জাহাঙ্গীর আলম ভুঁইয়া, তাহিরপুর

২০ ফেব্রুয়ারি , ২০২০ ২০:২১

শহীদ মিনার নেই হাওরপাড়ের বেশিরভাগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে

শহীদ মিনার বিহীন সুনামগঞ্জের তাহিরপুরের একটি বিদ্যালয়

সুনামগঞ্জের তাহিরপুর। হাওরবেষ্টিত এই এলাকার বেশিরভাগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নেই শহীদ মিনার। তাই আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ও শহীদ দিবস এলেই কোন কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কলাগাছ, চেয়ার টেবিল দিয়ে বা অন্য কোন ভাবে অস্থায়ী শহীদ মিনার তৈরি করেন ছাত্রছাত্রীরা। সেই অস্থায়ী শহীদ মিনারেই ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন ছাত্র-ছাত্রী ও শিক্ষকগণ। শহীদ দিবস শেষ হলেই আর সেই শহীদ মিনারের অস্তিত্ব পাওয়া যায় না।

তাহিরপুরের বিভিন্ন এলাকায় সরকারি, বেসরকারি ও ব্যক্তিগত উদ্যোগে শতাধিক গড়ে উঠেছে কিন্ডারগার্টেন, স্কুল, মাদ্রাসা ও কলেজ। এর মধ্যে বেশিরভাগ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার নেই। ভাষা শহীদদের শ্রদ্ধা জানাতে আজও তাহিরপুরে তৈরি করা হয়নি কোনো স্থায়ী শহীদ মিনার।

এছাড়াও হাওরাঞ্চলে সঠিক ভাবে প্রচার, প্রচারণা ও শহীদ মিনার না থাকায় শিশু, শিক্ষার্থী বুঝে উঠতে পারে না বিভিন্ন জাতীয় দিবস সম্পর্কে। ফলে পাঠ্য বইয়ে পড়ার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকতে হচ্ছে তাদের। আর যে সব বিদ্যালয়গুলোতে শহীদ মিনার আছে সেগুলো আবার সারা বছরই থাকে অযত্ন আর অবহেলায়।

তবে হাওরাঞ্চলের বেশির ভাগ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ২১শে ফেব্রুয়ারিতে বন্ধ থাকে। তাই শিক্ষার্থীরা অন্যান্য স্বাভাবিক দিনের মত করেই সারা দিন বাড়ির কাজ ও খেলাধুলা করে সময় কাটায়।

জানা যায়, সুনামগঞ্জ জেলার হাওরাঞ্চলের ধর্মপাশা, জামালগঞ্জ, মধ্যনগর, বিশ্বাম্ভরপুর, দিরাই, শাল্লা, তাহিরপুরসহ ১১টি উপজেলার বেশিরভাগ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে তৈরি করা হয়নি শহীদ মিনার। যার ফলে পালন করা হয় না আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস, বিজয় দিবস ও স্বাধীনতা দিবস।

আর যে কয়েকটি বিদ্যালয়ে শহীদ মিনার রয়েছে সেগুলো সারা বছরেই অপরিচ্ছন্ন অবস্থায় থাকে। কিছু শহীদ মিনার সারাবছরই থাকে রং বিহীন, কিছু শহীদ মিনারের নিচে নেই মাটি। শহীদ মিনার এলাকায় ধানের গুড়া ফেলা হয়। মল ত্যাগ করে গরু, ছাগলসহ অন্যান্য প্রাণি। কেবল ২১শে ফেব্রুয়ারি আসলেই আগের দিন ঘসামাজা করে সৌন্দর্য বাড়ানো হয় ওইসব শহীদ মিনারের।

জেলার তাহিরপুর উপজেলার ৭টি ইউনিয়নের ১৩৩টি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ১৭ মাধ্যমিক বিদ্যালয়, ৩টি নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়, ৫টি মাদ্রাসা রয়েছে। তাহিরপুর সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়, জয়নাল আবেদিন মহাবিদ্যালয়, মানিকটিলা, তেলীগাঁও, দুধের আওটা, লক্ষীপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ শতাধিক প্রাথমিক, উচ্চ মাধ্যমিক ও মাদ্রাসায় স্থায়ী শহীদ মিনার নেই।

বড়দল উচ্চ বিদ্যালয়ের বর্তমান প্রধান শিক্ষক রফিকুল ইসলামসহ বিভিন্ন বিদ্যালয়ের শিক্ষকগন বলেন- একটি শহীদ মিনার থাকলে শুধু ২ শে ফেব্রুয়ারি নয় অন্যান্য জাতীয় দিবসও পালন করা যেত। শহীদ মিনার না থাকায় দিন দিন হাওরাঞ্চলের ছাত্র-ছাত্রী ও যুব সমাজ থেকে হারিয়ে যাচ্ছে স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, ২১শে ফ্রেব্রুয়ারির চেতনা।

রফিকুল ইসলাম, সাদেক আলী, মাসুক মিয়াসহ উপজেলার সচেতন মহল ও অভিবাবকগন বলেন, ভাষা জন্য জীবন উৎসর্গ করেছে এমন দৃষ্টান্ত বাংলাদেশ ছাড়া বিশ্বের কোনো দেশে নেই। সরকার যদি প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার স্থাপনের বিষয়ে দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ না করে তাহলে সুনামগঞ্জের হাওরাঞ্চল থেকে কালেরআর্বতে হারিয়ে যাবে ২১শে ফ্রেব্রুয়ারি, ১৬ ডিসেম্বর, ২৬ মার্চের চেতনা ও মর্যাদা।

এ ব্যাপারে তাহিরপুর উপজেলা ভারপ্রাপ্ত প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আবু সাইয়েদের ব্যক্তিগত মোবাইল ফোনে ঘণ্টাব্যাপী কল করার পরও তিনি রিসিভ না করার তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয় নি।

তাহিরপুর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা বিজেন ব্যনার্জি বলেন, মুজিববর্ষের মধ্যেই প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার স্থাপনের ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. জিল্লুর রহমান জানান, জেলার ১৪৭২ প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে সেগুলোতে শহীদ মিনার না থাকলেও ২১ফেব্রুয়ারিতে শহীদরে প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে সকল আয়োজন করার জন্য বলা হয়েছে।   

তাহিরপুর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান করুনাসিন্দু চৌধুরী বাবুল বলেন, ভাষা ও মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের প্রতি সর্ম্মান প্রদর্শন ও স্মরণীয় করে রাখতে এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে তুলে ধরার জন্য প্রতিটি বিদ্যালয়ে শহীদ মিনার স্থাপন করা খুবেই প্রয়োজন। এবিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর  সহযোগিতা ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলে প্রয়োজনীয় সকল ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত