সিলেটটুডে ডেস্ক

০১ অক্টোবর, ২০২৫ ০৯:৫৯

মৃত্যুশয্যায় বীর মুক্তিযোদ্ধা নুরুল মজিদের হাতে হাতকড়া, মানবাধিকার লঙ্ঘন মন্তব্য মানবাধিকারকর্মীর

একাত্তরের বীর মুক্তিযোদ্ধা ও আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূনের দুটি ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। সাংবাদিক জুলকারনাইন সায়েরের ফেসবুকে দেওয়া ছবিতে দেখা যাচ্ছে, তিনি (নূরুল মজিদ) হাতকড়া পরা অবস্থায় হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে রয়েছেন। তাঁর চোখ বন্ধ।

হাসপাতালে মৃত্যুর পরেও তাঁর হাতে হাতকড়া ছিল এমন আলোচনা রয়েছে সামাজিক মাধ্যমে, এনিয়ে সমালোচনা হচ্ছে। তবে কারা কর্তৃপক্ষের দাবি ছবিটি আগের।

মানবাধিকারকর্মী নূর খান বলেন, ‘আমাদের সংবিধানের ৩৫ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, কোনো আসামির সঙ্গে নিষ্ঠুর বা অমানবিক আচরণ করা যায় না। সেখানে একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা নূরুল মজিদ হুমায়ূনের সঙ্গে যেটা ঘটেছে, তাঁর সঙ্গে যে আচরণ করা হয়েছে, সেটি মানবাধিকারের চূড়ান্ত লঙ্ঘন। একজন আসামি, যিনি মৃত্যুশয্যায়, তাঁর হাতেও হাতকড়া পরিয়ে রাখতে হবে?’

ছবিটি কবেকার, জানতে চাইলে কারা অধিদপ্তরের সহকারী মহাপরিদর্শক (গণমাধ্যম ও উন্নয়ন) জান্নাত-উল-ফরহাদ বলেন, গত সেপ্টেম্বরে ছয় দফা নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূনকে হাসপাতালে পাঠানো হয়। ছবিটি এই দিনগুলোর মধ্যে কোনো একটি সময়ে হতে পারে। তিনি বলেন, নিয়ম অনুযায়ী নিরাপত্তার স্বার্থে বন্দিকে চিকিৎসার সময় হাতকড়া পরিয়ে তা বিছানার সঙ্গে বেঁধে রাখতে হয়। অথবা হাতকড়া কোনো কারারক্ষীকে ধরে রাখতে হয়। হাতকড়া খুলে দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই।

অবশ্য পুলিশ প্রবিধানের ৩৩০ নম্বর ধারায় বলা হয়েছে, কোনো ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে বা তদন্তস্থলে পাঠানোর জন্য পুলিশ বন্দিকে পালানো রোধে যা প্রয়োজন, তার চেয়ে বেশি কড়াকড়ি উচিত নয়। হাতকড়া বা দড়ির ব্যবহার প্রায় ক্ষেত্রে অপ্রয়োজনীয় ও অমর্যাদাকর। এতে আরও বলা হয়েছে, বয়স বা দুর্বলতার কারণে যাঁদের নিরাপত্তা রক্ষা করা সহজ ও নিরাপদ, তাঁদের ক্ষেত্রে কড়াকড়ি করা উচিত হবে না।

নূরুল মজিদকে গত বছরের সেপ্টেম্বরে ঢাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। আদালত–সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, তাঁর নামে ঢাকায় চারটি হত্যা মামলা এবং নরসিংদীতে একটি হত্যা মামলা রয়েছে। তিনি কেরানীগঞ্জে অবস্থিত ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দি ছিলেন। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসারত অবস্থায় সোমবার সকালে তিনি মারা যান। তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৫ বছর।

কেরানীগঞ্জ কেন্দ্রীয় কারাগারের জ্যেষ্ঠ কারা তত্ত্বাবধায়ক (সিনিয়র জেল সুপার) সুরাইয়া আক্তার বলেন, নূরুল মজিদের হাতে হাতকড়া পরা যে ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে, সেটি মৃত্যুর আগের।

নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূনের চিকিৎসায় কারা কর্তৃপক্ষ কোনো অবহেলা করেনি দাবি করে সুরাইয়া আক্তার বলেন, প্রায় এক মাস আগে নূরুল মজিদ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছিলেন। পরে তাঁকে বাংলাদেশ মেডিকেল ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হলে তাঁকে আবার কারা হাসপাতলে নিয়ে আসা হয়। তিনি কিছুটা অসুস্থ বোধ করছিলেন। যে কারণে তাঁকে নতুন করে বাংলাদেশ মেডিকেল ইউনিভার্সিটিতে পাঠানো হয়েছিল। তবে আইসিইউতে সিট খালি না থাকায় বাংলাদেশ মেডিকেল ইউনিভার্সিটি তাঁকে ঢাকা মেডিকেলে পাঠানোর সিদ্ধান্ত দেয়।

কারা কর্তৃপক্ষ ও হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূনের হৃদ্‌রোগ, ডায়াবেটিসসহ নানা রোগ ছিল। সর্বশেষ তিনি ডায়ারিয়া ও সে–সংক্রান্ত জটিলতায় আক্রান্ত হয়েছিলেন।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান বলেন, ডায়রিয়া ও ডায়রিয়া জটিলতার জরুরি চিকিৎসার জন্য নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূনকে বাংলাদেশ মেডিকেল ইউনিভার্সিটি থেকে ঢাকা মেডিকেলে রেফার করা হয়। মেডিসিন বিভাগের প্রধান তাঁর চিকিৎসা করেছেন। কর্তৃপক্ষ যথাসময়ে তাঁকে কেবিন দিয়েছে। পরে তাঁকে আইসিইউতে (নিবিড় পরিচর্যাকেন্দ্র) নেওয়া হয়। তিনি বলেন, চিকিৎসায় অবহেলার অভিযোগ সঠিক নয়।

নূরুল মজিদ নরসিংদী-৪ (মনোহরদী-বেলাব) আসনের পাঁচবারের সাবেক সংসদ সদস্য। নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন ৬ দফা আন্দোলন, ৬৯ এর গণঅভ্যুত্থান, স্বাধীনতাযুদ্ধে অংশগ্রহণসহ তৎকালীন সকল রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে সক্রিয় ভূমিকা রাখেন।

নূরুল মজিদের আইনজীবী দিলরুবা কলি বলেন, ‘নূরুল মজিদ হুমায়ূন একজন বয়স্ক ব্যক্তি। কিন্তু তিনি যখন গ্রেপ্তার হয়েছিলেন, তখন সম্পূর্ণ সুস্থ ছিলেন। তাঁর শারীরিক তেমন কোনো জটিলতা ছিল না।’

‘মাস পাঁচেক আগেও তাঁকে নরসিংদীতে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। আমি নিজেই তাঁর সঙ্গে কথা বলেছি। তিনি আমাকে বলেছিলেন, আমি সুস্থ আছি। তোমরা আমাকে নিয়ে চিন্তা কোরো না’, বলেন দিলরুবা।

নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূনের ডেঙ্গু হয়েছিল উল্লেখ করে দিলরুবা বলেন, তাঁর সুচিকিৎসা হয়নি।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত