরিণত হচ্ছে—এটা বিভিন্ন জায়গায় তাদের অবস্থান ও বক্তব্য দেখলেই বোঝা যায়। ফলে আলাদা করে বলার কিছু নেই। তাদের রাজনীতির প্রভাব ও দিকনির্দেশনাও এখন অনেকটাই পরিষ্কার।”
সংসদ ভবনের সামনে নতুন দলের আত্মপ্রকাশ অনুষ্ঠানে রাজনৈতিক নেতা, কূটনীতিক ও আমন্ত্রিত অতিথিদের বসার ব্যবস্থা ছিল মঞ্চের সামনে
যারা এনসিপি থেকে বের হয়ে এসেছেন, তারা একত্র হওয়ার চেষ্টা করছেন জানিয়ে তিনি বলেন, “আমাদের অনেকেই নানা ধরনের সামাজিক ও রাজনৈতিক অ্যাকটিভিজম চালিয়ে যাচ্ছেন। ভবিষ্যতে সেটা হয়তো কোনো প্ল্যাটফর্মে রূপ নিতে পারে—তবে এটা এখনই নিশ্চিত করে বলার সময় আসেনি।”
“আমরা যারা বের হয়েছি, সবাই আপাতত কিছুটা সময় নিচ্ছি নিজেদের অবস্থান পরিষ্কার করতে। তাই এখনই কিছু ঘোষণা দেওয়া ঠিক হবে না।”
পদত্যাগী নেতারা যে এনসিপিকে ডানপন্থায় ঝুঁকে পড়ার কথা বলছেন, সে বিষয়ে দল কী ভাবছে—এই প্রশ্নে যুগ্ম আহ্বায়ক সরোয়ার তুষার বলেন, “এনসিপি ডানপন্থি দল হয়ে গেছে—এই কথাটা সঠিক নয়। আমাদের নিয়ে যে প্রচারণা হচ্ছে, অনেকে তাতে বিভ্রান্ত হয়েছেন বা হয়ে থাকতে পারেন। কিন্তু এনসিপি সবসময়ই তার মধ্যপন্থা এবং নিজস্ব রাজনৈতিক কর্মসূচির মধ্যেই থেকেছে—এক মুহূর্তের জন্যও সেখান থেকে সরে যায়নি।”
কিছু আবেগপ্রবণ প্রতিক্রিয়া বা বিভ্রান্তিকর প্রচারণা থাকা সত্ত্বেও এনসিপি তার রাজনৈতিক অবস্থান থেকে এক চুলও সরে যায়নি বলে মন্তব্য করে তিনি বলেন, “দল এখনও মধ্যপন্থি রাজনীতিতেই অটল।”‘বড় দলে’ কিছু মতপার্থক্য বা বিভ্রান্তি ‘খুব স্বাভাবিক’ বলে মন্তব্য করে এই নেতা আরও বলেন, “অনেকেরই বড় রাজনীতি করার অভিজ্ঞতা থাকে না, আর রাজনীতি একটা দীর্ঘ প্রক্রিয়া—এখানে ধৈর্য লাগে। অনেকে আবেগপ্রবণ হয়ে ফেসবুকে কিছু লিখে ফেলেন, কিন্তু সেটা দলত্যাগের ইঙ্গিত নয়।”
এখন পর্যন্ত যতজনের পদত্যাগের কথা শোনা যাচ্ছে, তাদের সংখ্যা খুব সীমিত বলে দাবি করে সরোয়ার তুষার আরও বলেন, “দুই-একজন পদত্যাগপত্র দিয়েছেন বলে শুনেছি, তবে অনেকে কখনই দলীয় কর্মকাণ্ডে সক্রিয় ছিলেন না। এসব নিয়ে আহ্বায়ক ও সদস্য সচিব কাজ করছেন, আলোচনাও চলছে। এখনও বিষয়টি আনুষ্ঠানিকভাবে চূড়ান্ত নয়।”
নেতাদের এনসিপি ছেড়ে যাওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে এনসিপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক সামান্তা শারমিন গোয়েন্দা সংস্থাকে দায়ী করেন।
তিনি বলেন, “গোয়েন্দা সংস্থা সব সময়ই সম্ভাবনাময় দলকে ভাঙার চেষ্টায় থাকে। নতুন একটা রাজনৈতিক দল আসা মানে এই চেষ্টা করতেই পারে। আপনারা দেখছেন যে দিল্লিবিরোধী অবস্থান থেকে আমাদের রাজনীতির ছকটা এসেছে। এই ছককে নষ্ট করার জন্য চেষ্টা যদি তারা না করত, তাহলে বরং আমি অবাক হতাম।”
তবে ভাঙনের এই চেষ্টা সফল হবে না বলেও আত্মবিশ্বাসী এই নেতা। তিনি বলেন, “আমি মনে করি, তাদের চেষ্টা সফল হবে না। কারণ এখানে এজেন্ট হয়ে যারা ভাঙার কাজ করছে, সেই সংখ্যাটা খুবই কম।”
সূত্র: দেশকাল নিউজ
আপনার মন্তব্য