০৮ নভেম্বর, ২০২৪ ১৮:৩০
সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক শেষে দেশে ফেরার পথে প্রবাসী বাংলাদেশিদের তোপের মুখে পড়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক উপদেষ্টা আসিফ নজরুল। এই প্রবাসী বাংলাদেশিরা আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত বলে জানা গেছে।
এই ঘটনার পর জেনেভাস্থ বাংলাদেশের নিযুক্ত রাষ্ট্রদূতের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন অনেকেই।
তারা বলছেন, দেশের একজন উপদেষ্টা বিদেশে গেলে তার প্রটোকলসহ সব রকম দায়-দায়িত্ব রাষ্ট্রদূতের। এক্ষেত্রে রাষ্ট্রদূত কী ভূমিকা পালন করলেন! রাষ্ট্রদূত তার দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করেননি বলে মনে করছেন অনেকেই। এতে দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়েছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার (৭ নভেম্বর) আইএলও কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক শেষে দেশে ফিরছিলেন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল। এ সময় জেনেভা বিমানবন্দরে কিছু বাংলাদেশির হাতে হেনস্তার শিকার হন তিনি।
জেনেভাস্থ বাংলাদেশ দূতাবাস ও স্থায়ী মিশন সূত্রে যতটুকু জানা গেছে, আইএলওর গভর্নিং বডি এবং সংস্থাটির গুরত্বপূর্ণ কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক শেষে বৃহস্পতিবার দেশে ফিরছিলেন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল। দূতাবাসের প্রটোকলে তিনি গাড়ি করে জেনেভা বিমানবন্দরে পৌঁছান। এ সময় তার সঙ্গে দূতাবাসের প্রটোকল ছিল। গাড়ি থেকে বিমানবন্দরে নামার পর একদল লোক এসে আইন উপদেষ্টাকে ঘিরে ধরেন এবং উপদেষ্টা বিমানবন্দরে প্রবেশ করার আগ পর্যন্ত তাকে বাংলাদেশের সাম্প্রতিক রাজনৈতিক বিষয় নিয়ে নানা প্রশ্নবাণে জর্জরিত করেন। এতে বিরক্ত হন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল।
এই হেনস্তার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। ভিডিও দেখে সুইজারল্যান্ডের বেশ কয়েকটি সূত্র নিশ্চিত করেছে, আইন উপদেষ্টাকে হেনস্তাকারীদের মধ্যে সুইজারল্যান্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি নজরুল ইসলাম জমাদার ও সাধারণ সম্পাদক শ্যামল খানকে দেখা গেছে।
আসিফ নজরুলকে হেনস্তা করার এক মিনিট ৪৩ সেকেন্ডের ভিডিওতে দেখা যায়, একদল লোক উপদেষ্টা আসিফ নজরুলকে ঘিরে তার সঙ্গে উত্তেজিত ভাষায় তর্ক করছেন, বারবার প্রশ্ন করছেন, ‘আপনি মিথ্যা বলেছেন।’
এ সময় ভিডিওতে শোনা যায়, আসিফ নজরুল বলছেন, ‘আপনি গায়ে হাত দিচ্ছেন কেন?’
সুইজারল্যান্ড প্রবাসী আওয়ামী লীগ নেতারা আসিফ নজরুলকে একটা নির্বাচিত সরকারকে উৎখাত করার জন্যে দায়ী করেন, এবং দেশে মানুষের কথা বলার স্বাধীনতা দেওয়া হচ্ছে না বলেও অভিযোগ করেন।
পরে কোনোরকমে আসিফ নজরুল বিমানবন্দরে প্রবেশ করতে যাওয়ার সময় তাকে রাজাকার আখ্যা দেন প্রবাসী বাংলাদেশিদের এই অংশ। এবং এ সময় তাদের ‘জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু’ স্লোগান দিতেও শোনা যায়।
জেনেভাস্থ বাংলাদেশ দূতাবাসের এক কর্মকর্তা সংবাদমাধ্যমকে জানান, ‘আইন উপদেষ্টা ব্যক্তিগত কোনো সফরে সুইজারল্যান্ড আসেননি। তিনি আইএলও গভর্নিং বডির মিটিংয়ে এসেছেন। আইএলওতে বাংলাদেশের দুটি মামলা চলছে। সে জন্য উপদেষ্টা এখানে এসেছেন। তিনি আইএলওর মহাপরিচালকের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। সব আনুষ্ঠানিকতা শেষে জেনেভা সময় বৃহস্পতিবার বিকেলে দেশে ফেরার জন্য বিমানবন্দরে প্রবেশের পথে কিছু লোক উপদেষ্টার সঙ্গে বাজে ব্যবহার করেছেন।’
এই কর্মকর্তা বলেন, ‘শুনেছি আইন উপদেষ্টা গাড়ি থেকে নামার পর কিছু লোক এসে তাকে ঘিরে ধরে। সঙ্গে দূতাবাসের লোকজন ছিল। ওনাকে প্রটোকল দেওয়া হয়েছে। হঠাৎ করে এসে কিছু লোক এ ধরনের ঘটনা ঘটিয়েছে।’
দেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে বিদেশে কূটনৈতিক মিশনগুলোর দায়িত্বজ্ঞান সম্পর্কে অনেকে প্রশ্ন তুলেছেন। তারা বলছেন, উপদেষ্টার সঙ্গে কথা বলতে দেওয়ার মতো সুযোগ দেওয়াই উচিত হয়নি। এমন ঘটনা যদি ঘটে, তা হলে কেমন প্রটোকল ছিল? রাষ্ট্রদূত কি তা হলে তার দায়িত্বে অবহেলা করেছেন?
আইএলওর গভর্নিং বডির বৈঠকে আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল ছাড়াও শ্রম উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ এবং প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ দূত লুৎফে সিদ্দিকীও অংশ নেন।
আপনার মন্তব্য