অমিত দেব

২৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ ২০:০০

অশুভ শক্তি বিনাশে দেবী দুর্গার আগমন

দুর্গা নামের অর্থই হলো দুর্গম, অজেয় ও অপ্রতিরোধ্য।
সনাতন ধর্মাবলম্বীদের কাছে দুর্গাদেবী অশুভ শক্তি বিনাশী দেবী। দেবী দুর্গার আগমনে সকল অবিচার অনাচার অশুভ শক্তির বিনাশ হয়। দুর্গতিনাশ সংকট  উত্তোরন ও শুভ শক্তির জয় হয়।

সনাতন ধর্মাবলম্বীরা বিশ্বাস করে দুষ্টের দমন ও সৃষ্টির পালন করার জন্য দেবী দুর্গার আগমন।

সনাতন ধর্মীয় ইতিবৃত্ত মতে, যখন ধর্ম ও অর্ধমের মধ্যে সংকট উৎপন্ন হয় তখনি পরমা প্রকৃতি দেবী দুর্গা রূপ ধারণ করে অর্ধমের নাশ করে ধর্ম প্রতিষ্ঠা করেন।পুরাকালে মহিষাসুর নামে এক অসুর স্বর্গ,মত্য পাতালে অন্যায় অত্যাচার শুরু করলে সমস্ত দেবতাদের সন্মিলিত শক্তিতে দেবী দুর্গার সৃষ্টি হয়।

মহিষাসুর ব্রহ্মার কাছ থেকে বর পেয়েছিলো যে, কোনো পুরুষ শক্তি তাকে বধ করতে পারবে না। সেই বরকে অতিক্রম করতে দেবতারা একত্রিত হয়ে দেবী দুর্গার সৃষ্টি করেন।  যার ফলে দেবীদুর্গার হাতে বধ হন অসুর। সেই থেকে দেবী দুর্গা অসুর নিধন ও বিশ্ব ব্রমান্ডকে বিপদ থেকে রক্ষা করার জন্য এক অসাধারণ প্রতীক হয়ে উঠেন।

সনাতন ধর্মের মার্কণ্ডেয় পুরাণে উল্লেখ পাওয়া যায়, পশ্চিমবাংলার রাজা সুরথ ৫৫০ সাল নাগাদ যুদ্ধে নিজের সাম্রাজ্য হারানোর পরে মেধাস মুনির নির্দেশে দেবী মহিষাসুরমর্দিনীর পূজা করেছিলেন। এই পূজার ফলস্বরূপ দেবীর আশীর্বাদে তিনি আবার তাঁর সাম্রাজ্য ফিরে পেয়েছিলেন। এছাড়াও বিভিন্ন নথিপত্রে পশ্চিমবাংলার নদীয়া জেলার তাহেরপুরের জমিদার কংসনারায়ণ অথবা মুর্শিদাবাদের ভবানন্দ মজুমদারের মধ্যেই কেউ প্রথম দুর্গাপূজার সূচনা করেছিলেন বলে তথ্য পাওয়া যায়।

 দুর্গাপূজা শুরু নিয়ে  আরও বিভিন্ন তথ্য পাওয়া গেলেও এটা ঠিক যে, সেই সময় রাজবাড়িগুলোতে রাজারা ব্যক্তিগতভাবে আড়ম্বরপূর্ণ দুর্গা পূজা করতেন। এসব পুজো দেখার সুযোগ ছিল না সাধারণ মানুষের। ১৭৮৯ সালে পশ্চিমবাংলার গুপ্তিপাড়ার এক রাজবাড়িতে পুজো দেখতে গিয়ে একজন ধনাঢ্য গৃহস্থসহ কয়েকজন মনোক্ষুণ্ণ হয়ে ফিরেন। পরে তাঁরা বারো জন বন্ধু  মিলে চাঁদা তুলে দুর্গা পূজো শুরু  করেন। সেই থেকে দুর্গাপূজা বারোয়ারি বা বারোইয়ারি পূজা নামে পরিচিতি  এবং ক্রমেই তা সর্বজনীন পূজায় রূপ নেয়।

মহালয়া থেকে শুরু করে বিল্বষষ্ঠী, মহাসপ্তমী, মহাঅষ্টমী, মহানবমী ও বিজয়া দশমীর মাধ্যমে এ পূজা শেষ হয়। পূজা মন্ডপগুলোতে চন্ডিপাঠ থেকে শুরু করে ঢাকডোল মৃদঙ্গ, শঙ্খের সুমধুর সূর ধূপের সুগন্ধে ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্য সংস্কৃতিতে দেবীর আরাধনা সনাতন ধর্মাবলম্বীদের প্রধান ধর্মীয় উৎসবের স্বীকৃতি পায়। এবার জগন্নাথপুর উপজেলায় ৩৭টি পূজা মন্ডপসহ সারাদেশে ৩৩ হাজার ৩৫৫ মণ্ডপে শারদীয় দুর্গা উৎসব হচ্ছে।

যুগের সাথে তাল মিলিয়ে এসব পূজোমন্ডপে ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যের পাশাপাশি এসেছে আধুনিকতার ছোঁয়া। যার রঙে রাঙানো হচ্ছে পূজামন্ডপগুলো। জগন্নাথপুরের কয়েকটি মন্ডপে আলোকসজ্জা সহ নান্দনিকতা দৃষ্টি কাড়ছে পুন্যার্থীদের। এসব মন্ডপে রয়েছেগান, নৃত্য, নাটক পালাগানের আসরসহ নানা সাংস্কৃতিক আয়োজন। সনাতনী কৃষ্টি সংস্কৃতি ধর্মীয় ভাবধারা অক্ষুন্ন রেখে প্রতিটি মন্ডপে হোক মায়ের পূজা। পূজা এলেই সনাতন ধর্মাবলম্বীদের মনে উৎসবের পাশাপাশি দেখা দেয় শঙ্কা ও উৎকন্ঠা। অসুর শক্তি মেতে উঠে প্রতিমা ভাংচুর সহ নানা উন্মাদনায়। ইতিমধ্যে বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের তথ্য মতে দেশের ৯ টি মন্ডপে অসুররা প্রতিমা ভাংচুর ও নানা উন্মাদনা শুরু করেছে।

শাস্ত্রীয় পঞ্জিকা মতে, এবার কৈলাস থেকে গজে বা হাতিতে চড়ে মর্ত্যে আসবেন দেবী দুর্গা। আর বিজয়া দশমীতে মর্ত্য ছেড়ে কৈলাসে ফিরবেন পালকিতে বা দোলায় চড়ে।

দেবী হাতিতে আসার ফল হিসেবে পৃথিবী শস্য-শ্যামলা হবে এবং দেশে শান্তি ও সমৃদ্ধি ফিরে আসবে। আর দেবী যখন পালকিতে করে বিদায় নেবেন, তখন ফল-‘দোলায়াং মকরং ভবেৎ’ অর্থাৎ মহামারী, ভূমিকম্প, খরা, যুদ্ধ ও অতিমৃত্যুর মতো দুর্যোগের আগমন ঘটবে।

সর্বশেষ বলতে চাই দুর্গাপূজা আমাদের মন জগতকে স্মরণ করিয়ে দেয় অশুভ অসুর শক্তি যতই শক্তিশালী হোক দুর্গতিনাশিনীর কৃপায় শুভ শক্তির জয় নিরন্তর। পরিবার,সমাজ ও রাষ্ট্রীয় জীবনে সকল অমঙ্গল দূর হোক শুভ শক্তির জয় হোক।
সবাইকে শারদীয় শুভেচ্ছা।

লেখক -অমিত দেব,সাংবাদিক ও সদস্য উপজেলা পূজা উদযাপন পরিষদ জগন্নাথপুর সুনামগঞ্জ।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত