সোশ্যাল মিডিয়া ডেস্ক

০৬ অক্টোবর, ২০১৬ ০৮:৪২

লেখককে পুরষ্কার, শ্রদ্ধা, সম্মান বেঁচে থাকতেই দাও : তসলিমা নাসরিন

একজন লেখককে শ্রদ্ধা, সম্মান ও পুরষ্কার প্রদান তাঁর জীবদ্দশায় দেওয়াই উচিত বলে মনে করেন নির্বাসিত নারীবাদী লেখক, কবি তসলিমা নাসরিন।

সাহিত্যিক রতনতনু ঘোষ-এর মৃতদেহ বাংলা একাডেমী থেকে শ্রদ্ধা পায় নি এমন এক পরিস্থিতিতে আলোচনা-সমালোচনার সময়ে তসলিমা নাসরিন লিখেছেন, পুরস্কার দিতে চাও, প্রশংসা করতে চাও, শ্রদ্ধা জানাতে চাও বেঁচে থাকতেই জানাও। মরে গেলে একটা মানুষ যেমন তাকে অপমান করা হচ্ছে বোঝে না, তাকে শ্রদ্ধা জানানো হচ্ছে এটাও বোঝে না।

ফেসবুকে দেওয়া এক পোস্টে তসলিমা আরও লিখেন, সাহিত্যিকদের মৃতদেহ বাংলা একাডেমিতে নিয়ে যাওয়ার চলটা বন্ধ হওয়া উচিত। সাহিত্যিকদের সম্মান জানাতে চাইলে পাঠকরাই জানাবে, জীবিত থাকাকালীন জানাবে।

তাঁর লেখার বিস্তারিত-

ভালো যে সাহিত্যিক রতনতনু ঘোষ জেনে যাননি যে তাঁর মৃতদেহটিকে বাংলা একাডেমির ভেতর ঢুকতে দেওয়া হয়নি। ভালো যে তিনি তখন কিছু বোঝেননি, কিছু শুনতে পাননি, দেখতে পাননি। ভালো যে তিনি তখন মৃত ছিলেন। তাঁকে দেখতে হয়নি তাঁর অপমান। তাও আবার বাংলা একাডেমির কাছ থেকে, যে বাংলা একাডেমির দায়িত্ব সাহিত্যিকদের অপমান থেকে বাঁচানো।

রতনতনু ঘোষ নাকি পত্রিকা অফিসে গিয়ে গিয়ে নিজের লেখা পৌঁছে দিতেন। নিজের লেখা নিজের হাতে যদি পৌঁছে দিতে হয় পত্রিকা অফিসে, তবে বেঁচে থাকাকালীনও তিনি যে খুব সম্মান পেয়েছেন তা মনে হয় না।

মানুষটা বোকা ছিলেন, তাই নিজের নামের আগে কায়দা করে কালজয়ী ঔপন্যাসিক, জগৎশ্রেষ্ঠ সাহিত্যিক, বিপ্লবী কবি, সব্যসাচী লেখক ইত্যাদি বিশেষণ জুড়ে দেননি। ওরকম বিশেষণ সর্বস্ব কেউ না হলে একাডেমি তার দ্বার সম্ভবত খোলে না।

সাহিত্যিকদের মৃতদেহ বাংলা একাডেমিতে নিয়ে যাওয়ার চলটা বন্ধ হওয়া উচিত। সাহিত্যিকদের সম্মান জানাতে চাইলে পাঠকরাই জানাবে, জীবিত থাকাকালীন জানাবে। মৃত মুখ দেখার ইচ্ছে কেন হয় মানুষের জানি না। কাউকে ভালো লাগলে তার মুখখানা যখন সে বেঁচে আছে তখন দেখে নেওয়াই ভালো।

পুরস্কার দিতে চাও, প্রশংসা করতে চাও, শ্রদ্ধা জানাতে চাও বেঁচে থাকতেই জানাও।

মরে গেলে একটা মানুষ যেমন তাকে অপমান করা হচ্ছে বোঝে না, তাকে শ্রদ্ধা জানানো হচ্ছে এটাও বোঝে না।

উল্লেখ্য, লেখক রতনতনু ঘোষ প্রায় ৭০টি গ্রন্থের লেখক। পেশাগত জীবনে মুহাম্মদপুর কেন্দ্রীয় কলেজের সমাজকর্ম বিভাগের চেয়ারম্যান ছিলেন অধ্যাপক রতনতনু ঘোষ। গত সোমবার (৩ অক্টোবর) বিকাল সাড়ে ৫টার দিকে রাজধানীর একটি হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন।

শ্রদ্ধা জানানোর জন্য মঙ্গলবার সকাল ১১টার দিকে লেখকের মরদেহ বাংলা একাডেমীতে নেওয়া হলে তিনি "বিশিষ্ট" লেখক নন- এ যুক্তি দেখিয়ে তার মরদেহ নজরুলমঞ্চে তুলতে দেয়নি বাংলা একাডেমী এমন অভিযোগ উঠেছে।

রতনতনুর লেখা উল্লেখযোগ্য গ্রন্থের মধ্যে আছে- অগ্রসর বাংলাদেশ, অপরাজেয় বাংলাদেশ, বাংলাদেশের সাহিত্য, নোবেলবিজয়ীদের কথা, বাংলাদেশের রাজনীতি প্রত্যাশা ও বাস্তবতা, ভাষা আন্দোলন মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতা ও বাংলাদেশের রাজনৈতিক অপসংস্কৃতি।

লেখক রতনতনু বাংলা একাডেমী তরুণ লেখক প্রকল্পের প্রথম ব্যাচের সদস্য ছিলেন। পরবর্তীতে কোর্স শেষ হলে প্রতিষ্ঠানটি তার ‘মানুষের সরূপ’ শীর্ষক একটি প্রবন্ধের বই প্রকাশ করে। ২০১৪ সালের বাংলা একাডেমী সাধারণ পরিষদের বার্ষিক সভার পুস্তিকার তথ্য অনুযায়ী, রতনতনু ঘোষ প্রতিষ্ঠানের জীবনসদস্য।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত