২১ মে, ২০২০ ০০:২১
চল আরেকবার দাঁড়াই, বুক চিতিয়ে। মাঝবয়সী সুন্দরী বলে উঠে।
ঠিক তার পাশেই সমবয়সী কিন্তু ডালপাতায় আরেকটু উঁচু হবে যে সে এবার বলে ওঠে।
— কিন্তু ছোটদের একটু সামলে রাখতে হবে। আর বয়স্কদের নিয়েই যা চিন্তা।
তরুণ কেওড়া, যার ঘাড়টা একটু বাঁকা ঝড়ো বাতাসে যাকে আরেকটু দাম্ভিক দেখায়, ফোঁস করে।
— আচ্ছা আমরা কেন বারবার নিজেদের ক্ষতি করে মানুষকে বাঁচাতে যাই? ওরা কি এর মূল্য বোঝে? সেই তো আবার আমাদেরই কাটতে চলে আসবে। আমাদের বুকের উপরে কি সব কেন্দ্র-ফেন্দ্র বসাবে।
মুরব্বী গরান হাসে। নিজের লম্বা কাণ্ড দিয়ে খানিকটা নাড়া দেয় কেওড়াকে।
— আমরা কখনও কি পাওয়ার আশা করেছি বল? পূর্বপুরুষদের কথা ভুলে গেলি? বোকা, জানিস না, এটাই আমাদের ধর্ম। মানুষের থেকে কিছু পাওয়ার আশা তো করিনা। বরং ওদেরকে বাঁচানোর চেষ্টা করি, এর চেয়ে বড় আনন্দ আর কী বল? সেটা মানবজাতি বুঝুক আর না বুঝুক, আমাদের দাম দিক আর নাই দিক!
জোয়ান গেওয়া বলে ওঠে— আমার কিন্তু মজাই লাগে। ঝড়ের মুখোমুখি দাঁড়াই। চোখে চোখ রাখি। ওরা যত জোরে আসে আমার শরীরে যেন তত বাড়তি বল পাই। এরকম কত ঝড়-বাতাস এলো গেল!
আরেক বয়সী সুন্দরী স্মৃতিকাতর হয়। সিডরের কথা মনে করে শঙ্কা জেগে বসে মনে। কত সাথীকে হারাল সেবার। কিন্তু মুহূর্তেই শঙ্কা ঝেড়ে ফেলে প্রস্তুত হয় আরেক ঝড় মোকাবেলার জন্য। সামনে একটু ঝুঁকে যেন তৈরি করে নিজেকে, মনে মনে বলে যত শক্তিশালীই হও বাপু তোমায় আগে আমাকে হারাতে হবে।
লম্বা গর্জন মাথা উঁচু করে সামনে চোখ বোলায়। সাগর কতোটা উত্তাল জানিয়ে দেয় সঙ্গীদের। হাঁক ছাড়ে--গোলপাতা, বেত আর হেঁতাল ঝাড়ে ছোঁয়া লেগেছে গো, তৈরি হও সবাই।
বনবিবি ধ্যানে বসেছেন, ব্যাঘ্রদেবতা দক্ষিণ রায় তার সঙ্গীদের নিয়ে চলে গেছেন আরও ভেতরে। ভীত হরিণ ছুটাছুটি থামিয়ে আশ্রয় খুঁজছে। বানরগুলোও হঠাৎ খুব লক্ষ্মী হয়ে উঠেছে!
আর এদিকে হাতে হাত রেখে প্রস্তুত হচ্ছে সুন্দরী, গরান, কেওড়াগুলো। প্রাণিজগতের ক্ষতি কমাতে নিজেদের জীবন দিতেও প্রস্তুত তাঁরা। আফসোস, শুধু মানুষই বোধহয় জীবন নিতে জানে, বাঁচাতে নয়!
ফয়সাল তিতুমীর: সাংবাদিক।
আপনার মন্তব্য