লন্ডন সংবাদদাতা

১৬ মার্চ, ২০১৫ ১৬:৪৬

ব্রিটিশ বাংলাদেশী রুখসানার এগিয়ে যাওয়ার গল্প

গত ১৪ই মার্চ ৫০ কেজি ওজনের ওয়ার্ল্ড টাইটেল ফাইটের খেতাব জয়ের জন্য কিক বক্সিং এবং মুই থাইয়ের বৃটিশ চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশি বংশোদ্ভোত রুখসানা মুখোমুখি হয়েছিলেন ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়ন লুডিভিন লানিয়েরের সাথে। ৩ রাউন্ডের ৯ মিনিটের ফাইটে রুখসানা বেশ কয়েকবার এগিয়ে থাকলেও শেষ পর্যন্ত বিচারকের রায়ে মেনে নিতে হয়েছে পরাজয়। বিশ্বের সেরা হওয়ার মুকুটটি আর পরা হয়নি।

ব্রিটেনের মূলধারার সংবাদ মাধ্যমের 'ব্রিলিয়ান্ট বেগম' খ্যাত রুকসানা বেগম। ব্রিটিশ বাংলাদেশি রুখসানা গত চার বছর ধরে নিজের দখলে রেখেছেন ব্রিটিশ কিক বক্সিং ও মুয়ে থাই চ্যাম্পিয়নের সম্মান। কিন্তু সেই পথচলা খুব সহজ ছিলনা রুখসানার, মুয়ে থাই ও কিক বক্সিং উচ্চমাত্রার শারীরিক কসরতনির্ভর একটি খেলা। আর এমন একটি খেলায় ব্রিটেনের চ্যাম্পিয়ন রুখসানা বেগম ।

এথনিক কমিউনিটিতে এই ধরনের খেলায় মেয়েদের খুববেশি দেখা যায় না রয়েছে অনেক বিধি নিষেধ l সব কিছুই কে উপেক্ষা করে অনেকটা গোপনেই ১০ বছর আগে ট্রেনিং শুরু করেন স্কুল গার্ল রুখসানা l ব্রিটেনে আর দশজন স্বাভাবিক বাংলাদেশির মতোই পূর্ব লন্ডনে বেড়ে উঠা তাঁর। লন্ডনের বেথনাল গ্রিন এলাকার একটি ব্যায়ামাগারে সাবেক বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন, খ্যাতনামা প্রশিক্ষক বিল জাডের কাছে থাইল্যান্ডের ঐতিহ্যবাহী মুয়ে থাই শেখার সুযোগ পান রুখসানা। রুখসানার প্রথম সাফল্য আসে ২০০৯ সালে।

ব্রিটেন জাতীয় দলের হয়ে ব্যাংককে অনুষ্ঠিত ওয়ার্ল্ড অ্যামেচার কিক বক্সিং চ্যাম্পিয়নশিপে তৃতীয় স্থান অর্জন করে আলোচনায় আসেন তিনি। সেই থেকে স্বপ্নের পথচলা শুরু; বাড়তে থাকে তাঁর ওপর দেশ ও দশের প্রত্যাশা। ২০১১ সালে রুখসানা লাটভিয়ায় আয়োজিত ইউরোপিয়ান ক্লাব কাপে সোনা জেতেন।

সম্প্রতি ব্রিটেনের উইমেনস হেলথ সাময়িকীর প্রতিবেদনে যুক্তরাজ্যের সেরা ফিটেস্ট নারীর মধ্যে উঠে এসেছে রুখসানা বেগমের নাম। রুখসানার বক্সিং দেখতে অনুপ্রেরণা দিতে সেখানে উপস্থিত হয়েছিলেন বড়বোন ফারজানা অ্যানি, এক ফাঁকে কথা হয় তাঁর সাথে , বোনের এমন সাফল্যে কেমন লাগে, জানতে চাইলে বলেন অবশ্যই আমরা রুখসানার সাফল্যে গর্বিত। নিজে যদি ও ভয় পান এমন খেলাকে তবু বোনকে উৎসাহ যোগাতেই নিজের সন্তান সহ উপস্থিত হয়েছেন তিনি। ওয়ার্ল্ড চ্যাম্পিয়ান না জিতলে ও তিনি আশাবাদী রুখসানা আবার ও ঘুরে দাঁড়াবে বিজয়ীর বেশে।

খেলার প্রেরণা এবং ভবিষ্যত পরিকল্পনা জানতে চাওয়া হলে রুখসানা বলেন- আমার প্রাথমিক উদ্দেশ্য ছিলো আমার এথনিক মাইনরটি বাঙালি কমিউনিটি এবং আমার বিশ্ববিদ্যালয়ের মুখ উজ্বল করা কিন্তু ক্রমেই আমার আশাবাদ বাড়ছিল এবং সর্বশেষ প্রেরণা বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হয়ে দেশের (ব্রিটেন) নাম উজ্জ্বল করা l

রুখসানার প্রশিক্ষক বিল জাড বলেন রুখসানা খুবই ভালো করেছে, বিজয়ী না হলেও তাঁর খেলায় আমি সন্তুষ্ট। আর বাংলাদেশি হিসাবে রুখসানাকে নিয়ে অবশ্যই আপনারা গর্ব করতে পারেন। বিচারকের রায়ের উপর আমাদের কিছু বলার নাই। পরাজয়ে যদি ও বিমর্ষ ছিলেন অনেকটাই রুখসানা । কাটা ছেঁড়া রক্তাক্ত মুখ নিয়েই কথা বলেন প্রতিবেদকের সাথে জানান- "আজকের এই পরাজয় দূর্ভাগ্য ছাড়া আর কিছু নয়, আমি ভালো।"

শখের বশে শুরু করে এখন বিশ্বজয়ের পথে হাটছেন রুখসানা, ব্রিটেন বাঙালির সাফল্য গাঁথায় উজ্জ্বল এখন রুখসানার নাম। একবার পরাজয় মানে হেরে যাওয়া নয় রুখসানা আগামীতে বিজয় মুকুট নিয়ে আসবেন, স্বর্ণাক্ষরে লিখবনে বাংলাদেশের নাম এমনটাই প্রত্যাশা সবার।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত