
০৬ অক্টোবর, ২০২৫ ২৩:৫৮
সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার পর্যটন কেন্দ্র সাদাপাথর লুটের মামলার আলোচিত দুই আসামিকে গ্রেপ্তারের পর এ ঘটনায় জড়িত অন্যদের মধ্যে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে।
চাঞ্চল্যকর এই মামলায় কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার বিএনপির সাবেক সভাপতি (পদ স্থগিত) সাহাব উদ্দিন এবং কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ সভাপতি ও ৩নং তেলিখাল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুল ওয়াদুদ আলফুকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
এই দুজনই এলাকায় ব্যাপক প্রভাবশালী ছিলেন। পাথর ও বালু লুটে নেতৃত্ব দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে। এই দুজন গ্রেপ্তরের পর ইতোমধ্যে গা ঢাকা দিয়েছেন এই লুটের কান্ডে অন্য সম্পৃক্ততরা। এ ঘটনায় নাম আসা প্রভাবশালীরাও রয়েছেন আতঙ্কে।
গত ১৩ সেপ্টেম্বর রাতে সিলেট নগরীর কুমারপাড়া এলাকা থেকে সাহাব উদ্দিনকে গ্রেপ্তার করে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)-৯। আর গত গত শনিবার (৪ অক্টোবর) বিকালে উপজেলার থানা সদর অফিস থেকে আলফুকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
ইতোমধ্যে সাহাব উদ্দিনকে ১ দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে পুলিশ। আর আব্দুল ওয়াদুদ আলফুর ৫ দিনের রিমান্ডের আবেদন করা হয়েছে।
ভোলাগঞ্জ সাদা পাথর বাংলাদেশের অন্যতম প্রাকৃতিক পর্যটনকেন্দ্র হলেও গতবছরের ৫ আগস্টের পর অনিয়ন্ত্রিত উত্তোলন ও লুটপাটের কারণে পরিবেশের ভয়াবহ ক্ষতি হয়েছে। গণমাধ্যমে এসব অনিয়ম প্রকাশিত হলে দেশজুড়ে তোলপাড় সৃষ্টি হয় এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে অভিযানে নামতে বাধ্য করে।
এর পরই দুদক তদন্ত শেষে এই পাথর লুটের দায়ে সিলেট মহানগর বিএনপির সভাপতি রেজাউল হাসান কয়েস লোদী ও মহানগর জামায়াতের আমীর মো. ফখরুল ইসলাম সহ ৫২ জন ব্যাক্তি ও প্রতিষ্ঠানের নাম উল্লেখ করে সাদাপথরের পাথলুটে জড়িতমর্মে একটি প্রতিবেদন দাখিল করে। বিষয়টি দেশজুড়ে তুলপাড় সৃষ্টি করে।
সাদাপাথর লুটের ঘটনার পরপরই আলোচনায় উঠে আসে বিএনপি নেতা সাহাব উদ্দিন ও আওয়ামী লীগ নেতা ও আব্দুল ওয়াদুদ আলফুর নাম। দুদকের তালিকায়ও তাদের দুজনের নাম রয়েছে।
সাদাপাথর লুট নিয়ে তোলপাড় শুরু হলে গত ১১ আগস্ট রাতে বিএনপির কেন্দ্রীয় দপ্তর থেকে পাঠানো বিজ্ঞপ্তিতে সাহাব উদ্দিনের সব পদ স্থগিত করা হয়। বিএনপির কেন্দ্রীয় সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভীর স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘চাঁদাবাজি, দখলবাজিসহ বিএনপির নীতি ও আদর্শ পরিপন্থি অনৈতিক কর্মকাণ্ড’-এ জড়িত থাকার সুষ্পষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সভাপতি সাহাব উদ্দিনের দলীয় সব পদ স্থগিতের এ তথ্য জানানো হয়।
সাহাব উদ্দিন সিলেট জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি ও কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সভাপতি। তিনি ভোলাগঞ্জ এলাকার মৃত আব্দুল বারীর ছেলে।
অপরদিতে, আলফুর বিরুদ্ধে বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনে হামলা, সাদাপাথর লুটসহ ২৩টি মামলা রয়েছে।
জানা যায়, আব্দুল ওয়াদুদ আলফু চেয়ারম্যানের বাড়ি সিলেটের বরইকান্দি এলাকায়। সাদাপাথর লুটকান্ডে দুর্নীতি দমন কমিশনের তদন্ত প্রতিবেদনে তার নাম আছে। গত বছরের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হলেও আলফু ছিলেন বহাল তবিয়তে। ৩নং তেলিখাল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান হিসাবে তিনি তার প্রভাব ধরে রেখেছিলেন। ৫ আগস্টের পর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে হামলার অভিযোগে তার বিরুদ্ধে একাধিক মামলা দায়ের হয়েছে।
এছাড়া ২০১৮ সালে কোম্পানীগঞ্জে আব্দুল আলী হত্যা মামলায় তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। এ মামলায় তিনি কারাগারেও ছিলেন কয়েক মাস। ওই বছর দক্ষিণ সুরমার বরইকান্দিতে জোড়া খুনের ঘটনায় তাকে দায়ী করা হয়।
কোম্পানীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রতন শেখ জানান, সাদাপাথর লুটের মামলার আসামিদের ধরতে অভিযান অব্যাহত রয়েছে। পুলিশ সব আসামিকে গ্রেপ্তারে তৎপরতা চালাচ্ছে।
আপনার মন্তব্য