সিলেটটুডে ডেস্ক

৩০ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ ১১:১২

আবারও আলোচনায় ইসলামী ব্যাংক

মূল্যায়ন পরীক্ষার নামে চলছে গণছাঁটাই

মূল্যায়ন পরীক্ষার নামে ইসলামী ব্যাংকে নতুন করে ছাঁটাই শুরু হয়েছে। ব্যাংকের নির্ধারিত সময়ে মূল্যায়ন পরীক্ষায় অংশ না নেওয়ায় চাকরিবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগে গত দুই দিনে প্রায় ২০০ কর্মীকে ছাঁটাই করেছে ইসলামী ব্যাংক। পাশাপাশি প্রায় সাড়ে ৫ হাজার কর্মীকে বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওএসডি) করা হয়েছে। শুধু তা-ই নয়, গতকাল সোমবার নতুন করে অফিসার পদে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে ব্যাংকটি।

জানা গেছে, গত বছরের ৫ আগস্ট সরকার পরিবর্তনের পর থেকেই ব্যাংকটিতে আবারও জামায়াতের পুনর্বাসন করতে চলছে গণছাঁটাই। সেই চলমান কর্মসূচির অংশ হিসেবেই এবারও ছাঁটাই করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন ভুক্তভোগীরা। তারা বলেন, দক্ষতা মূল্যায়নের নামে কর্মী ছাঁটাইয়ের উদ্দেশ্যে পরীক্ষা নিতে গত মাসের ২২ তারিখে ইসলামী ব্যাংক একটি সার্কুলার জারি করেছিল। বিষয়টি চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট করা হলে আদালত রুল জারি করেন।

এতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ ব্যাংক যেন বিষয়টি দ্রুত নিষ্পত্তি করে। পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট ব্যাংককে দক্ষতা মূল্যায়ন বা নিয়োগ পরীক্ষা বাদ দিয়ে পদোন্নতি দেওয়ার সুপারিশ করেন আদালত। আদালতের এই নির্দেশনা অমান্য করে ইসলামী ব্যাংক চলতি সেপ্টেম্বর মাসের ২২ তারিখে আবারও একটি সার্কুলার জারি করে। যেখানে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমতিক্রমে কর্মীদের দক্ষতা মূল্যায়নে পরীক্ষার তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে ২৭ সেপ্টেম্বর (গত শনিবার)। প্রায় সাড়ে ৫ হাজার কর্মী এই পরীক্ষায় অংশগ্রহণের কথা ছিল। কিন্তু ২৬ সেপ্টেম্বর আদালতের প্রতি সম্মান জানিয়ে সব কর্মী সম্মিলিতভাবে রাজধানী ঢাকা ও চট্টগ্রামে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে পরীক্ষা বয়কটের ঘোষণা দেন। পরে ওই সব কর্মী গত রোববার যথাসময়ে অফিসে গেলে তারা তাদের নির্ধারিত কম্পিউটারে লগইন করতে পারেননি। ফলে তারা কোনো ধরনের কাজও করতে পারেননি।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে ইসলামী ব্যাংকের একজন ওএসডি কর্মকর্তা বলেন, ‘ইসলামী ব্যাংক আদালতের নির্দেশ অমান্য করে নতুন করে পরীক্ষা নিতে তারিখ ঘোষণা করে। আমরা আদালতের প্রতি সম্মান জানিয়ে সম্মিলিতভাবে এই পরীক্ষা বয়কট করি। এরপর থেকে এখন পর্যন্ত আমরা ওএসডি হয়ে আছি। ব্যাংক কর্তৃপক্ষ আমাদের এখন পর্যন্ত অফিশিয়ালি কিছুই জানায়নি। তবে জানতে পেরেছি গত দুই দিনে প্রায় ২০০ কর্মকর্তাকে চাকরি থেকে অব্যাহতির নোটিশ দেওয়া হয়েছে। আগামীতে এই সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছি। বিষয়টিকে ঘিরে প্রায় সাড়ে ৫ হাজার কর্মীর মধ্যে অজানা আতঙ্ক কাজ করছে। কখন আমার চিঠি চলে আসে।’ তিনি আরও বলেন, একদিকে ছাঁটাই করছে অন্যদিকে গতকাল ব্যাংক কর্তৃপক্ষ নতুন করে অফিসার পদে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে। এই অবস্থায় আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী বাংলাদেশ ব্যাংককে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার জোর দাবি জানান তিনি।

এই বিষয়ে ইসলামী ব্যাংকের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, ‘আমাদের ব্যাংকের মোট ২২ হাজার কর্মীর মধ্যে এখন অর্ধেকই চট্টগ্রামের লোক। কিন্তু ২০১৭ সালে এই ব্যাংকের কর্মী সংখ্যা ছিল ১০ হাজারের মতো। এরপর থেকে অযোগ্য লোক নিয়োগের মাধ্যমে ব্যাংকটিকে ধ্বংস করা হয়েছে। এখন আমরা ব্যাংকের স্বার্থেই যোগ্যতা মূল্যায়ন পরীক্ষার ব্যবস্থা করেছি। এই পরীক্ষায় যারা অংশ নেননি তাদের ওএসডি এবং যারা চাকরি বিধিমালা অমান্য করে ব্যাংকের গৃহীত পদক্ষেপকে গালিগালাজ করেছেন বা মিথ্যা তথ্য ছড়াচ্ছেন তাদের টারমিনেট (চাকরিচ্যুত) করা হয়েছে।’

ইসলামী ব্যাংকের লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, কর্মকর্তাদের যোগ্যতা যাচাইয়ে বিশেষ পরীক্ষা গ্রহণের উদ্যোগ নেওয়ার পর কয়েকজন কর্মকর্তা হাইকোর্টে রিট করেছিলেন। হাইকোর্ট বাংলাদেশ ব্যাংককে বিষয়টি নিষ্পত্তির নির্দেশ দেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যাংকিং প্রবিধি ও নীতি বিভাগ বিষয়টি নিষ্পত্তি করে উভয় পক্ষকে অবহিত করে, যার ভিত্তিতে শনিবার পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়।

বাংলাদেশ ব্যাংকের চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, ইসলামী ব্যাংক একটি বেসরকারি মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান। তাই এর কর্মকর্তা-কর্মচারীদের চাকরি, কর্মদক্ষতা ও নিয়োগসংক্রান্ত সিদ্ধান্ত ব্যাংকের নিজস্ব এখতিয়ারভুক্ত, তবে তা দেশের প্রচলিত আইন ও বিধিবিধানের মধ্যে থাকতে হবে।

অন্যদিকে পরীক্ষা বর্জনকারী কর্মকর্তা মোহাম্মদ ইস্কান্দার সুজন, এস এম এমদাদ হোসাইন, মোহাম্মদ ইকবাল, দিলরুবা আক্তার, শারমিন আক্তার ও নাসরিন জান্নাত অভিযোগ করেছেন, এক মাস আগে তাদের রিটের পর হাইকোর্ট পরীক্ষা প্রক্রিয়া স্থগিত করে নিয়মিত পদোন্নতির পরীক্ষা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন। বাংলাদেশ ব্যাংককে যথাযথ ব্যবস্থা নিতেও আদালত বলেছিলেন। কিন্তু সেই আদেশ উপেক্ষা করে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ পুনরায় পরীক্ষার আয়োজন করেছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান বলেন, ‘ইসলামী ব্যাংককে দুবার কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে। কারণ তারা কেন পরীক্ষা ছাড়া কর্মী নিয়োগ দিয়েছিল। আবার কেনইবা ছাঁটাই করার জন্য পরীক্ষা নিচ্ছে। যেহেতু আদালত বাংলাদেশ ব্যাংকের ওপর দায়িত্ব ন্যস্ত করেছেন, তাই আমরা বলেছি যদি ব্যাংকের নীতিমালার মধ্যে পরীক্ষা নেওয়ার সুযোগ থাকে, তাহলে ব্যাংক পরীক্ষা নিতে পারবে। এখানে আদালত ও বাংলাদেশ ব্যাংকের যৌথ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন হয়েছে।’

এদিকে ইসলামী ব্যাংকের এমন অযৌক্তিক সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে সোমবার (২৯ সেপ্টেম্বর) চট্টগ্রামে বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। সেখানে বিএনপি, এনসিপি এবং জাতীয় গণতান্ত্রিক পরিষদের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত