ডা. আতিকুজ্জামান ফিলিপ

০২ মে, ২০২০ ১৩:৫০

আর কত চাকরিবিধির ভয় দেখাবেন?

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর- আপনারা হাতপা বেঁধে আমাদেরকে জ্বলন্ত উনুনের মধ্যে ফেলে দেবে আর আমরা মৃত্যু যন্ত্রণায় চিৎকার করে একটু কাঁদতেও পারবো না? এ কেমন অবিচার!

আপনারা রাষ্ট্রের হাজার হাজার কোটি টাকা লুটপাট করে অপর্যাপ্ত আর মানহীন গাউন-মাস্ক-গগলস দিয়ে আমাদেরকে মৃত্যুমুখে ঠেলে দিদেন আর আমরা আপনাদের দুর্নীতি নিয়ে প্রশ্ন তুললেই আমাদের টুটি চেপে ধরবেন, এভাবে আর কতদিন!?

N95 মাস্কের নামে আপনাদের সরবরাহ করা মানহীন মাস্ক নিয়ে প্রশ্ন তুললেই বদলি করবেন, ওএসডি করবেন, শোকজ করবেন, কেন এই অবিচার?

স্বাস্থ্যখাতটা কি মগের মুল্লুক নাকি? স্বাস্থ্যখাতটা কি এই স্বাধীন দেশের ভিতরে আলাদা কোন স্বৈরতন্ত্র?

বিজ্ঞাপন

একজন চিকিৎসক হিসেবে এবং সর্বোপরি স্বাধীন এই দেশটির একজন স্বাধীন নাগরিক হিসেবে স্বাস্থ্যখাতে আপনাদের অন্যায় জুলুমের বিরুদ্ধে আওয়াজ তোলার অধিকার আমার সাংবিধানিক অধিকার। সাংবিধানিক অধিকারই সবার উপরে। চাকরিবিধির কোন অনুচ্ছেদই নিশ্চয় আমার এই সাংবিধানিক অধিকারকে খর্ব করতে পারে না।

আমার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা আমাকে সুরক্ষা দেওয়ার পরিবর্তে অন্যায় জুলুম করে যদি আমাকে উল্টো মৃত্যুমুখে ঠেলে দেয় তাহলেও তার প্রতিবাদ করা যাবে না, এমন শ্লোক চাকরিবিধির কোন অনুচ্ছেদে লেখা আছে?


সুপ্রিয় চিকিৎসক ভাইয়েরা, দুর্বলের কণ্ঠরোধ করে স্বাস্থ্যখাতের মাফিয়াচক্রের ভয়াল থাবা আরও এগিয়ে নেওয়ার সেই পুরোনো খেলা আবার শুরু হয়েছে। এ যেন চিরায়ত এক অসুরীয় খেলা। খুব সূক্ষ্ম ও ধুরন্ধরভাবেই তারা মিডিয়া ও জনগণের দৃষ্টিকে ভিন্নদিকে ঘোরাতে পেরেছে! মানহীন ও অপর্যাপ্ত পিপিই এবং N95 মাস্কের নামে হাজার হাজার কোটি টাকার দুর্নীতি নিয়ে আর কোন আলোচনা সমালোচনা নেই!

আলোচনা-সমালোচনা থেমে গেলেও থেমে নেই ফ্রন্টলাইনার যোদ্ধা চিকিৎসক সহকর্মীদের আক্রান্তের হার! অব্যবস্থাপনা আর অপর্যাপ্ত ও মানহীন পিপিই ও মাস্কের কারণে আজ পর্যন্ত শুধু চিকিৎসকই আক্রান্ত হয়েছেন পাঁচশোরও উপরে। কোয়ারেন্টিনে আছেন আরও পাঁচ শতাধিক। দেশের কয়েকটা হাসপাতালকে ইতিমধ্যেই লকডাউন করতে বাধ্য হয়েছে কর্তৃপক্ষ। যেভাবে আক্রান্তের সংখ্যা ধাই ধাই করে বাড়ছে তাতে করে অন্যান্য স্বাস্থ্যকর্মী মিলে এ আক্রান্তের সংখ্যা কালপরশুই যে হাজার ছুঁয়ে ফেলবে তা প্রায় নিশ্চিত করেই বলা যায়!

এই দু'দিন আগেও তারা রাজশাহীর পবা উপজেলা হেলথ কমপ্লেক্সসহ বেশকিছু হাসপাতালে N95 মাস্কের নামে নকল মাস্ক সরবরাহ করে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে তা N95 মাস্ক হিসেবে গ্রহণ করে স্বাক্ষর করতে বাধ্য করেছে!

বিজ্ঞাপন

কুয়েত-বাংলাদেশ মৈত্রী হাসপাতালের যেসব চিকিৎসকের বিরুদ্ধে কাজে যোগদানে অপারগতার মিথ্যা অভিযোগ এনে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছিলো তাদেরকে আজ পর্যন্ত দুঃখপ্রকাশ করে যোগদানের পুনরাদেশ দেয়নি কর্তৃপক্ষ। গত ২০ এপ্রিল ডিজি অফিসে ঐ চিকিৎসকদের শুনানি হলেও আজ পর্যন্ত কোন পরবর্তী আদেশ তারা হাতে পাননি!

সুপ্রিয় চিকিৎসক ভাইয়েরা, অন্যায়ের বিরুদ্ধে আওয়াজ অব্যাহত রাখুন। আজ যদি ভয় পেয়ে পিছিয়ে এসে তাদের অন্যায়কে প্রশ্রয় দেন তাহলে এই অন্যায়ই খড়গ হয়ে আপনার উপর চেপে বসবে নিশ্চিত থাকুন। করোনা চলে গিয়ে পরিস্থিতি যখন শান্ত হবে তখন আপনার উপর একে একে নেমে আসবে অন্যায় সব অফিস আদেশ যা আমরা এর আগেও ডেঙ্গি পরবর্তী সময়ে দেখেছিলাম।

তাই আসুন, এখনই আমরা সম্মিলিতভাবে আওয়াজ তুলি, স্বাস্থ্যখাতের এই অন্যায় জুলুমের মূলে কুঠারাঘাত করি।

মে দিবসে এটাই হোক আমাদের দৃপ্ত শপথ।

ডা. আতিকুজ্জামান ফিলিপ: সহ তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক, কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটি, স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ (স্বাচিপ); সাবেক সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ, দিনাজপুর মেডিকেল কলেজ।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত