আরিফা আক্তার

৩১ মার্চ, ২০২৩ ১৩:৩৬

হিরো আলমে ভয়, হিরো আলমে আমার ভয় নেই

নাট্যজন মামুনুর রশীদ ও আশরাফুল আলম হোসেন ওরফে হিরো আলম। ছবি: সংগ্রহ

হিরো আলম যে শ্রেণিকে টার্গেট করে তার কর্ম পরিচালনা করে তারা মামুনুর রশীদ আর মঞ্চনাটকের নামও জীবনে শোনে নাই। এদের বিনে-পয়সাতে টিকেট দিলেও এরা মামুনুর রশীদের নাটক দেখতে যাবে না। এবং এটা দেশের একটা বৃহৎ অংশ।

এই বিশাল জনগোষ্ঠীর জীবনে বিনোদনের দরকার নাই?

এই জনগোষ্ঠী অতীতেও এ দেশে ছিলো। তারাও বিনোদন নিতো। তখন গ্রামেগঞ্জে যাত্রাপালা হতো, বাউল গান হতো, মেলা হতো, বেদের দলে সাপ খেলা হতো, ঘোড়দৌড় হতো। রেডিওতে গানের অনুষ্ঠান আর নাটক হতো। শহর বা উপশহরে সিনেমা হল ছিলো, সেখানে বেদের মেয়ে জোছনার মতো ব্লকবাস্টার সিনেমা হতো, পরিবার পরিজন নিয়ে তারা এসব বিনোদনে অংশগ্রহণ করতো।

দেশের পরিবর্তন হয়েছে। সিনেমা হল বন্ধ, সিনেমার নামে যা হয় তা পরিবার নিয়ে দেখা যায় না। সকল বিনোদনের যায়গা দখল করেছে ওয়াজ মাহফিল। ঘরে ঘরে মাদ্রাসা। বিশাল এই জনগোষ্ঠীর স্বতঃস্ফূর্ত বিনোদনের সকল পথ রুদ্ধ।

আপাতদৃষ্টিতে লোকজনকে ধর্মমনা মনে হলেও স্বাভাবিক প্রবৃত্তি হিসেবে গান বাজনা নাটক সিনেমার অভাব রয়েই গেছে। এর মধ্যে এসেছে স্মার্টফোন। সহজলভ্য হিসেবে নিজেদের বোধবুদ্ধির গণ্ডির মধ্য জনগণ বিনোদন খুঁজে নিতে শিখেছে। এরই ধারাবাহিকতায় হিরো আলমের মতো কন্টেন্ট ক্রিয়েটর তৈরি হয়েছে।

আপনারা ভাদ্যাইম্যা নামে কোন ভাঁড়ের নাম শুনেছেন কিনা জানি না। সম্ভবত টাংগাইলের এদিকে তার বাড়ি ছিলো। আমার আশেপাশে ছেলেমেয়ে বুড়ো বাচ্চা সবাই সন্ধ্যা বিকেল বা অবসর সময়ে দলবেঁধে তার ভিডিও দেখতো। তাদের খিলখিলিয়ে হাসিতে আগ্রহী হয়ে দুয়েকবার আমিও দেখেছি। যারপরনাই বিকৃত রুচির সেসব কন্টেন্ট। কিন্তু তুমুল জনপ্রিয় ছিলো।

আমি গিয়ে বললেই সাধারণ মানুষ তাকে অরুচি বলে ফেলে দিতো? আমি কি তাদের রুচি তৈরি করতে তাদের সমমানের আনন্দদায়ক কিছু করতে পেরেছিলাম যে তাদের নিম্নরুচি বলে অবজ্ঞা করবো?

একজীবন ব্যয় করেও মামুনুর রশীদ সার্বজনীন বিনোদনের খোরাক হতে পারেন নাই। এমনকি আধুনিক ছেলেমেয়েদের অল্পসংখ্যকই তার কর্মের সাথে পরিচিত। এখন যদি মনে করেন যে গুটিকয়েক এলিট মানুষই দেশের প্রতিনিধিত্ব করে তাহলে বলার কিছু নাই।

তবে একটা প্রশ্ন থেকেই যায় যে, রুচিহীন বলে যে শ্রেণিকে কটাক্ষ করা হলো তাদের বিনোদিত হতে দেখে আপনাদের গাত্রদাহ কেন? তারা তো ধর্তব্য না। আর যদি ধর্তব্য মনে করেন তবে তাদের আমলে নিয়ে তাদের জন্যও কাজ করেন।

তাদের বিনোদনের পথ কেন রুদ্ধ হলো, কেন ঐতিহ্যবাহী বিনোদনের উৎসব বন্ধ হলো, তার কারণ খোঁজেন, তার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেন। নইলে আপনাদের নাক সিটকানি কেবল ফেসবুকেই বন্দি থাকবে, হিরো আলমকে পরাজিত করার মতো কোন শক্তি সৃষ্টি হবে না।

এগুলো যদি না পারেন, তবে হিরো আলমকে কাজ করতে দিন, সবারই অধিকার আছে কারো ক্ষতি না করে নিজের ইচ্ছে মতো জীবন যাপন করার, অর্থ উপার্জন করার।

আর হ্যাঁ, আমি ব্যক্তিগত ভাবে আমার সন্তানদের রুচি তৈরির জন্য সাধ্য অনুযায়ী চেষ্টা করি, তাই হিরো আলমকে আমার কোন ভয় নাই।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত