
প্রকাশিত: ২০২৫-১০-০৯ ২৩:২৪:০১
সিলেটটুডে ডেস্ক:
সাহিত্যে এ বছর নোবেল পেয়েছেন হাঙ্গেরির লেখক লাসলো ক্রাসনাহোরকাই।
অ্যাপোক্যালিপ্টিক আতঙ্কের মধ্যেও শিল্পের শক্তিকে পুনরায় প্রতিষ্ঠিত করে এমন এক গভীর ও দুরদৃষ্টিসম্পন্ন সাহিত্যকর্মের জন্য তাকে এই পুরস্কার দেওয়ার কথা জানিয়েছে নোবেল কমিটি।
বৃহস্পতিবার (৯ অক্টোবর) বিকেলে পুরস্কার ঘোষণা করে দ্য সুইডিশ একাডেমি।
নোবেল কমিটি বিবৃতিতে বলেছে, লাসলো ক্রাসনাহোরকাই মধ্য ইউরোপীয় পরম্পরার একজন মহান মহাকাব্যিক লেখক, যাঁর ধারায় বিস্তার রয়েছে কাফকা থেকে থমাস বার্নহার্ড পর্যন্ত এবং যিনি অসংগতি ও অতিমাত্রায় অতিরঞ্জনের জন্য পরিচিত। তবে তাঁর কাজের পরিধি আরও বিস্তৃত। তিনি প্রাচ্যকেও খুঁজে বেড়ান এবং আরও মননশীল, সূক্ষ্মভাবে সামঞ্জস্যপূর্ণ সুর গ্রহণ করেন।
ক্রাসনাহোরকাই হাঙ্গেরির নোবেল পুরস্কারপ্রাপ্ত দ্বিতীয় সাহিত্যিক। এর আগে ২০০২ সালে দেশটির ইমরে কারতেস মর্যাদাপূর্ণ এ পুরস্কার পান।
ক্রাসনাহোরকাই পাঁচটি উপন্যাস লিখেছেন। এ ছাড়া লিখেছেন অনেক ছোটগল্প, প্রবন্ধ। তিনি নানা পুরস্কার ও সম্মাননায় ভূষিত হয়েছেন। এর মধ্যে রয়েছে ২০১৫ সালের ম্যান বুকার আন্তর্জাতিক পুরস্কার এবং ২০১৩ সালের সেরা অনূদিত বই পুরস্কার (ফিকশন) তাঁর প্রথম উপন্যাস স্যাটানট্যাঙ্গোর জন্য। এ ছাড়া ১৯৯৩ সালে দ্য মেলানকলি অব রেজিস্ট্যান্স-এর জন্য ক্রাসনাহোরকাই জার্মান বেস্টেনলিস্টে পুরস্কার পান।
ক্রাসনাহোরকাই হাঙ্গেরির দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের রোমানিয়া সীমান্তবর্তী ছোট শহর গিউলায় ১৯৫৪ সালের ৫ জানুয়ারি জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৮৫ সালে প্রকাশিত তাঁর প্রথম উপন্যাস স্যাটানট্যাঙ্গোর পটভূমি অনুরূপ এক প্রত্যন্ত গ্রামীণ এলাকা। উপন্যাসটি প্রকাশের পর হাঙ্গেরির সাহিত্যজগতে আলোড়ন সৃষ্টি করে। নোবেল কমিটি বলেছে, উপন্যাসটিতে কমিউনিজম পতনের ঠিক আগের হাঙ্গেরির গ্রামীণ অঞ্চলের পরিত্যক্ত সমবায় খামারে নিঃস্ব একদল বাসিন্দার জীবন অত্যন্ত দুর্দান্ত ভাষায় চিত্রিত হয়েছে।
ক্রাসনাহোরকাইয়ের বেশ কয়েকটি উপন্যাস অবলম্বনে চলচ্চিত্র নির্মিত হয়েছে। সেগুলোর মধ্যে অন্যতম স্যাটানট্যাঙ্গো এবং দ্য ভার্কমেইস্টার হারমোনিজ। ক্রাসনাহোরকাইয়ের উপন্যাসগুলো থেকে চলচ্চিত্র নির্মাণ করেছেন হাঙ্গেরির খ্যাতিমান পরিচালক বেলা তার।
ক্রাসনাহোরকাইয়ের উপন্যাস, ছোটগল্প ও প্রবন্ধ প্রধানত জার্মানিতে পরিচিত। দেশটিতে তিনি দীর্ঘ সময় বসবাস করেছেন। হাঙ্গেরিতে তাঁকে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ জীবিত লেখক হিসেবে গণ্য করা হয়।
তিনি একজন মন্ত্রমুগ্ধকর লেখক—বার্তা সংস্থা এফপিএফকে জানিয়েছেন ক্রাসনাহোরকাইয়ের উপন্যাসের ইংরেজি ভাষার অনুবাদক কবি জর্জ সির্তেস। তাঁর কথায়, ‘তিনি আপনাকে এমনভাবে আকৃষ্ট করেন যে তিনি যে জগতের চিত্র আঁকেন, তা বারবার আপনার ভেতরে প্রতিধ্বনিত হয়, যতক্ষণ না তা আপনার নিজের শৃঙ্খলা ও বিশৃঙ্খলার দৃষ্টিভঙ্গি হয়ে ওঠে।’
সমালোচকদের জন্য কঠিন ও চ্যালেঞ্জিং হলেও ক্রাসনাহোরকাই একবার নিজের লেখার শৈলীকে বর্ণনা করেছিলেন ‘পাগলামির সীমা পর্যন্ত বাস্তবতার পরীক্ষা’ হিসেবে। দীর্ঘ বাক্য ও কম অনুচ্ছেদ ব্যবহারের জন্য লেখককে অনেক সময় ‘অতি মনোযোগী’ হিসেবেও অভিহিত করা হয়।
১৯০১ সাল থেকে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার দেওয়া হচ্ছে। পুরস্কারের অর্থমূল্য ১ কোটি ১০ লাখ সুইডিশ ক্রোনার (প্রায় ১২ লাখ মার্কিন ডলার)।
গত বছর পুরস্কার পেয়েছেন দক্ষিণ কোরিয়ার লেখক হান কাং। তিনি নোবেল পাওয়া ১৮তম নারী সাহিত্যিক। তাঁর আগে দক্ষিণ কোরিয়ার আর কেউ নোবেল পাননি।
আপনার মন্তব্য