সিলেটটুডে ডেস্ক

২০ অক্টোবর, ২০২০ ০২:২৬

বসনিয়ার জঙ্গলে ৬০০ বাংলাদেশির মানবেতর জীবন, বেশিরভাগই সিলেটের

ছবি : ডয়েচে ভেল

ইউরোপে পাড়ি জমাতে গিয়ে বসনিয়ার ভেলিকা ক্লাদুসার একটি জঙ্গলে আশ্রয় নিয়েছেন অনেক বাংলাদেশি। কয়েক দিন আগে এ খবরে প্রকাশের পর তোলপাড় হয়। সেখানকার সাম্প্রতিক পরিস্থিতি তুলে ধরেছে জার্মানির সংবাদমাধ্যম ডয়চে ভেল। জঙ্গলে আশ্রয় নেওয়া ৬০০ বাংলাদেশিরদের বেশিরভাগই সিলেটের বাসিন্দা।

আটকে পড়া বাংলাদেশিদের ভাষ্য, অনেক টাকা খরচ করে এখানে এসেছি। আমাদের স্বপ্ন ইতালি, স্পেন যাওয়ার। আমরা কখনো দেশে ফেরত যাবো না।

দুই বছর আগে ওমান থেকে বসনিয়া এসেছেন মোহাম্মদ ইয়াসিন। স্বপ্ন ইউরোপের কোন দেশে পাড়ি জমানো। তিনি এখন আটকে আছেন ক্রোয়েশিয়া-বসনিয়া সীমান্তের ভেলিকা ক্লাদুসার একটি পাহাড়ের ঢালে।

সেখান থেকে গত কয়েক মাসে বেশ কয়েকবার চেষ্টা করেও ক্রোয়েশিয়ায় প্রবেশ করতে পারেননি তিনি। বারবার দেশটির পুলিশের হাতে আটকা পড়েন। পুলিশ সর্বস্ব রেখে আবারও বসনিয়া ফেরত পাঠায় বলে জানান ইয়াসিন।

তিনি বলেন, ‘‘ওমান থেকে স্পিড বোটে করে ইরান এসে সেখান থেকে তুরস্ক হয়ে গ্রিসে আসি আমি। গ্রিস থেকে আসি বসনিয়াতে। গত চার মাস যাবৎ এ জঙ্গলটিতে আছি। সর্বশেষ গত তিন দিন আগে ক্রোয়েশিয়া প্রবেশের চেষ্টা করি। সে সময় কিছুটা ভেতরে ঢুকেছিলাম। কিন্তু পুলিশের হাতে ধরা পড়ে যাই। পুলিশ আমার সবকিছু কেড়ে নেয়। শুধু আন্ডারওয়্যার পরা অবস্থায় আমাকে এখানে ফেরত পাঠায়।”

সংবাদমাধ্যমটি জানায়, ক্রোয়েশিয়া সীমান্তবর্তী পাহাড়ের ঢালে কয়েকশো বাংলাদেশি অবস্থান করছেন। তীব্র শীত, খাবারের অভাব ও পানির সংকটে অমানবিক জীবনযাপন করছেন তারা।

বিজ্ঞাপন



সেখানে অবস্থানরত বাংলাদেশিদের অধিকাংশই মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশ থেকে এসেছেন। পাড়ি দিয়েছেন দুর্গম পথ। দালালদের মাধ্যমে মোটা অঙ্কের টাকা খরচ করে ইউরোপের উদ্দেশ্যে পাড়ি জমিয়েছেন।

একজন বলেন, ‘‘১৮ থেকে ২০ লাখ খরচ করে এখানে এসেছি। বিভিন্ন দেশে দালালদের এ টাকা দিতে হয়েছে আমাদের। এ মুহূর্তে দেশে গেলে নিঃস্ব হয়ে যাবো আমরা।”

গাছের সঙ্গে পলিথিন বেঁধে ভেলিকা ক্লাদুসার একটি পাহাড়ের ঢালে বানানো হয়েছে তাঁবু, সেখানে গাদাগাদি করে রাত কাটাচ্ছেন অভিবাসনপ্রত্যাশীরা। এমন বেশ কিছু তাঁবুতে অবস্থান বাংলাদেশিদের। কর্দমাক্ত মাটিতে পাতলা পলিথিন বিছিয়ে নিজেদের থাকার আয়োজন করেছেন তারা।

কাছাকাছি একটি শরণার্থী ক্যাম্প থাকলেও সেখানে সবাইকে আশ্রয় দেওয়া হচ্ছে না বলে অভিযোগ করেছেন তারা। অনেকে আশ্রয় নিয়েছেন পাশের একটি পরিত্যক্ত কারখানায়।

জঙ্গলের ভেতরে ময়লা-আবর্জনা পরিবেষ্টিত ভবনটিতে গাদাগাদি করে অবস্থান করছেন তারা। ভাঙা ছাদ আর দেয়ালবিহীন স্থাপনাটিতে শীত আর বৃষ্টিতে অবর্ণনীয় কষ্টের অভিজ্ঞতার কথা বর্ণনা করেছেন তারা।

সরকার সহযোগিতা করলে দেশে ফেরত যাবেন কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তারা জানান, তাদের স্বপ্ন ইতালি, স্পেন যাওয়ার। কোনভাবেই তারা এ স্বপ্ন ত্যাগ করবেন না।

এ দিকে কয়েকশো মানুষ বসনিয়ার জঙ্গলে মানবেতর জীবনযাপন করলেও আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোকে তাদের সহায়তায় তৎপর হতে দেখা যায়নি।  বাংলাদেশিরা জানান, মাঝে মাঝে আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর কেউ কেউ কিছু খাবার আর চিকিৎসা সহায়তা নিয়ে আসলেও তা পর্যাপ্ত নয়।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত