সিলেটটুডে ডেস্ক

২৪ এপ্রিল, ২০২৩ ২১:৩৭

ডয়চে ভেলের ‘বাংলাদেশবিরোধী অপপ্রচার’ বন্ধের দাবিতে জার্মানিতে বিক্ষোভ

জার্মানির রাজধানী বার্লিনে ডয়চে ভেলে বাংলা বিভাগের ‘বাংলাদেশবিরোধী অপপ্রচার’ বন্ধের দাবিতে মানববন্ধন ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে।

সোমবার (২৪ এপ্রিল) বার্লিনের ফলটা সড়কে অবস্থিত ডয়চে ভেলের বার্লিন কার্যালয়ের সামনে পরপর দুটি প্রতিবাদ সমাবেশ ও মানববন্ধনের আয়োজন করে ‘বাংলাদেশ সিভিল সোসাইটি ইন ইউরোপ’ ও ‘জার্মানি আওয়ামী লীগ’। সমাবেশে জার্মানির বিভিন্ন শহরের প্রবাসীরা ছাড়াও ইউরোপের অনেক দেশের প্রবাসী বাংলাদেশিরা অংশ নেন।

'বাংলাদেশ সিভিল সোসাইটি ইন ইউরোপ' ডয়চে ভেলে ও নেত্রনিউজের যৌথ প্রযোজনায় নির্মিত ‘ডেথ স্কোয়াড’: র‍্যাবের ভেতরের কথা - শিরোনামের তথ্যচিত্রকে 'স্বার্থান্বেষী মহল কর্তৃক অশুভ অভিপ্রায়ে প্রচারিত প্রতিবেদন' হিসেবে আখ্যা দিয়ে উক্ত প্রতিবেদনের উপর প্রস্তুতকৃত একটি গবেষণাপত্র পেশ করেছে।

যুক্তরাজ্য ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের বেশ কিছু দেশের বিজ্ঞানী, গবেষক, আইনজীবী, প্রকৌশলী ও সাংবাদিকদের নিয়ে গঠিত বাংলাদেশ সিভিল সোসাইটি ইন ইউরোপ। সংগঠনটির পক্ষ থেকে বলা হয়, ডয়চে ভেলের অনুষ্ঠান বিষয়ক কার্যপ্রণালী বিধি মোতাবেক একতরফা ভাবে কোন দল বা রাজনৈতিক দল বা বিশেষ কোন সম্প্রদায়কে সমর্থন করবে না বা উস্কে দেবে না। উপরন্তু ডয়চে ভেলে এমন কোন অনুষ্ঠান করবে না, যাতে করে জার্মানির সাথে অন্যান্য দেশের সম্পর্কে প্রভাব ফেলে। কিন্তু বাংলাদেশের এলিট ফোর্সেস র‌্যাব এর বিরুদ্ধে প্রচারিত তথ্যচিত্রটিতে অনেক বিতর্কিত, ভুল ও সাংঘর্ষিক তথ্য রয়েছে, যা ডয়চে ভেলের মৌলিক নীতি বিরুদ্ধ বলে আমরা মনে করি।

তারা আরও বলেন, ডয়চে ভেলের (ডি. ডব্লিউ) অনুষ্ঠানবিষয়ক কার্যপ্রণালিবিধিতে পরিষ্কার করে বলা হয়েছে, তাদের অনুষ্ঠানগুলো অবশ্যই জনগণের স্বাধীন মতামত তৈরিতে সহায়তা করবে এবং একতরফাভাবে কোনও দল বা রাজনৈতিক, ধর্মীয় সম্প্রদায়, পেশাজীবী বা বিশেষ কোনও সম্প্রদায়কে সমর্থন করবে না বা উসকে দেবে না। প্রতিবেদনগুলো যথেষ্ট স্বচ্ছ, বাস্তবসম্মত ও সত্য হতে হবে। এ ছাড়া ডয়চে ভেলে এমন কোনও অনুষ্ঠান করবে না, যাতে জার্মানির সঙ্গে অন্যান্য দেশের সম্পর্কে প্রভাব ফেলে।

সম্প্রতি ডয়চে ভেলে ইউটিউব, ফেসবুক ও অন্যান্য সোশ্যাল মিডিয়ায় ইংরেজি ও বাংলায় ‘হাউ এলিট ফোর্সেস র‌্যাব টেরোরাইজ দ্য পিপল অব বাংলাদেশ’ শিরোনামের একটি তথ্যচিত্র প্রকাশ করেছে। এই তথ্যচিত্রে অনেক বিতর্কিত বিষয়, ভুল তথ্য ও সাংঘর্ষিক বিষয় রয়েছে, যা ডয়চে ভেলের মৌলিক নীতিবিরুদ্ধ বলে আমাদের নজরে এসেছে।

বাংলাদেশ সিভিল সোসাইটি ইন ইউরোপের পক্ষ থেকে বক্তারা বলেন, একটি গণতান্ত্রিক দেশ হিসেবে বাংলাদেশ গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের উন্নয়নে দৃঢ় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। জাতি হিসেবে জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকার রক্ষায় সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকার করেছে। মার্কিন মূল্যায়নে র‌্যাবের সাম্প্রতিক কর্মকাণ্ডে প্রতিকারমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ এবং প্রয়োজনীয় সংশোধনের মাধ্যমে এই আন্তরিক প্রচেষ্টার প্রমাণ মেলে

কিন্তু ডি. ডব্লিউ বাংলা বিভাগের সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে তা ইচ্ছাকৃতভাবে উল্লেখ করা হয়নি। কিছু রাজনৈতিক দলের স্বার্থের ভিত্তিতে ডিডব্লিউর এই প্রতিবেদন পক্ষপাতদুষ্ট। প্রতিবেদনে অযাচাইযোগ্য উৎসের ব্যবহার, পেশাগত অপরাধীর কাছ থেকে সন্দেহজনক সাক্ষাৎকার, গুম হয়ে যাওয়া মানুষের মিথ্যা তালিকা প্রদর্শন—সবকিছুই সাংবাদিকতার নীতি ও নিয়মবহির্ভূত।

এ ছাড়া তথ্যচিত্র ও প্রতিবেদনটির শুরুতে উদ্দেশ্যমূলকভাবে বলা হয়েছে, নানা হত্যা ও অপহরণের ঘটনা প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর নির্দেশে করা হয়েছে। তথ্যচিত্রটির শেষে বাংলাদেশের আসন্ন সাধারণ নির্বাচন নিয়ে তাদের মতামত ও পরামর্শ রয়েছে। বিষয়গুলো স্পষ্টতই বর্তমান সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করার এবং বিরোধী দলগুলোকে অযৌক্তিক ও অনৈতিক সমর্থন দেওয়ার উদ্দেশ্যে করা হয়েছে, যা ডি. ডব্লিউর অনুষ্ঠানবিষয়ক মূল নীতিবিরুদ্ধ কাজ বলে আমরা মনে করি।

সিভিল সোসাইটি ইন ইউরোপের পক্ষ থেকে আরও বলা হয়, অবিলম্বে ডি. ডব্লিউ বাংলা বিভাগ বাংলাদেশকে নিয়ে ষড়যন্ত্র বন্ধ না করলে তাদের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

জার্মানি আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে এক প্রতিবাদলিপিতে বলা হয়েছে, সম্প্রতি ডয়চে ভেলে বাংলা বিভাগের অনুষ্ঠানগুলোয় বাংলাদেশ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নিয়ে বিদ্বেষ ছড়ানো হচ্ছে। জার্মানির জনগণের করের অর্থায়নে পরিচালিত এই রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানে কর্মরত কিছু ব্যক্তি, তাদের নিজস্ব রাজনৈতিক মতাদর্শ ও মতামত ডয়চে ভেলের মাধ্যমে প্রচার করছে। ডি. ডব্লিউ বাংলা বিভাগ ক্রমাগতভাবে অনেকগুলো নেতিবাচক প্রতিবেদন তৈরি করছে, যা বর্তমান বাংলাদেশ সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করবার অপপ্রয়াস বলে আমরা মনে করি।

সমাবেশে জার্মানি আওয়ামী লীগের সভাপতি মিজানুর রহমান খান বলেন, বিষয়টি খুবই দুঃখজনক যে জার্মানির মতো একটি গণতান্ত্রিক দেশের প্রচারযন্ত্রের নিয়মবিধি না মেনেই বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ঘৃণা ছড়ানো হচ্ছে।

জার্মান আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোবারক আলী ভূঁইয়া বলেন, জার্মানির মতো দেশ থেকে বাংলাদেশবিরোধী অপপ্রচার বন্ধে আমাদের সবার সজাগ থাকতে হবে।

নূরী খান বলেন, আমরা দীর্ঘ সময় থেকে জার্মানিতে বসবাসকারী বাংলাদেশিরা এর আগে কখনোই ডি. ডব্লিউ বাংলা বিভাগের এমন বাংলাদেশবিরোধী চক্রান্ত দেখতে পাইনি। আমরা অবিলম্বে বাংলাদেশবিরোধী মিথ্যা প্রচার-প্রচারণা বন্ধের দাবি জানাচ্ছি।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত