ডা. এনামুল হক

১৮ জুন, ২০২০ ০০:৫৯

করোনায় আক্রান্ত হওয়াকে আমরা অপরাধের পর্যায়ে নিয়ে গেছি

করোনা বিষয়ক জিজ্ঞাসার হটলাইনের একটি নাম্বার আমি রিসিভ করি। অদ্ভুত সব ফোন আসে প্রতিদিন। আমি ধৈর্য নিয়ে সবকিছু শুনি, পরামর্শ দেই। গতকাল একটি ফোনের ব্যাপারে আপনাদের বলি।

গতকাল একজন ফোন দিয়েছেন, তার পরিবারের ৭০+ বছর বয়সি ২জন সর্দিজ্বরে ৩দিনের ব্যবধানে মারা গেছেন। তারা গ্রামে বাস করেন, জানাজানি হলে সমস্যা হতে পারে তাই স্বাভাবিক মৃত্যু বলে বিষয়টি লুকিয়ে কবর দিয়েছেন। কিন্তু পরিবারের বাকী সবারই কম বেশি সর্দি-জ্বরের উপসর্গ আছে। তারা কেউই টেস্ট করাননি বা করাতে চান না। কিন্তু তিনি পরামর্শ চান। আমি নির্ভয় দিয়ে কভিড-১৯ এর টেস্ট করাতে বললাম, সামান্য কিছু ঔষধের পরামর্শ দিয়ে শামসুদ্দিন হাসপাতালে যোগাযোগ করে তাদের পরামর্শ মত ঔষধ খেতে।

একটা ব্যাপার লক্ষণীয় যে, করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়াকে আমরা অপরাধের পর্যায়ে নিয়ে গিয়েছি, যা ব্যক্তির এবং তার পরিবারের সামাজিক অসম্মানের এবং বিপর্যয়ের কারণ হচ্ছে নিয়মিত। এটা খুবই খারাপ, এতে লোকজন উপসর্গ লুকিয়ে ঘুরে বেড়াবে, রোগ ছড়াবে, কিন্তু টেস্ট করাবে না। রোগী সনাক্ত হবে না, মানে সঠিক চিকিৎসার আওতায় আসবে না। এতে রোগের সংক্রমণ ব্যাপক হারে ছড়িয়ে যাবার সম্ভবনা। যা হচ্ছে।

অদ্ভুত এক সমাজে বাস করি আমরা।

রোগ শনাক্তকরণের সক্ষমতা পর্যাপ্ত নেই অনেক জায়গায়, তাই সামান্য সর্দি-জ্বরকেও গুরুত্ব দিয়ে চিকিৎসা করুন, ডাক্তারের পরামর্শ নিন এবং আইসোলেশনে থাকুন। অর্থাৎ, জ্বর, সর্দি, কাশি, গলা ব্যথা হলেই আইসোলেশন, তা কভিড-১৯ হোক আর না হোক। এটা অতীব জরুরি।

সামাজিক ট্যাবু ভেঙে আমরা যদি রোগী এবং রোগীর পরিবারকে সাহায্য না করি, তবে এই রোগ নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নয়। এই সাহায্য যতটা জরুরি ঐ পরিবারের জন্য, তারচেয়ে বেশি জরুরি আশপাশে সুস্থ্য মানুষের জন্য।

যারা আক্তান্ত তাদের সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করুন। আক্রান্ত ব্যক্তির পারিবারিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করুন।

যাদের উপসর্গ আছে, তাদের সরাসরি আইসোলেশনে রাখুন, ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করুন।

(ফেসবুক থেকে সংগৃহিত)

ডা. এনামুল হক: প্রভাষক, সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত