জাস্টিন ট্রুডো’র আত্মজীবনী ‘কমন গ্রাউন্ড’-১০

 প্রকাশিত: ২০১৬-০৯-২৯ ২৩:০৯:২৮

মনিস রফিক:

আমাদের সামনে এখনো অনেক পথ
দশ
আমাদের অর্থাৎ আমার দুই ভাই ও আমার প্রতি বাবা-মা'র যে ভালোবাসা ও যত্নসেবা তার জন্য সব সময় তাঁদের প্রতি আমরা আমাদের প্রাণের পরম শ্রদ্ধা জানাই। আমরা যখন যার কাছে বা যে বাড়ীতেই থাকতাম না কেন সেটা একেবারে আমাদের নিজেদের মত মনে হতো। আমি একেবারে হ্রদয় দিয়ে অনুধাবন করেই বলছি, "বাড়ী" বলতে আমরা বুঝি যে মুহূর্তে আমরা যেখানে বসবাস করি সেই জায়গাটাকে। আমরা তিনজন একটা বাড়ী থেকে আরেকটাতে যখন যেতাম তখন মনে হতো আমারা শুধুমাত্র এক স্থান থেকে আরেক স্থানে যাচ্ছি, কিন্তু আমাদের অন্য সবকিছুই ঠিক থাকছে, কিছুরই কোনো রকম পরিবর্তন হচ্ছে না। শুধু একবার বাবাকে সঙ্গ দেয়া, আরেকবার মা'কে। বাবা-মা'র এ ধরনের পরিবেশ তৈরি করে দেবার প্রচেষ্টা ও পদক্ষেপের ফলে ভগ্ন পরিবারের সন্তানদের যে ধরনের অবর্ণনীয় মানসিক যন্ত্রণা ও নিদারুণ কষ্টের মধ্যে দিনাতিপাত করতে হয় তা আমাদের করতে হয়নি। এই কারণে আমি আজীবন আমার মা-বাবার কাছে কৃতজ্ঞ থাকবো।

ইতিমধ্যে ফ্রেড কেম্পার নামে এক রিয়েল স্টেট ব্যবসায়ীর সাথে মা'র ভালোবাসার সম্পর্ক গড়ে উঠেছিলো। ১৯৮৪ সালে তাঁরা বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। সেই বছরেই   বাবা রাজনীতি থেকে অবসর নিয়ে স্থায়ীভাবে মন্ট্রিয়লে বাস করার জন্য সেখানে গমন করেন। ফ্রেড কেম্পার আর মা যখন বিয়ের উদ্দেশ্যে আদালতের দিকে যাচ্ছিলেন, তখন পথে বাবার গাড়িচালক তাঁদের গাড়ী থামিয়ে বাবার পাঠানো বিবাহের শুভেচ্ছা হিসেবে একটা বড় ফুলের দেন। মায়ের নতুন সংসার গড়ার প্রতি বাবার এই শুভেচ্ছা মা খুবই কৃতজ্ঞচিত্তে গ্রহণ করেছিলেন।

ফ্রেড কেম্পার ও মা'র বিয়েটা যেন আদালতেই হয়, এ ব্যাপারে বাবা মা'কে অনুরোধ করেছিলেন। আসলে বাবা চাচ্ছিলেন না, মা গির্জায় গিয়ে আবার বিয়ে করুক। হাস্যকর বিষয় হচ্ছে, ১৯৬০ সালে কানাডায় বিবাহ বিচ্ছেদ সংক্রান্ত আইনটির ব্যাপক আধুনিকায়ন করা হয়েছে, তারপরও ব্যক্তিগত যে অনুভূতি ও বিশ্বাস, "সৃষ্টিকর্তা যে বন্ধনে মিলিয়েছেন, সেটা কোনো মানুষের ছিন্ন করা উচিৎ নয়" - এটা বাবার মনোজগতে গেঁথে ছিলো।  মন্ট্রিয়লে থাকার সময় কয়েক বছর পর তিনি আমার কাছে কিছুটা ক্ষমা চাওয়ার সুরে বলেছিলেন, আমাদের এই কিশোর জীবনে আমাদের সাথে মাতৃত্বের উপস্থিতির যে অভাব তার জন্য তাঁর খুব খারাপ লাগে। তিনি প্রায়ই উপলব্ধি করেই বলতেন তাঁর পক্ষে আবার বিয়ে করা কখনো সম্ভব নয়। কিন্তু আমি প্রায়ই বাবাকে বলতাম, তিনি যদি বিয়ে করেন সেটা আমাদের জীবনে এমন কোনো প্রভাব ফেলবে না, বরং আমরা তাঁর বিয়ের পক্ষেই ছিলাম। ব্যক্তিগত বিশ্বাস ও সামস্টিক দায়িত্ব-কর্তব্যের মাঝে মোটা দাগের ফারাক টানতে তিনি আমাকে যে সব শিক্ষা দিয়েছেন তা আমার চিন্তা ও নেতৃত্বে ব্যাপক প্রভাব ফেলেছে।

মা এবং ফ্রেডের দুই সন্তান - কেলী ও আলিশিয়া। তারা যখন বেড়ে উঠছিলো তখন আমরা অর্থাৎ সাচা, মিচেল আর আমি এই তিন ট্রুডো তাদের সাথে সুন্দর বড় ভাইয়ের মতো খেলাধুলা করতাম। ভিক্টোরিয়া স্ট্রীটের মায়ের লাল ইটের ছোট্ট বাড়ীটায় আমরা খুব মজা করতাম। আমাদের মজা আরো মজাদার হতো যখন আমরা সবাই মিলে নিউবরো লেকের পাড়ে কেম্পারের পারিবারিক কটেজে বেড়াতে যেতাম। লেকের পাড়ের ঐ অদ্ভুত সুন্দর পরিবেশে আমাদের জীবনটাকে মনে হতো আমরা এক পানির সামনে দীর্ঘ সময়ের এক পার্টিতে আমরা জীবনের চরম আনন্দ উপভোগ করছি। লেকের পানিতে টিউবে চড়ে ঘুরে বেড়ানো, ক্যাম্প ফায়ারে নেচে নেচে হৈ হুল্লোড় করা আর ফ্ল্যাশলাইটে গাছপালার মধ্যে লুকোচুরি করা ছিলো আমাদের অন্যরকম মজার বিষয়। আমি সবার থেকে বয়সে বড় হওয়ায় সমস্ত বিষয়গুলি কিভাবে পরিচালিত হবে এবং আমরা কী ধরনের খেলাধুলার মধ্যে দিয়ে আমাদের সময় পার করবো সেগুলো তদারকি করার ভার ছিলো আমার ওপর। সেইসাথে সবার প্রতি চোখ রাখার দায়িত্ব ছিলো আমার, বিশেষ করে কেউ পানির ধারে কাছে গেলো কি না।

আমার জীবনের অনানুষ্ঠানিক নেতৃত্বের স্বাদ আমি কিন্তু প্রথম পেয়েছিলাম সেই সময়েই। এর আগে আমি যে সব বিষয় শুধু পড়াশুনা বা শুনে জেনেছিলাম সেই সব জ্ঞানের প্রয়োগ আমি করেছিলাম আমার বেশ কয়েকজন ক্ষুদে শিষ্য আর অনুসারীদের ওপর। সেই মুহূর্তটা ছিলো আমার জীবনের এক পরম পাওয়া আর আমাকে নিজের মত করে চিনে নেওয়ার। আমি তখনই উপলব্ধি করি শিক্ষকতার প্রতি আমার ভেতর থেকেই একটা টান আছে, আর এ টানটা মূলত রাজনীতি বিষয়ক। সত্যি বলতে কী আমার জীবনের সেই দিনগুলি ছিল অপূর্ব আলোকিত সোনাঝরা সুন্দর সময়।

আমি কৃতজ্ঞচিত্তে স্বীকার করি, ঘরের বাইরের সেই ছুটোছুটি ও খেলাধুলায় আমি ফ্রেডের কাছ থেকে যে ভালোবাসা ও স্নেহ পেয়েছিলাম তা আমার বাবার কাছে যা পেতাম তার মতই এবং তিনি বেশী বয়স্ক না হওয়ায় মায়ের চরিত্রের যে আসল বৈশিষ্ট্য তা অনুধাবন করতে পারতেন এবং অতি সাবলীলভাবেই তিনি সেই ধরনের আচরণ করতেন যা সুন্দর আনন্দের জন্ম দিতো। বাবা এমন মানুষ ছিলেন যিনি আমাদেরকে দীর্ঘ নৌকা ভ্রমণে নিয়ে যেতেন এবং আমাদের শেখাতেন কিভাবে নৌকা বাইচ করতে হয়। আমরা যতক্ষণ পর্যন্ত না ঠিকভাবে চালাতে পারতাম ততোক্ষণ পর্যন্ত তিনি আমাদের পেছনে লেগে থাকতেন। অন্যদিকে ফ্রেডের পছন্দের বিষয়টা বলতে গেলে বলতে হয়, তাঁর ছিলো একটা শেভ্রলেট এল কামিনো। ওটাতে  স্পোর্টস আর পিক আপ দুই ধরনের গাড়ীরই সুবিধা ছিলো। সেই গাড়ীর এই সুবিধা থাকার ফলে সপ্তাহের ছুটি কাটানো জন্য খুব তাড়াহুড়া করে যদি কোথাও গিয়ে আবার সোমবারে সরাসরি অফিসে যাওয়ার প্রয়োজন পরতো তবে সেই গাড়ীটা খুব ভালোভাবে ব্যবহারে আসতো। আমার বাবা কিন্তু কখনো এই ধরনের গাড়ীর কথা ভাবতে পারতেন না। তবে আমার গাড়ী চালানোর হাতেখড়ি কিন্তু সেই গাড়ীটার মাধ্যমেই হয়েছিলো। তখন আমার বয়স ছিলো পনের। খামার বাড়ীর পেছনের রাস্তায় সেই গাড়ী চালিয়ে আমি আমার জীবনে প্রথম গাড়ী চালানোর আনন্দ উপভোগ করেছিলাম। ফ্রেডের কোনো নৌকা ছিলো না, তবে একটা স্পীডবোট ছিলো আর ছিলো একটি শটগান। সাধারণত বাগানের আশপাশ থেকে সজারু বা অপ্রত্যাশিত পশুপাখি তাড়ানোর জন্য তিনি ওটা ব্যবহার করতেন।

তবে এই দু'জনের মধ্যে এসব যে পার্থক্য ছিলো তা আমাদের জন্য কোনো সমস্যার কারণ ছিলো না। সত্যি বলতে কি, এটা আমাদের জন্য এক ধরনের আশীর্বাদ ছিলো। ব্যক্তিত্ব আর জীবন ধারণের এই বিস্তর বিভেদ থাকা সত্ত্বেও দু'জন দুজনকে কখনো প্রতিপক্ষ ভাবতেন না। আমি এবং আমার ভাইয়েরা যখন মা আর ফ্রেডের বাড়ীতে থাকতাম তখন আমার বাবার কাছে থাকলে যেগুলো করতে পারতাম না যেমন, ইচ্ছেমত টেলিভিশন খুলে বসা, ভিডিও গেম খেলা বা অন্য যে কোনো মহা আনন্দের কিছু কাজ - ফ্রেডের ওখানে ওগুলো অবলীলায় করা যেতো। সেই কটেজ আর ভিক্টোরিয়া স্ট্রীটের ছোট্ট ইটের বাড়ীর জীবন আর ২৪ সাসেস্ক এর জীবনের মধ্যে বিস্তর ফারাক ছিলো। খুব সাদামাটাভাবে বলতে গেলে বলতে হয়, কটেজ আর ছোট্ট ইটের বাড়ীটা ছিলো অপূর্ব। সেখানে আমরা প্রতিবেশী ছেলেমেয়েদের সাথে খেলতে পারতাম আর রাতে একটা ঘরে গাদাগাদি করে কয়েকটা বিছানায় ঘুমাতে পারতাম। আমরা আমাদের বাবাকে খুব মিস করতাম, কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর বাড়ীর সেই বড় বড় ঘর বা নানান ধরনের সুযোগ সুবিধার জন্য আমাদের একটুও খারাপ লাগতো না। স্কুলের দিনগুলোতে বাড়ীর সামনে স্কুল বাস আসলে আমরা অন্যান্য ছোট ছোট ছেলে মেয়েদের সাথে উঠে পড়তাম। মায়ের সাথে ঐ বাসে করে স্কুলে যাওয়াটার প্রতিটি মুহূর্ত আমি খুবই উপভোগ করতাম, বিশেষ করে অনেক ছেলেমেয়েদের সাথে কিছুটা হৈ চৈ করে স্কুলে যেতে। সবকিছুই একেবারে স্বাভাবিক থাকতো, যতক্ষণ পর্যন্ত জানালার পেছন দিকে তাকিয়ে আরসিএমপি (রয়েল কানাডিয়ান মাউন্টেড পলিশ)'কে না দেখতাম। আমাদের বিশেষ নিরাপত্তায় থাকা পুলিশ সব সময় আমাদের পেছন পেছন থাকতেন।

এখন আমার প্রায়ই সেই দিনগুলোর কথা মনে পড়ে। পেছনের দিকে তাকালে আমি উপলব্ধি করি আমি মাঝে মধ্যে রাগান্বিত থাকতাম। এটাতো সত্যি, ভগ্ন পরিবারের অধিকাংশ ছেলেমেয়েই বেশীর ভাগ সময় রাগান্বিত থাকে। কিন্তু আসলে সেই সময়ে মা যে কোন পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে তাঁর জীবন পার করছেন তা সম্পর্কে  আমাদের কোনো স্বচ্ছ ধারণা ছিলো না। তখন "বাইপোলার" বা "ডিপ্রেশন" শব্দগুলোর অর্থটা ঠিকভাবে অনুধাবন করার ক্ষমতা আমার ছিলো না। এমনকি আমাদের পরিবারের অনেক বয়স্করাও এই পরিস্থিতিতে কী করতে হবে সে সম্পর্কে দ্বিধা-দ্বন্দ্বে থাকতেন। আমার নানী সিনক্লেয়ার আমার মাকে কোনো মনোরোগবিদের পরামর্শ নিতে কিছুটা নিরুৎসাহিতই করতেন। কারণ তাঁর ধারণা ছিলো, এ ধরনের ঘটনায় তারা সাধারণত রুগীর মাকেই দোষারোপ করে থাকেন। মাঝে মধ্যে আমার রাগটা বিশেষভাবে চড়ে যেতো কারণ আমার মনে হতো, আমি যতই চেষ্টা করি না কেনো আমি কোনোভাবেই মাকে আমার সঙ্গে রাখতে  বা সুখী করতে পারবো না।

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে যেহেতু মা নিজেই তাঁর মানসিক সমস্যার ব্যাপারে যথেষ্ট সচেতন এবং তিনি জানেন কিভাবে এই সমস্যার মোকাবেলা করতে হয়, এখন তাঁর সাথে আমাদের যে বিশেষ নতুন বন্ধন তৈরি হয়েছে, তা হচ্ছে, আমার সন্তানদের দাদী হিসেবে তাঁর প্রেমময় উপস্থিতি। এই বিষয়গুলোতে তাঁর সম্পৃক্তি তাঁর সেই সমস্যা থেকে তাঁকে ধীরে ধীরে দূরে সরিয়ে রেখেছে। এখন আমরা সময় সুযোগ পেলেই একসাথে কথা বলি, কোনো বিষয় নিয়ে একসাথে হাসাহাসি করি আর একসাথে বসে আহার সারি। সপ্তাহের ছুটির দিনগুলোতে আমি সাধারণত আমার নিজের পরিবার নিয়ে মন্ট্রিয়লে তাঁর এপার্টমেন্টে বেড়াতে যাই আর মা'ও আমাদের অটোয়ার বাড়ীতে বেড়াতে আসেন। তাঁর সাথে আমি সব সময় এমন সম্পর্কই চেয়েছিলাম। আমার শৈশবকালে যে ভুলগুলো ঘটে গেছে আমি সেগুলো কখনো শুধরাতে পারবো না। কিন্তু যখনই শুধু মায়ের সাথে সময় কাটানোর সময় আসে, আমি যেভাবে হোক আমার আপ্রাণ চেষ্টায় সেই সময়টা বের করে নিতে সামান্যটুকু ত্রুটি করিনা। মায়ের  এই যথার্থ যত্ন নেয়াটা হয়তো দেরীতে অনুধাবন করতে পেরেছি, কিন্তু হোক সেটা দেরী, এ বিষয়টা তো আমি প্রাণ দিয়ে উপলব্ধি করতে পেরেছি।

এটা সত্যিই সত্যি যে মা খুবই অসুস্থ ছিলেন। তাঁর এই অসুস্থতা যদি দৈহিক ও দৃশ্যমান হতো তাহলে হয়তো তাঁর পরিবার ও বন্ধু-বান্ধবদের নজরে সেটা পড়তো এবং তারা মায়ের প্রতি অনেক বেশী সহানুভূতিশীল ও যত্নবান হতেন। কিন্তু তিনি যে সময়ে যে অসুখের জন্য চরম মানসিক দুর্দশার মধ্যে দিনাতিপাত করতেন সেই সময়ে সেই বিষয়টার প্রতি মানুষের যথার্থ ধারণা ছিলো না। ভাবতে খুব খারাপ লাগে, মানসিক অসুস্থতাকে খুব খারাপভাবে দেখা হয় এবং অনেকের কাছেই এটা একটা লজ্জার বিষয়।

দিন বদলের পালায় অনেক কিছুরই পরিবর্তন হয়েছে। কিন্তু এখনো এই পরিবর্তন যথেষ্ট পরিমাণে এবং যথেষ্ট দ্রুত হয়নি। এ প্রসঙ্গে আমি আমার প্রতিপক্ষ রাজনীতিবিদদের একটা উদাহরণ টানতে পারি। তারা যখন বলে, আমি আমার বাবার ব্যক্তিত্বের চেয়ে আমার মায়ের ব্যক্তিত্বটায় বেশী ধারণ করি। এটা বলে তারা কিন্তু মূলত আমাকে আঘাত করতে চাই। মায়ের 'ব্যক্তিত্ব' বলতে তারা কিন্তু মানসিক অসুস্থতার প্রতি কটাক্ষ করে।

আমি আমার বাবা-মা দুজনকেই আমার মতো করে অনুসরণ করি এবং এই দুজনকে যে আমি আমার বাবা-মা হিসেবে পেয়েছি, সেটা ভেবে নিজেকে খুবই ভাগ্যবান মনে করি। আমি প্রায়ই কিছু সুন্দর মানুষের দেখা পাই, যারা সব সময় আমাকে সেই সব কাহিনীগুলো শুনায় যার সাথে জড়িয়ে আছে আমার বাবার স্পর্শ আর অনুপ্রেরণা যা তাদের জীবনকে সার্থক ও সফল করে দিয়েছে। অতি সাম্প্রতিক সময়ে আমি কিন্তু ঠিক সেই ধরনের কথা শুনি আমার মায়ের সম্পর্কে। আমি নিশ্চিত, মায়ের কাজগুলো অসংখ্য জনকে তাদের নিজেদের মানসিক পরিস্থিতি সম্পর্কে একটা নিজেদেরকে সত্যিকারের ধারণা দিতে সহায়তা করেছে আর তাদের বন্ধুবান্ধব এবং আত্মীয়স্বজনদের একটা দিক নির্দেশনা দিয়েছে, এমন পরিস্থিতিতে তাদের সাথে কিরূপ ব্যবহার করা উচিৎ। আমাদের সামনে এখনো অনেক পথ, কিন্তু সত্যি বলছি, আমার মা মানসিক ব্যাধিতে আক্রান্ত মানুষের জন্য অনেক কিছু করেছেন। তাঁর সেই সময়ে তাঁর আশেপাশের মানুষজন এ বিষয়ে যা জ্ঞান রাখতেন, এখন তার চেয়ে অনেক বেশী রাখেন। আমি একান্তভাবে বিশ্বাস করি, আগামীতে এমন সমস্যায় আর কোনো মা আমার মায়ের মতো উপেক্ষার শিকার হবেন না।
(চলবে)

আপনার মন্তব্য