আন্তর্জাতিক ডেস্ক

০৩ জুন, ২০২০ ১২:১০

ফ্লয়েড হত্যা: কারফিউ ভেঙে যুক্তরাষ্ট্রে বিক্ষোভ অব্যাহত

কৃষ্ণাঙ্গ নাগরিক জর্জ ফ্লয়েড হত্যার ঘটনায় মঙ্গলবার (২ জুন) অষ্টম দিনের মতো উত্তাল বিক্ষোভ হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রে। ৪০টি শহরে কঠোর কারফিউ জারি করার পরও তা উপেক্ষা করে রাস্তায় নেমে আসেন বিক্ষোভকারীরা।

এদিনও বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ হয়েছে। হোয়াইট হাউসসহ বিভিন্ন এলাকায় শান্তিপূর্ণভাবে বিক্ষোভরতদের ওপর পুলিশকে টিয়ার গ্যাস ছুড়তে দেখা গেছে।

বিজ্ঞাপন

এদিকে, মিনেসোটা, ক্যালিফোর্নিয়াসহ বিভিন্ন অঙ্গরাজ্য থেকে কয়েক হাজার বিক্ষোভকারীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। বিক্ষোভ চলার মধ্যেই যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে পাঁচ পুলিশ সদস্য গুলিবিদ্ধ হয়েছে। আর শিকাগোর সিসেরো এলাকায় দুই ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে।

শিকাগো শহরের মুখপাত্র রে হানানিয়া জানিয়েছেন, সিসেরোর বাইরে থেকে আসা দুর্বৃত্তরা এ হত্যাকাণ্ড চালিয়েছে। তবে মৃতদের পরিচয় প্রকাশ করেননি তিনি।

পুলিশি নির্যাতনে কৃষ্ণাঙ্গ জর্জ ফ্লয়েডের মৃত্যুর প্রতিবাদে ক্ষোভের আগুন ছড়িয়ে পড়েছে পুরো যুক্তরাষ্ট্রে। টুইটারে দেওয়া এক বিবৃতিতে ওকল্যান্ডের পুলিশ বিভাগ দাবি করেছে বিক্ষোভকারীরা কারফিউ ভঙ্গ করেছে। ৪০ জনেরও বেশি বিক্ষোভকারীকে আটক করার কথা জানিয়েছে তারা।

এছাড়াও, মিনেসোটার সেন্ট পলের আইন প্রয়োগকারী বাহিনীর সদস্যরা অন্তত ৬৬ জন বিক্ষোভকারীকে গ্রেপ্তার করেছে। এদিন বিক্ষোভকারীরা মিছিল করতে করতে করতে গভর্নর ম্যানশন থেকে ক্যাপিটলের দিকে এগিয়ে যায়। তবে রাত ১০টায় কারফিউ কার্যকর হওয়ার পরও কিছু বিক্ষোভকারী অবস্থানস্থল ত্যাগ করতে অস্বীকৃতি জানায়। পরে তাদেরকে আটক করে পুলিশ।

অন্যদিকে, ওয়াশিংটন ডিসিতে বিক্ষোভরতদের সরিয়ে দিতে সামরিক হেলিকপ্টার ব্যবহার করতে দেখা গেছে। অন্তত একটি হেলিকপ্টার বিক্ষোভকারীদের খুব কাছ দিয়ে উড়ে যাচ্ছিলো ধূলো উড়াচ্ছিল। নিউ ইয়র্কের বিভিন্ন জায়গায় লুটপাট হচ্ছে উল্লেখ করে সোমবার বিক্ষোভকারীদের ঘরে ফেরার আহ্বান জানান গভর্নর বিল দে ব্লাসিও।

তিনি জানান, অনেকে বিক্ষোভের সুযোগ নিয়ে লুটপাট করছে, ধ্বংসযজ্ঞ চালাচ্ছে, অন্যকে আঘাত করছে।

পাশাপাশি শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভকারীদের ওপর ফেডারেল পুলিশের চালানো দমন-পীড়নকে ‘লজ্জাজনক’ বলে উল্লেখ করেছেন ওয়াশিংটন ডিসির মেয়র মুরিয়েল বৌসের।

টুইটারে তিনি লিখেছেন, ‘আমি সন্ধ্যা ৭টা থেকে কারফিউ জারি করেছিলাম। কিন্তু তার ২৫ মিনিট আগেই কোনোরকমের উসকানি ছাড়াই হোয়াইট হাউসের সামনে শান্তিপূর্ণভাবে বিক্ষোভরতদের ওপর পুলিশ অস্ত্র ব্যবহার করেছে। এ ধরনের কর্মকাণ্ড ওয়াশিংটন পুলিশ বিভাগের কাজকে কঠিন করে তুলবে। এটা লজ্জাজনক।’

স্থানীয় বাসিন্দাদের ঘরে ফিরে নিরাপদে থাকার জন্যও আহ্বান জানিয়েছেন মুরিয়েল। যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন শহরে পুলিশ-বিক্ষোভকারী মুখোমুখি অবস্থান সত্ত্বেও কিছু কিছু এলাকায় আবার পরস্পরের সংহতিও দেখা গেছে। আটলান্টা, ডেনভার ও নিউ ইয়র্কে পুলিশকে বিক্ষোভকারীদের জড়িয়ে ধরতে দেখা গেছে। কেউ কেউ আবার হাঁটু গেড়ে বসে ফ্লয়েডকে স্মরণ করেছেন। বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে সংহতি জানাচ্ছেন।

এ ব্যাপারে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের পরামর্শদাতারা তাকে বলেছেন, তিনি যেন অবিলম্বে টিভিতে জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেন। তবে ট্রাম্প এখন পর্যন্ত সেই পরামর্শ মানেননি।

তিনি টুইট করে বলেছেন, 'ডেমোক্রেট মেয়র ও গভর্নররা যেন কড়াভাবে বিক্ষোভের মোকাবিলা করেন।' হোয়াইট হাউজের কর্মীদের বলে দেওয়া হয়েছে, বিক্ষোভ চলতে থাকলে তারা যেন না আসেন। বর্ণবিদ্বেষের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ শুরু হয় পুলিশের অত্যাচারে কৃষ্ণাঙ্গ জর্জ ফ্লয়েডের মৃত্যুর পর থেকে। যত দিন যাচ্ছে, ততই বিক্ষোভ বাড়ছে।

ফিলাডেলফিয়ায় বিক্ষোভকারীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে পাথর এবং মলোটভ ককটেল ছোড়ে। সান ফ্রান্সিসকোতে মুখোশ পরে কিছু লোক একটি বড় দোকানের দরজা ভেঙে ঢুকে লুটতরাজ চালায়। মিনেপোলিসে আবার এক ট্রাক ড্রাইভার বিক্ষোভকারীদের ওপর ট্রাক চালিয়ে দিয়েছে। এরপরই ট্রাকচালককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ওয়াশিংটন ডিসিতে ১৭০০ জওয়ানকে নামানো হয়েছে। আর এই বিক্ষোভের খবর সংগ্রহ করতে গিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে পুলিশি বাড়াবাড়ির মুখে পড়ছেন সাংবাদিকরা।

শুক্রবার সিএনএনের সাংবাদিক ও তার সঙ্গীদের বিক্ষোভের খবর লাইভ দেখানোর সময় গ্রেপ্তার করা হয়। শনিবার কেনটাকিতে ওয়েভ নিউজ'র এক সাংবাদিকের দিকে পিপার গান ছোড়ে পুলিশ। রয়টার্সের সিকিউরিটি অ্যাডভাইজারের গায়ে রবার বুলেট লেগেছে। গত তিনদিনে অন্তত দুই ডজন সাংবাদিক আক্রান্ত হয়েছেন। তবে, প্রতিবাদকারীদের সঙ্গে সংহতি জানিয়ে অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে নিউইয়র্ক ও মিয়ামির পুলিশ।

প্রসঙ্গত, পুলিশি হেফাজতে ফ্লয়েডের মৃত্যুর প্রতিবাদে বিক্ষোভ লন্ডন, বার্লিন, আমস্টারডাম ও টরেন্টোসহ বিশ্বের বড়বড় শহরগুলোতে প্রতিবাদ ও সংহতি সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত