শাকিলা ববি

১১ ডিসেম্বর, ২০১৯ ০০:৫১

মোবাইল ফোন ব্যবহারে সবচেয়ে পিছিয়ে সিলেটের নারীরা

মোবাইল ফোনের ব্যবহারে সারাদেশের চাইতে পিছিয়ে রয়েছেন সিলেটের নারীরা। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) দক্ষতায়ও পিছিয়ে রয়েছেন প্রবাসীবহুল এই অঞ্চলের নারীরা। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো ও ইউনিসেফের এক জরিপে দেখা গেছে দেখা গেছে এমন চিত্র।

সিলেটকে ডিজিটাল বিভাগ হিসেবে গড়ে তোলার উদ্যোগ নিয়েছে বিভাগীয় প্রশাসন। এছাড়া দেশের প্রথম ডিজিটাল নগরী হিসেবে সিলেটকে গড়ে তুলতে গত ২৮ জুলাই সিলেট জেলা প্রশাসনের সম্মেলন কক্ষে উদ্বোধন হয় ‘ডিজিটাল সিলেট সিটি’ নামের একটি প্রকল্পের। তবে মোবাইল ফোনের ব্যবহার ও আইসিটি দক্ষতায় নারীরা পিছিয়ে থাকলে ডিজিটাল বিভাগ ও নগরী বাস্তবায়ন কতটুকু ফলপ্রসূ হবে এ নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।

সিলেটের মোট জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেক হচ্ছেন নারী। তাই নারীদের একটি বড় অংশ মোবাইল ফোনের ব্যবহার এবং আইসিটি দক্ষতায় পিছিয়ে থাকলে দেশের প্রথম ডিজিটাল নগরীর কার্যক্রম বাস্তবায়নে বাধা প্রাপ্ত হবে বলে মনে করেন নারী নেত্রী ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা।

সিলেট জেলা প্রশাসন ও সিলেট সিটি করপোরেশন সূত্রে জানা যায়, সিলেট জেলায় মোট জনসংখ্যা আছে ৩৫ লাখ ৬৭ হাজার ১৩৮ জন। যার মধ্যে পুরুষ ১৭ লাখ ৯৩ হাজার ৮৫৮ এবং নারী ১৭ লাখ ৭৩ হাজার ২৮০ জন। অপরদিকে, সিলেট সিটি করপোরেশনে মোট জনসংখ্যা ৪ লাখ ৮৫ হাজার ১৩৮ জন। যার মধ্যে পুরুষ ২ লাখ ৬০ হাজার ৬৫৬ জন এবং নারী ২ লাখ ২৪ হাজার ৪৮২ জন।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) ও জাতিসংঘের শিশু বিষয়ক সংস্থা ইউনিসেফ চলিত বছর দেশজুড়ে মাল্টিপল ইনডিকেটর ক্লাস্টার সার্ভে করে। এই জরিপের খসড়া প্রতিবেদনে দেখা গেছে, সারা দেশে ১৫ থেকে ৪৯ বছর বয়সী নারীদের মধ্যে ৭১.৪% নিজস্ব মোবাইল ফোন ব্যবহার করছেন। তবে সিলেটে এই সংখ্যা মাত্র ৫৮.২%। যা দেশের অন্যান্য বিভাগের তুলনায় সবচেয়ে কম।

সিলেট বিভাগের এই ৫৮.২% এর মধ্যে হবিগঞ্জের ৬৩.০%, মৌলভীবাজারে ৬১.৭%, সুনামগঞ্জে ৫২.৮% ও সিলেট জেলায় ৫৭.৮% নারী মোবাইল ফোন ব্যবহার করছেন।

এই জরিপ থেকে আরও জানা যায়, সারা দেশে আইসিটি দক্ষতা আছে ২.৩% নারীর। এর মধ্যে সিলেটের ১.১% নারীর আইসিটি দক্ষতা রয়েছে। এদিকেও সারাদেশে সবচেয়ে পিছিয়ে রয়েছেন সিলেটের নারীরা।

সিলেট বিভাগের মধ্যে হবিগঞ্জের ০.৪%, মৌলভীবাজারে ১.০%, সুনামগঞ্জে ০.২% ও সিলেট জেলায় ২.০% নারীর আইসিটি দক্ষতা রয়েছে।

নারীদের মোবাইল ব্যবহার ও আইসিটি দক্ষা নিয়ে নারী উদ্যোক্তা ফারমিছ আক্তার বলেন, যুগের সাথে তাল মেলাতে হলে মোবাইলের ব্যবহার ও আইসিটি উপর দক্ষতার প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম। আইসিটি ব্যবহার ছাড়া আজকাল কেউই এক ধাপও আগাতে পারবে না। প্রায় সব সেক্টরে সিলেটের মেয়েরা এগিয়ে আছে, তবে আইসিটি দক্ষতা ছাড়া কোনা কাজই পরিপূর্ণ হবার নয়।

তিনি বলেন, নারীদের আইসিটি দক্ষতা বাড়াতে ও মোবাইলের ব্যবহার শেখাতে হলে তৃনমূল পর্যায়ে কাজ করতে হবে। এক্ষেত্রে শুধু ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টার পর্যন্ত সীমাবদ্ধ থাকলে হবে না। ইউনিয়নের প্রতিটি ঘরে ঘরে যেতে হবে।

এ ব্যাপারে সিলেটের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) শারমিন সুলতানা সিলেটটুডে টোয়েন্টিফোরকে বলেন, সিলেটের নারীদের মোবাইল ফোনের ব্যবহার ও আইসিটি দক্ষতায় পিছিয়ে থাকার একটি অন্যতম কারণ হচ্ছে শিক্ষা। এই বিভাগে অন্য বিভাগের তুলনায় শিক্ষার হার অনেক কম। তাই আমরা তাদের আইসিটি দক্ষতা বাড়ানোর জন্য বিভিন্ন ভাবে কাজ করছি। এ ব্যাপারে সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য বিভিন্ন কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে। প্রশিক্ষণ প্রদান করা হচ্ছে।

সিলেটের বিভাগীয় কমিশনার মো. মোস্তাফিজুর রহমান সিলেটটুডে টোয়েন্টিফোরকে বলেন, সিলেটকে ডিজিটাল বিভাগ হিসেবে গড়ে তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তাই আইসিটি সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন কার্যক্রম হাতে নেওয়া হয়েছে। তবে বিভিন্ন কারণে সিলেটের নারীর আইসিটির দক্ষতা ও মোবাইল ব্যবহার থেকে পিছিয়ে আছে। যার মধ্যে অন্যতম হল রক্ষণশীলতা ও শিক্ষার অভাব।

তিনি বলেন, সিলেটের বেশিরভাগ মানুষজন তাদের পরিবারের নারী সদস্যদের নিয়ে একটু রক্ষণশীল থাকেন। তাছাড়া এই বিভাগে শিক্ষার হারও কম তাই তাই আইসিটি দক্ষতা ও মোবাইল ব্যবহারে পিছিয়ে আছেন সিলেটের নারীরা। তবে এর জন্য এর জন্য সিলেট বিভাগের ডিজিটালকরণ থেমে থাকবে না। সিলেট বিভাগ ডিজিটাল হবে। সেই লক্ষেই আমরা কাজ করছি। আইসিটি দক্ষতা বাড়ানোর জন্য সিলেট বিভাগের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে শেখ রাসেল ডিজিটাল ল্যাবের মাধ্যমে আইসিটির প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। শুধুমাত্র নারীদের আইসিটি দক্ষতা বাড়ানোর জন্য সিলেটে টেকনিক্যাল ট্রেনিং সেন্টারের (টিটিসি) মাধ্যমে নারীদের প্রশিক্ষণ দেওয়ানো হচ্ছে। এছাড়াও ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টারের মাধ্যমে আমরা তৃণমূল পর্যায়ে আইসিটি দক্ষতা বাড়ানোর চেষ্টা করছি।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত