
প্রকাশিত: ২০২৫-০৫-১৮ ১৩:১২:৩৪
নিরঞ্জন দে:
দীর্ঘ কথা শোনার এবং দীর্ঘ লেখা পড়ার ধৈর্য এখন অনেকের নেই। রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে বা তাঁর সৃষ্টি নিয়ে লেখা আমার উদ্দেশ্য নয়। যথাসাধ্য এ কাজটি আমি করছি এবং যথাসময়ে তা প্রকাশও হবে আশা রাখি। রবীন্দ্রনাথ ও নজরুলকে নিয়ে টানাটানি আমাদের দেশে নতুন কিছু নয়। লালনশাঁইজীকে নিয়েও একই কর্ম চলছে। সমস্যাটা আমাদের ছিল এবং থাকবে।
রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে আমাদের প্রেম, ভালোবাসা, শ্রদ্ধা, আসক্তি, মোহ, ঘোর, পাণ্ডিত্য, গবেষণা, ভ্রম, বিলাস, বিরোধ, বিদ্বেষ, মিথ্যাচার, তথ্যের বাগাড়ম্বর, কি নেই! এক দল তাঁকে দেবতা বানাতে ব্যস্ত, তো আরেকদল তাঁকে টেনে কতটা নিচে নামানো যায় তাতেই প্রাণপণে মত্ত। আবার, আরেকদল তাদের নিজ নিজ মত ও পথের সাথে এবং চিন্তা-চেতনার সাথে যতটুকু যায় ততটাই তাঁকে ব্যবহার করার কাজে লিপ্ত। প্রকৃতপক্ষে রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে আমরা সবাই ব্যস্ত। "তোমার কথা হেথা কেহতো বলে না করে শুধু মিছে কোলাহল।" তাঁকে গ্রহণ, বর্জন, উপেক্ষা, আলিঙ্গন, বিশ্লেষণ, বাণিজ্যিকীকরণ যা-ই করেন না কেন তিনি সার্থক। তিনি আছেন এবং আপনাকে আমাকে ব্যস্ত রেখেছেন মহাপ্রস্থানের এতো বছর পরেও।
রবীন্দ্রনাথ একটি পক্ষ। কারো কাছে শুক্লপক্ষ, কারো কাছে কৃষ্ণপক্ষ, কারো কাছে আত্মপক্ষ, কারো বহির্পক্ষ, কারো বিপক্ষ। অর্থাৎ রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে আমরা পক্ষমুক্ত নই, নিরপেক্ষ নই। আমাদের চায়ের ধোয়ায় তিনি আজও প্রাসঙ্গিক। সকল আলোচনা সমালোচনার সূত্রধরে বলা যায় তাঁকে দেখা যেন নিজেকেই দেখা। নিজের প্রতিবিম্ব দেখা। না দেখেও উপায় নেই।
রবীন্দ্রনাথের প্রধান পরিচয় তিনি একজন কবি ও গীতিকার। তাঁর কবিতা ও গান বাঙালির নিত্যদিনের সঙ্গী। এর বহুমুখী ব্যবহারেও বাঙালি পারঙ্গম। সরকারি পুকুরের মতো। যে যার নানা প্রয়োজনে ইচ্ছেমতো জল তুলে নিচ্ছে আর কাজে লাগাচ্ছে। তবে তফাৎ হচ্ছে, পুকুরে কেউ কেউ দেবতার পূজা - নির্মাল্য ফেলে, প্রতিমা বা বিগ্রহ ফেলে, আবার কেউ কেউ ময়লা আবর্জনাও ফেলে যায়। নানা দ্রব্য মিশে জলের শুদ্ধতা নষ্ট হয়। রবীন্দ্রনাথের শুদ্ধতা নষ্ট হয় না। তাঁর সৃষ্টিতে অসঙ্গতিপূর্ণ কিছু মেশানো কঠিন। যা তাঁর নয় তা মেশে না। মেশালেও টিকে না। আসলটাই মানুষ গ্রহণ করে, মনে রাখে। যেন পুরাতন নূতন হয়েই দেখা দেয় প্রতিদিন। যেন সকল সময়ের ; সেকালের এবং একালের। পুরাতন হয় না, জং ধরে না, সেকেলে হয় না। এ এক বিস্ময়! সকলের কাজে লাগে।
এক দাগী অপরাধী যেমন তার নববর্ষের শুভেচ্ছায় রবীন্দ্রনাথের কবিতা ধার করে নিয়ে লিখেছিল,
"বন্ধু হও, শত্রু হও, যেখানে যে কেহ রও,
ক্ষমা করো আজিকার মতো
পুরাতন বরষের সাথে
পুরাতন অপরাধ যত।"
এ হচ্ছেন তার প্রয়োজনের রবীন্দ্রনাথ। আবার, যার কাছে যেমন আচরণ পেয়েছেন সময় এবং অবস্থার পরিবর্তনে তাকে ঠিক সেটাই ফেরত দিয়ে একজন লিখেছিলেন,
"তোমারে যা দিয়েছিনু সে তোমারই দান,
গ্রহণ করেছ যত ঋণী তত করেছ আমায়।"
মানে, তুমি যা দিয়েছ তা-ই তোমাকে দিলাম। তোমার কাছে যেমন আচরণ পেয়েছি সেটাই ফেরত দিয়েছি। এ যেন নানা জনের নানা রবীন্দ্রনাথ, কতো রবীন্দ্রনাথ! সমস্ত জীবন জুড়ে তিনি কী বলতে চেয়েছেন তার কতোটা আমরা বুঝলাম? কী বুঝলাম? ছোটবেলায় আমার মা আমাকে বলতেন, "কৃষ্ণ কেমন? যার মনে যেমন"। কবিও ঠিক তাই, যে যেমন বুঝে। যার যেমন প্রয়োজন। আমাদের মনের মুকুরে দেখা যায় নানা রবি। হায় রবীন্দ্রনাথ! তোমাকে ছাড়তে পারি না, ধরতেও পারি না ঠিকঠাক। জয় তব বিচিত্র আনন্দ! তাই সরল সাধারণ বাঙালির কাছে তুমি দীঘির জল হয়ে আছো। ইচ্ছে হলেই তাদের মন সেখানে ডুব দেয়, সাঁতার কাটে। যে যতটা জলে নামতে পারে ততটাই নামে। সাঁতার না জানা বাঙালি মগে জল তুলে গায়ে ঢালে। আর বুদ্ধিজীবী বাঙালির কাছে তুমি ফিল্টার থেকে নেয়া জল। নানা পাত্রে রাখে সে তার সুবিধে মতো। আবার সে জল নিয়ে তার বিস্তর গবেষণা। জলে তার বুদ্ধির রঙ মিশিয়ে সে কতো কলা কৌশলে তা পরিবেশন করে সাধারণের উদ্দেশ্যে। সাধারণরা সব শুনে কিন্তু সব মনে নেয় না। মনে নেয় তাদেরটুকুই যাদের বুদ্ধির রঙটাও জলের মতোই স্বচ্ছ, আবিলতায় পূর্ণ নয়। হায় রবীন্দ্রনাথ! তোমার ভাষা বুঝার আশা দিয়েছি জলাঞ্জলি। তোমায় যেটুকু বুঝি তাই নিয়ে যেন মনে মনে রচি মম ফাল্গুনী। শৈবাল তো আশৈশব দীঘিরে উচ্চ কথা শোনাবেই।
রবীন্দ্রনাথ হচ্ছেন বিশ্বকবি। কেন বিশ্বকবি! কবি নাকি সত্যদ্রষ্টা হন। সত্যদ্রষ্টা কবি যা লেখেন সেটাই দর্শন। বিশ্বকবি বিশ্বের কোন সত্যটা দেখেছিলেন? কী তাঁর স্বরূপ? বিশ্বজনের পায়ের তলে ধূলিময় যে ভূমি সেখানে নানা জাতি, নানা ভাষা ও সংস্কৃতির বিচিত্র মানুষের সভ্যতার পদচিহ্ন দেখেছেন তিনি। তাদের চিত্তের বৈভবকে স্পর্শ করেছেন। আবার সংকটের আভাসও পেয়েছেন। বিরুদ্ধতার মুখোমুখি হয়েছেন, আজও হচ্ছেন। নন্দিত হয়েছেন, আজও হচ্ছেন বিপুল উৎসাহে।
আমার সৌভাগ্য, যে পরিবারে জন্মেছি, সেখানে ছোটবেলায় প্রায় প্রতি সন্ধ্যায় সন্ধ্যারতির পরপরই বোনদের কণ্ঠে হারমোনিয়াম সহযোগে যে গান শুনতাম তা রবীন্দ্রসংগীত। পঁচিশে বৈশাখ সকালবেলা ঘুম থেকে উঠেই চোখ কচলে কচলে দেখতাম এই দাড়িওয়ালা লোকটির বড় ছবি ফুল ও মালা দিয়ে সাজিয়ে ঘরের কোনে টেবিলে রাখা হয়েছে। তখন পঁচিশে বৈশাখ কী বুঝতাম না। পরে বড় হয়ে বুঝেছি। কবি বন্দনার এ দৃশ্যটি তখন পাড়ার অন্যান্য বাসায়ও দেখেছি। বাজারে তখন ফুল পণ্য হিসেবে আসেনি। টাকা দিয়ে ফুল কিনতে হবে সেটা ভাবনাতেও আসতো না। খুব সকালে উঠে বোনরা ফুল তুলে আনতেন। নিজ হাতে মালা গেঁথে ছবিতে পরানো হতো। সেই সকালে ধূপকাঠির ধোয়ার ওপারে দেখা রবিঠাকুরকে একবার প্রণাম করে নিতাম। সেই থেকেই ধীরে ধীরে আমার বেড়ে ওঠার সাথে সাথে আমার কাছে রবীন্দ্রনাথও বেড়ে ওঠেন। মানুষ রবীন্দ্রনাথ হয়ে যান মহামানব, দেবোপম, কবি দেবতা! আবার তিনি সাধারণ হয়ে সবার পিছে, সবার নিচে, সব-হারাদের মাঝে ধরা দেন বার বার।
দু'জন দেবতা সনাতনী বাঙালির কাছে খুব কমন- রবিঠাকুর আর শনিঠাকুর। একজন উঠোনে শনিবারে সন্ধ্যায় তুলসীতলায় পূজো পান। আর আরেকজন থাকেন বিছানায়, পড়ার টেবিলে, বাথরুমে, রান্নাঘরে, রাস্তায়, ক্ষেতের আলে, পুকুরঘাটে, অফিস-আদালতে, ব্যবসায়, সবখানে। তিনি সে অর্থেই দেবতা যে অর্থে এ বিশ্বপ্রকৃতির সকল জীব, জড়, সকল প্রকাশমান সত্তা দেবতা হয়ে ওঠে। কবি তাই কারো প্রিয়, কারো দেবতা। তবে তাকে নিয়ে আমার হিংসেও হয়। জড়ায়ে আছে বাধা ছাড়ায়ে যেতে চাই কিন্তু পুঁথির বিদ্যায় সেটা কোলায় না। এখনো তাই রবীন্দ্রনাথ অনেকের জীবন জুড়ে এবং জীবন শেষের শেষ আয়োজনেও থাকেন জড়িয়ে।
আমাদের প্রয়োজনের রবীন্দ্রনাথ কঠিন বাস্তব সত্যের মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দেন আমাদের। প্রয়োজনটুকুই মুখ্য। প্রয়োজনেই তাঁকে জানতে হয়। নানা উপায়ে মুখস্থ বিদ্যায় যেটুকু হয় তাতে দীর্ঘ ভাষণ দেয়া যায়। গবেষকও হওয়া যায় হয়তো। উক্তির পর উক্তি, সন তারিখ, নানা তথ্য দিয়ে আসল রবীন্দ্রনাথকে ছোঁয়া যায় কি? অনেকেই বলেন বাঙালির সকল অনুভূতিকে স্পর্শ করেছেন রবীন্দ্রনাথ। যিনি বলেন, তাকে কতোটা স্পর্শ করতে পেরেছেন? সেটা তিনি নিজেও হয়তো টের পাননি কখনো। মগ্নতায়, অনুভবে সেটা বুঝে নিতে হয়। এটা ব্যাকরণ নয়। রবীন্দ্রনাথ যদি অমৃতকুম্ভ বা সুধার কলস হন তাহলে রবীন্দ্র গবেষকের কাজ সমুদ্র মন্থন করে তুলে আনা সেই অমৃত সহজ করে সকলের কাছে পরিবেশন করা। তবে, বাসুকির কথাও মাথায় রাখতে হবে। যেন অমৃত লাভের আগেই বিঘ্ন না ঘটে। অমৃত পরিবেশনের মাধ্যম বা উপায়টা যেন কঠিন না হয়, শুষ্ক না হয়, রসহীন না হয়।
সাদাকালো টেলিভিশনের যুগে মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে শুনেছিলাম বাংলাদেশ টেলিভিশনের মুক্তধারা অনুষ্ঠানে মুস্তাফা নূরউল ইসলাম স্যারের রবীন্দ্রভাবনা। সামনাসামনি বসে শুনেছিলাম ওয়াহিদুল হক এবং সনজীদা খাতুনের দীর্ঘ ভাষণ। রাজনীতিবিদ কমরেড বরুণ রায়ের ভাষণে শুনেছিলাম তাঁর রবীন্দ্রনাথের কথা। এরকম বহু রবীন্দ্রনাথ বহুজনের ভাষ্যে শুনেছি। মনে গেঁথে আছে আজো। আবার তার নিজ জীবনে মনে না নেয়া রবীন্দ্র চেতনার বিরোধী ভেখধারী শিক্ষকের মুখেও শুনেছি কতো রবীন্দ্রনাথ! শুনেছি গবেষকের প্রাণহীন সমীক্ষা। হাল আমলে রবীন্দ্র গবেষণায় অনেক বৈচিত্র্য যোগ হয়েছে। এখন রবীন্দ্রনাথ অনেক ক্ষেত্রে একটি আইটেম! দারুণ একটি ব্রান্ড! গবেষণার বিষয় এখন হতে পারে নিম্নরূপ:
জমিদার রবীন্দ্রনাথের খুঁটিনাটি,
রবীন্দ্রনাথ হিন্দু ছিলেন না ব্রাহ্ম ছিলেন,
রবীন্দ্রনাথের পিতামহের কি কি ভালো মন্দ ব্যবসা ছিল,
ঠাকুররা কিভাবে ঠাকুর হলেন।
রবীন্দ্রনাথ খাঁটি ব্রাহ্মণ নন, পিরালী ব্রাহ্মণ।
দ্বারকানাথ কতোটা ব্রিটিশ ভক্ত ছিলেন,
ঠাকুরবাড়ির মহিলাদের চরিত্র,
ঠাকুরবাড়ির পোশাকপরিচ্ছদ,
ঠাকুরবাড়ির রান্নাবান্না,
ঠাকুরবাড়ির রোগবালাই,
ঠাকুরবাড়ির অন্ধকার,
ঠাকুর বাড়ির পোকামাকড়,
ঠাকুরবাড়ির চাকরবাকর ও বাবুর্চি,
রবীন্দ্রনাথের ভিন্নধর্মীয় আত্মীয়স্বজন,
মুসলমানের জন্য রবীন্দ্রনাথ,
গোঁড়া হিন্দুদের চোখে রবীন্দ্রনাথ,
রবীন্দ্রনাথের দাড়ি রহস্য,
রবীন্দ্রনাথের জোব্বা রহস্য,
গড়ের মাঠের রবীন্দ্রনাথ,
বিদেশে কোথায় রবীন্দ্রনাথের নামে রাস্তা আছে,
কার বাড়িতে কবে থাকলেন,
কি কি খেলেন,
কার কাছে টাকা ঋণ করেছিলেন,
কার সাথে কেমন আচরণ করেছিলেন...
কতো বিচিত্র বিষয়! কতো রবীন্দ্রনাথ! আরও আছে! তথ্য আর পরিসংখ্যান! কোথায় কতোটা কবিতা, কতোটা গান। কোথায় তাঁর কি চুরি হয়ে গেলো! হায় রবীন্দ্রনাথ! এতোসব হুলুস্থূলে শেষ পর্যন্ত তোমার নোবেল পদকটিও রাতের বেলা উধাও হয়ে গবেষণার বিষয়ে পরিণত হলো। আজও লাপাত্তা!
যে তোমার গান শুনে না, কবিতা পড়ে না, নাটক বুঝে না, তোমার বাণীর প্রসন্ন ধারায় যে নাইতে জানে না সে তোমাকে নিয়ে শব্দের ব্যায়াম করে। গুণ গুণ করেও তার মনে গান বাজে না, সুর জাগে না, তার ভাবনার ফুল পল্লবে উতলা হাওয়ায় দোল দেয় না তোমার বাণীর উপমা - রূপক। শেফালী বনের মনের কামনা বুঝে না সে। ফুলের গোপন পরাণে নীরব সুরে যে বাঁশি বাজে এ খবর সে রাখেই না। হায়! আজ সেও তোমাকে মেলে ধরতে চায়! আবার, যার কণ্ঠে তোমার গান ও কবিতা তার অন্তরে তুমি নেই। তার বিশ্বাসে তুমি নেই, জীবনে নেই, তার আচরণে নেই তোমার ছোঁয়া। কত অজানারে জানাইলে তুমি কবি! তুমি গুরু বটে! তুমি সার্থক! তুমি ধন্য ধন্য হে!
কবিগুরু! তোমার গানই বাঙালির শৈশবের আধো আধো বোল, কৈশোরের প্রার্থনা, যৌবনে প্রেম নিবেদনের নির্ভর অবলম্বন, মধ্যবয়সের জীবনবোধ, বার্ধক্যের নিরুত্তর জিজ্ঞাসা। গানেই রবীন্দ্রনাথের আসল পরিচয়। এটা তাঁরই কথা। তিনি নিজেই বলেছেন, বাঙালি তাঁর গান মনে রাখবে এবং গাইবে। তাই শুষ্ক, তথ্যময়, রসহীন পরিসংখ্যান শুনে কি রবীন্দ্রনাথের দেখা পাওয়া যায়? কোন রবীন্দ্রনাথ? তাঁকে জীবনে জড়াতে পারি? না জীবিকায় নিতে পারি? প্রয়োজনটা কোথায়? উচ্চমার্গের রবীন্দ্রনাথ?
না, অচ্ছুতের রবীন্দ্রনাথ? সকলের রবীন্দ্রনাথ? যিনি আমাদের আকাশটা গানে গানে ভরে দিয়েছেন। যিনি গানের ভিতর দিয়ে ভুবনকে দেখেছেন। যিনি একাকী মহাবিশ্বে মহাকাশে ভ্রমণ করে মুগ্ধ ও বিস্মিত হয়েছেন। আবার কচি ঘাসের বুকে শিশিরের হাসিও দেখেছেন। জেনেছেন ক্ষুদ্র জোনাকির আলোর সাথে জগতের সকল আলোর মিতালীর কথা।
আমরা কোন রবীন্দ্রনাথ চাই? নানা রবীন্দ্রনাথের পসরায়? নাকি পুরোটাই বাদ দিতে চাই? তাতে ক্ষতিটা কার? বাদ দেয়া যায়? চাইলেই তো বাদ দেয়া যায়। মনে রাখতে হবে বিশ্বের নানা দেশে নানা জাতির কাছে যিনি আজও উন্মোচিত হয়ে চলেছেন, আজও প্রাসঙ্গিক। তিনি আছেন আমাদের সম্মেলক যাত্রায় - প্রেমে, শ্রদ্ধায়, বিরুদ্ধতায়, স্থিরতায়, অস্থিরতায়। আমরা আমাদের মতো করেই তাঁকে রোজ জানি। কখনো আধখানা, কখনো একটু বেশি। তাঁকে নিয়ে কিছু লিখিনি এখানে। তাঁকে নিয়ে বলতে বা লিখতে গেলে সেটা দীর্ঘ হবে। সেটা হৃদয় থেকে উৎসারিত হবে। হৃদয়ের কথা বলতে ব্যাকুল হলেও বলা যায় না। ভাবনার ইতি টানতেই হয়। এটুকুই আজ থাক। তাঁকে নিয়ে বলার বা লেখার যোগ্যতা বা সাহস সহজ নয়।
সত্য যে কঠিন, কঠিনেরে ভালোবেসে নিভৃতেই চলি।
নিরঞ্জন দে: লেখক, প্রামাণ্যকার ও সংগঠক
আপনার মন্তব্য