ডা. আতিকুজ্জামান ফিলিপ

০৮ জুন, ২০২০ ০১:১০

❛কোভিড সার্ভিস চার্জ❜ নামে হাসপাতাল মালিকদের ❛ডাকাতি❜

এই মহামারির সময়েও প্রাইভেট হাসপাতালগুলো যা করছে তাকে দিনেদুপুরে ডাকাতি বললেও কম বলা হয়। প্রায় প্রতিটি প্রাইভেট হাসপাতাল 'কোভিড সার্ভিস চার্জ' নামে নতুন একটি ডাকাতি খাত চালু করেছে! স্কয়ার হাসপাতাল এই খাত বাবদ প্রতিদিন প্রতিটি রোগীর কাছ থেকে চার্জ রাখছে ১০ হাজার টাকা। ইউনাইটেড হাসপাতাল ও ল্যাবএইড হাসপাতালসহ অন্যান্য কর্পোরেট হাসপাতালগুলোও এমন উচ্চহারে 'কোভিড সার্ভিস চার্জ' রাখছে!

স্কয়ার হাসপাতালে যে কেবিনের ভাড়া আগে ছিলো সাড়ে আট হাজার টাকা সেই একই কেবিনের ভাড়া এখন প্রতিদিন ২০ হাজার টাকা। ইউনাইটেড হাসপাতালে যে কেবিনের ভাড়া ছিলো আট হাজার টাকা তা এখন পঁচিশ হাজার টাকা। অন্যান্য প্রাইভেট হাসপাতালগুলোতেও মোটামুটি একই অবস্থা।

বিজ্ঞাপন

এইসব হাসপাতালের কেবিন ভাড়া নিয়ে অবশ্য আমার মাথাব্যথা নেই, কারণ যেসব ধনীরা বিভিন্ন উপায়ে অর্জিত তাদের বিপুল অর্থবিত্ত খরচ করার জায়গা পায় না তারাই এসব হাসপাতালের কেবিনে যায় বা যাবে। এদের কাছে সবসময়ই জরুরি চিকিৎসাসেবার চেয়ে বিলাসবহুল আতিথেয়তাটাই-ই জরুরি। হতাশার ব্যাপার হলো, প্রাইভেট হাসপাতালগুলোর সাধারণ ওয়ার্ডগুলোতেও একইরকমভাবে উচ্চভাড়ার মচ্ছব চলছে।

পরিসংখ্যান বলছে, বাংলাদেশের মোট রোগীশয্যার প্রায় দুই-তৃতীয়াংশরই যোগান আসে এইসব প্রাইভেট হাসপাতাল ও ক্লিনিকগুলো থেকে। পরিতাপের বিষয় হলো, করোনার এই মহামারিতে সরকারি হাসপাতালগুলোতে রোগীশয্যার অভাবে বেড খালি না পেয়ে মধ্যবিত্ত বা নিম্ন-মধ্যবিত্তরাও এইসব প্রাইভেট হাসপাতালগুলোতে ছুটতে বাধ্য হচ্ছেন এবং অনেকটা সর্বস্বান্ত হয়েই বাসায় ফিরছেন।

রোববার এক খবরে দেখলাম একজন বৃদ্ধ রোগী 'আনোয়ার খান মডার্ন হাসপাতালে'র একটি সাধারণ ওয়ার্ডে তিনদিন ভর্তি ছিলেন। এই তিনদিনে তার বিল এসেছে ৯২ হাজার টাকা! এই তিনদিনে তার কোন অক্সিজেনই দেওয়া হয়নি (অক্সিজেন সরবরাহের প্রয়োজনই হয়নি)। তারপরও তার বিলে অক্সিজেন বাবদ ১৭ হাজার টাকা যোগ করে দেওয়া হয়েছে। ব্যাপারটা কর্তৃপক্ষকে জানালে তারা বিল থেকে ১৭ হাজার টাকা ডিডাক্ট করে ৭৫ হাজার টাকা রেখেছে। তার মানে রোগীর লোক যদি সচেতন না হতো তাহলে অক্সিজেন বাবদ এই ১৭ হাজার টাকা তারা হাপিশ করে দিতো। এভাবেই তারা রোগীর কাছ থেকে দিনেদুপুরে ডাকাতি করছে, লুট করছে, ছিনতাই করছে!

রোগী বা সাধারণ জনগণ মনে করছে চিকিৎসকরাই এই ডাকাতি করছে। অথচ বাস্তবতা কিন্তু পুরোপুরি উল্টো!

বিজ্ঞাপন

এইসব হাসপাতালে আগে যতজন চিকিৎসক চাকরি করতেন এখনো ততজনই চাকরি করছেন বরং কিছু কিছু হাসপাতাল কর্মী ছাটাইয়ের মাধ্যমে চিকিৎসক সংখ্যা আগের চেয়ে আরও কমিয়ে নিয়ে এসেছে। এবং এইসব হাসপাতালে যেসব চিকিৎসকরা চাকরি করছেন তাদের কারোরই বেতন-বোনাস বাড়েনি বরং অনেকক্ষেত্রেই আরও কমেছে বা দেওয়াই হয়নি।

সুতরাং এটা জলের মতো পরিস্কার যে, এইসব হাসপাতালের ডাকাতির বাড়তি এই টাকা মালিকপক্ষই খাচ্ছে।

চিকিৎসকরা এই বাড়তি টাকার কোন ভাগ কখনোই চায়নি, এখনো চায় না। কিন্তু দুঃখের বিষয় হলো, রোগী ও সাধারণ জনগণের দৃষ্টিতে চিকিৎসকরাই আবারো 'কসাই' হিসেবে পরিগণিত হচ্ছে!

একজন চিকিৎসক হিসেবে আমি মনে করি, প্রাইভেট হাসপাতালগুলোর এইরূপ নির্লজ্জ ডাকাতি ও চরম স্বেচ্ছাচারিতার প্রতিবাদ করা আমাদের প্রতিটি চিকিৎসকের নৈতিক দায়িত্ব ও কর্তব্য।

ডা. আতিকুজ্জামান ফিলিপ: সহ তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক, কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটি, স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ (স্বাচিপ)।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত