স্পোর্টস ডেস্ক

২২ জানুয়ারি, ২০২৫ ১১:২১

৯ গোলের ধ্রুপদী ম্যাচে বার্সেলোনার জয়

চ্যাম্পিয়ন্স লিগ

শেষ বাঁশি বাজতে সেকেন্ড কয়েক দূরত্বে ম্যাচ। এমন অবস্থায় বার্সেলোনার গোলবক্সে জটলা। বেনফিকার একজন পড়েও গিয়েছিলেন। পেনাল্টির আবেদনও আছে সেখানে। কিন্তু না! সেই আক্রমণ প্রতিরোধ শেষে যে প্রতি-আক্রমণে গোল করলেন রাফিনিয়া, সেটাই হয়ে গেল ম্যাচের ফলাফল নির্ধারক। অথচ ম্যাচটি ৯ গোলের নাটকীয়তায় পূর্ণ। রেকর্ডময়।

রেকর্ডের ম্যাচে প্রথমবারের মতো স্কোরলাইন হলো ৫-৪; বেনফিকাকে হারিয়ে বার্সেলোনার জয়। আর এই জয়ে সরাসরি শেষ ষোলোতে উঠল স্প্যানিশ জায়ান্ট বার্সেলোনা।

লিসবনের এস্তাদিও দা লুজে গ্রিসের স্ট্রাইকার ভাঙ্গেলিস পাভলিদিসের হ্যাটট্রিকে প্রথমার্ধেই ৩–১ গোলে এগিয়ে গিয়েছিল বেনফিকা। কিন্তু দ্বিতীয়ার্ধে ঘুরে দাঁড়ানোর অদম্য গল্প লিখল বার্সা।

লিসবনে নাটকীয়তায় ভরা ম্যাচে বার্সেলোনার জয়ের নায়ক রাফিনিয়া। প্রবল বর্ষণের রাতে ব্রাজিলিয়ান এই উইঙ্গার জয়সূচক গোলটি করেছেন যোগ করা সময়ের ষষ্ঠ মিনিটে, রেফারি শেষ বাঁশি বাজানোর ঠিক আগমুহূর্তে।

সেই গোল নিয়েও হয়ে গেছে নাটকও। না, রাফিনিয়ায় গোল করায় কোনো ত্রুটি নেই। বরং বদলি ফেরান তোরেসের কাছ থেকে বল পেয়ে ডান প্রান্ত দিয়ে চিতার বেগে বক্সে ঢুকে, বেনফিকা ডিফেন্ডার আলভারো কারেরাসকে কাটিয়ে গোলকিপার আনাতোলি ত্রুবিনকে যেভাবে ফাঁকি দিলেন, সেটা ব্রাজিলিয়fনদের ধ্রুপদী গোল।

কিন্তু বিতর্ক সৃষ্টি হয় এর ঠিক আগে। বদলি লিয়ান্দ্রো বারেইরো বার্সার দুই খেলোয়াড়ের ধাক্কায় বক্সে পড়ে গেলে পেনাল্টির আবেদন জানায় বেনফিকা। কিন্তু স্বাগতিকদের আবেদনে সাড়া দেননি ডাচ রেফারি ড্যানি মাক্কেলি।

এ নিয়ে প্রতিবাদ জানালে বেনফিকার ডাগ আউটে গিয়ে আর্থার কাবরালকে লাল কার্ড দেখিয়ে আসেন রেফারি। বেনফিকার খেলোয়াড়দের সঙ্গে তর্কে জড়ানোয় হলুদ কার্ড দেখতে হয় বার্সার ফেরমিন লোপেজকেও। এ ঘটনার কয়েক সেকেন্ড পর রেফারি শেষ বাঁশি বাজালে জয়ের আনন্দে ভাসে বার্সা।

ঘটনাবহুল ম্যাচে রেফারি মাক্কেলির আরও কয়েকটি সিদ্ধান্ত বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। দুই দলের গোলকিপার ও ডিফেন্ডারদের ভুলগুলোও ছিল দৃষ্টিকটু। সেসব ভুলেই সুযোগের সদ্ব্যবহার করেন পাভলিদিস। মাত্র ৩০ মিনিটেই তিন গোল করে বার্সাকে স্তব্ধ করে দেন। চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ইতিহাসে ম্যাচের শুরু থেকে হিসাব করলে এটি তৃতীয় দ্রুততম হ্যাটট্রিক। ২০২২ সালে সালজ্‌বুর্গের বিপক্ষে রবার্ট লেভানডফস্কির ২৩ মিনিটের মধ্যে হ্যাটট্রিকটাই দ্রুততম।

সেই লেভার সৌজন্যেই আজ ম্যাচে ফেরার ইঙ্গিত দেয় বার্সা। ১৩ মিনিটে এই পোলিশ স্ট্রাইকার পেনাল্টি থেকে করেন দলের প্রথম গোল। ৩–১ গোলে পিছিয়ে থেকে বিরতিতে যায় ফ্লিকের দল।

তবে দ্বিতীয়ার্ধে ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দেন রাফিনিয়া। ম্যাচের ৬৪ মিনিটে তাঁর গোলে ব্যবধান কমিয়ে ৩–২ করে ফেলে বার্সা। কিন্তু এর কিছুক্ষণ পরেই রোনাল্‌দ আরাউহোর আত্মঘাতী গোলে ৪–২ ব্যবধানে এগিয়ে যায় বেনফিকা। আনহেল দি মারিয়া–নিকোলাস ওতামেন্দিদের জয় তখন নিশ্চিতই মনে হচ্ছিল।

কিন্তু ৭৮ মিনিটে লামিনে ইয়ামালের আদায় করা পেনাল্টি থেকে আরেকটি গোল করে খেলা জমিয়ে তোলেন লেভানডফস্কি। এই গোলে ভাগ বসান ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর রেকর্ডে। চ্যাম্পিয়নস লিগ ইতিহাসে এখন পেনাল্টি থেকে যৌথভাবে শীর্ষ গোলদাতা রোনালদো আর লেভা। স্পট কিক থেকে দুজনেরই গোল ১৯টি করে।

৮৬ মিনিটে পেদ্রির দুর্দান্ত ক্রস থেকে লাফিয়ে ওঠা হেডে ৪–৪ করে ফেলেন বদলি এরিক গার্সিয়া। এরপর রাফিনিয়ার সেই শেষের জাদু—বেনফিকা ৪–৫ বার্সেলোনা।

চ্যাম্পিয়নন্স লিগ ইতিহাসে এ নিয়ে মাত্র দ্বিতীয়বার কোনো দল ৪ গোল খেয়েও ম্যাচ জিতল। প্রথমবার এমনটা হয়েছিল ২০১৬ সালের নভেম্বরে, লেগিয়া ওয়ারশকে ৮–৪ গোলে হারিয়েছিল বরুসিয়া ডর্টমুন্ড। ইউরোপীয় ক্লাব ফুটবলের শীর্ষ এই প্রতিযোগিতায় দুই গোলে পিছিয়ে পড়েও বার্সার জয়ের ঘটনা এটাই প্রথম, বেনফিকার ক্ষেত্রে হারের দ্বিতীয় ঘটনা।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত