মাসকাওয়াথ আহসান

০৬ অক্টোবর, ২০১৮ ২৩:৩০

রাষ্ট্রপতির বক্তৃতায় রাজনৈতিক সংস্কৃতির স্বরূপ সন্ধানের চেষ্টা

শনিবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫১তম সমাবর্তনে আবদুল হামিদ তার বক্তৃতায় বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতির স্বরূপ সন্ধানের চেষ্টা করেছেন। ছাত্র রাজনীতি ও ছাত্র-সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে নেতৃত্ব তৈরির পরীক্ষিত পদ্ধতি বাদ দিয়ে; ব্যবসায়ী-সেনা-আমলাসহ সকল পেশাজীবী মানুষ কোন রকম রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা ছাড়াই রাজনীতিতে ঝাঁপ দিয়ে পড়ায় রাজনীতির ক্ষতি হয়েছে।

রাজনৈতিক সংস্কৃতির জনগণের কাছের মানুষ "জননেতা"-র জায়গায় স্ব স্ব পেশায় শখ মিটিয়ে তারপর নানা পেশার রুই-কাতলাদের, এবার যাই একটু এমপি-মন্ত্রী হয়ে আসি জাতীয় যে খায়েশ; এরফলেই রাজনীতি থেকে জনসেবা ও জননৈকট্যের ধারণা সরে গিয়ে; বিরাট বিরাট স্যারের পদভারে প্রকম্পিত হয়েছে রাজনীতির আইটেম ডান্সের মঞ্চ। এই কর্কশ বাস্তবতাকেই রাষ্ট্রপতি তাঁর সাবলীল ভঙ্গিতে তুলে ধরেছেন।

কনভোকেশান বক্তৃতা মানেই ভ্যাটিকানের পোপ বা গম্ভীর পুরোহিতের মতো সিরিয়াস ভারী ভারী কথার গুমোট মেঘে বাতাস ভারী হয়ে ওঠার গতানুগতিক জায়গা থেকে কার্যকর যোগাযোগের মাধ্যমে দেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতি ও নেতৃত্ব সংকটের বেহাল বাস্তবতা তুলে ধরাটা অত্যন্ত সময়োচিত।

রাষ্ট্রপতি হামিদের যে প্রজ্ঞা তা কয়েকদশকের রাজনীতির অনুশীলিত বাস্তবতা থেকে অর্জিত। ভারী ভারী শব্দের মাঝেই কেবল প্রজ্ঞা থাকে তা তো নয়। এই যে নতুন প্রজন্ম; নানা-প্রযুক্তির প্রলোভনে মনোযোগ কমে আসা যে সময়; সেখানে কার্যকর যোগাযোগ স্থাপন অত্যন্ত দুরূহ কাজ।

রাষ্ট্রপতি হামিদ যেহেতু জননেতা; উনি কোন কৃত্রিম গাম্ভীর্যের মুখোশ না এঁটে; বন্ধুর মতো মিশে গিয়ে চেষ্টা করেছেন "নতুন প্রজন্ম"-এর সামনে দেশের প্রধানতম সংকট "রাজনৈতিক সংস্কৃতির গণবিমুখী মনোভঙ্গি" সম্পর্কে অক্লেশে জানাতে।

কনভোকেশান বক্তৃতায় কী বলা যাবে; কী বলা যাবে না; তা নিয়ে কোন আরোপিত রুচিবোধের আচরণবিধি প্রণয়ন করা ঠিক নয়। সেটা "ধর্মীয় অনুভূতি"র মতো "কনভোকেশানের অনুভূতি" জাতীয় ভীতিপ্রদ হয়ে ওঠে তাতে। বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষাজীবনের শেষদিনে আনন্দময় পরিবেশে রাষ্ট্রপতির বক্তৃতার মাঝ দিয়ে ছাত্র-ছাত্রীরা আসলে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের ক্লাস লেকচার শুনেছে। একে বলা যায় আনন্দময় শিক্ষা। ছাত্রছাত্রীরা মজা পেতে পেতেই বুঝে যায় রাজনীতির গোড়ার কথা। নেতৃত্ব সংকটের কারণগুলো। সেক্ষেত্রে রাষ্ট্রপতি অত্যন্ত সফল যোগাযোগ স্থাপন করেছেন বলে মনে হয়।

আর বলিউড তারকা প্রিয়াংকা চোপড়াকে নিয়ে যে আলোচনাটুকু রাষ্ট্রপতি করেছেন; "ডেড পোয়েটস সোসাইটি" ছবির শিক্ষককে দেখা যায় তার ছাত্র-ছাত্রীদের সামনে ঠিক এমন আলোচনা করতে। বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে আমার খুব প্রিয় একজন পণ্ডিত শিক্ষক দেখা হলে কোনদিন একটু গুছানো সাজ-পোশাকে দেখলেই জিজ্ঞেস করতেন, কী হে আজ কোন ডেট আছে নাকি! এই সাবলীল সম্পর্কের মাঝ দিয়ে প্রজন্ম ব্যবধানকে গুঁড়িয়ে দেবার ক্ষমতা যাদের থাকে; রাষ্ট্রপতি হামিদ তাদের মতো একজন।

এমন শিক্ষকই প্রয়োজন। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান তো কারাগার নয়; এ হচ্ছে আনন্দযজ্ঞ। আনন্দের মাঝ দিয়ে শিক্ষাই অর্থবহ শিক্ষা।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত